আন্তর্জাতিক
আদানির সাম্রাজ্য ভাঙনের সুর
কোম্পানির শেয়ারের দামে ধস নামায় মাত্র তিন দিনে ভারতের শেয়ারবাজারে ৫ হাজার ১০০ কোটি ডলার লোকসানের শিকার হয়েছে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী গৌতম আদানির মালিকানাধীন আদানি গ্রুপ।
ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রের শেয়ারবাজার সূচক বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ (বিএসই) বিশ্লেষণ করে জানা যায়, গত তিন দিনে আদানি গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আদানি টোটাল গ্যাসের শেয়ারের দাম কমেছে ১৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ, আদানি ট্রান্সমিশনের শেয়ারের দাম কমেছে ১৯ শতাংশ, আদানি গ্রিন এনার্জির মেয়ারের দাম কমেছে ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ এবং আদানি গ্রুপের প্রধান বা ফ্ল্যাগশিপ কোম্পানি হিসেবে যেটিকে ধরা হয়, সেই আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ারের দাম হ্রাস পেয়েছে ৬ দশমিক ১ শতাংশ।
এছাড়া আদানি গ্রুপের লিজ নেয়া বন্দর ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর (ইপিজেড) শেয়ারের দরপতন ঘটেছে ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ, আদানির গ্রুপের অধীন খাদ্য ও ভোজ্যতেল প্রস্তুতকারী কোম্পানি আদানি উইলমারের শেয়ারের পতন ঘটেছে ৫ শতাংশ।
সবচেয়ে কম হ্রাস পেয়েছে আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণকারী কোম্পানি আদানি পাওয়ারের শেয়ারের দাম। গত তিন দিনে এ কোম্পানির দরপতন ঘটেছে ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ।
এনডিটিভিসহ ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক শেয়ারবাজার বিশ্লেষক সংস্থা হাইডেনবার্গ রিসার্চ আদানি গ্রুপের প্রতারণা আর কর ফাঁকি নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই শুরু হয়েছে এই অবস্থা।
বিএসই ও ভারতের শেয়ারবাজার বিশ্লেষণকারী বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা এনডিটিভিকে বলেছেন, ভারতের শেয়ারবাজার নিয়ে গত ২৪ জানুয়ারি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে হাইডেনবার্গ রিসার্চ। এতে বলা হয়েছে, গত কয়েক দশক ধরে নির্লজ্জ কারসাজি ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ভারতের শেয়ারবাজারে নিজেদের আধিপত্য টিকিয়ে রেখেছে আদানি গ্রুপ। এই গ্রুপের কারণে কোটি কোটি ডলার লোকসানের শিকার হয়েছে ভারতের শেয়ারবাজারে নথিভুক্ত বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ও বহুজাতিক কোম্পানি।
টানা দুই বছর ব্যাপক অনুসন্ধান চালানোর পর প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে বলে দাবি করেছে হাইডেনবার্গ রিসার্চ। এদিকে, আদানি গ্রুপের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে হাইডেনবার্গ রিসার্চের সাম্প্রতিক এই প্রতিবেদনকে ‘ভিত্তিহীন’, ‘বানোয়াট’ ও ‘বিদ্বেষপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার আদানি গ্রুপের শীর্ষ নির্বাহী জতীন জালুন্ধওয়ালা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘গত ২৪ জানুয়ারি হাইডেনবার্গ রিসার্চ যে বিদ্বেষপূর্ণ, ক্ষতিকর ও ভিত্তিহীন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে গবেষণার ছিটেফোঁটাও নেই এবং তাদের এই প্রতিবেদনের জেরে ব্যাপকভাবে লোকসানের সম্মুখীন হয়েছে আদানি গ্রুপ, গ্রুপের শেয়ারধারী ও বিনিয়োগকারীরা। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর থেকে ভারতের শেয়ারবাজারে যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে, তা রীতিমতো উদ্বেগজনক এবং এর জেরে সাধারণ ভারতীয়দের মধ্যে ইতোমধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত যন্ত্রণা দেখা দিয়েছে।’
‘একটি বিদেশি গবেষণা সংস্থার এই ধরনের বেপরোয়া এবং উদ্দেশ্যপূর্ণ প্রতিবেদনে আমরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। আদানি গ্রুপের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে যে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে— তা ইতোমধ্যে সবার কাছেই স্পষ্ট। হাইডেনবার্গ রিসার্চের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারটি আমাদের বিবেচনাধীন আছে।’
মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসের তালিকায় এতদিন বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ধনী ব্যক্তি হিসেবে নাম ছিল গুজরাট থেকে উঠে আসা ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা গৌতম আদানির। তবে সাম্প্রতিক এই ধসের পর সেই তালিকায় ৭ম স্থানে তিনি নেমে গেছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রয়টার্স। ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, আদানির ব্যক্তিগত মালিকানায় থাকা মোট অর্থ ও সম্পদের পরিমাণ ৯ হাজার ৬৬০ কোটি ডলার।
আন্তর্জাতিক
যুক্তরাষ্ট্র অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত : মার্কিন মুখপাত্র
অন্তর্বর্তী সরকার এবং ড. ইউনূসের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের জনগণের জন্য গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে বলে জানিয়েছেন, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শপথ নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মিলার বলেন, বাংলাদেশের জন্য আজ একটি শুভ দিন। নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস সবেমাত্র বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র এ সরকারকে অভিননন্দ জানিয়েছে কি না এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ ডি’অ্যাফেয়ার্স আজ শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং তারা সাম্প্রতিক সহিংসতা বন্ধের জন্য ড. ইউনুসের আহ্বানকে স্বাগত জানাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, এসময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের যোগাযোগ হয়েছে বলেও জানান ম্যাথিউ মিলার। তবে কোন বিষয়ে যোগাযোগ হয়েছে তিনি সে বিষয়ে বিস্তারিত বলেন নি।
আই/এ
এশিয়া
জাপানে ৭.১ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প
জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকায় রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ১ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ৪৩ মিনিটের দিকে পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রধান দ্বীপ কিয়ুশুর মিয়াজাকি অঞ্চলে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে।
জাপানের আবহাওয়া সংস্থার (জেএমএ) বরাত দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম এনএইচকে ওয়ার্ল্ড এ তথ্য জানিয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পের পর দেশটিতে সুনামির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। মিয়াজাকিতে সমুদ্রের ঢেউ ইতোমধ্যে ৫০ সেন্টিমিটারে পৌঁছেছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি কিংবা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে দেশটির মন্ত্রিপরিষদের মুখ্য সচিব ইয়োশিমাসা হায়াশি গণমাধ্যমকে বলেন, ভূমিকম্পের পর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্ল্যান্টগুলোতে কোনো ধরনের অস্বাভাবিক ঘটনা দেখা যায়নি। সরকার ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে।
প্রসঙ্গত, জাপানে ভূমিকম্পের ঘটনা একেবারে সাধারণ। বিশ্বে ৬ বা তার চেয়ে বেশি মাত্রার ভূমিকম্পের প্রায় এক-পঞ্চমাংশই এদেশে ঘটে থাকে।
এর আগে, ২০১১ সালের ১১ মার্চ দেশটির উত্তর-পূর্ব উপকূলে ৯ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। যেটি ছিলো জাপানের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। ওই সময় ভূমিকম্পের পর দেশটিতে বিশাল সুনামি আঘাত হানে।
সূত্র: রয়টার্স
জিএমএম/
আন্তর্জাতিক
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জনগণের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে হবে: যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নয়নের ব্যাপারটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেনো গণতন্ত্র, আইন ও বাংলাদেশি জনগণের আকাঙ্খা পূরণ করে-এমনটাই চাইছে যুক্তরাষ্ট্র।
স্থানীয় সময় বুধবার (৭ আগস্ট) ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে যুক্তরাষ্ট্রে এমনটাই আশা করে বলে জানিয়েছেন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। এদিন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ইরাকের এক সাংবাদিক জানতে চান, ‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে তার বা অন্যদের সঙ্গে আপনাদের যোগাযোগ হয়েছি কী? বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা পরিস্থিতিকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?’
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘আমরা এখনও যোগাযোগ করেনি। আমরা বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখছি এবং আমরা এরইমধ্যে দেখেছি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি তার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আপনি নিশ্চয়ই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলতে শুনেছেন যে. অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে তা যেনো গণতান্ত্রিক নীতিমালাকে, আইনের শাসন এবং সিদ্ধান্তে বাংলাদেশি জনগণের ইচ্ছা প্রতিফলিত হয়।
এসময় যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী একটি প্রশ্ন করেন। তার প্রশ্নটি ছিল, আপনি কি জানেন যে স্বৈরশাসক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করে নতুন সরকারকে হুমকি দিচ্ছেন, সহিংসতা উসকে দিচ্ছেন? তিনি সাবেক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন যিনি বাংলাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছিলেন। দয়াকরে তার ব্যাপারে আপনার মন্তব্য জানাবেন কী?’
জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘একজন সাধারণ নাগরিকের বিবৃতি নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। আমি এরইমধ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কথা বলেছি এবং আমরা দেখতে চাই এই সরকার কী পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যায়।
এসময় মুশফিকুল ফজল আনসারী আরও জানতে চান, ‘দেশের শান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে প্রত্যাশা নিয়ে আপনার কী মন্তব্য?
জবাবে ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেটের মুখপাত্র বলেন, শনের প্রশ্নের উত্তরে আমি যেমনটি বলেছি – অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, আমরা দেখতে চাই ওই সিদ্ধান্তে যেনো গণতান্ত্রিক নীতি মেনে চলা হয় এবং জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ওই ব্রিফিংয়ে ফিলিস্তিনের গাজা, দক্ষিণ আমেরিকার ভেনিজুয়েলা, ইরাক ও ইরানের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।
এমআর//
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন