করোনা ভাইরাস
টিকা না পাওয়া লোকজন বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ডেল্টায় : ডব্লিউএইচও
বিশ্বের ৮৫টি দেশে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের ডেল্টা প্রজাতিকে এখন পর্যন্ত ‘সর্বাধিক সংক্রামক’ বলে বর্ণনা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
শনিবার (২৬ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, টিকা না পাওয়া লোকজনের মাঝে এই প্রজাতিটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই প্রধান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, আমি জানি— বিশ্বজুড়ে বর্তমানে ডেল্টা প্রজাতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে। এটি নিয়ে ডব্লিউএইচও-ও উদ্বিগ্ন।
করোনাভাইরাসের অতিসংক্রামক ডেল্টা ধরন প্রথমে ভারতে শনাক্ত হয়েছিল। জেনেভায় সংবাদ সম্মেলনে গেব্রেইয়েসুস বলেন, এখন পর্যন্ত শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের প্রজাতিগুলোর মধ্যে ডেল্টাই সর্বোচ্চ সংক্রামক। যারা টিকা নেননি তাদের মধ্যেই এই প্রজাতিটি দ্রুত সংক্রমণ ঘটাচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলেও কিছু কিছু দেশে জনস্বাস্থ্য ও সামাজিক দূরত্ব বিধি শিথিল করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই প্রধান বলেন, বেশি রোগী মানে হাসপাতালে বেশি ভর্তি। এছাড়া এটি স্বাস্থ্যকর্মী এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর চাপ তৈরি করছে। এর ফলে মৃত্যু ঝুঁকিও বাড়ছে।
কোভিড-১৯ এর নতুন প্রজাতিগুলো প্রত্যাশিতই এবং আরও নতুন প্রজাতি শনাক্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। গেব্রেইয়েসুস বলেছেন, ভাইরাস এটাই করে, তাদের বিবর্তন ঘটে— তবে আমরা সংক্রমণ প্রতিরোধের মাধ্যমে ভ্যারিয়েন্টের উত্থান ঠেকাতে পারি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভিড-১৯ টেকনিক্যাল লিড ডা. মারিয়া ভ্যান কারখোভ বলেছেন, ডেল্টা প্রজাতি একটি বিপজ্জনক ভাইরাস; যা আলফা ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় অতিসংক্রামক। আলফা ভাইরাসও ইউরোপ এবং অন্যান্য দেশে ঢুকে পড়ার পর অত্যন্ত সংক্রমণ ঘটিয়েছিল।
তিনি বলেছেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টটি আরও বেশি সংক্রামক। বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে ডব্লিউএইচও ভাইরাসটির সংক্রমণের উল্লম্ফন দেখেছে।
ইউরোপের অনেক দেশে বর্তমানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কিছুটা কমেছে। তবে এই অঞ্চলে এখনও খেলাধুলা কিংবা ধর্মীয় সমাবেশ অথবা বারবিকিউ পার্টিসহ বেশ কিছু ক্রীড়াসূচি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মারিয়া ভ্যান কারখোভ বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ডের পরিণতি রয়েছে এবং ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট তাদের মধ্যে বেশি ছড়িয়ে পড়ছে যারা টিকা নেননি।
তিনি বলেন, কিছু দেশে ভ্যাকসিন নেওয়া মানুষের উচ্চ হার রয়েছে। কিন্তু সেসব দেশের প্রয়োজনীয়সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে এখনও টিকার আওতায় আনা যায়নি। এছাড়া অনেক মানুষ এখনও কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ পাননি অথবা ডোজ সম্পূর্ণ করতে পারেননি।
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টসহ করোনার অন্যান্য ধরনে আক্রান্তদের গুরুতর অসুস্থতা এবং মৃত্যুর ঝুঁকি অবিশ্বাস্য রকম কমাতে সক্ষম কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই কোভিড-১৯ টেকনিক্যাল লিড বলেন, ভাইরাস অব্যাহতভাবে বিবর্তন ঘটাবে। এবং এখন পর্যন্ত আমাদের জনস্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা কাজ করছে। আমাদের ভ্যাকসিন, ডায়াগনোস্টিকস এবং থেরাপি কাজ করছে। কিন্তু এমন একটি সময় হয়তো আসবে, তখন এসব ব্যবস্থা কাজ করবে না। সংক্রমণ নিম্নমুখী রাখা এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের একযোগে এ ধরনের কিছু কাজ করা দরকার।
গত ২২ জুন সর্বশেষ করোনাভাইরাস মহামারিবিষয়ক হালনাগাদ তথ্যে ডব্লিউএইচও বলছে, আলফা ভ্যারিয়েন্ট এখন পর্যন্ত ১৭০টি দেশ, ভূখণ্ডে অথবা অঞ্চলে শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া বেটা ভ্যারিয়েন্ট ১১৯টি দেশ, গামা ৭১টি এবং ডেল্টা ৮৫টি দেশে শনাক্ত হয়েছে।
করোনা ভাইরাস
ফের ফিরে আসছে করোনা-আতঙ্ক!
মানুষ যখন করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের কথা প্রায় ভুলতে বসেছে, তখনই হঠাৎ করে আবার জেএন.১ নামের এক উপধরন ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতিমধ্যে এই ধরন পার্শ্ববর্তী ভারতসহ বিশ্বের ৪১টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশে নতুন ধরনের সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সরকারের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। যদিও নতুন এ ধরনে বাংলাদেশে কেউ এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়নি।
নতুন ধরনের সংক্রমণ মোকাবেলায় আবারও হাসপাতাল-ক্লিনিকসহ সকল স্থানে মাস্ক ব্যবহারসহ চার দফা পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডাক্তার মোহাম্মদ সহিদুল্লা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির ৬৫তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সকলের পরামর্শের আলোকে নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয়। সেগুলো হলো—
১। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে যেমন হাসপাতাল/চিকিৎসা কেন্দ্র এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি— যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের সতকর্তা হিসেবে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হলো। কমিটি মনে করে কোভিড-১৯ ছাড়াও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধে এটি সহায়ক হবে।
২। সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য বৈশ্বিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও দেশে নজরদারি জোরদার করার জন্য সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর প্রতি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে কোভিড পরীক্ষা ও আইসিইউসহ দ্রুত চিকিৎসার সকল প্রস্তুতি রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের স্ক্রিনিং এর প্রস্তুতি নেয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
৩। কোভিড ভ্যাকসিন বিষয়ে নিয়মিত বৈজ্ঞানিক তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণসাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ মোতাবেক উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের চতুর্থ ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
৪। সভায় অস্ত্রোপচার অথবা অন্য কোনো রোগের চিকিৎসার আগে কোভিড পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কমিটি কেবলমাত্র কোভিডের লক্ষণ/উপসর্গ থাকলে কোভিড পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছে।
এদিকে ইতিমধ্যে একে ‘ভেরিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ হিসেবে অভিহিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, এই ধরনটি অতিদ্রুত ছড়াচ্ছে।
জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, ওমিক্রনের উপধরন হলো জেএন.১। রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে ফাঁকি দেওয়ায় জেএন.১ আরও অনেক বেশি কার্যকর। ফলে সংক্রমণের হার বেশি। তবে ঝুঁকি কম।
করোনা ভাইরাস
বিশ্বে করোনায় মৃত্যু হয়েছে আরও ২০৪ জনের
গেলো ২৪ ঘণ্টায় করোনায় বিশ্বব্যাপী আরও ২০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আক্রান্ত হয়েছেন ৮৮ হাজার ৫৯৯ জন। সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮২৫ জন।
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে করোনার হিসাব রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ও আক্রান্তের ঘটনা ঘটেছে রাশিয়ায়। এ সময় দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ১৮৬ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছে ৭৯ হাজার ৩২ জন।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত হয়েছে ৬ হাজার ৪৪৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। ভারতে আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ৪০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। আফগানিস্তানে আক্রান্ত হয়েছে ১৯৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১ জনের।
বিশ্বে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭০ কোটি ৪ লাখ ৮১ হাজার ২৪৮ জন। এরমধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৬৯ লাখ ৬১ হাজার ১৩৬ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৬৭ কোটি ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ২২৪ জন।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ২০২০ সালের ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনাকে ‘বৈশ্বিক মহামারি’ হিসেবে ঘোষণা করে।
করোনা ভাইরাস
এক মাসে করোনা রোগী বেড়েছে ৫২%
বিশ্বজুড়ে আবারও বাড়তে শুরু করেছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। গেলো চার সপ্তাহে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী বেড়েছে প্রায় ৫২ শতাংশ। এ সময় নতুন করে সাড়ে ৮ লাখের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। পাশাপাশি বেড়েছে মৃত্যুহারও। জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
ডব্লিউএইচওর তথ্যমতে, আগের ২৮ দিনের তুলনায় গেলো চার সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী করোনায় মৃত্যু প্রায় ৮ শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে মারা গেছে তিন হাজারের বেশি মানুষ।
সংস্থাটির হিসাবে, ২০২৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ৭৭ কোটি ২০ লাখ মানুষ। প্রাণ হারিয়েছেন ৭০ লাখেরও বেশি। এ সময়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার মানুষ। গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখতে হয়েছে ১ হাজার ৬০০ জনকে।
বিশ্বব্যাপী দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণে সম্প্রতি করোনাভাইরাসের জেএন.১ ধরনটিকে পৃথক ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এটিকে এতদিন করোনার বিএ.২.৮৬ ধরনের একটি অংশ হিসেবে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ গণ্য করা হতো। ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত অনুসারে, জেএন.১-এর কারণে এ মুহূর্তে অতিরিক্ত কোনো বৈশ্বিক স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই। তবে উত্তর গোলার্ধে শীত শুরুর সঙ্গে সঙ্গে এটি শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।