করোনা ভাইরাস
কোভ্যাক্সিনের চেয়ে কোভিশিল্ড বেশি অ্যান্টিবডি তৈরি করে
মানবদেহে কোভ্যাক্সিন টিকার তুলনায় বেশি সংখ্যায় অ্যান্টিবডি তৈরি করে কোভিশিল্ড। তবে দুই টিকার ক্ষেত্রেই রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা যথেষ্ট বেশি। সম্প্রতি ভারতের অপ্রকাশিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য। গবেষণায় চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের পরীক্ষা করে এই ফল পাওয়া গেছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, অপ্রকাশিত এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি ভারতের কয়েকজন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীকে কোভিশিল্ডের দুই ডোজ টিকা দেওয়ার পর ৯৮ শতাংশ অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। আর কোভ্যাক্সিনের টিকা নেওয়াদের শরীরে অ্যান্টিবড়ি তৈরি হয়েছে ৮০ শতাংশ।
চিকিৎসক এ কে সিংহ এবং তাঁর সহকর্মীদের করা গবেষণা অনুযায়ী, দুই টিকাই করোনা আটকাতে এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে যথেষ্ট সক্ষম। টিকার দুইটি ডোজ নেওয়ার পর ২৭ (৮.৯ শতাংশ) জন কোভিড আক্রান্ত হয়। তাঁদের মধ্যে ২৫ জনের মৃদু এবং দুই জনের মাঝারি উপসর্গ দেখা গিয়েছিল। তবে কোন মৃত্যুর কথা জানা যায়নি। টিকাকরণ পুরো হওয়ার পরও কোভিড আক্রান্ত হয়েছে, এমন সংখ্যা কোভিশিল্ডের ক্ষেত্রে ৫.৫ শতাংশ এবং কোভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রে ২.২ শতাংশ।
এর আগেও অপ্রকাশিত তথ্য থেকে জানা গিয়েছিল টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পর কোভিশিল্ডের এফিকেসি ৭০ শতাংশ। কোভ্যাক্সিনের তৃতীয় পর্যায় পরীক্ষার ফল থেকে জানা গেছে এর এফিকেসি ৮১ শতাংশ।
গবেষণা বলছে, ৫১৫ জন স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে ৯৫ শতাংশের শরীরে টিকার দ্বিতীয় ডোজের পর বেশি সংখ্যায় অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। ৪২৫ জন কোভিশিল্ড নেওয়া স্বাস্থ্যকর্মীর শরীরে মিলেছে ৯৮.১ শতাংশ অ্যান্টিবডি। ৯০ জন কোভ্যাক্সিন নেওয়া স্বাস্থ্যকর্মীদের ক্ষেত্রে তা ৮০ শতাংশ। তবে
এই পরীক্ষায় লিঙ্গ, ব্লাড গ্রুপ, শরীরের ওজন বা কো-মর্বিডিটি কোন রকম পার্থক্য দেখা যায়নি। তবে দুই টিকার ক্ষেত্রেই অ্যান্টিবডি তৈরির মাত্রা কম পাওয়া গেছে গবেষণায় অংশ নেওয়া ৬০ বছরের বেশি স্বাস্থ্যকর্মীদের শরীরে।
ভারতজুড়ে চিকিৎসকরা বলছে, দুই টিকাই যথেষ্ট কার্যকরী প্রমাণিত হয়েছে। কার কতটা অ্যান্টবডি তৈরি হচ্ছে, তা বুঝতে গেলে প্রত্যেকের আলাদা করে পরীক্ষা করাতে হবে। এই গবেষণাও তাই বলছে। এই পরীক্ষা টিকা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি করে প্রমাণ করে। করোনার সম্ভাব্য তৃতীয় ঢেউ আটকানোর আপাতত উপায় টিকাই।
এসএন
করোনা ভাইরাস
ফের ফিরে আসছে করোনা-আতঙ্ক!
মানুষ যখন করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের কথা প্রায় ভুলতে বসেছে, তখনই হঠাৎ করে আবার জেএন.১ নামের এক উপধরন ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতিমধ্যে এই ধরন পার্শ্ববর্তী ভারতসহ বিশ্বের ৪১টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশে নতুন ধরনের সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সরকারের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। যদিও নতুন এ ধরনে বাংলাদেশে কেউ এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়নি।
নতুন ধরনের সংক্রমণ মোকাবেলায় আবারও হাসপাতাল-ক্লিনিকসহ সকল স্থানে মাস্ক ব্যবহারসহ চার দফা পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডাক্তার মোহাম্মদ সহিদুল্লা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির ৬৫তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সকলের পরামর্শের আলোকে নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয়। সেগুলো হলো—
১। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে যেমন হাসপাতাল/চিকিৎসা কেন্দ্র এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি— যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের সতকর্তা হিসেবে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হলো। কমিটি মনে করে কোভিড-১৯ ছাড়াও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধে এটি সহায়ক হবে।
২। সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য বৈশ্বিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও দেশে নজরদারি জোরদার করার জন্য সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর প্রতি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে কোভিড পরীক্ষা ও আইসিইউসহ দ্রুত চিকিৎসার সকল প্রস্তুতি রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের স্ক্রিনিং এর প্রস্তুতি নেয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
৩। কোভিড ভ্যাকসিন বিষয়ে নিয়মিত বৈজ্ঞানিক তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণসাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ মোতাবেক উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের চতুর্থ ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
৪। সভায় অস্ত্রোপচার অথবা অন্য কোনো রোগের চিকিৎসার আগে কোভিড পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কমিটি কেবলমাত্র কোভিডের লক্ষণ/উপসর্গ থাকলে কোভিড পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছে।
এদিকে ইতিমধ্যে একে ‘ভেরিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ হিসেবে অভিহিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, এই ধরনটি অতিদ্রুত ছড়াচ্ছে।
জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, ওমিক্রনের উপধরন হলো জেএন.১। রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে ফাঁকি দেওয়ায় জেএন.১ আরও অনেক বেশি কার্যকর। ফলে সংক্রমণের হার বেশি। তবে ঝুঁকি কম।
করোনা ভাইরাস
বিশ্বে করোনায় মৃত্যু হয়েছে আরও ২০৪ জনের
গেলো ২৪ ঘণ্টায় করোনায় বিশ্বব্যাপী আরও ২০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আক্রান্ত হয়েছেন ৮৮ হাজার ৫৯৯ জন। সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮২৫ জন।
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে করোনার হিসাব রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ও আক্রান্তের ঘটনা ঘটেছে রাশিয়ায়। এ সময় দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ১৮৬ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছে ৭৯ হাজার ৩২ জন।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত হয়েছে ৬ হাজার ৪৪৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। ভারতে আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ৪০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। আফগানিস্তানে আক্রান্ত হয়েছে ১৯৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১ জনের।
বিশ্বে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭০ কোটি ৪ লাখ ৮১ হাজার ২৪৮ জন। এরমধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৬৯ লাখ ৬১ হাজার ১৩৬ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৬৭ কোটি ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ২২৪ জন।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ২০২০ সালের ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনাকে ‘বৈশ্বিক মহামারি’ হিসেবে ঘোষণা করে।
করোনা ভাইরাস
এক মাসে করোনা রোগী বেড়েছে ৫২%
বিশ্বজুড়ে আবারও বাড়তে শুরু করেছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। গেলো চার সপ্তাহে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী বেড়েছে প্রায় ৫২ শতাংশ। এ সময় নতুন করে সাড়ে ৮ লাখের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। পাশাপাশি বেড়েছে মৃত্যুহারও। জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
ডব্লিউএইচওর তথ্যমতে, আগের ২৮ দিনের তুলনায় গেলো চার সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী করোনায় মৃত্যু প্রায় ৮ শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে মারা গেছে তিন হাজারের বেশি মানুষ।
সংস্থাটির হিসাবে, ২০২৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ৭৭ কোটি ২০ লাখ মানুষ। প্রাণ হারিয়েছেন ৭০ লাখেরও বেশি। এ সময়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার মানুষ। গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখতে হয়েছে ১ হাজার ৬০০ জনকে।
বিশ্বব্যাপী দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণে সম্প্রতি করোনাভাইরাসের জেএন.১ ধরনটিকে পৃথক ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এটিকে এতদিন করোনার বিএ.২.৮৬ ধরনের একটি অংশ হিসেবে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ গণ্য করা হতো। ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত অনুসারে, জেএন.১-এর কারণে এ মুহূর্তে অতিরিক্ত কোনো বৈশ্বিক স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই। তবে উত্তর গোলার্ধে শীত শুরুর সঙ্গে সঙ্গে এটি শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।