জাতীয়
হেলমেট না পরলে ১০ হাজার, মোবাইলে কথা বললে ৫ হাজার জরিমানা
সড়ক পরিবহন আইনে বলা আছে, কোনো মোটরযানের কারণে দুর্ঘটনায় কেউ আঘাতপ্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে কিংবা মারা গেলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা তার পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ বা চিকিত্সা খরচ দিতে হবে। কিন্তু এত দিন বিধিমালা না হওয়ায় সেটা কার্যকর হয়নি। এখন বিধিমালা জারি হওয়ায় দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা সেটা দাবি করতে পারবে।
সড়ক পরিবহন আইনের ৫৩ ধারায় বলা হচ্ছে, ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য আর্থিক সহায়তা তহবিল নামে একটি তহবিল গঠন করা হবে। এই তহবিল পরিচালনা করতে প্রত্যেক মোটরযানের বিপরীতে মালিকদের কাছ থেকে বার্ষিক বা এককালীন চাঁদা আদায় করা হবে। মোটরযান মালিক বা প্রতিষ্ঠান তহবিলে এই চাঁদা দিতে বাধ্য।
বিধিমালায় বলা হয়েছে, হেলমেট না পরলে জরিমানা সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা, গাড়ী চালানোর সময় মোবাইলে কথা বলার জরিমানা সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা, বেপরোয়া গাড়ী চালিয়ে কাউকে আহত করলে জরিমানা ৩ লাক্ষ টাকা বা ৩ বছরের কারাদণ্ড।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, আইনের কঠোর বাস্তবায়ন না হলে দুর্ঘটনা কমবে না। এত দিন তো মানুষ ক্ষতিপূরণও চাইতে পারত না। এখন অন্তত নিজের অধিকার দাবি করতে পারবে।
সড়ক পরিবহন বিধিমালা ২০২২-এর ‘দুর্ঘটনার জন্য ক্ষতিপূরণ, চিকিত্সা এবং বীমা’ শীর্ষক অষ্টম অধ্যায়ে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে। যান মালিকদের চাঁদা দিয়ে আর্থিক সহায়তা তহবিল গঠন করতে বলা হয়েছে। বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান মালিকরা বার্ষিক এক হাজার ৫০০ টাকা চাঁদা দেবেন। মিনিবাস, পিকআপ ৭৫০ টাকা, কার-মাইক্রোবাস ৫০০ টাকা এবং তিন চাকার যানের মালিকরা ৩০০ টাকা চাঁদা দেবেন। এ ছাড়া মোটরসাইকেল মালিকরা এককালীন এক হাজার টাকা চাঁদা দেবেন।
তহবিলের বিপরীতে বিআরটিএর চেয়ারম্যান, পরিবহন মালিক, শ্রমিক, বিশিষ্ট ব্যক্তিসহ ১২ জন ব্যক্তি নিয়ে একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হবে। দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে ওই ব্যক্তি বা তার পরিবারের পক্ষ থেকে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করতে হবে। পরবর্তী ১০ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনার সত্যতা খুঁজে পেলে ৩০ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণের টাকা দিতে হবে।
২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সড়ক পরিবহন আইন পাস করে সরকার। ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর থেকে আইনটি কার্যকর করা হয়। লম্বা সময় পেরিয়ে সড়ক পরিবহন বিধিমালা চূড়ান্ত করেছে সরকার। ফলে এখন সড়ক আইন শতভাগ কার্যকরে আর কোনো বাধা থাকছে না। এই বিধিমালাকে ‘সড়ক পরিবহন বিধিমালা ২০২২’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। এতে তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ২৭ ডিসেম্বর। ফলে এই তারিখ থেকে বিধিমালা কার্যকর বলে বিবেচনা করা হবে। সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ পাস হওয়ার প্রায় চার বছর পর বিধিমালা জারি করা হলো।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, আমিও আজ রাতেই বিধিমালার একটি কপি পেয়েছি। এতে অবিলম্বে কার্যকরের কথা উল্লেখ আছে। এখন আইন প্রয়োগ আরো কার্যকর হবে।
এদিকে চালক নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শ্রেণির মোটরযান চালাতে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গণপরিবহন চালাতে অনুমতিপত্র (পিটিএ) এবং কন্ডাক্টর বা সুপারভাইজার নিয়োগের ক্ষেত্রে কন্ডাক্টর বা সুপারভাইজার লাইসেন্স থাকতে হবে বলে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া গণপরিবহনে চালক, কন্ডাক্টর বা সুপারভাইজার নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ডোপটেস্ট সনদ থাকতে হবে। বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (২০০৬ সালের ৪২ নম্বর আইন) অনুযায়ী নির্ধারিত বেতন ও আর্থিক সুবিধাদি দিতে হবে। ২০ বছরের কম বয়সী কোনো ব্যক্তি কন্ডাক্টর বা সুপারভাইজার লাইসেন্স নিতে পারবে না বা এমন কোনো ব্যক্তির কন্ডাক্টর বা সুপারভাইজারের লাইসেন্স মঞ্জুর করা যাবে না বলা হয়েছে বিধিমালায়। মোটরযানে রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদি ব্যবহার করার বিষয়ে বলা হয়েছে, বাস বা মিনিবাসে চালক ছাড়া প্রত্যেক যাত্রীর আলাদাভাবে শ্রবণের জন্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস স্থাপন করা যাবে। তবে জনগণের বিরক্তি সৃষ্টি হয় এমন কোনো রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদি কোনো মোটর কার, জিপ ও মাইক্রোবাসে চালানো যাবে না।
বিধিমালায় ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির শর্তে বলা হয়েছে, ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণি বা জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। দাখিল করতে হবে মেডিক্যাল সার্টিফিকেট। মোটরযান চালাতে দক্ষতা যাচাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
বিধিমালা প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, এক রায়ে উচ্চ আদালতের অবজারভেশনে চালকদের শিক্ষাগত যোগ্যতার কথা মাধ্যমিক (এসএসসি) পর্যন্ত বলা হয়েছিল। কিন্তু এখানে অষ্টম শ্রেণি পাস দিয়েছে। বিধিমালায় আবার অতিরিক্ত ক্ষমতা ট্রাফিক পুলিশকে দিয়েছে। ট্রাফিক চাইলে লাইসেন্স স্থগিত করতে পারবে। এতে জটিলতা ও দুর্নীতি দুটিই বাড়বে।
বর্তমান আইনের ১০৫ নম্বর ধারায় দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তি গুরুতর আহত বা নিহত হলে দায়ী ব্যক্তির সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাওয়া থেকে আহতদের বাদ দেয়া হচ্ছে। আর নিহত ব্যক্তির পরিবারকে পাঁচ লাখের পরিবর্তে তিন লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব করা হচ্ছে।
জাতীয়
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানালেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা
শপথ নেয়ার পরের দিন ভাষা শহীদদের স্মরণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৩ জন উপদেষ্টা নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এর আগে, সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ও অন্য উপদেষ্টারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি এক নতুন বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।
আই/এ
জাতীয়
উপদেষ্টা পরিষদকে অভিনন্দন জানালেন জাসদ
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস এবং অন্য উপদেষ্টাদেরকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন
বৃহস্পতিবার ( ৮ আগস্ট ) রাতে দলের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ অভিনন্দন জানান তারা।
বিবৃতিতে জানানো হয়, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর দেশে আর একটিও প্রাণহানি, হামলা ও সম্পদ ধ্বংসের ঘটনা যেন না ঘটে তা নিশ্চিত হবে।”
বিবৃতিতে আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিসহ সংবিধানকে সমুন্নত রেখে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির সাথে আলোচনা করে সরকারের কর্ম পরিকল্পনার রূপরেখা দ্রুত প্রকাশ করে বিদ্যমান অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা প্রশমিত করবেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রাথমিক ও প্রধান কাজ হিসেবে অনতিবিলম্বে দেশে আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জনজীবনে স্বাভাবিকতা ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
জাসদ নেতৃবৃন্দ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ, সাংবাদিক পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
জাসদ জোর দাবি জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পূর্ববর্তী সরকারের পদত্যাগের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ পেশাজীবী ও হিন্দু ও আহমদীয়াসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও হত্যা করা, মন্দিরসহ ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে ও নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে হামলা-হত্যা-নির্যাতন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ, সংসদ ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন-বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে হামলা, লুটপাট, জ্বালিয়ে ছারখার, দেশের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, সাত বীরশ্রেষ্ঠর ভাস্কর্যসহ ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ও ম্যুরাল ভেঙে ফেলা এবং কুমিল্লার বীরচন্দ্র পাঠাগার, সুনামগঞ্জের ঐতিহ্য জাদুঘর, কুড়িগ্রামের উত্তরবঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ময়মনসিংহের ঐতিহাসিক শশীলজের ভেনাস ভাস্কর্য ভেঙে ফেলাসহ অগনিত শিল্পকর্ম ভেঙে ফেলার সব অপরাধ কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার।
জেডএস/
জাতীয়
তদবির থেকে বিরত থাকুন, দেশগঠনে পরামর্শ দিন : আসিফ মাহমুদ
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে ১৭ সদস্যের অন্তবর্তীকালীন সরকার। এ উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুইজন প্রতিনিধি। এদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ। তিনি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়ার পর ঘনিষ্ঠজনদের নিজেদের সুবিধার জন্য কোনো আবদার কিংবা তদবির করতে বারণ করেছেন। বরং দেশগঠনে কোনো পরামর্শ থাকলে দেয়ার অনুরোধ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্ট করে এ অনুরোধ করেন।
পোস্টে এই তরুণ উপদেষ্টা লিখেছেন, ব্যক্তিগত লাভের আশায় আবদার, তদবির করা থেকে বিরত থাকুন। এতে করে আমার সাথে আপনার সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। দেশগঠনে পরামর্শ থাকলে জানাবেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৭ জনকে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ঢাকার বাইরে থাকায় তিন উপদেষ্টা ফারুক-ই-আযম, বিধান রঞ্জন রায় এবং সুপ্রদীপ চাকমা শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি।
সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়া অন্যান্য উপদেষ্টারা হলেন- ১. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ২. ড. আসিফ নজরুল ৩. আদিলুর রহমান খান ৪. হাসান আরিফ ৫. তৌহিদ হোসেন ৬. সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান ৭. মো. নাহিদ ইসলাম ৮. আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ৯. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন ১০. সুপ্রদীপ চাকমা ১১. ফরিদা আখতার ১২. বিধান রঞ্জন রায় ১৩. আ.ফ.ম খালিদ হাসান ১৪. নুরজাহান বেগম ১৫. শারমিন মুরশিদ ১৬. ফারুক-ই-আযম।
জেএইচ
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন