ফুটবল
বিশ্বকাপ জেতার শেষ সুযোগ কাজে লাগাতে পারবেন নেইমার?
পেলে যুগের পর ব্রাজিলে অনেক স্টারের জন্ম হলেও যাকে বলা হয়েছিল আগামীর পেলে সেই নেইমার জুনিয়ের গেলো দুইটি বিশ্বকাপ ছিল বেদনা এবং খেলা-অভিনয়ের এক দুঃখের গল্প। তবে কাতারে হতেও পারে একটা সুখী সমাপ্তি, পুনরুদ্ধার হতে পারে তার খ্যাতি।
২০১৪ বিশ্বকাপে তখনো স্বাগতিকরা কলম্বিয়ার বিপক্ষে এগিয়ে ২-১ গোলে। খেলার ৪ মিনিট বাকি, জুয়ান ক্যামিলো জুনিগার আচমকা এসে হাঁটু দিয়ে আঘাত করে বসে এই ব্রাজিলিয়ান আক্রমণকারীর পিঠে। নেইমার মাঠে শুয়ে যন্ত্রনায় কাঁদছে। তারপরও তিনি উঠতে চান খেলতে চান।
মারসেলো এসে বললো না না উঠো না ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করো। নেইমার তখনো উঠার চেষ্টা করছে, কিন্তু সে নড়াচড়া করতে পাচ্ছে না। ‘আমি আমার পা অনুভব করতে পাচ্ছি না’ কেঁদে কেঁদে বলেন নেইমার।
মার্সেলো আতঙ্কিত হয়ে যান, অবিলম্বে সাহায্যের জন্য চিৎকার করে। টাচলাইনে বিশৃঙ্খলা এবং বিভ্রান্তির মধ্যে, ডাক্তাররা মাঠে নামতে পাড়ছে না। মার্সেলো আরো বেশি উম্মাদ হয়ে উঠে।
নেইমারকে শেষ পর্যন্ত মাঠ থেকে স্ট্রেচারে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তাৎক্ষণিক মূল্যায়নের জন্য স্টেডিয়ামের মধ্যে মেডিকেল বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়।যন্ত্রণায় কাতর নেইমার, চিকিত্সকরা পিঠে গুরুতর চোট সন্দেহ করছেন। নেইমারকে ফোরতালেজার হাসপাতাল থেকে সাও কার্লোসে স্থানান্তরিত করা হয়েছে, যেখানে ইতোমধ্যে শুভাকাঙ্ক্ষীদের ভিড় বাইরে জড়ো হয়েছে সবাই, তাদের জাতীয় আইকনের অবস্থা জানতে মরিয়া।
কলম্বিয়ার সাথে তো জিতেই গেল কিন্তু সামনে যে প্রতিপক্ষ জার্মানি। আর জার্মানির সাথে সেলেসাওদের যে হেক্সা মিশন নিয়ে নামতে হবে তাদের মধ্যমণিকে ছাড়াই তা নিয়ে আশঙ্কা যে স্পষ্ট।
গুজব অনলাইনে ঘুরতে শুরু করে, সে ঠিক আছে, সে ফাইনালে ফিরতে পারে। না, তার টুর্নামেন্ট শেষ, আরও খারাপ খবর, তিনি হুইলচেয়ারে বসে থাকতে পারেন!’
এদিকে, নেইমার অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন, অনেক পরীক্ষার করা হয়েছে তার ইনজুরি নিয়ে। ডাক্তাররা আসলেন তাদের একজন তাকে বলে, ‘সুসংবাদ এবং দুঃসংবাদ আছে- আপনি প্রথমে কোনটি চান?’
দুঃসংবাদই বেছে নিলেন নেইমার। ‘আপনার বিশ্বকাপ শেষ।’
‘এবং সুসংবাদ?!’ নেইমার জিজ্ঞাসা করেন।
‘আপনি আবার হাঁটবেন। আপনার ভার্টিব্রা ভেঙে গেছে কিন্তু ডানদিকে দুই সেন্টিমিটার গেলেই আপনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যেতেন। আপনার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেত।
নেইমার নিজেকে ধন্য মনে করেন, কিন্তু তাতে চোখের পানি আটকে যায় না। তিনি এবং তার প্রিয়জনরা পরের কয়েক দিন কান্নাকাটি করে কাটিয়েছেন, তার ব্রাজিলকে বিশ্বকাপের গৌরব নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন চোটের কারণে শেষ হয়ে গেছে।
কিন্তু এখানে বিশেষ ভাবে লক্ষ্যণীয় যে ৪ জুলাই ২০১৪ নেইমার যে শারীরিক এবং মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করেছিলেন তা ফুটবল মাঠে তার সবচেয়ে খারাপ রাত হিসাবে স্থান পায় না।
চার বছর পর বেলজিয়ামের কাছে ব্রাজিল বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে হারের জন্য সেই যন্ত্রণা তার জন্য সংরক্ষিত ছিল। নেইমারের জন্য হতাশা যেন আরও গভীরে ছুটেছে। তিনি অনুভব করেছিলেন ব্রাজিলের ২০১৪ সালের চেয়ে ভাল দল ছিল। তারাও ঘরের মাটিতে বিশ্বকাপ জয়ের বিশাল দায়িত্বের বোঝা ছিল না তার কাঁধে। তিনি বিশ্বাস করেছিলেন যে ট্রফিটি সত্যিই নেওয়ার জন্য ছিল।এবং তবুও তারা আবারও ম্লান হয়ে গেল, রোমেলু লুকাকু, অ্যান্ড কোংকে তাদের কথিত নতুন মানসিক শক্তির প্রথম সত্যিকারের পরীক্ষায় ধারণ করতে পারেনি।
‘আমি বলতে পারি এটি আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে দুঃখজনক মুহূর্ত,’ ২-১ হারের পর ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন নেইমার। ব্যথাটি দুর্দান্ত কারণ আমরা জানতাম যে আমরা সেখানে যেতে পারব।
‘আমরা জানতাম আমাদের অনেক দূর যাওয়ার, ইতিহাস গড়ার সুযোগ আছে কিন্তু এবার সেটা হবে না।’
কিন্তু এই সময় কি? কাতার ২০২২ কি নেইমারের জন্য তৃতীয়বারের মতো নিজেকে ভাগ্যবান প্রমাণ করবে? নাকি তার বিশ্বকাপ গল্পের ভাগ্য বেদনা ও খেলা-অভিনয়ের দুঃখের গল্প?
তাকে যে বলা হয় পেলের উত্তরসূরি তা তর্কযোগ্যভাবে লাইনে রয়েছে। তাকে কীভাবে স্মরণ করা হবে তা নির্ধারণ করতে বিশ্বকাপ অবশ্যই একটি দীর্ঘ, দীর্ঘ পথ পাড়ি দেবে। কেননা তার ২০২৬ সালে বিশ্বকাপ খেলার সম্ভাবনা কম।
নেইমারের বয়স হতে পারে মাত্র ৩০ কিন্তু তিনি ইতোমধ্যে স্বীকার করেছেন যে তার মনে হয় না যে তার মধ্যে আরও চার বছর আন্তর্জাতিক ফুটবল আছে।
সেলেসাওদের অধিনায়কত্বের সাথে যে চাপ এবং স্ট্রেস আসে তার সাথে তিনি দীর্ঘ লড়াই করেছেন, গত বছরই উঅতঘ কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন- আমি এটাকে আমার শেষ (বিশ্বকাপ) হিসাবে দেখছি কারণ আমি জানি না ফুটবলের সাথে মোকাবিলা করার মতো মানসিক শক্তি আমার আর আছে কিনা।
যিনি কিশোর বয়সে সান্তোস দলে যোগদানের মুহুর্তে পেলের উত্তরাধিকারী হিসাবে সমাদৃত হন। তাহলে ‘দ্য কিং’-এর ছায়ায় বেঁচে থাকা সহজ ছিল না। তবুও, তিনবারের বিশ্বকাপ জয়ের জন্য বেঁচে থাকার সমস্ত চাপ সত্তে¡ও, নেইমার ব্রাজিলের হয়ে নিয়মিত খেলেছেন। প্রকৃতপক্ষে, বিশ্বকাপে পেলেকে ছাড়িয়ে তার দেশের সর্বকালের শীর্ষ গোলদাতা হিসেবে দখল করার সম্ভাবনা রয়েছে। রেকর্ড সমান করতে নেইমারের দরকার মাত্র দুটি গোল, আর ভাঙতে তিনটি গোল।
সে অন্তত অনেক সুযোগ পাবে। ব্রাজিল ফেভারিট হিসাবে কাতারে পৌঁছেছে এবং আক্রমণাত্মক প্রতিভা নিয়ে এত বিশাল আয়োজন যে কোচ টিটে রবার্তো ফিরমিনোকে বাড়িতে রেখে যেতে হয়েছে।
অবশ্যই, সেলেসাওরা রাশিয়ায় জয়লাভ করার জন্য প্রবলভাবে কল্পনা করেছিল, তবে এটি পরিষ্কার যে ২০১৪ এর দাগ এখনও সেরেনি। তারা এখন জার্মানির কাছে সেই কুখ্যাত ৭-১ ব্যবধানে হারতে পেরেছে কিনা তা ভাবতে পারে।
মধ্যবর্তী আট বছরে অনেক কিছু পরিবর্তিত হয়েছে, কিন্তু ব্রাজিল সম্পর্কে একটি উদ্বেগজনক মানসিক ভঙ্গুরতা রয়ে গেছে, যা আবারও স্পষ্ট হয়েছিল ২০২১ সালের কোপা আমেরিকায় আর্জেন্টিনার কাছে ঘরের মাটিতে পরাজয়ের সময়, এবং যুক্তিযুক্তভাবে তাদের সেরা খেলোয়াড়ের দ্বারা মূর্ত হয়েছে।
কাতারে বিজয়ী হওয়ার প্রতিভা আছে, ব্রাজিলের জন্য উত্সাহজনকভাবে, নেইমার ফিট, ফায়ারিং এবং মনের ফ্রেমে তিনি দীর্ঘদিন ধরে ছিলেন, ফ্রান্সে তার সেরা ফর্মটি যুক্তিযুক্তভাবে উপভোগ করছেন।
একটি তথ্য মতে, প্যারিস সেন্ট-জার্মেই গ্রীষ্মকালে তাকে যেতে দিতে ইচ্ছুক ছিল, কিন্তু নেইমার বিশ্বকাপের কয়েক মাস আগে ক্লাব বদলে ফেলতে নারাজ, ছাড়তে রাজি হননি তিনি।
টুর্নামেন্টের গুরুত্ব নেইমারের কাছে স্পষ্ট। বিশ্বকাপ জেতার এটাই শেষ সুযোগ তার এবং সম্ভবত আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে, তার খ্যাতি পুনরুদ্ধার করার।
ফুটবল
ফুটবলকে বিদায় জানালেন পেপে
সব ধরনের ফুটবল থেকে বিদায় নিলেন পর্তুগালের ডিফেন্ডার পেপে। বৃহস্পতিবার এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তিনি।
সর্বশেষ ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে পর্তুগালের ম্যাচটাই হয়ে রইল ৪১ বছর বয়সী এই ফুটবলারের ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ।
সে ম্যাচে টাইব্রেকারে হেরে বিদায় নিয়েছিল পর্তুগাল। ইউরোর মূলপর্বে সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামার রেকর্ডও গড়েন তিনি।
পর্তুগালের হয়ে ১৪১ ম্যাচ খেলেছেন পেপে। জিতেছেন ২০১৬ ইউরো।
ফুটবল
বাফুফে থেকে পদত্যাগ করলেন সালাম মুর্শেদী
পদত্যাগ করেছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী। তিনি ২০০৮ সাল থেকে পদটিতে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
এছাড়াও সালাম মুর্শেদী বাফুফের অর্থ কমিটি ও রেফারিজ কমিটির প্রধানও ছিলেন। এই দুটি পদ থেকেও তিনি পদত্যাগ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সালাম মুর্শেদীর পদত্যাগের কথা জানায় বাফুফে। সালাম মুর্শেদী খুলনা–৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন।
ফুটবল
চলে গেলেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সংগঠক সাইদুর রহমান প্যাটেল
স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অন্যতম সংগঠক ও উদ্যেক্তা সাইদুর রহমান প্যাটেল মারা গেছেন। বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ছিলেন। হাসপাতালে থাকাকালীন সেসব ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করতেন তিনি। অবশেষে ৭৩ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসের একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন সাইদুর রহমান। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) শোক জানিয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সাইদুর রহমানের অবদান ছিল অনস্বীকার্য। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন স্থানে তহবিল তুলতেন সাইদুর রহমানরা। তারা ভারতে ঘুরে ঘুরে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের হয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলতেন। সেখান থেকেও তহবিল সংগ্রহ করতো এই দলটি।
একজন ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রাখার লক্ষ্য নিয়েই স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠন করার উদ্যেগ নিয়েছিলেন সাইদুর রহমান প্যাটেলরা। এখানে খেলে যে অর্থ উত্তোলন হবে, তা মুক্তিযুদ্ধের জন্য গঠিত তহবিলে প্রদান করা হবে; এমনই ছিল স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সেসময়ের ভাবনা।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ইচ্ছা ছিল সাইদুর রহমানের। সবশেষ সাধারণ নির্বাচনের আগেই অবশ্য চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাতে হয় তাকে। সেখানে লম্বা সময় ধরে চিকিৎসা নেওয়ার পর আর দেশে ফিরতে পারলেন না তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতেই নিজের জীবনের শেষ সময়টুকু কাটালেন।
সাইদুর রহমানের জন্ম ১৯৫১ সালের ৭ অক্টোবর। তিনি ঢাকার কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। পরে অবশ্য গেন্ডারিয়ায় চলে যায় তার পরিবার। গেন্ডারিয়াতেই বেড়ে উঠেছেন, স্থানীয় পর্যায়ে ফুটবল খেলতে খেলতে শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলেও নিজের জায়গা করে নেন। তিনি ঢাকার ইস্টএন্ডের হয়ে ফুটবল খেলেছেন। দ্বিতীয় বিভাগে ফরাশগঞ্জের হয়ে, প্রথম বিভাগে পিডব্লুডি’র হয়ে খেলেছেন সাইদুর রহমান প্যাটেল।
এম এইচ//
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন