ফিচার
বেশি পরিশ্রম করেন কে? নারী নাকি পুরুষ!
মানুষ সাধারণত শারীরিক ও মানসিক; এ দুই ধরনের পরিশ্রম করে থাকে। এরমধ্যে বিশ্বব্যাপী শারীরিক পরিশ্রমের পেছনে মানুষের প্রচুর শক্তি ও সময় ব্যয় হয়। কিন্তু নারী ও পুরুষের মধ্যে কারা বেশি পরিশ্রম করেন? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন নৃবিজ্ঞানীরা। এ বিষয়ে তাদের গবেষণার ফলাফল জানা গেছে সায়েন্স অ্যালার্ট-এ প্রকাশিত এক নিবন্ধ থেকে।
গবেষণায় জানা গেছে, যেসব ব্যক্তি (নারী বা পুরুষ যে-ই হোক না কেন) বিয়ের পর বাবার বাড়ি ছেড়ে দূরে বাস করেন, তাদেরকে নিজের বাড়িতে থাকা ব্যক্তির চেয়ে বেশি পরিশ্রম করতে হয়। তাই কোনো নারী বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে গিয়ে উঠলে তিনি কেবল প্রিয়জন বিচ্ছিন্নতার বেদনায়ই ভোগেন না, শারীরিক পরিশ্রমের কষ্টও করতে হয় তাকে।
বেশিরভাগ হান্টার-গ্যাদারার সমাজে পুরুষেরা শিকার আর নারীরা সংগ্রহের কাজ করেন। এতে আপাতভাবে পুরুষদের আবাস থেকে বেশি দূরে হাঁটতে হয়। কিন্তু অন্যসব সমাজে নারী-পুরুষের শ্রমবিভাজন কেমন?
যুক্তরাজ্যের ইউসিএল বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক ইয়ুয়ান চেন ও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের অধ্যাপক রুথ মেস এ বিষয়টি অনুসন্ধান করার জন্য তিব্বতের সীমান্তবর্তী এলাকার কয়েকটি কৃষিজীবী ও গোপালক গোষ্ঠীর ওপর একটি গবেষণা পরিচালনা করেছেন।
তাদের গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল কোনো একটি পরিবারে নারী বা পুরুষের মধ্যে কারা বেশি পরিশ্রম করে এবং কেন করে তা নির্ধারণ করার পেছনের প্রভাবকগুলো খুঁজে বের করা। গবেষণাটি কারেন্ট বায়োলজি শীর্ষক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
বাস্তবে পরিবারগুলোতে নারী ও পুরুষ; এ দুই পক্ষের প্রভাব সমান থাকে না। এর ফলে বিবাহের মতো অংশীদারিত্বে এক পক্ষ বেশি পরিশ্রম করতে বাধ্য হন।
বাড়ির বাইরে যাওয়া
গবেষণাটির জন্য বিজ্ঞানীরা একটি পূর্বানুমান (হাইপোথিসিস) ব্যবহার করেছেন। হেটেরোসেক্সুয়াল বিয়েতে পৈতৃক আবাস ত্যাগ করে স্বামী বা স্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে বাস করলে, স্ত্রী বা স্বামীর বেশি কাজ করতে হয়—এই হাইপোথিসিসটি পরীক্ষা করেছিলেন তারা।
পৈতৃক বাড়ি ছেড়ে স্বামী বা স্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে ওঠার পর সদ্য বিবাহিত একজন মানুষ সম্পূর্ণ নতুন একটি পরিবেশে গিয়ে পড়েন। এ পরিবেশে কোনো রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়স্বজন না থাকায় নিজেদের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে কথা বলার ক্ষমতা কমে যায় তাদের।
বিশ্বের বিবাহরীতির সবচেয়ে সাধারণ রূপটি হলো, স্ত্রী তার নিজের বাড়ি ত্যাগ করে স্বামীর বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। আর পুরুষ তার পৈতৃক বাড়িতেই থাকার সুযোগ পান। এটি প্যাট্রিলোকালিটি নামে পরিচিত।
অন্যদিকে নিওলোকালিটির ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়ই তাদের পৈতৃক বাড়ি ত্যাগ করে নতুন বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। এটিও পৃথিবীর অনেক দেশে একটি সাধারণ নিয়ম। আর স্ত্রীর পৈতৃক বাড়িতে স্বামী গিয়ে বাস করার ম্যাট্রিলোকালিটি প্রথা বিশ্বে বেশ বিরল।
বিয়ের পর স্বামী বা স্ত্রী কেউই বাড়ি ত্যাগ না করে একে অপরের থেকে আলাদা থাকাকে ডুয়োলোকালিটি বলা হয়। এ প্রথা একদম দেখা যায় না বললেই চলে।
তিব্বতের যে অঞ্চলে গবেষণাটি করা হয়েছে, সেখানে বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর মধ্যে এ চারটি প্রথারই উপস্থিতি রয়েছে।
গবেষণাটি সম্পন্ন করার জন্য চীনের লানঝু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সহযোগিতা পেয়েছেন চেন ও মেস। তারা বিভিন্ন গ্রামের ছয়টি আলাদা নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর ৫০০ জন মানুষের বিয়ের পর বাড়ি ত্যাগ করার বিষয়ে সাক্ষাৎকার নেন। এছাড়া এ মানুষগুলোর কাজের চাপ সম্পর্কে জানতে তাদেরকে ফিটবিটের মতো একটি অ্যাক্টিভিটি ট্র্যাকারও পরতে দেয়া হয়।
বেশি পরিশ্রম করেন নারীরা
গবেষণার প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, নারীরা পুরুষের চেয়ে অনেক বেশি পরিশ্রম করেন। আর তাদের এ পরিশ্রমের বেশিরভাগ ফসল পরিবারগুলোতেই যায়। নারীদের কাছ থেকে জানা তাদের পরিশ্রমের পরিমাণ বিষয়ক তথ্য ও অ্যাক্টিভিটি ট্র্যাকার থেকে পাওয়া উপাত্তের মাধ্যমে এ বিষয়টির প্রমাণ পেয়েছেন দুই গবেষক।
এ নারীরা দৈনিক ১২,০০০ কদম হাঁটেন, যেখানে পুরুষেরা হাঁটেন ৯,০০০ কদম। অর্থাৎ পুরুষেরাও পরিশ্রম করেন, তবে তা নারীর তুলনায় কম। তারা অবসরযাপন বা সামাজিক কর্মকাণ্ড, অথবা স্রেফ ঘোরাঘুরি ও বিশ্রাম করেই বেশি সময় কাটান।
এর কিছুটা হতে পারে নারীরা পুরুষের চেয়ে শারীরিকভাবে গড়ে কম শক্তিশালী বলে। কারণ এর ফলে পরিবারে তাদের কোনো বিষয় নিয়ে দরকষাকষি করার ক্ষমতা কমে যায়।
গবেষণায় আরও জানা গেছে, যেসব ব্যক্তি (নারী বা পুরুষ যে-ই হোক না কেন) বিয়ের পর পৈতৃক বাড়ি ছেড়ে দূরে বাস করেন, তাদেরকে নিজের বাড়িতে থাকা ব্যক্তির চেয়ে বেশি পরিশ্রম করতে হয়।
তাই কোনো নারী বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে গিয়ে উঠলে তিনি কেবল প্রিয়জন বিচ্ছিন্নতার বেদনায়ই ভোগেন না, শারীরিক পরিশ্রমের কষ্টও করতে হয় তাকে।
যখন স্বামী-স্ত্রী দুজনই নিজেদের বাড়ি ছেড়ে নতুন বাড়িতে গিয়ে ওঠেন, তখন দুজনকেই বেশি পরিশ্রম করতে হয়। কারণ, এক্ষেত্রে পরিবারের অন্যদের সহযোগিতা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন তারা। তবে এ ধরনের নিওলোকালিটিতেও নারীকে বেশি পরিশ্রম করতে হয়।
গবেষণাটি অনুযায়ী, লিঙ্গভেদে শ্রমের সমবিভাজন কেবল তখনই ঘটে, যখন পুরুষ তার পৈতৃক বাড়ি ছেড়ে যান কিন্তু স্ত্রী তার বাড়িতে গিয়ে বাস করেন।
এসব ফলাফল থেকে গবেষকেরা বিশ্বব্যাপী পুরুষদের চেয়ে নারীরা কেন বেশি স্বগৃহ ত্যাগ করেন, এ নিয়ে একটি ধারণায় পৌঁছেছেন। গৃহপরিবর্তন পুরুষের জন্য আরামদায়ক কিছু নয়। এর ফলে পুরুষকে দৈনিক ২,০০০ কদম বেশি হাঁটতে হয়, যেখানে নারীর ক্ষেত্রে কেবল ১,০০০ কদম বেশি যোগ হয়।
কৃষিকাজ, গো-পালন, ও গৃহকর্মে সময় ও শক্তি বেশি ব্যয় করার ফলে অবসর সময় কমে যায়। বিবর্তনের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, উচ্চতর ফিটনেসে অবদান না রাখলে মানুষ সচরাচর বিশ্রাম হাতছাড়া করতে চায় না।
তবে গবেষণা করা এলাকায় বিশ্রাম নারী-পুরুষদের কাছে আকর্ষণীয় কোনো বিষয় কিনা তা এ গবেষণায় জানা সম্ভব হয়নি। বিশ্বের শহুরে এলাকাতে বর্তমানে নিষ্ক্রিয় জীবনযাপন ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে।
পরিশ্রমের ক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্য ঘরে ও বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই দেখা যায়। বর্তমান গবেষণায় পুরুষদের চেয়ে নারীদের বেশি পরিশ্রম করার বিষয়ে একটি বিবর্তনীয় দৃষ্টিকোণ পাওয়া গিয়েছে।
কিন্তু ধীরে ধীরে এসবের পরিবর্তন ঘটছে। নিওলোকালিটি পরিবারে সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকায় সংসারের দায়িত্ব-কর্তব্য নিয়ে নারীদের কথা বলার সুযোগ বাড়ছে। এছাড়া নারীশিক্ষা, নারীর আয়, স্বায়ত্তশাসন ইত্যাদিও এক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
এসব পরিবর্তনের ফলে বর্তমানে অনেক শহুরে, শিল্প ও শিল্প-পরবর্তী সমাজে এখন পুরুষেরা বেশি পরিশ্রম করছেন।
ফিচার
ফিলস লাইক তাপমাত্রা মাপা হয় যেভাবে!
বছরের মাঝামাঝি সময় এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত চলে গরমের তীব্রতা। তাপমাত্রা এমন বৃদ্ধি পাওয়ায় জনজীবন আজ বিদ্ভস্ত। চলতি বছরে দেশের কয়েক জেলায় তাপমাত্রার রেকর্ড মাপা হয়েছে সর্বোচ্চ ৪২ ডিগ্রি। আর এ কারণেই জারি করা হয়েছে হিট অ্যালার্ট ।
ডিজিটাল বাংলাদেশের যুগে মানুষ এখন আবহাওয়া পূর্বাভাসের জন্য বসে না থেকে ঘন ঘন মোবাইল ঘেটে দেখে নেয় তাপমাত্রার আপডেট। ধরুন, গুগলে সার্চ দেয়ার সময় তাপমাত্রা দেখা গেলো ৩৮ ডিগ্রিতে তবে এর অনুভুতি হচ্ছে যেন ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রা।
এই যে ফিলস লাইক বা অনুভূত তাপমাত্রার কথা বলা হচ্ছে, সেটি আসলে কি? গরমের এই সময়ে কোন এক এলাকার যে নির্দিষ্ট যে তাপমাত্রার হিসাব দেয়া থাকে তার চেয়ে ফিলস লাইক তাপমাত্রা বেশিই থাকে। এই যেমন গুগল বলছে, এখন ঢাকার তাপমাত্রা ৩৮, কিন্তু ফিলস লাইক ৪২, অর্থাৎ চার ডিগ্রি বেশি!
কীভাবে এই ফিল্স লাইক মাপেন আবহাওয়াবিদরা? ব্রিটেনের আবহাওয়া অফিস বলছে, ফিল্স লাইক মাপা হয় কোনও এলাকার সম্ভাব্য তাপমাত্রার পূর্বাভাস, ওই এলাকার আর্দ্রতা ও হাওয়ার গতিবেগ মেপে।
তাপমাত্রা বলতে বোঝায় কোনও নির্দিষ্ট এলাকার বাতাসের তাপমাত্রা। কিন্তু রাস্তাঘাটে বেরুলে শুধু হাওয়া নয়, আরও কিছু বিষয় তাপমাত্রায় প্রভাব ফেলে। বাতাসের আর্দ্রতা ও গতিবেগের কারণে মূল তাপমাত্রার চেয়েও বেশি গরম বা ঠাণ্ডা অনুভূত হয়ে থাকে। পরিবেশেরও একটা বিরাট প্রভাব আছে এতে।
কীভাবে অনুভূত তাপমাত্রাকে প্রভাবিত করে বাতাসের আর্দ্রতা এবং হাওয়ার গতি?
আবহাওয়াবিদদের মতে, বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলে ঘাম বেশি হয়। কিন্তু সেই ঘাম বাষ্পের সঙ্গে মিশে যেতে সময় বেশি লাগে। শরীর ঠান্ডা হতে পারে না, তখন গরম কিছুটা বেশি লাগে। অস্বস্তির পরিমাণও বেড়ে যায়।
বাংলাদেশ-ভারতে যখন তাপদাহে পুড়ছে, তখন মরুর দেশ আরব আমিরাত আর সৌদি আরবের রুক্ষ দেশে অঝোর ধারায় ঝরছে বৃষ্টি। এতোটাই বৃষ্টি যে দেশগুলো রাস্তাঘাট ডুবে গিয়ে রীতিমতো বন্যা পরিস্থিতি। আবার ইউরোপেও এবার অস্বাভাবিকভাবে প্রত্যক্ষ করছে বন্যা, যা এক সময় তাদের চিন্তারও বাইরে ছিলো।
ফিচার
জীবনযোদ্ধার আরেক নাম ‘বাবা’!
শব্দটি ছোট, অথচ এর অর্থ অনেক বিস্তৃত। পৃথিবীর আলো দেখার পর থেকে যে মানুষটা সন্তানের একটু সুখের জন্য, পরিবারের চাওয়া-পাওয়া পূরণের জন্য নিজের সব সুখ ও স্বপ্ন বিসর্জন দেন, তিনি আর কেউ নন, ‘ বাবা’।
আজ বিশ্ব বাবা দিবস। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন আর নতযানু হওয়ার দিন। শব্দটি ছোট, অথচ এর অর্থ অনেক বিস্তৃত। ভাষা আর স্থানভেদে ছোট্ট একটি শব্দের উচ্চারণ বদলে গেলেও অর্থ, বদলায় না রক্তের টান।
বাবা শব্দের মাঝেই জড়িয়ে আছে ভালোবাসা, মায়া, নির্ভরতা। বাবা হলেন সেইজন যার শক্ত কাঁধ সন্তানকে সামনে চলতে শেখায়। যার অক্লান্ত পরিশ্রম সন্তানকে সুন্দর একটা জীবন দেয়। যার অসীম ত্যাগ একটা সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যত এনে দেয়।
‘বাবা’ ডাকলেই কেমন এক শান্তি আর আস্থার নিঃশ্বাস যেন অনুভূত হয়। বাবা শাশ্বত, চির আপন, চিরন্তন। বাবা এক মায়ার নাম, এক ছায়ার নাম, চোখের সামনে ভেসে ওঠা এক জীবনযোদ্ধার নাম।
বাবা মানেই সব আবদারের জায়গা। সন্তানের জন্য এক পৃথিবী সমান দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন বাবা নামের বটবৃক্ষ। জীবনের সব রং-চাওয়া পাওয়া হাসি মুখে বিসর্জন দিতে পারেন বাবারাই। বাবার আর্দশ সন্তানকে ভালো-মন্দের পার্থক্য বুঝতে শেখায়।
প্রতি বছরের জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্ব জুড়ে পালিত হয় বাবা দিবস। সে হিসেবে আজ রবিবার বিশ্ব বাবা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইংল্যান্ড, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, ভারতসহ প্রায় ১১১টি দেশে এ দিনেই বাবা দিবস উদযাপন করা হয়। তবে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশ সেপ্টেম্বরের প্রথশ রোববার বাবা দিবস পালন করে থাকে।
বাবা দিবসের শুরু হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে। তবে ঠিক কবে থেকে এ দিবসটির প্রচলন হলো তা নিয়ে দ্বিধা আছে। কেউ কেউ বলেন, ১৯০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় চার্চের মাধ্যমে দিনটির প্রচলন। অন্যরা বলেন, ওয়াশিংটনের ভ্যাংকুবারে প্রথম বাবা দিবস পালন করা হয়। তবে সাধারণ মত, বাবা দিবসের প্রবক্তা সোনার স্মার্ট ডোড। ১৮৮২ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি তিনি জন্ম নেন। তার পিতা উইলিয়াম জেকসন স্মার্ট (১৮৪২-১৯১৯) ছিলেন কৃষক। মার্কিন গৃহযুদ্ধের সময় তিনি বীরত্বের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ডোডের মা অ্যালেন ভিক্টোরিয়া চেক স্মার্টসহ পুরো পরিবার চলে যান ওয়াশিংটনের স্পোকেনে। সেখানেই জন্ম হয় সোনার স্মার্ট ডোডের। যখন তার বয়স ১৬, তখন তার মা ষষ্ঠ সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। পরিবারে সোনারই ছিলেন একমাত্র কন্যা। পূর্ব ওয়াশিংটনের এক গ্রামের ফার্মে এরপর থেকে তিনি নবজাতকসহ পাঁচটি সন্তান মানুষ করার দায়িত্ব তুলে নেন। সোনারা বড় হওয়ার পর অনুভব করলেন ছয়টি সন্তান একা একা মানুষ করতে কী ভীষণ পরিশ্রমই না তার বাবাকে করতে হয়েছে। উইলিয়াম তার মেয়ের চোখে ছিলেন সাহসী, নিঃস্বার্থ একজন ভালো বাবা, যিনি সন্তানদের জন্য নিজের সব সুখ-শখ, আহ্লাদ বিসর্জন দিয়েছিলেন। সোনার স্মার্ট বিয়ে করেন জন ব্রোস ডোডকে। তাদের সন্তান জ্যাক ডোড জন্মের কিছুকাল পরে সোনারের স্বামীও মারা যান। এ অবস্থায় বাবা আর মেয়েতে মিলেই পুরো জীবন পার করে দেন।
বাবার প্রতি সম্মান জানাতে ‘বাবা দিবস’ ঘোষণার বিষয়টি সোনারের চিন্তায় আসে ১৯০৯ সালে। ‘মা দিবস’-এর অনুষ্ঠানে সে বছর চার্চে যান সোনার ডোড। অনুষ্ঠানে এসেই তার মনে হয় মা দিবসের মতো বাবাদের জন্যও একটি দিবস করা প্রয়োজন। যেখানে মায়েদের মতো বাবাদেরও সম্মান জানানো হবে। প্রকাশ করা হবে ভালোবাসা। যুক্তরাষ্ট্রের স্পোকেন মন্ত্রীজোটের কাছে তিনি তার পিতার জন্মদিন ৫ জুনকে বিশ্ব বাবা দিবস হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাব পাঠান। তার প্রস্তাবের প্রশংসা করলেও মন্ত্রীজোট ৫ জুনকে বাবা দিবস ঘোষণা করতে রাজি হয়নি। তারা জুন মাসের তৃতীয় রবিবারকে বাবা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। একটি স্থানীয় পত্রিকা সেদিন ছুটি ঘোষণা করে এবং বিভিন্ন দোকানিরা বাবাদের জন্য নানা রকমের উপহার সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে রাখেন।
১৯ জুন ১৯১০। প্রথম বাবা দিবস উদযাপিত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্পোকেনস শহরে। শহরের তরুণ-তরুণীরা দুটি করে গোলাপ নিয়ে যান চার্চে। একটি লাল, অন্যটি সাদা। লাল গোলাপ জীবিত পিতাদের শুভেচ্ছার জন্য, আর সাদা গোলাপ মৃত পিতাদের আত্মার তুষ্টির জন্য। বিষয়টি পুরো মার্কিন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সবাই মিলে এই ভাবনার প্রশংসা করেন এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রে তা শুরু হয়। কিন্তু তারপরও এটাকে জাতীয়ভাবে পালনে কংগ্রেসের নানা দ্বিধা ছিল। কেননা তারা ভাবছিলেন এতে বাবা দিবস একটি বাণিজ্যে পরিণত হতে পারে। ১৯১৬ সালে প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন বিষয়টি অনুমোদন করেন। ১৯২৪ সালে প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কোলিজ এটিকে জাতীয় দিবসে রূপ দেন। ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন রাষ্ট্রীয়ভাবে জুনের তৃতীয় রবিবার বাবা দিবস উদযাপনের ঘোষণা দেন। অবশেষে ১৯৬৬ সালে ৫৬ বছর পর বাবা দিবসকে জাতীয় মর্যাদা দেয়া হয়। সোনারা ডোড মারা যান ১৯৭৮ সালে। তখন তার বয়স ছিল ৯৬ বছর।
ফিচার
বর্ষার ছন্দে এসেছে আষাঢ়ে মেঘের ভেলা!
বাংলা পঞ্জিকা না খুললেও প্রকৃতি যেন একটু একটু করে বলছে আষাঢ় এসে গেছে। সকালে আকাশ মেঘলা জানিয়ে দিয়ে আজ শনিবার (১৫ জুন) বাংলা তৃতীয় মাসের আর্বিভাব ঘটে গেছে। বৃষ্টি না থাকলে মেঘলা মেঘলা একটা অনুভূতি কিন্তু আছে।
আর তাই হয়তো কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখে গেছেন, ‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে, আসে বৃষ্টির সুবাস বাতাস বেয়ে। এই পুরাতন হৃদয় আমার আজি পুলকে দুলিয়া উঠিছে আবার বাজি নূতন মেঘের ঘনিমার পানে চেয়ে আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে। ‘
ঋতুচক্রে আষাঢ়-শ্রাবণ বর্ষাকাল। আষাঢ় মানে বিশাল আকাশে কালো মেঘের পালকিতে ভেসে বেড়ানো মুহুর্মুহু ডঙ্কা-নিনাদ, ঝমঝম বৃষ্টি। বর্ষার শীতল জলে নবজীবন লাভ করে পল্লবপুঞ্জ। প্রকৃতিকে প্রাণবন্ত, সতেজ ও শত সহস্র মনের প্রেমে ভিজিয়ে রাখার সাধ্য যে একমাত্র আষাঢ়েরই আছে, তা অস্বীকার করার সাধ্যি কার। কদম, কেয়া আর কেতকীর নয়নাভিরাম রূপের পসরা ও পেখম খোলা ময়ূরের উচ্ছল নৃত্যের আবাহন নিয়ে আসে বৃষ্টি।
আষাঢ় শব্দটি এসেছে পূর্বাষাঢ়া ও উত্তরাষাঢ়া নক্ষত্রে সূর্যের অবস্থান থেকে। আষাঢ় বাংলা সনের তৃতীয় মাস। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে জুন-জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে আষাঢ় আসে।
বছরভর বাংলার প্রকৃতি হাজির হয় ভিন্ন ভিন্ন অপরূপ সাজে। তার মধ্যে বর্ষার সজল, শ্যামল রূপ অনন্যতায় ভরপুর। ধানের ক্ষেতে রৌদ্র-হাওয়ার লুকোচুরির মতো অপার্থিব দৃশ্য আর কখন মেলে! আষাঢ় আর শ্রাবণ দুই মাসজুড়ে ব্যাপ্তি বর্ষার। মাস দুয়েক নানা মাত্রায় বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর। টিপটিপ, ঝিরিঝিরি, ইলশেগুঁড়ি, মুষলধার—বর্ষার বারিধারার কতই না নাম! কবিরা তার মধ্যে শোনেন নূপুর, মৃদঙ্গ আর মাদলের বোল। আকাশের চেহারারও সে কী বৈচিত্র্য! সারাদিন ঘোলাটে থেকে শুরু করে ছাইরঙা হয়ে মোষের মতো কালো। বর্ষার প্রকৃতিতে ডাকাতের মতোই দৌরাত্ম্য চলে মেঘেদের। কখনো কখনো বর্ষণ শেষে সেই মেঘের ফাঁকে হঠাৎ উঁকি দেয় আকাশজোড়া স্বর্গীয় রঙধনু।
একালে অবশ্য আমাদের কেবল বর্ষা নিয়ে কাব্যকথায় বুঁদ হয়ে থাকলে চলে না। বিশেষ করে নগরে বর্ষা মানে মাথায় রাখতে হয় যানজট আর জলজটের কথা। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণেই নাকি গ্রীষ্ম-বর্ষা জুড়ে বেড়ে চলেছে বজ্রপাত আর তাতে হতাহতের সংখ্যাও।
টিআর/
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন