করোনা ভাইরাস
করোনার ভারতীয় ধরন শনাক্ত ১৭টি দেশে
করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বা ধরন শনাক্ত হয়েছে বিশ্বের অন্তত ১৭টি দেশে। মঙ্গলবার মহামারি বিষয়ক সাপ্তাহিক এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডব্লিউএইচও।
বুধবার ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়, বিভিন্ন দেশে বি-১.১৬৭ ভাইরাসের ১২শ’র বেশি সিকোয়েন্সের কথা জানিয়েছে ডব্লিউএইচও। যে কোনো ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় করোনার ভারতীয় ডাবল মিউট্যান্ট প্রজাতিটি অতি সংক্রামক বলেও জানায় সংস্থাটি। ভাইরাসের এই প্রজাতিটি বাড়েও খুব দ্রুত। এটি বিশ্বের যেকোনো দেশের জন্যই উদ্বেগজনক বলে জানায় ডব্লিউএইচও।
গতকাল মঙ্গলবার জাতিসংঘের স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থা ডব্লিউএইচও জানায়, ভারতে প্রথম শনাক্ত বি.১.১৬৭ নামে করোনার ধরনটি বিশ্বের এক ডজনের বেশি দেশে শনাক্ত করা গেছে। এমন দেশের সংখ্যা কমপক্ষে ১৭।
ডব্লিউএইচও বলেছে, জিনোম সিকোয়েন্সিং ডেটাবেইস গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটা জিআইএসএআইডি’তে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত এক হাজার ২শ’টির বেশি করোনার বি.১.১৬৭ ধরনের সিকোয়েন্স আপলোড করা হয়েছে। বেশিরভাগ সিকোয়েন্সই ভারত, ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুর থেকে আপলোড করা হয়েছে।
অন্য দেশগুলো হলো অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, জার্মানি, নিউজিল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, পর্তুগাল, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, গ্রীস, নেদারল্যান্ডস, ইতালি ও কম্বোডিয়া।
প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয় করোনাভাইরাস। এটি পরিবর্তিত হয়ে নিজের নতুন নতুন ধরন তৈরি করে। গেল অক্টোবরে ভারতে প্রথম বি.১.১৬৭ ধরনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় বলে জানিয়েছে দেশটির গণমাধ্যম। জানা গেছে, এ ধরনেরও তৈরি হয়েছে একাধিক সংস্করণ।
এখন করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ চলছে ভারতে। প্রথম দফার চেয়ে এই দফার সংক্রমণের গতি অনেক বেশি। করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট প্রথম শনাক্ত হয় চলতি বছরের শুরুতে। দেশটিতে করোনার সংক্রমণ মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ার জন্য এই ধরন দায়ী বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভারতে বর্তমান করোনা পরিস্থিতির জন্য তিনটি কারণ জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এগুলো হলো গণজমায়েত, করোনার অতি সংক্রামক ধরন ও টিকাদানের নিম্ন হার। ভারতে নতুন ধরনটির বৈশিষ্ট্য, সংক্রমণ ক্ষমতাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ব্যাপক পরিসরে গবেষণার ওপর জোর দিয়েছে ডব্লিউএইচও।
ভারতে কয়েকদিন ধরে নতুন করোনা রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুতে রেকর্ড হচ্ছে। গেল ২৪ ঘণ্টায় তিন লাখ ৬৩ হাজারের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর আগে কখনো এক দিনে এত করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। শুধু তা-ই নয়, এখন পর্যন্ত এক দিনে এত করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি বিশ্বের কোনো দেশে।
গেল ২৪ ঘন্টায় ভারতে তিন হাজার ২৮৫ জন মারা গেছে করোনায়। দেশটিতে মহামারি শুরুর পর এবারই প্রথম এক দিনে এতো মানুষ মারা গেল।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ভারতে সংক্রমিত শনাক্ত মোট রোগীর সংখ্যা এক কোটি ৮০ লাখ। করোনায় মোট মারা গেছে দুই লাখ এক হাজারের বেশি মানুষ।
ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলেও দেশটির বিশেষজ্ঞরা বলছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এখনও পিক বা চূড়ায় পৌঁছেনি। দেশটিতে সংক্রমণ আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। করোনার ঊর্ধ্বমুখী ধারা কবে নিম্নমুখী হতে পারে সে সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছে না দেশটির বিশেষজ্ঞরা। করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট প্রথম শনাক্ত হয় চলতি বছরের শুরুতে। দেশটিতে করোনার সংক্রমণ মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ার জন্য এই ধরন দায়ী বলে ধারণা করা হচ্ছে।
করোনা পরিস্থিতি মারাত্মক হওয়ায় সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যগত চ্যালেঞ্জে পড়েছে ভারত। অক্সিজেন, ওষুধ, হাসপাতাল শয্যা সংকটসহ নানা সমস্যায় ভেঙে পড়ার দশা দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন দেশ। ভারতের করোনা সংকটে জরুরি চিকিৎসা সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, সৌদি আরব, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ কয়েকটি দেশ ও সংস্থা। গতকাল থেকে বিদেশি সহায়তা পৌঁছানোও শুরু হয়েছে মোদির দেশে।
এসএন
করোনা ভাইরাস
ফের ফিরে আসছে করোনা-আতঙ্ক!
মানুষ যখন করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের কথা প্রায় ভুলতে বসেছে, তখনই হঠাৎ করে আবার জেএন.১ নামের এক উপধরন ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতিমধ্যে এই ধরন পার্শ্ববর্তী ভারতসহ বিশ্বের ৪১টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশে নতুন ধরনের সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সরকারের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। যদিও নতুন এ ধরনে বাংলাদেশে কেউ এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়নি।
নতুন ধরনের সংক্রমণ মোকাবেলায় আবারও হাসপাতাল-ক্লিনিকসহ সকল স্থানে মাস্ক ব্যবহারসহ চার দফা পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডাক্তার মোহাম্মদ সহিদুল্লা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির ৬৫তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সকলের পরামর্শের আলোকে নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয়। সেগুলো হলো—
১। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে যেমন হাসপাতাল/চিকিৎসা কেন্দ্র এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি— যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের সতকর্তা হিসেবে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হলো। কমিটি মনে করে কোভিড-১৯ ছাড়াও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধে এটি সহায়ক হবে।
২। সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য বৈশ্বিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও দেশে নজরদারি জোরদার করার জন্য সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর প্রতি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে কোভিড পরীক্ষা ও আইসিইউসহ দ্রুত চিকিৎসার সকল প্রস্তুতি রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের স্ক্রিনিং এর প্রস্তুতি নেয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
৩। কোভিড ভ্যাকসিন বিষয়ে নিয়মিত বৈজ্ঞানিক তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণসাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ মোতাবেক উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের চতুর্থ ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
৪। সভায় অস্ত্রোপচার অথবা অন্য কোনো রোগের চিকিৎসার আগে কোভিড পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কমিটি কেবলমাত্র কোভিডের লক্ষণ/উপসর্গ থাকলে কোভিড পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছে।
এদিকে ইতিমধ্যে একে ‘ভেরিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ হিসেবে অভিহিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, এই ধরনটি অতিদ্রুত ছড়াচ্ছে।
জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, ওমিক্রনের উপধরন হলো জেএন.১। রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে ফাঁকি দেওয়ায় জেএন.১ আরও অনেক বেশি কার্যকর। ফলে সংক্রমণের হার বেশি। তবে ঝুঁকি কম।
করোনা ভাইরাস
বিশ্বে করোনায় মৃত্যু হয়েছে আরও ২০৪ জনের
গেলো ২৪ ঘণ্টায় করোনায় বিশ্বব্যাপী আরও ২০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আক্রান্ত হয়েছেন ৮৮ হাজার ৫৯৯ জন। সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮২৫ জন।
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে করোনার হিসাব রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ও আক্রান্তের ঘটনা ঘটেছে রাশিয়ায়। এ সময় দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ১৮৬ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছে ৭৯ হাজার ৩২ জন।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত হয়েছে ৬ হাজার ৪৪৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। ভারতে আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ৪০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। আফগানিস্তানে আক্রান্ত হয়েছে ১৯৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১ জনের।
বিশ্বে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭০ কোটি ৪ লাখ ৮১ হাজার ২৪৮ জন। এরমধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৬৯ লাখ ৬১ হাজার ১৩৬ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৬৭ কোটি ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ২২৪ জন।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ২০২০ সালের ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনাকে ‘বৈশ্বিক মহামারি’ হিসেবে ঘোষণা করে।
করোনা ভাইরাস
এক মাসে করোনা রোগী বেড়েছে ৫২%
বিশ্বজুড়ে আবারও বাড়তে শুরু করেছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। গেলো চার সপ্তাহে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী বেড়েছে প্রায় ৫২ শতাংশ। এ সময় নতুন করে সাড়ে ৮ লাখের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। পাশাপাশি বেড়েছে মৃত্যুহারও। জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
ডব্লিউএইচওর তথ্যমতে, আগের ২৮ দিনের তুলনায় গেলো চার সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী করোনায় মৃত্যু প্রায় ৮ শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে মারা গেছে তিন হাজারের বেশি মানুষ।
সংস্থাটির হিসাবে, ২০২৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ৭৭ কোটি ২০ লাখ মানুষ। প্রাণ হারিয়েছেন ৭০ লাখেরও বেশি। এ সময়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার মানুষ। গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখতে হয়েছে ১ হাজার ৬০০ জনকে।
বিশ্বব্যাপী দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণে সম্প্রতি করোনাভাইরাসের জেএন.১ ধরনটিকে পৃথক ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এটিকে এতদিন করোনার বিএ.২.৮৬ ধরনের একটি অংশ হিসেবে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ গণ্য করা হতো। ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত অনুসারে, জেএন.১-এর কারণে এ মুহূর্তে অতিরিক্ত কোনো বৈশ্বিক স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই। তবে উত্তর গোলার্ধে শীত শুরুর সঙ্গে সঙ্গে এটি শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।