আমদানি-রপ্তানি
চার মাসে ৯৫৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার বাণিজ্য ঘাটতি
আমদানির চেয়ে রপ্তানি আয় কম হওয়ায় চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরের শুরু থেকে বড় অঙ্কের বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দেয়। গেলো অক্টোবর মাস নিয়ে টানা চার মাস বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়তে হয় দেশকে। এ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-আগস্ট-সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) মোট বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৫৮ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার। এসময় বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) এ তথ্য উঠে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি অর্থবছরের টানা তিন মাসে (জুলাই-আগস্ট-সেপ্টেম্বর) বড় অঙ্কের বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিলেও অক্টোবরে ঘাটতির পরিমাণ কিছুটা কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এলসি খোলা নিয়ে নানা পদক্ষেপের কারণে এমন সফলতা এসেছে। তাদের মতে, অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করায় ধীরে ধীরে আমদানি ও রপ্তানির ব্যবধান কমে আসছে। আগামীতে ঘাটতি আরও কমে আসবে বলে আশা প্রকাশ তাদের।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) দুই হাজার ৫৫০ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। একই সময়ে আমদানির বিপরীতে দেশ থেকে মোট এক হাজার ৫৯১ কোটি ৮০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। মোট আমদানি ও রপ্তানির হিসাবে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৯৫৮ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার।
অর্থবছরের গেলো চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতিও বেড়েছে। এসময়ে অর্থাৎ অক্টোবর শেষে সেবা খাতে দেশের আয় ২৯৭ কোটি ডলার আর ব্যয় হয়েছে ৪৩৩ কোটি ১০ লাখ ডলার। অর্থাৎ সেবা খাতের ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩৬ কোটি ১০ লাখ ডলার। গেলো ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে এ খাতের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৯৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে চলতি হিসাবের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪৫০ কোটি ১০ লাখ ডলার। গেলো ২০২১-২২ অর্থবছরে একই সময়ে (প্রথম চার মাস) এ ঘাটতি ছিল ৩৮৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। গেলো অর্থবছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরের চার মাসে চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়েছে ৬৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকেই দেশে ডলার সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্স কমছে ধারাবাহিকভাবে। ডলার সংকট কাটাতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার ছেড়ে চাপ সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে রিজার্ভের পরিমাণও কমছে ধারাবাহিকভাবে। গেলো নভেম্বরের শুরুতে রিজার্ভ ৩৪ দশমিক ৭২ বিলিয়ন থাকলেও নভেম্বরের শেষ দিকে তা কমে ৩৩ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি নেমে আসে।
এসব সংকটের মধ্যেই বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস প্রবাসী আয় ও রপ্তানিতে বড় ধাক্কা লেগেছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই ও আগস্ট) টানা ২ বিলিয়ন ডলার করে রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। এর পরের মাস সেপ্টেম্বর থেকে টানা তিন মাস তা কমে দেড় বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে আসে।
সবশেষ, সদস্য বিদায়ী নভেম্বর মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৫৯ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা হিসাবে) ১৭ হাজার ৬৩ কোটি টাকার বেশি। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার, আগস্টে ২০৩ কোটি ৬৯ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বরে ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলার আর অক্টোবরে আসে ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার।
অন্যদিকে পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ নিশ্চিতে আমদানিতে সর্বোচ্চ সহায়তা করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য ব্যাংকগুলোকে নিত্যপণ্যের (ভোজ্যতেল, ছোলা, ডাল, পেঁয়াজ, খেজুর, ফলমূল এবং চিনিসহ অন্যান্য পণ্য) এলসি সহজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে অপ্রয়োজনীয় এলসি খোলা বন্ধ রয়েছে। তবে রমজানে প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের আমদানি অর্থায়নের ক্ষেত্রে মার্জিনের হার ন্যূনতম পর্যায়ে রাখার জন্যও পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
অর্থনীতি
একমাসে পায়রা বন্দরে রাজস্ব আয় অর্ধশত কোটি টাকা
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় দেশের আমদানি রপ্তানিতে স্থবিরতা বিরাজ করলেও। ব্যতিক্রম ছিল পটুয়াখালীর পায়রা সমুদ্র বন্দর। চলতি মাসে মোট ৮টি জাহাজ বন্দরে পণ্য খালাস করেছে। যা থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে অর্ধশত কোটি টাকা।
গেলো বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) পায়রা সমুদ্র বন্দরে কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল আব্দুল্লাহ আল-মামুন চৌধুরী গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
জানা যায়, সবশেষ বন্দরের ইনার এ্যাঙ্করে নিরাপদে কয়লা খালাস করছে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে ছিনতাই হওয়া সেই জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ। এ কয়লা দিয়েই সচল রয়েছে পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
বন্দরের ট্রাফিক বিভাগের উপ-পরিচালক আজিজুর রহমান জানান, গেলো ১৮ জুলাই থেকে বন্দরে সি স্পিরিট এবং এমভি আব্দুল্লাহ নামে দুটি মাদার ভেসেল পায়রা বন্দরে আগমন করেছে। এছাড়া ১৯ জুলাই এমভি ব্রাইট নামে একটি জাহাজ কয়লা খালাস করে বন্দর ত্যাগ করেছে।
পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জানান, সরকারের জারি করা কারফিউয়ের মধ্যেও বন্দরের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পে প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছেন। শ্রমিকদের নিরাপত্তা সহ বন্দরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তায় বন্দরের ৩১ জন নিরাপত্তাকর্মী, ৪৮ জন আনসার সদস্য এবং নৌ বাহিনীর ৪২ জন সদস্য কাজ করছেন।
উল্লেখ্য, বন্দর সচল রাখতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করায় এখন পর্যন্ত বন্দরে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
আই/এ
আমদানি-রপ্তানি
২৬০ কোটি টাকার এমওপি সার কিনবে সরকার
কানাডার কানাডিয়ান কমার্শিয়াল কর্পোরেশন থেকে দুই লটে ৮০ হাজার টন এমওপি সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। সার ক্রয়ে মোট ব্যয় হবে ২৬০ কোটি ০৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে এ সার আমদানি করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বিকেলে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়৷
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের (সমন্বয় ও সংস্কার) সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান জানান,৩য় লটে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় এ সার আনতে ব্যয় হবে ১৩০ কোটি ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। প্রতি টনের দাম পড়বে ২৭৫.৫০ মার্কিন ডলার।
এছাড়া চতুর্থ লটে ৪০ হাজার টন এমওপি সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ১৩০ কোটি ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। প্রতি টনের দাম পড়বে ২৭৫.৫০ মার্কিন ডলার।
আই/এ
অর্থনীতি
রপ্তানি আয়ের গরমিল নিয়ে যা বললেন সালমান এফ রহমান
বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সমন্বয়ের অভাব আছে। ইপিজেড থেকে যে পরিমাণ পণ্য রফতানি হয়েছে, ইপিবি তা ডাবল গণনা করায় রপ্তানি আয়ের তথ্যে গরমিল হয়েছে। বললেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
রোববার (৭ জুলাই) রাজধানীর একটি হোটেলে এক সেমিনারে এসব কথা বলেন সালমান এফ রহমান।
প্রধানমন্ত্রীর এ উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাজই হচ্ছে যারা বেশি রাজস্ব দেয় তাদের ওপর আরও ট্যাক্সের বোঝা চাপানো। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এনবিআরকে ডিজিটালাইজড করা গেলে এ প্রবণতা কমবে।
গেলো ৩ জুলাই ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ের ব্যালেন্স অব পেমেন্ট প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর এতে পরিষ্কার হয় ইপিবি দীর্ঘদিন ধরে রপ্তানি আয় ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখিয়েছে। এনবিআরের সংশোধিত পদ্ধতিতে গেলো অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণের তথ্যে এ প্রমাণ মেলে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি ডলারের পণ্য জাহাজীকরণ করা হয়েছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬.৮০ শতাংশ কম। অথচ ইপিবি বলছে, এপ্রিল পর্যন্ত রপ্তানি হয়েছে ৪ হাজার ৭৪৭ কোটি ডলারের পণ্য। অর্থাৎ, পণ্য জাহাজীকরণেই পার্থক্য ১৩.৮০ বিলিয়ন ডলার।
আই/এ
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন