ক্রিকেট
শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে জয় পেলো বাংলাদেশ
আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে জিম্বাবুয়েকে ৩ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। রুদ্ধতার এই জয়ে বিশ্বকাপে ৪ পয়েন্ট নিয়ে সেমিফাইনালের আশা টিকিয়ে রাখল সাকিবরা। বর্তমানে টাইগারদের অবস্থান টেবিলের দ্বিতীয়স্থানে।
রোববার (৩০ অক্টোবর) সকালে টস জিতে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৫০ রান তুলে টাইগাররা।
ব্যাট করতে নেমে নাজমুল হোসেন শান্তর ক্যারিয়ারের প্রথম হাফসেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ তুলে ২০ ওভারে ১৫০ রান। জবাব দিতে নেমে তাসকিন আহমেদ আর মুস্তাফিজুর রহমানের বোলিংয়ে জিম্বাবুয়ে আটকে যায় ১৪৬ রানে। শেষ ওভারে জিততে জিম্বাবুয়ের দরকার ছিল ১৬ রান। সাকিব বল তুলে দেন মোসাদ্দেক হোসেনের হাতে। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিতে ভুল করলেন না তিনি! রোমাঞ্চ সঙ্গী করে মাঠ ছাড়ল টাইগাররা।
চলতি বিশ্বকাপে তিন ম্যাচ খেলে দুটি জয় নিয়ে সেমির পথে এগিয়ে গেল দল। অবশ্য সামনে কঠিন দুই প্রতিপক্ষ ভারত-পাকিস্তান!
হোবার্টের ম্যাচের কথাটাই যেন মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন তাসকিন আহমেদ। যেখানে শুরুতেই নেদারল্যান্ডসের দুই উইকেট তুলে নিয়ে জয়ের পথটা তৈরি করে দিয়েছিলেন। এবারও শুরুতেই তার জোড়া আঘাত। এরপর মুস্তাফিজুর রহমানও খোলস ভেঙে যখন বেরিয়ে তখন টাইগারদের আটকায় কে? ষষ্ঠ ওভারে দ্য ফিজ জোড়া উইকেট নিয়ে ম্যাচটা হয়ে যায় বাংলাদেশেরই।
তাসকিন আহমেদ প্রথম ওভারেই তুলে নেন উইকেট। বিস্ময়কর হলেও সত্য চলতি বিশ্বকাপে টানা তিন ম্যাচে নিজের প্রথম ওভারে উইকেট শিকার করলেন তাসকিন। এই পেসার রোববার ফেরান জিম্বাবুয়ের ওয়েসলি মাধেভেরে। তৃতীয় ওভারে এসে ইনফর্ম এই পেসার ফেরান ক্রেইগ আরভিনকে। তার ওভারের চার নম্বরে বলে আরভিন ওয়াইড লাইনের কাছ দিয়ে যাওয়া বলে জায়গায় দাঁড়িয়ে ব্যাট চালান, ব্যস বল ব্যাট ছুঁইয়ে জমা পড়ে নুরুল হাসান সোহানের গ্লাভসে।
তারপর মুস্তাফিজ ম্যাজিক। নেদারল্যান্ডস ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচে উইকেট পাননি মুস্তাফিজ। তবে বল হাতে মন্দ ছিলেন না। এবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিজেকে ফের ফিরে পেলেন কাটার মাস্টার। এক ওভারেই তুলেন ২ উইকেট। মিল্টন শুম্বাকে দিয়ে শুরু। এবার সিকান্দার রাজাকে পথ দেখিয়ে স্বস্তি এনে দেন গ্যালারিতে।
পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশ দারুণ সফল। ৬ ওভার শেষে ৩৬ রান দিয়ে দল তুলে নেয় জিম্বাবুয়ের ৪ উইকেট। এরপর সে চাপটা জিম্বাবুয়ের ওপর শেষ পর্যন্ত ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। তার পরই শেষ ওভারের নাটক। তবে দিনশেষে হাসিমুখটা বাংলাদেশেরই।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ধীর গতির হলেও শেষটাতে কিছুটা লড়েছে বাংলাদেশ দল। প্রথম ১০ ওভারে ৬৩, শেষ ১০ ওভারে ৮৭। তার পথ ধরেই ঠিক দেড়শ বাংলাদেশের। অবশ্য খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসা নাজমুল হোসেন শান্ত না লড়লে বিপাকেই পড়ে যেতো বাংলাদেশ। লড়েছেন সাকিব আল হাসানও। তাদের ব্যাটেই ভাল একটা ভিত পেয়েছে দল। তবে অন্যরা আরেকটু সঙ্গ দিতে পারলে স্কোরটা আরও বড় হতে পারতো।
কিন্তু জিম্বাবুয়ে সেই সুযোগ দেয়নি। তাদের বোলিং ছিল বেশ আটসাটো। কিন্তু ফিল্ডিংয়ে ক্যাচ ছাড়ায় স্বস্তি পেয়েছেন গ্যাবায় হাজির বাংলাদেশের দর্শকরা। কিন্তু সেসব আর কাজে লাগাতে পারেননি টাইগার ব্যাটসম্যানরা।
তার আগে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। কোন রান না করেই সাজঘরের পথ ধরে বিশ্বকাপের ঠিক আগে দলে আসা সৌম্য সরকার। এমন বিদায়ে অনাকাঙ্ক্ষিত একটা রেকর্ডের পথেও আছেন সৌম্য। এনিয়ে টি-টোয়েন্টিতে ১১ বার শূন্যতে আউট হলেন বাংলাদেশের এই ব্যাটার। তার চেয়ে বেশি ১২ বার আউট হয়ে দুঃস্বপ্নের রেকর্ডটা দখলে কেভিন ও’ব্রায়েনের।
ফর্ম ধরে রাখার ইঙ্গিত দিয়েই শুরুটা হয়েছিল লিটন দাসের। চার মেরে বুঝিয়ে দেন কিছু করতে চান তিনি। কিন্তু তেমন কিছুই করা হলো না এদিন। ব্লেসিং মুজারাবানির বলে স্কুপ করতে গিয়ে শর্ট থার্ড ম্যানে ক্যাচ তুলে দেন। শেষ হয় তার শান্তর সঙ্গে ২৩ বলের ২২ রানের জুটি। ১২ বলে ১৪ তুলে আউট লিটন।
পাওয়ার প্লেতে ৬ ওভারে ৩২ রান তুলতে পারে বাংলাদেশ। হারায় দুই উইকেট। এখানেই বড় পুঁজির সম্ভাবনাটা ধাক্কা খায়। তারপর পথ দেখালেন শান্ত-সাকিব। দুই বাঁহাতি জিম্বাবুয়ের বোলারদের বেশ শাসন করলেন। গ্যাবার উইকেটে বেশ লড়লেন দু’জন। তবে শন উইলিয়ামস ভয়ঙ্কর হয়ে উঠা এই জুটির সর্বনাশ করে দেন। উইলিয়ামসকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ভুল করে বসেন সাকিব। বাংলাদেশ অধিনায়কের টাইমিংটা ঠিকঠাক হয়নি। বল উঁচুতে উঠে জমা হয় ব্লেসিং মুজারাবানির হাতে। ৪৪ বলে ৫৪ রানের এই জুটিই ম্যাচে বাংলাদেশের সেরা।
সাকিব ২০ বলে এক চারে ২৩ রান তুলে ধরেন সাজঘরের পথ সাকিব। তবে নাজমুল হোসেন শান্ত হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন। টি-টোয়েন্টিতে প্রথম অর্ধশতক পেলেন বিশ্বকাপের বড় মঞ্চে। অনেক সমালোচনা সয়ে তাকে দলে রাখা নির্বাচকরা নিশ্চয়ই কিছুটা হলেও স্বস্তি পাচ্ছেন শান্তর ৪৫ বলের ফিফটিতে।
তিন ম্যাচ খেলে ফেললেও এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এটিই বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের প্রথম ফিফটি। আর টি-টোয়েন্টিতে ১১ ম্যাচ পর বাংলাদেশের কোনো ওপেনার তুললেন হাফসেঞ্চুরি। সবশেষ গত ৩১ জুলাইয়ে জিম্বাবুয়েকে পেয়েই ৫৬ রান করেন লিটন।
নিজের সেরা ইনিংস খেলার ম্যাচে শান্ত এক ১ ছক্কা ও ৭ চারে ৫৫ বলে তুলেন ৭১ রান। আফিফ থামেন ১৯ বলে ২৯ রানে। মেহেদী হাসান মিরাজের যায়গায় খেলতে নামা ইয়াসির আলি রাব্বী ১ বলে ১। গ্যাবার টি-টোয়েন্টি আদর্শ উইকেটে পুঁজিটা অবশ্য কম ছিল না সেটি তো দুপুর গড়াতেই প্রমাণ হয়ে গেল!
জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ২৫ বছর ধরে খেললেও মজার ব্যাপার হলো বিশ্বকাপে এবারই প্রথম দেখা। আরও একটা প্রথম সঙ্গী হলো বাংলাদেশের। ব্রিসবেনের গ্যাবায় প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই হাসিমুখ। এবার অ্যাডিলেড মিশন। যেখানে অপেক্ষায় ভারত-পাকিস্তান। জায়ান্ট বধ করতেই পারলেই খুলে যাবে বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালের দরজা!
ক্রিকেট
ক্রিকেট বোর্ডে পরিবর্তন প্রসঙ্গে যা বললেন বিজয়
পাকিস্তান ‘এ’ দলের বিপক্ষে সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ ‘এ’ দল। এছাড়াও বাংলাদেশ জাতীয় দলের সফর আছে একই সময়ে। বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেছেন এনামুল হক বিজয়।
বিজয় বাংলাদেশ ‘এ’ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করবেন। বর্তমানে দেশের পরিস্থিতি কিছুটা অস্থির। সোমবার (৫ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। এরপর থেকে দেশের বিভিন্ন স্তরে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে, কিছু জায়গায় পরিবর্তনের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।
বিসিবির বিভিন্ন জায়গায় পরিবর্তনের দাবিও তোলা হয়েছে। এমনকি ক্রিকেটারদের মধ্যে ইমরুল কায়েস ও রুবেল হোসেনও এই প্রসঙ্গে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। দলে সুযোগ পাওয়া বা না পাওয়া নিয়ে এনামুল হক বলেন, ‘এটা তো হতেই থাকবে। এটা আপনিও কখনো বলতে পারবেন না যে আপনার সঙ্গে হয়নি। এটা হতেই থাকে। তারপরও এটা সামনে যত কম হয় সেই আশা আমরা করবো।’
বোর্ডের বিভিন্ন স্তরে পরিবর্তনের কথা অনেকেই উচ্চারণ করেছেন শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পরপর। এই পরিবর্তন প্রসঙ্গে এনামুল হক বলেন,
‘আমার কাছে মনে হয় এটার (ক্রিকেট বোর্ড) বড় আলোচনা জরুরী। দুজন একজনের কথায় আসলে এটা হবে না। ব্যক্তিগতভাবে বললে, আমি চাই বড় গ্রুপ যারা আমরা সবাই ক্রিকেট নিয়ে কাজ করি তারা একত্রে বসে আলোচনা করে এটা করা। যারা ক্রিকেট খেলেছি, কেউ খেলেছে বা সামনে কেউ খেলবে। বড় ধরনের আলোচনা দরকার। যার যেটা প্রয়োজন সেটা তারা বলবে। যেখানে যে আছে।’
এম এইচ//
ক্রিকেট
পাকিস্তানের টেস্ট দলে এইচপি কোচ হলেন টিম নিলসন
টিম নিলসনকে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) নতুন হাই পারফরম্যান্স (এইচপি) কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ সামনে রেখে এই নিয়োগ দিয়েছে পাকিস্তান বোর্ড।
পাকিস্তানের লাল বলের ক্রিকেটে দায়িত্বে আছেন জেসন গিলেস্পি। যার কোচিং স্টাফে যুক্ত হতে যাচ্ছেন টিম নিলসন। ইতোমধ্যে এই দুই কোচ পাকিস্তান শাহীন’স এ দলের ট্রেনিং ক্যাম্প পর্যবেক্ষণ করেছেন।
বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ সামনে রেখে আগস্টের ১১ তারিখ থেকে শুরু হতে যাচ্ছে পাকিস্তানের ট্রেনিং ক্যাম্প। রাওয়ালপিন্ডিতে দুই দল প্রথম ম্যাচটি খেলবে আগস্টের ২১ থেকে ২৫ তারিখ। আর দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচটি দুই দল খেলবে আগস্টের ৩০ থেকে সেপ্টেম্বরের ৩ তারিখ পর্যন্ত।
সাউথ অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে গিলেস্পির সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে নিলসনের। সবমিলিয়ে তার অভিজ্ঞতার ঝুলি বেশ ভারী।
সম্প্রতি পিসিবি বাংলাদেশ সিরিজের জন্য স্কোয়াড ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের বিপক্ষে খেলার জন্যেও দল ঘোষণা করেছে পাকিস্তান শাহীন’স।
এম এইচ//
ক্রিকেট
দুই মাসের ছুটি চান অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিন
বাংলাদেশ ‘এ’ দলের পাকিস্তান সফর থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। মানসিকভাবে বেশ ভেঙে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। এই প্রেক্ষিতে সকল ধরনের ক্রিকেট থেকে ২ মাসের ছুটি চেয়েছেন তিনি।
পাকিস্তান ‘এ’ দলের বিপক্ষে চারদিনের দুই ম্যাচের সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ, পাশাপাশি ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের দলে ছিলেন সাইফউদ্দিন। এই মাসের শুরুতে একজন নির্বাচক ইমেইল করেন এই অলরাউন্ডার। এরপর জানিয়ে দেন, তিনি ক্রিকেট থেকে আপাতত বিরতি নিতে চান এবং তা দুই মাসের জন্য।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের একজন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জুনে অনুষ্ঠিত আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে যুক্ত হতে না পারা এবং গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি খেলতে কানাডায় যেতে না পারা- সাইফউদ্দিনের জন্য বেশ হতাশার ছিল। এসব কারণেই তিনি আগামী ২ মাস সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চান। এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচকভাবে দেখার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
গত মে মাসে, বাংলাদেশের হয়ে সবশেষ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছিলেন সাইফউদ্দিন।
এম এইচ//
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন