ফিচার
রহস্যময় দুই সবুজ শিশুর গল্প!
ঘটনাটি যে সময়কার তখন ইংল্যান্ডের রাজা ছিলেন স্টিফেন (১১৩৫-১১৫৪)। দ্বাদশ শতাব্দীর দিকে সাফোকের উলপিট নামের একটি গ্রামের লোকজনের মধ্যে হঠাৎ করেই দেখা যায় দারুণ চাঞ্চল্য। হবেই বা না কেন? চোখের সামনে জ্বলজ্যান্ত দুটি মানব শিশুর গায়ের রঙ যদি হয় সবুজ, তবে সবার পিলে চমকে যাবে বৈকি!
তখন ছিল ধান চাষের সময়। মাঠে কাজ করতে থাকা কৃষকদের সামনে দিয়ে জঙ্গলের পথ ধরে গ্রামের দিকে হেঁটে আসে দুটি ছোট ছেলে-মেয়ে। সাধারণত সবাই জানতো ওই জঙ্গলে নেকড়ে ছাড়া আর কিছু থাকে না। সেই ঘন জঙ্গল থেকে যখন দুটি মানব শিশু বের হয়ে আসে, তখন স্বভাবতই তাদের নিয়ে সবার উৎসাহ একটু বেশিই ছিল। তার উপর তাদের সবুজ গায়ের রঙ এবং উদ্ভট পোশাক দেখে বেশ ভালোই অবাক হয় গ্রামবাসী।
কথা বলতে গিয়ে ঘটে আরেক মুসিবত! এমন এক ভাষায় কথা বলছিল বাচ্চা দুটো যে তার একটি অক্ষরও বুঝবে এমন সাধ্য কার আছে! কোত্থেকেই বা তারা আসলো আর যাবেই বা কোথায়- কিছুই জানা সম্ভব হচ্ছিল না গ্রামবাসীর পক্ষে।
শিশু দুটিকে সাথে সাথেই নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় জমিদার স্যার রিচার্ড ডি কেনের কাছে। তবে সেখানে গিয়ে বেশ কিছুদিন কিছু খেতে অস্বীকৃতি জানায় বাচ্চা দুটো। পরবর্তীতে মটরশুঁটি আর কাঁচা শিম এনে দেয়া হলে বেশ আগ্রহ নিয়েই খায় তারা। মজার বিষয় হলো সাধারণ মানুষের সাথে মিশে, তাদের সাথে চলতে চলতে নিজেদের গায়ের সবুজ বর্ণের পল্লব আস্তে আস্তে হারাতে থাকে দুই ভাই-বোন। তবে পরিবর্তিত এই পরিবেশে অভ্যস্ত হতে পারে না ছেলেটি। ধীরে ধীরে যতই সময় এগিয়ে যেতে থাকে ততই যেন বিষণ্ণতা ঘিরে ধরে বাচ্চাটিকে। দুজনের মধ্যে সে-ই ছিল ছোট। ছেলেটির এই মানসিক বিষণ্ণতা থেকে জন্ম নেয় বিভিন্ন অসুখ এবং খুব দ্রুতই মৃত্যুর মুখে পর্যবসিত হয় বাচ্চাটি।
অপরদিকে মেয়েটি নতুন জীবনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে শুরু করে এবং অচিরেই খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হয়। গ্রামে বসবাসরত একটি পরিবার তার দায়িত্ব নেয় এবং তাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়। ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে শেখার পর তাকে তার অতীত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়। সে অবশ্য নিজের সম্পর্কে খুব সামান্যই বলতে পেরেছিল। মেয়েটির সম্পর্কে একটি বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, “Rather loose and wanton in her conduct” অর্থাৎ পরিবেশের সাথে কোনোমতে খাপ খাইয়ে নিলেও তার আচরণে অমনোযোগিতা ও উদাসীনতা বেশ ভালোভাবেই লক্ষ্য করা যায়।
মেয়েটির কথা থেকে যা যা জানা যায় তা অনেকটা এরকম-
শিশু দুটি ভাই-বোন ছিল।
তারা এসেছিল ‘সেন্টমার্টিন’ থেকে।
সেই জায়গাটি সব সময় কুয়াশাচ্ছন্ন থাকতো।
সেন্টমার্টিনের সব অধিবাসীর গায়ের রঙ সবুজ ছিল।
মতান্তরে জানা যায়, মেয়েটি এমন একটি গ্রামের কথা জানায় যেখানে সর্বদা চোখ ধাঁধানো আলো থাকত। গ্রামটির পাশ দিয়ে বয়ে চলা এক নদীর কথাও সে মনে করতে পেরেছিলো।
মেয়েটি গ্রামবাসীকে জানায়, তারা দুই ভাই-বোন একদিন তাদের বাবার গরু খুঁজতে ফসলের ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে হাঁটছিলো। হঠাৎ করে পাশের গুহা থেকে এক অদ্ভুত ঘণ্টার শব্দ শুনতে পায় তারা। খুব জোরে জোরে ঘণ্টার শব্দ হওয়ায় চমকে যেয়ে শব্দের উৎস খুঁজতে থাকে তারা। গুহার মধ্যে ঢুকে হারিয়ে যায় দুই ভাই-বোন। দীর্ঘক্ষণ ধরে ঘুরতে ঘুরতে এক সময় গুহার অপর প্রান্তে এসে পৌঁছায় তারা। প্রখর সূর্যের আলোতে চোখ ধাঁধিয়ে যায় দুজনের।
হতবুদ্ধি অবস্থায় বেশ অনেকক্ষণ গুহার মুখে শুয়ে থাকে বাচ্চা দুটো। আস্তে আস্তে কৃষকদের কাজ করার শব্দ কানে আসলে সেদিকে হাঁটতে শুরু করে তারা। সব কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে যায় গ্রামের লোকজন। কোন সে গ্রাম যেখানে সবুজ গাত্রবর্ণের অধিবাসীরা বাস করে তা খুঁজতে বের হয়ে যায় অভিযাত্রীর দল। কিন্তু মেয়েটির নির্দেশনা মোতাবেক গিয়ে নদী ছাড়া আর কিছুই খুঁজে পায় না তারা। বড় হয়ে মেয়েটি নর্টফোক রাজ্যের কিং’স লিনের এক যুবককে বিয়ে করে যিনি ছিলেন রাজা দ্বিতীয় হেনরির মুখপাত্র। বলা হয়, পরবর্তী জীবনে মেয়েটি ‘আগনেস বাড়ৈ’ নাম ধারণ করে।
অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা দেখলে তা নিয়ে লোকমুখে গল্পের ডালপালা ছড়াবে এটা যেন চিরন্তন সত্যে পরিণত হয়েছে। এই শিশুকে নিয়েও প্রচলিত আছে বেশ কিছু মুখরোচক কাহিনী। কেউ কেউ বলেন বাচ্চা দুটো ছিল নরফোকের এক জমিদার বা আর্লের অভিভাবকত্বে। তাদের সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে শিশুদের শরীরে আর্সেনিক প্রয়োগ করে আর্ল। বিষের প্রভাবে দুই অনাথ শিশুর গায়ের রং হয়ে যায় সবুজ। কথাবার্তাও হয়ে যায় অসংলগ্ন। পরবর্তীতে সেখান থেকে পালিয়ে উলপিটে চলে আসে শিশু দুটি।
কারো কারো মতে, বাচ্চা দুটি অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতায় ভুগছিল। তৎকালীন সময়ে এই অসুখটিকে বলা হত ‘গ্রীন সিকনেস’। এই রোগের সাথে স্বল্প পরিচিত লোকজন সাদা, কালো আর তামাটে ছাড়া একেবারেই ভিন্ন গায়ের রঙের দুটি শিশুকে দেখে হইচই ফেলে দেয় সর্বত্র। এমনকি তাদের ভিনগ্রহের বাসিন্দা বলতেও ছাড়েননি কেউ কেউ!
রূপকথার গল্পকে হার মানিয়ে দেয়ার মতো বাস্তব এই ঘটনাটি নিয়ে ঐতিহাসিকরা বিভিন্ন সময় বেশ গুরুত্বসহকারে নানা ধরনের ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। ঐতিহাসিক পল হ্যারিসের মতে, ইংল্যান্ডের রাজা দ্বিতীয় হেনরি ও তার বিরোধী শক্তি রবার্ট ডি বিউমন্টের মধ্যে ১১৭৩ সালের দিকে একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধে প্রাণ হারান অসংখ্য ফ্লেমিশ বা বেলজিয়ামের অধিবাসী। যুদ্ধস্থানটি ছিল সেন্ট অ্যাডমুন্ডসের উত্তরে। সেই যুদ্ধের সময়ে কোনো এক ফ্লেমিশ পরিবার হয়তো সেন্টমার্টিন গ্রাম থেকে পালিয়ে এসে উলপিট গ্রামের একটি নেকড়ের গুহায় আশ্রয় নেয়। দিনের পর দিন অন্ধকার ও খাদ্যাভাবে থাকার কারণে বাবা-মা মারা গেলেও সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় শিশু দুটি। ফ্লেমিশ জামা-কাপড়ের সাথে পরিচয় না থাকায় উলপিটবাসীর কাছে তা উদ্ভট মনে হয়েছিল। আর বেলজিয়ামের সাথে কোনো যোগাযোগ না থাকায় ফ্লেমিশ ভাষা তারা বুঝবে বা জানবে এমন কোনো কারণও নেই। এদিকে দীর্ঘদিন যাবত না খেয়ে থাকতে থাকতে বাচ্চা দুটোর শরীরে ক্লোরোসিস তৈরি হয়েছিল বলে তাদের গায়ের রঙ গাছের পাতার মতো সবুজাভ হয়ে যায়। সুষম খাদ্য গ্রহণের ফলে দেহে ক্লোরোফিল নিঃসরণের মাত্রা কমে গিয়ে ক্লোরোসিস তৈরির প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আর দশজন সাধারণ মানুষের মতো বাচ্চা দুটোর গায়ের রঙ স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
বৈজ্ঞানিক উপায়ে স্বীকৃত এই কারণগুলো শিশু দুটিকে ঘিরে তৈরি হওয়া রহস্যের জাল গুটিয়ে আনে আস্তে আস্তে। বাস্তব জগতেরই এই দুই বাসিন্দা ভয়ে, আতঙ্কে আর অনাহারে নিজেদের শিশুমনে তৈরি করে নেয় রূপকথার রাজ্যের এক কল্পলোক যেখানে সবার গায়ের রঙই সবুজ বলে মনে করে তারা।
উলপিটের এই রহস্যময় শিশু দুটিকে নিয়ে ইংরেজি সাহিত্যে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। এই সবুজ শিশুদের নিয়ে যেসব গল্প, কবিতা লেখা হয়েছে তার মধ্যে ইংরেজ কবি হার্বার্ড রিডের ‘ইংলিশ প্রোস স্টাইল’ (১৯৩১) ও ‘দ্য গ্রিন চাইল্ড’ (১৯৩৪) এবং কেভিন ক্রসলির ‘দ্য গ্রিন গার্ল’ (১৯৯৪) অন্যতম।
উলপিটের এই সবুজ শিশুদের নিয়ে হাজারো মুখরোচক কাহিনী প্রচলিত আছে। অদ্ভুতুড়ে এই জগতে আসলে কখন যে কোন কারণে কী ঘটে তার মীমাংসা করার মতো ক্ষমতা কি প্রকৃতি আমাদের আজও দিয়েছে? সেই প্রশ্নের উত্তর না মিললেও উলপিটে গেলে আজও দেখা মিলবে সবুজ দুই ভাইবোনের। উলপিটের মানুষ তাদের ভোলেনি। পার্ক এবং স্থানীয় গির্জায় গেলে দেখা পাওয়া যায় রহস্যময় সেই দুই শিশুর মূর্তির। মানুষের মুখে মুখে ফেরা মধ্যযুগীয় লোকগাথা কিংবা বাস্তবতার মূর্তিমান প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ভাস্কর্যগুলো।
ফিচার
ফিলস লাইক তাপমাত্রা মাপা হয় যেভাবে!
বছরের মাঝামাঝি সময় এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত চলে গরমের তীব্রতা। তাপমাত্রা এমন বৃদ্ধি পাওয়ায় জনজীবন আজ বিদ্ভস্ত। চলতি বছরে দেশের কয়েক জেলায় তাপমাত্রার রেকর্ড মাপা হয়েছে সর্বোচ্চ ৪২ ডিগ্রি। আর এ কারণেই জারি করা হয়েছে হিট অ্যালার্ট ।
ডিজিটাল বাংলাদেশের যুগে মানুষ এখন আবহাওয়া পূর্বাভাসের জন্য বসে না থেকে ঘন ঘন মোবাইল ঘেটে দেখে নেয় তাপমাত্রার আপডেট। ধরুন, গুগলে সার্চ দেয়ার সময় তাপমাত্রা দেখা গেলো ৩৮ ডিগ্রিতে তবে এর অনুভুতি হচ্ছে যেন ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রা।
এই যে ফিলস লাইক বা অনুভূত তাপমাত্রার কথা বলা হচ্ছে, সেটি আসলে কি? গরমের এই সময়ে কোন এক এলাকার যে নির্দিষ্ট যে তাপমাত্রার হিসাব দেয়া থাকে তার চেয়ে ফিলস লাইক তাপমাত্রা বেশিই থাকে। এই যেমন গুগল বলছে, এখন ঢাকার তাপমাত্রা ৩৮, কিন্তু ফিলস লাইক ৪২, অর্থাৎ চার ডিগ্রি বেশি!
কীভাবে এই ফিল্স লাইক মাপেন আবহাওয়াবিদরা? ব্রিটেনের আবহাওয়া অফিস বলছে, ফিল্স লাইক মাপা হয় কোনও এলাকার সম্ভাব্য তাপমাত্রার পূর্বাভাস, ওই এলাকার আর্দ্রতা ও হাওয়ার গতিবেগ মেপে।
তাপমাত্রা বলতে বোঝায় কোনও নির্দিষ্ট এলাকার বাতাসের তাপমাত্রা। কিন্তু রাস্তাঘাটে বেরুলে শুধু হাওয়া নয়, আরও কিছু বিষয় তাপমাত্রায় প্রভাব ফেলে। বাতাসের আর্দ্রতা ও গতিবেগের কারণে মূল তাপমাত্রার চেয়েও বেশি গরম বা ঠাণ্ডা অনুভূত হয়ে থাকে। পরিবেশেরও একটা বিরাট প্রভাব আছে এতে।
কীভাবে অনুভূত তাপমাত্রাকে প্রভাবিত করে বাতাসের আর্দ্রতা এবং হাওয়ার গতি?
আবহাওয়াবিদদের মতে, বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলে ঘাম বেশি হয়। কিন্তু সেই ঘাম বাষ্পের সঙ্গে মিশে যেতে সময় বেশি লাগে। শরীর ঠান্ডা হতে পারে না, তখন গরম কিছুটা বেশি লাগে। অস্বস্তির পরিমাণও বেড়ে যায়।
বাংলাদেশ-ভারতে যখন তাপদাহে পুড়ছে, তখন মরুর দেশ আরব আমিরাত আর সৌদি আরবের রুক্ষ দেশে অঝোর ধারায় ঝরছে বৃষ্টি। এতোটাই বৃষ্টি যে দেশগুলো রাস্তাঘাট ডুবে গিয়ে রীতিমতো বন্যা পরিস্থিতি। আবার ইউরোপেও এবার অস্বাভাবিকভাবে প্রত্যক্ষ করছে বন্যা, যা এক সময় তাদের চিন্তারও বাইরে ছিলো।
ফিচার
জীবনযোদ্ধার আরেক নাম ‘বাবা’!
শব্দটি ছোট, অথচ এর অর্থ অনেক বিস্তৃত। পৃথিবীর আলো দেখার পর থেকে যে মানুষটা সন্তানের একটু সুখের জন্য, পরিবারের চাওয়া-পাওয়া পূরণের জন্য নিজের সব সুখ ও স্বপ্ন বিসর্জন দেন, তিনি আর কেউ নন, ‘ বাবা’।
আজ বিশ্ব বাবা দিবস। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন আর নতযানু হওয়ার দিন। শব্দটি ছোট, অথচ এর অর্থ অনেক বিস্তৃত। ভাষা আর স্থানভেদে ছোট্ট একটি শব্দের উচ্চারণ বদলে গেলেও অর্থ, বদলায় না রক্তের টান।
বাবা শব্দের মাঝেই জড়িয়ে আছে ভালোবাসা, মায়া, নির্ভরতা। বাবা হলেন সেইজন যার শক্ত কাঁধ সন্তানকে সামনে চলতে শেখায়। যার অক্লান্ত পরিশ্রম সন্তানকে সুন্দর একটা জীবন দেয়। যার অসীম ত্যাগ একটা সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যত এনে দেয়।
‘বাবা’ ডাকলেই কেমন এক শান্তি আর আস্থার নিঃশ্বাস যেন অনুভূত হয়। বাবা শাশ্বত, চির আপন, চিরন্তন। বাবা এক মায়ার নাম, এক ছায়ার নাম, চোখের সামনে ভেসে ওঠা এক জীবনযোদ্ধার নাম।
বাবা মানেই সব আবদারের জায়গা। সন্তানের জন্য এক পৃথিবী সমান দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন বাবা নামের বটবৃক্ষ। জীবনের সব রং-চাওয়া পাওয়া হাসি মুখে বিসর্জন দিতে পারেন বাবারাই। বাবার আর্দশ সন্তানকে ভালো-মন্দের পার্থক্য বুঝতে শেখায়।
প্রতি বছরের জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্ব জুড়ে পালিত হয় বাবা দিবস। সে হিসেবে আজ রবিবার বিশ্ব বাবা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইংল্যান্ড, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, ভারতসহ প্রায় ১১১টি দেশে এ দিনেই বাবা দিবস উদযাপন করা হয়। তবে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশ সেপ্টেম্বরের প্রথশ রোববার বাবা দিবস পালন করে থাকে।
বাবা দিবসের শুরু হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে। তবে ঠিক কবে থেকে এ দিবসটির প্রচলন হলো তা নিয়ে দ্বিধা আছে। কেউ কেউ বলেন, ১৯০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় চার্চের মাধ্যমে দিনটির প্রচলন। অন্যরা বলেন, ওয়াশিংটনের ভ্যাংকুবারে প্রথম বাবা দিবস পালন করা হয়। তবে সাধারণ মত, বাবা দিবসের প্রবক্তা সোনার স্মার্ট ডোড। ১৮৮২ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি তিনি জন্ম নেন। তার পিতা উইলিয়াম জেকসন স্মার্ট (১৮৪২-১৯১৯) ছিলেন কৃষক। মার্কিন গৃহযুদ্ধের সময় তিনি বীরত্বের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ডোডের মা অ্যালেন ভিক্টোরিয়া চেক স্মার্টসহ পুরো পরিবার চলে যান ওয়াশিংটনের স্পোকেনে। সেখানেই জন্ম হয় সোনার স্মার্ট ডোডের। যখন তার বয়স ১৬, তখন তার মা ষষ্ঠ সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। পরিবারে সোনারই ছিলেন একমাত্র কন্যা। পূর্ব ওয়াশিংটনের এক গ্রামের ফার্মে এরপর থেকে তিনি নবজাতকসহ পাঁচটি সন্তান মানুষ করার দায়িত্ব তুলে নেন। সোনারা বড় হওয়ার পর অনুভব করলেন ছয়টি সন্তান একা একা মানুষ করতে কী ভীষণ পরিশ্রমই না তার বাবাকে করতে হয়েছে। উইলিয়াম তার মেয়ের চোখে ছিলেন সাহসী, নিঃস্বার্থ একজন ভালো বাবা, যিনি সন্তানদের জন্য নিজের সব সুখ-শখ, আহ্লাদ বিসর্জন দিয়েছিলেন। সোনার স্মার্ট বিয়ে করেন জন ব্রোস ডোডকে। তাদের সন্তান জ্যাক ডোড জন্মের কিছুকাল পরে সোনারের স্বামীও মারা যান। এ অবস্থায় বাবা আর মেয়েতে মিলেই পুরো জীবন পার করে দেন।
বাবার প্রতি সম্মান জানাতে ‘বাবা দিবস’ ঘোষণার বিষয়টি সোনারের চিন্তায় আসে ১৯০৯ সালে। ‘মা দিবস’-এর অনুষ্ঠানে সে বছর চার্চে যান সোনার ডোড। অনুষ্ঠানে এসেই তার মনে হয় মা দিবসের মতো বাবাদের জন্যও একটি দিবস করা প্রয়োজন। যেখানে মায়েদের মতো বাবাদেরও সম্মান জানানো হবে। প্রকাশ করা হবে ভালোবাসা। যুক্তরাষ্ট্রের স্পোকেন মন্ত্রীজোটের কাছে তিনি তার পিতার জন্মদিন ৫ জুনকে বিশ্ব বাবা দিবস হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাব পাঠান। তার প্রস্তাবের প্রশংসা করলেও মন্ত্রীজোট ৫ জুনকে বাবা দিবস ঘোষণা করতে রাজি হয়নি। তারা জুন মাসের তৃতীয় রবিবারকে বাবা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। একটি স্থানীয় পত্রিকা সেদিন ছুটি ঘোষণা করে এবং বিভিন্ন দোকানিরা বাবাদের জন্য নানা রকমের উপহার সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে রাখেন।
১৯ জুন ১৯১০। প্রথম বাবা দিবস উদযাপিত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্পোকেনস শহরে। শহরের তরুণ-তরুণীরা দুটি করে গোলাপ নিয়ে যান চার্চে। একটি লাল, অন্যটি সাদা। লাল গোলাপ জীবিত পিতাদের শুভেচ্ছার জন্য, আর সাদা গোলাপ মৃত পিতাদের আত্মার তুষ্টির জন্য। বিষয়টি পুরো মার্কিন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সবাই মিলে এই ভাবনার প্রশংসা করেন এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রে তা শুরু হয়। কিন্তু তারপরও এটাকে জাতীয়ভাবে পালনে কংগ্রেসের নানা দ্বিধা ছিল। কেননা তারা ভাবছিলেন এতে বাবা দিবস একটি বাণিজ্যে পরিণত হতে পারে। ১৯১৬ সালে প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন বিষয়টি অনুমোদন করেন। ১৯২৪ সালে প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কোলিজ এটিকে জাতীয় দিবসে রূপ দেন। ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন রাষ্ট্রীয়ভাবে জুনের তৃতীয় রবিবার বাবা দিবস উদযাপনের ঘোষণা দেন। অবশেষে ১৯৬৬ সালে ৫৬ বছর পর বাবা দিবসকে জাতীয় মর্যাদা দেয়া হয়। সোনারা ডোড মারা যান ১৯৭৮ সালে। তখন তার বয়স ছিল ৯৬ বছর।
ফিচার
বর্ষার ছন্দে এসেছে আষাঢ়ে মেঘের ভেলা!
বাংলা পঞ্জিকা না খুললেও প্রকৃতি যেন একটু একটু করে বলছে আষাঢ় এসে গেছে। সকালে আকাশ মেঘলা জানিয়ে দিয়ে আজ শনিবার (১৫ জুন) বাংলা তৃতীয় মাসের আর্বিভাব ঘটে গেছে। বৃষ্টি না থাকলে মেঘলা মেঘলা একটা অনুভূতি কিন্তু আছে।
আর তাই হয়তো কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখে গেছেন, ‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে, আসে বৃষ্টির সুবাস বাতাস বেয়ে। এই পুরাতন হৃদয় আমার আজি পুলকে দুলিয়া উঠিছে আবার বাজি নূতন মেঘের ঘনিমার পানে চেয়ে আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে। ‘
ঋতুচক্রে আষাঢ়-শ্রাবণ বর্ষাকাল। আষাঢ় মানে বিশাল আকাশে কালো মেঘের পালকিতে ভেসে বেড়ানো মুহুর্মুহু ডঙ্কা-নিনাদ, ঝমঝম বৃষ্টি। বর্ষার শীতল জলে নবজীবন লাভ করে পল্লবপুঞ্জ। প্রকৃতিকে প্রাণবন্ত, সতেজ ও শত সহস্র মনের প্রেমে ভিজিয়ে রাখার সাধ্য যে একমাত্র আষাঢ়েরই আছে, তা অস্বীকার করার সাধ্যি কার। কদম, কেয়া আর কেতকীর নয়নাভিরাম রূপের পসরা ও পেখম খোলা ময়ূরের উচ্ছল নৃত্যের আবাহন নিয়ে আসে বৃষ্টি।
আষাঢ় শব্দটি এসেছে পূর্বাষাঢ়া ও উত্তরাষাঢ়া নক্ষত্রে সূর্যের অবস্থান থেকে। আষাঢ় বাংলা সনের তৃতীয় মাস। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে জুন-জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে আষাঢ় আসে।
বছরভর বাংলার প্রকৃতি হাজির হয় ভিন্ন ভিন্ন অপরূপ সাজে। তার মধ্যে বর্ষার সজল, শ্যামল রূপ অনন্যতায় ভরপুর। ধানের ক্ষেতে রৌদ্র-হাওয়ার লুকোচুরির মতো অপার্থিব দৃশ্য আর কখন মেলে! আষাঢ় আর শ্রাবণ দুই মাসজুড়ে ব্যাপ্তি বর্ষার। মাস দুয়েক নানা মাত্রায় বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর। টিপটিপ, ঝিরিঝিরি, ইলশেগুঁড়ি, মুষলধার—বর্ষার বারিধারার কতই না নাম! কবিরা তার মধ্যে শোনেন নূপুর, মৃদঙ্গ আর মাদলের বোল। আকাশের চেহারারও সে কী বৈচিত্র্য! সারাদিন ঘোলাটে থেকে শুরু করে ছাইরঙা হয়ে মোষের মতো কালো। বর্ষার প্রকৃতিতে ডাকাতের মতোই দৌরাত্ম্য চলে মেঘেদের। কখনো কখনো বর্ষণ শেষে সেই মেঘের ফাঁকে হঠাৎ উঁকি দেয় আকাশজোড়া স্বর্গীয় রঙধনু।
একালে অবশ্য আমাদের কেবল বর্ষা নিয়ে কাব্যকথায় বুঁদ হয়ে থাকলে চলে না। বিশেষ করে নগরে বর্ষা মানে মাথায় রাখতে হয় যানজট আর জলজটের কথা। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণেই নাকি গ্রীষ্ম-বর্ষা জুড়ে বেড়ে চলেছে বজ্রপাত আর তাতে হতাহতের সংখ্যাও।
টিআর/
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন