অপরাধ
গার্মেন্টস পণ্য চুরি করে কোটিপতি শাহেদ
গত দেড় যুগ ধরে রপ্তানিযোগ্য গার্মেন্টস পণ্য চুরি করে প্রায় শতকোটি টাকা মূল্যের পণ্যসহ সংঘবদ্ধ চোরচক্রের হোতা শাহেদ ওরফে সাঈদ ওরফে বদ্দাসহ চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। জানিয়েছেন লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
শনিবার (৪ ফেব্রুয়ায়রি) দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে র্যাব-৪ পৃথক অভিযানে মৌলভীবাজার, গোপালগঞ্জ ও ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকে আলোচিত ব্রাজিলে রপ্তানি করা গার্মেন্টস পণ্য চুরিসহ দেশের গার্মেন্টস পণ্য চুরি কাণ্ডের মূলহোতাসহ গ্রেপ্তার করা হয় চারজনকে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মূলহতা শাহেদ ওরফে সাঈদ ওরফে বদ্দা (৫২), মো ইমারত হোসেন সজল (৩৭), শাহজাহান ওরফে রাসেল ওরফে আরিফ (৩০) ও মো হৃদয় (২৮)। এসময় উদ্ধার করা হয় ব্রাজিলে রপ্তানির জন্য চুরি যাওয়া পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত একটি কাভার্ডভ্যান।
র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, গাজীপুরের কারখানা থেকে কাভার্ডভ্যানে পোশাকের একটি চালান ব্রাজিলে রপ্তানির উদ্দেশে চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠানো হয়। পরের দিন ৮৯৮ কার্টন ভর্তি সোয়েটার চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়। ক্রেতা-মনোনীত শিপিং প্রতিষ্ঠান এক লাখ ২৫ হাজার ডলারেরও বেশি মূল্যের চালানটি গ্রহণ করে ব্রাজিলে পাঠায় এবং সে মোতাবেক বন্দর থেকে চালানবহনকারী জাহাজটি রওনা দেয়ার পরপরই ক্রেতা পুরো অর্থ পরিশোধ করে। তবে গত ৬ জানুয়ারি ব্রাজিলের ক্রেতার কাছ থেকে পাওয়া ভিডিও দেখে হতবাক হয়ে যান গার্মেন্টস মালিকপক্ষ।
ভিডিওতে দেখা যায়, কিছু কার্টন সম্পূর্ণ খালি এবং অনেকগুলো কার্টন থেকে প্রচুর পরিমাণ পণ্য খোয়া গেছে। পরবর্তী সময়ে চুরি হওয়া গার্মেন্টস পণ্যের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা হিসেবে পরিশোধ করতে হয় মালিকপক্ষকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষ গত ২ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের গাছা থানায় চুরির ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি করে। পরে চোরচক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারসহ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায় র্যাব।
গার্মেন্টস পণ্য চুরি চক্রে অসাধু ড্রাইভার, হেলপার ও গোডাউন মালিক-
গ্রেপ্তার শাহেদ ওরফে সাঈদ ওরফে বদ্দা এই গার্মেন্টস পণ্য চুরি জগতের মাস্টারমাইন্ড এবং এই চক্রের মূলহোতা ও নির্দেশদাতা। মূলত তার ছত্রছায়ায় ও সম্মতিতে দেশের প্রায় অধিকাংশ গার্মেন্টস পণ্য চুরির ঘটনা হয়ে থাকে। ৪০-৫০ জনের এ চক্রে রয়েছে অসাধু ড্রাইভার, হেলপার, গোডাউন মালিক, গোডাউন এলাকার আশ্রয়দাতা, অত্যন্ত দক্ষ কুলি সর্দারসহ একদল শ্রমিক। প্রাথমিক পর্যায়ে তারা ট্রান্সপোর্টে গার্মেন্টেসের মালামাল বহন শুরু করেন। একপর্যায়ে গার্মেন্টস পণ্য পরিবহনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কাভার্ডভ্যানের ড্রাইভার ও হেলপারদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে এবং অল্প সময়ে অধিক অর্থ উপার্জনের প্রলোভন দেখিয়ে গার্মেন্টস পণ্য চুরির কাজে উৎসাহিত করে। প্রতিটি চুরির ঘটনার আগে ড্রাইভারদের মাধ্যমে বিদেশে রাপ্তানিকৃত গার্মেন্টস পণ্যের স্যাম্পল নিয়ে চোরাই পণ্যের সম্ভাব্য বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হতো।
রপ্তানি করা পণ্য চুরির নির্দেশ দেয়া হয় যেভাবে-
ব্রাজিলে রপ্তানি করা পণ্য চুরির ঘটনাও শাহেদের নির্দেশে সংঘটিত হয়। গত বছরের ২৯ অক্টোবর গাজীপুর থেকে গার্মেন্টস পণ্য কাভার্ডভ্যানে লোড করে সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। কাভার্ডভ্যানে পণ্য লোডের পর গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ ড্রাইভার শাহজাহানের কাছে স্যাম্পল হিসেবে কিছু সোয়েটার দেয়। ড্রাইভার শাহজাহান স্যাম্পল পাওয়ার পরপরই ছবি তুলে মোবাইলের মাধ্যমে মূলহোতা শাহেদের কাছে পাঠায়। শাহেদ স্যাম্পল পেয়ে এই চুরির ঘটনা বাস্তবায়নকারী আসামি তাওহিদুল ওরফে কাওছার ওরফে বড় কাওছারের কাছে পাঠায় এবং পণ্যের গুণগত মান ও বাজারমূল্য বিবেচনা করে এই চালানটিতে চুরির নির্দেশ দেয়।
৩০-৩৫ শতাংশ পণ্য সরিয়ে ফের প্যাকেজিংয়ের পর বন্দরে পাঠাতো তারা-
মাস্টারমাইন্ড শাহেদের নির্দেশে কাওছার ড্রাইভারের সঙ্গে যোগাযোগ করে চুরির মূল প্লট বাস্তবায়ন করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাওছারের নির্দেশে ড্রাইভার ও হেলপার ২৯ অক্টোবর মধ্যরাতে ডেমরা থানাধীন মিরপাড়াস্থ আয়েশা প্যাকেজিং ভবনের গোডাউনে কাভার্ডভ্যানটি পার্ক করিয়ে এ চুরির ঘটনা ঘটায়। আগে থেকে আয়েশা প্যাকেজিং ভবনের গোডাউনে অপেক্ষারত কুলি সর্দার নাজিম, স্থানীয়ভাবে সেল্টারদাতা মাসুম ওরফে মাসুদসহ অজ্ঞাতনামা ৫/৭ জন লেবার নিয়ে মূলহোতা কাওছার প্রত্যেকটি কার্টন থেকে ৩০-৩৫ শতাংশ পণ্য সরিয়ে পুনরায় প্যাকেজিং করে কাভার্ডভ্যানটি বন্দরের উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দেয়।
এ ঘটনায় কার্টন প্যাকেজিংয়ে অত্যন্ত দক্ষ কুলি সর্দার নাজিম অন্য লেবারদের নিয়ে কাভার্ডভ্যান থেকে কার্টন আনলোড থেকে শুরু করে কার্টন থেকে পণ্য সরিয়ে পুনরায় প্যাকেজিং এবং কাভার্ডভ্যানে কার্টন লোডের কাজটি করে থাকে।
এ চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাওছার, নাজিম ও মাসুম ওরফে মাসুদকে রাজধানীর ডেমরা থেকে গত ২৪ ডিসেম্বর র্যাব-৪ অন্য একটি গার্মেন্টস পণ্য চুরির ঘটনায় হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে। তারা বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, গ্রেপ্তার শাহেদ চট্টগ্রামে থাকা কালে ১৯৯৬ সালে দুটি ট্রাক কিনে লোকাল ব্যাবসা শুরু করে এবং ২০০৪ সালে ট্রাক দুটি বিক্রি করে চারটি কাভার্ডভ্যান কিনে গার্মেন্টস পণ্য পরিবহন শুরু করে। সে কাভার্ডভ্যানের ড্রাইভার এবং হেলপারদের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের সহায়তায় গার্মেন্টস পণ্য চুরির কার্যক্রমের জন্য একটি সংঘবদ্ধ চোরচক্র তৈরি করে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত সে নিজেই সশরীরে উপস্থিত থেকে চুরির কার্যক্রম চালিয়ে যায়।
চুরির টাকায় শাহেদদের ২০ কোটি টাকার বাড়ি ও মাছের খামার-
২০১৮ সালের পর শাহেদ পর্দার আড়ালে থেকে চুরির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ শুরু করে এবং প্রতিটি চুরির ঘটনায় আয় করা অর্থের সর্বোচ্চ অংশ পেতো সে। শাহেদ গত দেড় যুগের বেশি সময় ধরে এই গার্মেন্টস পণ্য চুরির জগতে মাস্টারমাইন্ড হিসেবে কাজ করছে। মৌলভীবাজার শহরে সাহেদের প্রায় ১৫-২০ কোটি টাকা মূল্যের একটি বাড়ি রয়েছে। মৌলভীবাজারের দূর্লভপুরে প্রায় ২০ একর জমির উপরে মাছের খামারসহ বিশাল দুটি হাঁস-মুরগির খামারও রয়েছে তার। এছাড়াও বর্তমানে তার নিজস্ব চারটি কাভার্ডভ্যানসহ সহযোগীর আরও ১৫টি কাভার্ডভ্যান রয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১৭-১৮টি গার্মেন্টস পণ্য চুরির মামলা রয়েছে। অধিকাংশ মামলায় সে কারাভোগ করেছে। এমনকি তার বিরুদ্ধে আদালতে ছয়টি মামলার বিচারকাজও চলমান রয়েছে।
টিআর
অপরাধ
রাজধানীতে বস্তা ভর্তি টাকাসহ একটি গাড়ি আটক করলেন শিক্ষার্থীরা
রাজধানীর উত্তরায় একটি প্রাইভেটকার থেকে এক বস্তা টাকাসহ একটি শটগান উদ্ধার করেছেন শিক্ষার্থীরা। এই ঘটনায় তিনজনকে হেফাজতে নিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।
বুধবার (৭ আগস্ট) এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা গণমাধ্যমে জানান, রাজধানীর উত্তরার একটি বাসার গ্যারেজ থেকে গাড়িটি জব্দ করা হয়। এ সময় তিনজনকে হেফাজতে নেয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। পরে গাড়ি থেকে এক বস্তা টাকা উদ্ধার করে হেফাজতে নেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় স্থানীয় জনতা ও শিক্ষার্থীরা উল্লাস করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, আওয়ামী লীগ ঘরোয়ানার একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের এমডির গাড়ি থেকে এ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। গাড়ি থেকে এক বস্তা টাকাসহ একটি শটগান উদ্ধার করে উত্তরা টাউন কলেজের শিক্ষার্থীসহ অনান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এএম/
অপরাধ
কাশিমপুর কারাগার থেকে পালিয়েছে ২০৯ বন্দি, নিহত ৬
গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ২০৯ জন বন্দি পালিয়েছেন। পালিয়ে যাওয়ার সময় নিরাপত্তাকর্মীদের গুলিতে ছয়জন বন্দি নিহত হয়েছেন।
বুধবার (৭ আগস্ট) বিকেলে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান,গেলো মঙ্গলবার বিকেলে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দিরা কারাগার ভেঙে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কারারক্ষীরা তাদের নিভৃত করার চেষ্টা করলে বন্দিরা কারারক্ষীদের ওপর চড়াও হয়। বন্দিদের কেউ দেয়াল ভেঙে, কেউ দেয়াল টপকে, আবার কেউ দেয়ালের সঙ্গে বিদ্যুতের পাইপ লাগিয়ে কারারক্ষীদের মারধর করে পালিয়ে যেতে চান।
একপর্যায়ে সেনাবাহিনীকে খবর দিলে তারা কমান্ডো অভিযান চালিয়ে বিদ্রোহ দমন করেন।এসময়ে বন্দিদের মধ্যে ২০৯ জন দেয়াল টপকে পালিয়ে গেছে।বন্দিদের ঠেকাতে নিরাপত্তাকর্মীদের গুলিতে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, নিহতদের নাম পরিচয় পরে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন সিনিয়র জেল সুপার।
আই/এ
অপরাধ
কাশিমপুর কারাগারে তীব্র উত্তেজনা, সেনাবাহিনীর শক্ত অবস্থান
গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে বন্দিরা মুক্তির দাবিতে উত্তেজনা শুরু করেছেন। কারারক্ষীদের জিম্মি করে অনেকে দলবদ্ধভাবে বের হয়ে আসার চেষ্টা করছেন। খবর পেয়ে সেনা সদস্যরা এসে প্রাথমিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) দুপুরের দিকে এ পরিস্থিতি দেখা গেছে। এসময়ে ওই এলাকার আকাশে হেলিকপ্টার চক্কর দিতে দেখা যায়।
কারা কর্তৃপক্ষ জানান, কাশিমপুর কারা কমপ্লেক্সে পৃথক চারটি কারাগার রয়েছে। এর মধ্যে বিডিআর বিদ্রোহ মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি, ফাঁসি ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দুর্ধর্ষ জঙ্গি বন্দিরা রয়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার অনেক নেতাকর্মীও ওই কারাগারে রয়েছে।
জানা যায়, বেলা ১১টার দিকে কিছু বন্দি কারাগারের অভ্যন্তরে থাকা কারারক্ষীদের জিম্মি করে মুক্তির দাবিতে বিদ্রোহ শুরু করে। এসময়ে কারারক্ষীরা তাদের শান্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। আগে থেকেই সেখানে অল্প সংখ্যক সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন। উত্তেজনা আরও বেড়ে গেলে দুপুর দেড়টার দিকে অতিরিক্ত সেনা সদস্য হেলিকপ্টার যোগে কারা অভ্যন্তরে এসে বন্দিদের নিয়ন্ত্রণ করেন।
প্রসঙ্গত, কারা অভ্যন্তরে বিদ্রোহের খবর পেয়ে বন্দিদের স্বজনরা সকাল থেকেই কারাগারের সামনে অবস্থান করেন। এ সময় তাদের সঙ্গে আন্দোলনকারীরা যোগ দিয়ে বিক্ষোভ করে। কারাগারের বাইরে একটি ঝুট গুদামে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরে সেনা সদস্যরা বাইরের বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেন।
আই/এ
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন