আন্তর্জাতিক
দুই বেলা ভাত আলু ডাল খেয়ে থাকছেন লঙ্কানরা
দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় গত এক বছর ধরে চলছে চরম অর্থনৈতিক দুরাবস্থা। এর প্রভাব পড়েছে দেশটির প্রত্যেক সাধারণ মানুষের ওপর। বর্তমানে পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, পর্যাপ্ত খাবার কেনার সামর্থ্যও অনেকের নেই।
বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ-পশ্চিমের অঞ্চল ক্যান্ডির হানথালা নামক একটি গ্রামের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরেছে।
চা বাগান সমৃদ্ধ হানথালা গ্রামের হার্সিনি নামের এক নারী সংবাদমাধ্যমটিকে জানিয়েছেন, তাদের তিন বেলা খাবার খাওয়ার সামর্থ্যও নেই। এখন দুই বেলা খাচ্ছেন। তাও শুধুমাত্র ভাত ডাল আর আলু। আরেক বেলা না খেয়ে থাকছেন।
প্রতিদিনই এসব খাবার খাওয়ায় তার তিন বছরের ছোট মেয়ে নিতিশার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। তিনি জানিয়েছেন, মেয়ে নিতিশাকে পর্যাপ্ত খাবার দিতে না পারায় সে এখন পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। তবুও মা হিসেবে কিছু করতে পারছেন না তিনি।
হার্সিনি আরও জানিয়েছেন, গত কয়েক সপ্তাহে ডিম অথবা দুধের দেখা পাননি তারা। অথচ মাত্র এক মাস আগে আরেক মেয়ের জন্ম দিয়েছেন তিনি।
অর্থনৈতিক দুরাবস্থার কারণে আয় কমে যাওয়ায় খাবার কেনার মতো পর্যাপ্ত অর্থও বেশিরভাগ মানুষের কাছে নেই। এ কারণে বাধ্য হয়ে শিশুদেরসহ ক্ষুদার্থ থাকতে হচ্ছে অনেক পরিবারকে।
হার্সিনির গ্রামের অনেক শিশুই পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। ওই অঞ্চলের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার না পাওয়ায় দিন দিন বাড়ছে এ সংখ্যা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চিকিৎসক বলেছেন, ‘অপুষ্টির প্রভাব প্রকাশ হতে সময় লাগে। বর্তমানে বেশিরভাগ শিশু প্রাকৃতিকভাবে শরীরে যে পুষ্টি মজুদ থাকে সেগুলো ব্যবহার করে টিকে আছে। কিন্তু অব্যাহতভাবে এরকম চলতে থাকলে ভবিষ্যতে এর লম্বা প্রভাব পড়বে।’
বিশ্ব খাদ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে শ্রীলঙ্কার চার ভাগের তিন ভাগ মানুষের খাদ্য কেনার মতো নিরাপদ আয়ের ব্যবস্থা নেই। ফলে পুরো জনসংখ্যার ৭০ ভাগ মানুষ তাদের খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন।
অপুষ্টি এবং মা
খাবার কেনার সামর্থ্য কমে যাওয়ার বিষয়টির বিরুপ প্রভাব পড়েছে গর্ভবতী নারীদের ওপর। হানথানা গ্রামের ২৪ বছর বয়সী কাঞ্চনা নামে এক নারীর সঙ্গে কথা বলে বিবিসি। তিনি জানান, চার মাসের গর্ভবতী তিনি। সবকিছু ঠিক থাকলে জমজ সন্তানের জন্ম দেবেন। কিন্তু তার কপালেও জুটছে না পুষ্টিকর খাবার।
কাঞ্চনা বলেন, ‘জমজ সন্তানের কারণে আমি প্রায়ই ক্ষুদার্থ হই। এ কারণে ভাত খাই। ডিম, মাছ হলে ভালো হতো। কিন্তু এগুলোর দাম বেশি। আমাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ওষুধ এবং দামি খাবারের মধ্যে যে কোনো একটিকে বেঁছে নিতে হয়।’
দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আরেকটি গ্রামে দেবি নামের অপর এক গর্ভবতী নারী বিবিসিকে জানান, তার শরীর তেমন ভালো না এবং ওজন অনেক কম। কিন্তু পুষ্টিকর খাবার কেনার সামর্থ নেই। বর্তমানে সরকারি হাসপাতাল থেকে ভিটামিন ওষুধ ও ভাত খেয়ে থাকতে হচ্ছে তাকে। বিবিসির সঙ্গে আরও ১০ জন নারীও একই কথা বলেছেন।
আগে গর্ভবতী নারীদের সরকারের পক্ষ থেকে পুষ্টিকর ভিটামিনের প্যাকেট দেয়া হলেও অর্থ সংকটের কারণে সেটিও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
ক্ষুধার্ত পেটে স্কুলে যাচ্ছে শিশু শিক্ষার্থীরা
শ্রীলঙ্কার দক্ষিণাঞ্চল মাথুগামার একটি গ্রামের স্কুলে শিক্ষকতা করেন আনোমা শ্রীয়াঙ্গি ধর্মবর্ধনে। তার সঙ্গে কথা বলে বিবিসি। তিনি সংবাদমাধ্যমটিকে জানিয়েছেন, তার স্কুলে অনেক শিশু আছে যারা সকালে কিছু না খেয়ে ক্লাস করতে আসে। গত তিন চার মাস আগেও ২০-২৫ জন শিশু ক্ষুধার কারণে অজ্ঞান হয়ে যেত। এ সমস্যা সমাধানে ব্যক্তিগতভাবে অনেকে এগিয়ে এসেছেন। এখন এভাবেই চলছে তাদের কার্যক্রম।
শ্রীলঙ্কার ফুড ফার্স্ট ইনফরমেশন এন্ড একশন নেটওয়ার্কের (এফআইএএন) প্রেসিডেন্ট এস ভিসভালিঙ্গাম জানিয়েছেন, খাবার না পাওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছেন। তবে এসব সমস্যা সমাধানে কাজ করছেন তারা।
সূত্র: বিবিসি
আন্তর্জাতিক
যুক্তরাষ্ট্র অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত : মার্কিন মুখপাত্র
অন্তর্বর্তী সরকার এবং ড. ইউনূসের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের জনগণের জন্য গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে বলে জানিয়েছেন, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শপথ নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মিলার বলেন, বাংলাদেশের জন্য আজ একটি শুভ দিন। নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস সবেমাত্র বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র এ সরকারকে অভিননন্দ জানিয়েছে কি না এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ ডি’অ্যাফেয়ার্স আজ শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং তারা সাম্প্রতিক সহিংসতা বন্ধের জন্য ড. ইউনুসের আহ্বানকে স্বাগত জানাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, এসময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের যোগাযোগ হয়েছে বলেও জানান ম্যাথিউ মিলার। তবে কোন বিষয়ে যোগাযোগ হয়েছে তিনি সে বিষয়ে বিস্তারিত বলেন নি।
আই/এ
এশিয়া
জাপানে ৭.১ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প
জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকায় রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ১ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ৪৩ মিনিটের দিকে পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রধান দ্বীপ কিয়ুশুর মিয়াজাকি অঞ্চলে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে।
জাপানের আবহাওয়া সংস্থার (জেএমএ) বরাত দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম এনএইচকে ওয়ার্ল্ড এ তথ্য জানিয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পের পর দেশটিতে সুনামির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। মিয়াজাকিতে সমুদ্রের ঢেউ ইতোমধ্যে ৫০ সেন্টিমিটারে পৌঁছেছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি কিংবা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে দেশটির মন্ত্রিপরিষদের মুখ্য সচিব ইয়োশিমাসা হায়াশি গণমাধ্যমকে বলেন, ভূমিকম্পের পর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্ল্যান্টগুলোতে কোনো ধরনের অস্বাভাবিক ঘটনা দেখা যায়নি। সরকার ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে।
প্রসঙ্গত, জাপানে ভূমিকম্পের ঘটনা একেবারে সাধারণ। বিশ্বে ৬ বা তার চেয়ে বেশি মাত্রার ভূমিকম্পের প্রায় এক-পঞ্চমাংশই এদেশে ঘটে থাকে।
এর আগে, ২০১১ সালের ১১ মার্চ দেশটির উত্তর-পূর্ব উপকূলে ৯ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। যেটি ছিলো জাপানের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। ওই সময় ভূমিকম্পের পর দেশটিতে বিশাল সুনামি আঘাত হানে।
সূত্র: রয়টার্স
জিএমএম/
আন্তর্জাতিক
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জনগণের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে হবে: যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নয়নের ব্যাপারটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেনো গণতন্ত্র, আইন ও বাংলাদেশি জনগণের আকাঙ্খা পূরণ করে-এমনটাই চাইছে যুক্তরাষ্ট্র।
স্থানীয় সময় বুধবার (৭ আগস্ট) ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে যুক্তরাষ্ট্রে এমনটাই আশা করে বলে জানিয়েছেন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। এদিন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ইরাকের এক সাংবাদিক জানতে চান, ‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে তার বা অন্যদের সঙ্গে আপনাদের যোগাযোগ হয়েছি কী? বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা পরিস্থিতিকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?’
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘আমরা এখনও যোগাযোগ করেনি। আমরা বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখছি এবং আমরা এরইমধ্যে দেখেছি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি তার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আপনি নিশ্চয়ই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলতে শুনেছেন যে. অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে তা যেনো গণতান্ত্রিক নীতিমালাকে, আইনের শাসন এবং সিদ্ধান্তে বাংলাদেশি জনগণের ইচ্ছা প্রতিফলিত হয়।
এসময় যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী একটি প্রশ্ন করেন। তার প্রশ্নটি ছিল, আপনি কি জানেন যে স্বৈরশাসক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করে নতুন সরকারকে হুমকি দিচ্ছেন, সহিংসতা উসকে দিচ্ছেন? তিনি সাবেক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন যিনি বাংলাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছিলেন। দয়াকরে তার ব্যাপারে আপনার মন্তব্য জানাবেন কী?’
জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘একজন সাধারণ নাগরিকের বিবৃতি নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। আমি এরইমধ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কথা বলেছি এবং আমরা দেখতে চাই এই সরকার কী পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যায়।
এসময় মুশফিকুল ফজল আনসারী আরও জানতে চান, ‘দেশের শান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে প্রত্যাশা নিয়ে আপনার কী মন্তব্য?
জবাবে ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেটের মুখপাত্র বলেন, শনের প্রশ্নের উত্তরে আমি যেমনটি বলেছি – অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, আমরা দেখতে চাই ওই সিদ্ধান্তে যেনো গণতান্ত্রিক নীতি মেনে চলা হয় এবং জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ওই ব্রিফিংয়ে ফিলিস্তিনের গাজা, দক্ষিণ আমেরিকার ভেনিজুয়েলা, ইরাক ও ইরানের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।
এমআর//
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন