চট্টগ্রাম
অন্যের পরিচয়ে ২২ বছর কারারক্ষীর চাকরি করা তাজুল গ্রেপ্তার
কুমিল্লায় পরিচয় গোপন রেখে একজনের স্থলে আরেকজন দীর্ঘ ২২ বছর কারারক্ষী পদে চাকরি করার পর অবশেষে তাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব ১১ সিপিসি-২।
গেলো বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) বিকেলে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বাজার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত প্রতারক মো. তাজুল ইসলাম (৪২) ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের দক্ষিণ শশীদল গ্রামের মৃত কালা মিয়ার ছেলে। আজ শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) সকালে র্যাব ১১ সিপিসি-২ এর কোম্পানি অধিনায়ক মেজর সাকিব হোসেন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০০১ সালে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের কারারক্ষী পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেন হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর থানার শাহজাহানপুর গ্রামের মো. নুর উদ্দিন খানের ছেলে মঈন উদ্দিন খান। সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। পরে নিয়োগপত্র ডাকযোগে ঠিকানায় পৌঁছে যাওয়ার কথা থাকলেও কারা কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরিচয়ে মঈন উদ্দিন খানের বাড়িতে যান তাজুল ইসলামসহ আরও দুজন। এ সময় মঈন উদ্দিন খানের কাছে টাকা দাবি করে বলেন, টাকা দিলে নিয়োগপত্র দেয়া হবে। সে সময় মঈন উদ্দিন খান ঘুষ দিয়ে চাকরি করবে না বলে সাফ জানিয়ে দিলে এই সুযোগ কাজে লাগায় প্রতারক তাজুল ইসলাম। নিজের নাম-পরিচয় পাল্টে তিনি হয়ে যান মঈন উদ্দিন খান। কারারক্ষী হিসেবে চাকরি শুরু করেন নকল মঈন খান।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এরই মধ্যে জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন প্রাপ্তির জন্য জাতীয় পরিচয় পত্রের প্রয়োজন হলে প্রতারক প্রকৃত মঈন উদ্দিন খানের নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে একটি জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি করেন। সে সময় তিনি সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে কর্মরত ছিলেন।
দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর ২০২০ সালের শেষ দিকে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক প্রিন্ট মিডিয়াসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সংবাদে প্রকাশিত হয় যে, সিলেট বিভাগে প্রায় ২০০ জন কারারক্ষী সিলেটের স্থায়ী বাসিন্দা না হয়েও প্রায় ২০/২২ বছর যাবত চাকরি করে আসছে। সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর সিলেট বিভাগে কর্মরত প্রত্যেক কারারক্ষীর ঠিকানা যাচায়ের জন্য তথ্য সংগ্রহ শুরু করে। তেমনিভাবে প্রকৃত মঈন উদ্দিন খানের ঠিকানা যাচাইয়ের লক্ষ্যে কারা উপ-মহাপরিদর্শক, সিলেট কার্যালয় থেকে শাহাজাহানপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবর একটি পত্র পাঠানো হয় এবং মঈন উদ্দিন খান সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দা কিনা এ ব্যাপারে একটি প্রত্যয়নপত্র প্রেরণের জন্য বলা হয়। পত্র প্রাপ্তির পর শাহাজাহানপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান প্রত্যয়নপত্রে উল্লেখ করেন- মঈন উদ্দিন খান, বাবা-মো. নুর উদ্দিন, গ্রাম-শাহজাহানপুর, ডাকঘর-তেলিয়াপাড়া, থানা-মাধবপুর, জেলা-হবিগঞ্জ এই পরিচয়ে যাকে তিনি চেনেন তিনি স্থানীয় একটি ফার্মেসিতে ওষুধের ব্যবসা করেন। চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত সার্টিফিকেটের বিষয়ে জানার পর প্রতারক তাজুল গেলো ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখ হতে ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখ পর্যন্ত ৫ দিনের নৈমিত্তিক ছুটিতে গমন করেন এবং ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে তার যোগদান করার কথা থাকলেও সে ইতোমধ্যে তার কিছু নিকট সহকর্মীদের মাধ্যমে জানতে পারে কারা কর্তৃপক্ষ তার ভুয়া ঠিকানার ব্যাপারে জেনে গেছে। তাই সে যোগদান থেকে বিরত থাকেন। এ প্রেক্ষিতে কারা কর্তৃপক্ষ গেলো ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে তাকে ছুটি হতে যোগদান না করলে চাকরিচ্যুত করার বিষয়টি অবগত করলে সে যোগদান না করে অতিবাস করতে থাকেন।
পরবর্তীতে ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর মঈন উদ্দিন খান বিভাগীয় দপ্তরে চাকরিতে যোগদানের জন্য একটি আবেদনপত্র প্রেরণ করেন। যেখানে উল্লেখ করেন তিনি কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে কারারক্ষী হিসেবে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হন এবং তার ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হলেও কোন যোগদানপত্র পাননি। বিষয়টি প্রতারক তাজুল জানতে পারে ও তিনি শাহাজাহানপুরে মঈন উদ্দিন খানের দোকানে গিয়ে তাকে বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দেয় এবং সত্য ঘটনা প্রকাশ না করার জন্য বলে। কিন্তু মঈন উদ্দিন খান হুমকির তোয়াক্কা না করে বিষয়টি উন্মোচন করে দেবে বলে জানালে প্রতারক তাজুল ইসলাম মঈন উদ্দিন খানকে ১০ লাখ টাকা প্রদানের প্রস্তাব দেন। কিন্তু প্রকৃত মঈন উদ্দিন খান তার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। পরবর্তীতে মঈন উদ্দিন খান চাকরি পেতে উচ্চ আদালতের দারস্থ হন। এরই মধ্যে কারা কর্তৃপক্ষের পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, কারা কর্তৃপক্ষের তদন্ত কার্যক্রমে সংগৃহীত কাগজপত্রাদি পর্যালোচনা, সাক্ষীদের সাক্ষ্য, জাল শিক্ষা সনদ ব্যবহার করে চাকরিতে বহাল থাকা ও স্থানীয় বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে সাক্ষাতে প্রাপ্ত তথ্য, ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করা, প্রকৃত মঈন খানকে হুমকি-ধামকি দিয়ে সত্যতা ধামাচাপা দেয়াসহ বিভিন্ন লোমহর্ষক তথ্য প্রমাণিত হয়। আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চাকরিরত প্রতারক কারারক্ষীকে গেলো ২০ নভেম্বর ২০২১ তারিখ তদন্ত কমিটির নিকট উপস্থিত হওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলে সে কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করে আত্নগোপনে চলে যান। পরবর্তীতে ৪ আগস্ট ২০২২ তারিখে অন্যের ঠিকানা-পরিচয় ব্যবহার করে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে চাকরিরত থাকায় তার বিরুদ্ধে এস.এম.পি এর জালালাবাদ থানায় মামলা করা হয়। যেহেতু কারা কর্তৃপক্ষের নিকট এই প্রতারকের প্রকৃত ঠিকানা ছিল না তাই তারা মামলায় আসামির নাম মো. মঈন খান এবং অন্যান্য তথ্যাদি অজ্ঞাত দিয়ে একটি মামলা রুজু করে। মামলা দায়েরের পর উক্ত প্রতারক পুরোপুরিভাবে আত্মগোপনে চলে যায়। মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে জানতে পারেন তৎকালীন সময়ে কুমিল্লা জেলা হতে অনেক লোক কারারক্ষী পদে পরীক্ষা দিয়ে চাকরিরত রয়েছে। পরবর্তীতে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রতারককে গ্রেপ্তারের নিমিত্তে র্যাব কুমিল্লার সহায়তা কামনা করে।
র্যাব উক্ত প্রতারককে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে এবং মাঠ পর্যায়ে ছায়া তদন্ত শুরু করে। গোয়েন্দা সূত্র হতে প্রাপ্ত তথ্য ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় উক্ত প্রতারককে চিহ্নিত করার নিমিত্তে একাধিক টিম মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করে। ছায়া তদন্তের একপর্যায়ে জানা যায় প্রতারকের প্রকৃত নাম তাজুল ইসলাম। তার ঠিকানায় গিয়েও দেখা যায় আসামি তাজুল ইসলাম তার নিজ বাড়িতে সব সময় অবস্থান করে না। পরবর্তীতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গত বৃহস্পতিবার বিকেলে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া থানার ব্রাহ্মণপাড়া বাজার এলাকা হতে প্রতারককে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত আসামির দেয়া তথ্য অনুয়ায়ী ৩ সেট কারারক্ষী ইউনিফর্ম, ১টি কারারক্ষী জ্যাকেট, ১ সেট কারারক্ষী রেইনকোট, ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্রসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথি-পত্রাদি উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত প্রতারককে তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
চট্টগ্রাম
কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় প্রাণ হারালেন দুই সাইকেল আরোহী
কর্ণফুলীতে পণ্যবাহী কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় দুই সাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। কাভার্ডভ্যানটি আটক করা হয়েছে।
বুধবার (৭ আগস্ট) বেলা একটার দিকে চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ইছানগর বাংলাবাজার এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার নন্দনালী গ্রামের কামাল মণ্ডলের ছেলে চঞ্চল মণ্ডল (১৮) ও রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার ছোট পাগলা গ্রামের মোহাম্মদ আবদুল জলিলের ছেলে জাহিদুল ইসলাম (১৬)। তারা কর্ণফুলী উপজেলার ইছানগর গ্রামে ভাড়া বাসায় থাকতেন।
চরপাথরঘাটার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আবু তাহের গণমাধ্যমকে বলেন, দুপুরে তারা তিনজন সাইকেল চালিয়ে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন। এ সময় কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত হয়। অপরজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয়। কাভার্ডভ্যানটি আটক করা হয়েছে।
এএম/
চট্টগ্রাম
রাতেও ট্রাফিক সামলাচ্ছেন ছাত্রীরা
সরকার পতনের পরে চট্রগ্রামে নগরীর থানাগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। এ অবস্থায় নগরীর রাস্তায় নেই কোন ট্রাফিক পুলিশ। দিনভর রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করেন সরকার পতনের আন্দোলন করা শিক্ষার্থীরা। তবে দিন পেরিয়ে রাত হলেও, রাস্তায় ছাত্রদের পাশপাশি ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায় ছাত্রীদেরও।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার অলী খা মসজিদ মোড় এলাকায় এমন চিত্র দেখতে পায় গণমাধ্যম।
নগরীর অলী খা মসজিদ মোড়ে শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইজা তাবাসসুম বলেন, দেশে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। এখন দেশকে এগিয়ে নিতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। নিজের দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে এখানে আসা। সকালে শুনেছি সড়কে ট্রাফিক পুলিশ নেই। তাই তারা কাজ করতে এসেছেন।
আসিফুর রহমান নামে আরেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী জানান, শিফট সিস্টেম করে ছাত্ররা কাজ করছে। এখন তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। নিজেদের ইচ্ছায় তারা এখানে এসেছেন।
আই/এ
চট্টগ্রাম
‘বালুখেকো’ চেয়ারম্যান সেলিম ও তার ছেলে গণপিটুনিতে নিহত
চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের আলোচিত ‘বালুখেকো’ খ্যাত চেয়ারম্যান সেলিম খান ও তার ছেলে নায়ক শান্ত খান গনপিটুনিতে নিহত হয়েছেন।
সোমবার (৫ আগস্ট) শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পর নিজ এলাকা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় বালিয়া ইউনিয়নের ফরক্কাবাদ বাজারে এসে জনগণের তোপের মুখে পড়েন তারা। এরপর সেখানে নিজের পিস্তল থেকে গুলি করে উদ্ধার হয়ে আসতে পারলেও পার্শ্ববর্তী বাগাড়া বাজারে এসে জনতার মুখোমুখি হয়। তারপর সেখানে জনগণের পিটুনিতে নিহত হোন সেলিম খান ও তার ছেলে শান্ত খান।
চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শেখ মুহসীন আলম গণমাধ্যমে বলেন, তাদের মৃত্যুর বিষয় জেনেছি। তবে কেউ খবর দেয়নি। আর জানমালের নিরাপত্তার কারণে সেখানে কাউকে পাঠানো হয়নি।
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সেলিম খান চাঁদপুর নৌ-সীমানায় পদ্মা-মেঘনা নদীতে শত শত ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান। এসব ঘটনায় সে কারাভোগ করেন এবং দুদকে তার বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে। সেলিম খান একজন আলোচিত প্রযোজকও। তিনি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান শাপলা মিডিয়ার কর্ণধার।
এছাড়া সেলিম খানকে পদ্মা-মেঘনার চর থেকে বিভিন্ন সময় বালু তোলাসহ নানা কারণে চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান পদ থেকে আজীবন বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগ। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
এএম/
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন