করোনা ভাইরাস
দিন-রাত জ্বলছে চিতা, তবুও শেষ হচ্ছে না লাশের সারি
করোনাভাইরাস মহামারিতে বিপর্যস্ত ভারতে প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। শ্মশানে ২৪ ঘণ্টাই জ্বলছে চিতা। তবুও শেষ হচ্ছে না লাশের সারি।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন বারাণসীতে করোনা সবচেয়ে বেশি তাণ্ডব চালাচ্ছে। সেখানে মিলছে না সাধারণ প্যারাসিটামল বা জিংকের মতো ওষুধও। সেখানকার রাস্তায় প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে দুই পাশে দেখা গেছে লাশের সারি।
করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ায় ঘরেও মানুষকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে সরকার। সেই সঙ্গে বাড়িতে বাইরের কাউকে না ডাকা এবং অযথা বাইরে না থাকার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
ভারতে প্রতিদিনই সংক্রমণ ও মৃত্যু আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। প্রচণ্ড অক্সিজেন সংকটে মারা গেছে বহু মানুষ। শ্মশানে স্থান সংকুলান না হওয়ায় গণচিতা তৈরি করা হয়েছে রাজধানী দিল্লিসহ কয়েকটি রাজ্যে। খোঁড়া হচ্ছে গণকবর এবং মরদেহ পোড়াতে অস্থায়ী শ্মশান বানানো হয়েছে। জাত-ধর্ম ভুলে মৃতদেহ সৎকারে এগিয়ে এসেছে মুসলিমরাও।
স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছে, এর আগে এমন অবস্থা দেখেনি তারা। ভারতে এখন যে হারে আক্রান্ত বাড়ছে তার গতি যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে অনেক বেশি। ভারতে এ পরিস্থিতি চললে যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে দেবে। করোনার প্রকোপে দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, ভারতে এখন কোভিডের যে তাণ্ডব চলছে তার অন্যতম শিকার উত্তর প্রদেশ রাজ্যের হিন্দু তীর্থস্থান বারাণসী এবং তার আশপাশের এলাকা। শুধু বারণসী শহরেই নয়, ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের প্রত্যন্ত গ্রামেও। ঘরে বসে চিকিৎসা ছাড়াই মারা যাচ্ছে ওই সব গ্রামের বাসিন্দারা। এই চরম দু:সময়ে তাদের এমপি নরেন্দ্র মোদি লাপাত্তা কেন, এখন খোলাখুলি প্রশ্ন করছে ওই অঞ্চলের ক্রুদ্ধ বাসিন্দাদের অনেকে।
কোভিডে সবচেয়ে বিপর্যস্ত এলাকাগুলোর অন্যতম বারাণসীতে ভেঙ্গে পড়েছে হাসপাতাল অবকাঠামো। হাসপাতালে বেড পাচ্ছে না রোগীরা, অক্সিজেন নেই, নেই অ্যাম্বুলেন্সও। এমনকি কোভিড টেস্টের ফলাফল পেতে লেগে যাচ্ছে এক সপ্তাহ পর্যন্ত। গেল দশদিনে বারাণসী এবং আশপাশের এলাকায় ওষুধের দোকানগুলোতে ভিটামিন, জিংক বা প্যারাসিটামলের মত ওষুধ পর্যন্ত মিলছে না।
শহরের মনিকার্নিক ঘাটের কাছে বহুদিনের এক বাসিন্দা বলেন, এক মাস ধরে শ্মশান ঘাটে বিরতিহীনভাবে মরদেহ পোড়ানো হচ্ছে। যেদিকে তাকাবেন অ্যাম্বুলেন্সের আওয়াজ এবং মরদেহ। আগে, বারাণসীর দুটো প্রধান শ্মশান ঘাটে দিনে ৮০ থেকে ৯০টি দাহ হতো। এখন এক মাস ধরে দিনে ৩-৪শ’ দাহ হচ্ছে।
সম্প্রতি বারাণসীর এক বাসিন্দার তোলা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, শ্মশান ঘাটে যাওয়ার একটি সরু রাস্তার দুই ধারে এক কিলোমিটার পর্যন্ত মরদেহ সার ধরে রাখা রয়েছে। গেল দশদিনে নতুন দুটো শ্মশান তৈরি করেছে নগর প্রশাসন। সেগুলোও রাতদিন ২৪ ঘণ্টা ব্যস্ত। এই ট্রাজেডি শুধু বারণসী বা বড় শহরে সীমাবদ্ধ নেই। আশপাশের ছোট ছোট শহর এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছে, ভারতে চলতি মাসে করোনা পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর রূপ নিতে পারে। এ সময়ে একদিনে মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়ে যেতে পারে পাঁচ হাজার। রেকর্ড পরিমাণ সংক্রমণও হবে।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে মঙ্গলবার একদিনে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে তিন লাখ সাড়ে ৮২ হাজারের বেশি। মারা গেছে তিন হাজার ৭৮৬ জন। দেশটিতে করোনায় মোট মারা গেছে দুই লাখ ২৬ হাজারের বেশি মানুষ। আক্রান্ত হয়েছে দুই কোটি সাড়ে ছয় লাখের বেশি। দেশটিতে বর্তমানে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা প্রায় ৩৫ লাখ।
এসএন
করোনা ভাইরাস
ফের ফিরে আসছে করোনা-আতঙ্ক!
মানুষ যখন করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের কথা প্রায় ভুলতে বসেছে, তখনই হঠাৎ করে আবার জেএন.১ নামের এক উপধরন ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতিমধ্যে এই ধরন পার্শ্ববর্তী ভারতসহ বিশ্বের ৪১টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশে নতুন ধরনের সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সরকারের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। যদিও নতুন এ ধরনে বাংলাদেশে কেউ এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়নি।
নতুন ধরনের সংক্রমণ মোকাবেলায় আবারও হাসপাতাল-ক্লিনিকসহ সকল স্থানে মাস্ক ব্যবহারসহ চার দফা পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডাক্তার মোহাম্মদ সহিদুল্লা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির ৬৫তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সকলের পরামর্শের আলোকে নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয়। সেগুলো হলো—
১। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে যেমন হাসপাতাল/চিকিৎসা কেন্দ্র এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি— যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের সতকর্তা হিসেবে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হলো। কমিটি মনে করে কোভিড-১৯ ছাড়াও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধে এটি সহায়ক হবে।
২। সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য বৈশ্বিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও দেশে নজরদারি জোরদার করার জন্য সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর প্রতি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে কোভিড পরীক্ষা ও আইসিইউসহ দ্রুত চিকিৎসার সকল প্রস্তুতি রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের স্ক্রিনিং এর প্রস্তুতি নেয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
৩। কোভিড ভ্যাকসিন বিষয়ে নিয়মিত বৈজ্ঞানিক তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণসাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ মোতাবেক উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের চতুর্থ ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
৪। সভায় অস্ত্রোপচার অথবা অন্য কোনো রোগের চিকিৎসার আগে কোভিড পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কমিটি কেবলমাত্র কোভিডের লক্ষণ/উপসর্গ থাকলে কোভিড পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছে।
এদিকে ইতিমধ্যে একে ‘ভেরিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ হিসেবে অভিহিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, এই ধরনটি অতিদ্রুত ছড়াচ্ছে।
জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, ওমিক্রনের উপধরন হলো জেএন.১। রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে ফাঁকি দেওয়ায় জেএন.১ আরও অনেক বেশি কার্যকর। ফলে সংক্রমণের হার বেশি। তবে ঝুঁকি কম।
করোনা ভাইরাস
বিশ্বে করোনায় মৃত্যু হয়েছে আরও ২০৪ জনের
গেলো ২৪ ঘণ্টায় করোনায় বিশ্বব্যাপী আরও ২০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আক্রান্ত হয়েছেন ৮৮ হাজার ৫৯৯ জন। সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮২৫ জন।
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে করোনার হিসাব রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ও আক্রান্তের ঘটনা ঘটেছে রাশিয়ায়। এ সময় দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ১৮৬ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছে ৭৯ হাজার ৩২ জন।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত হয়েছে ৬ হাজার ৪৪৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। ভারতে আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ৪০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। আফগানিস্তানে আক্রান্ত হয়েছে ১৯৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১ জনের।
বিশ্বে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭০ কোটি ৪ লাখ ৮১ হাজার ২৪৮ জন। এরমধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৬৯ লাখ ৬১ হাজার ১৩৬ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৬৭ কোটি ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ২২৪ জন।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ২০২০ সালের ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনাকে ‘বৈশ্বিক মহামারি’ হিসেবে ঘোষণা করে।
করোনা ভাইরাস
এক মাসে করোনা রোগী বেড়েছে ৫২%
বিশ্বজুড়ে আবারও বাড়তে শুরু করেছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। গেলো চার সপ্তাহে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী বেড়েছে প্রায় ৫২ শতাংশ। এ সময় নতুন করে সাড়ে ৮ লাখের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। পাশাপাশি বেড়েছে মৃত্যুহারও। জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
ডব্লিউএইচওর তথ্যমতে, আগের ২৮ দিনের তুলনায় গেলো চার সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী করোনায় মৃত্যু প্রায় ৮ শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে মারা গেছে তিন হাজারের বেশি মানুষ।
সংস্থাটির হিসাবে, ২০২৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ৭৭ কোটি ২০ লাখ মানুষ। প্রাণ হারিয়েছেন ৭০ লাখেরও বেশি। এ সময়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার মানুষ। গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখতে হয়েছে ১ হাজার ৬০০ জনকে।
বিশ্বব্যাপী দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণে সম্প্রতি করোনাভাইরাসের জেএন.১ ধরনটিকে পৃথক ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এটিকে এতদিন করোনার বিএ.২.৮৬ ধরনের একটি অংশ হিসেবে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ গণ্য করা হতো। ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত অনুসারে, জেএন.১-এর কারণে এ মুহূর্তে অতিরিক্ত কোনো বৈশ্বিক স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই। তবে উত্তর গোলার্ধে শীত শুরুর সঙ্গে সঙ্গে এটি শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।