রাজশাহী
অপরিকল্পিত লকডাউনে সুফল আসছে না
সারাদেশের ন্যায় রাজশাহীতে চলছে কঠোর লকডাউন। কঠোর লকডাউনের আজ (বুধবারবার) ৬তম দিন। দিন যত গড়াচ্ছে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়ন ততইটাই ঢিলেঢালা হয়ে যাচ্ছে। রাস্তায় বাড়ছে যানবাহন, চলাচল বাড়ছে মানুষের। করোনায় মৃত্যু বাড়ার কারণে মূলত মানুষকে ঘরে রাখার জন্য এই কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। কিন্তু মানুষ আর ঘরমুখি নেই।
প্রথম দিকে লকডাউনের বিধিনিষেধ মানতে দেখা গেলেও এখন রাজশাহী মহানগরীর রাস্তাঘাটের সর্বত্রই যানবাহনের দাপট। বিশেষ করে সকালের দিকে লকডাউন থাকছে ঢিলেঢালা, বিকেল হলে হচ্ছে কঠোর। আর কঠোর লকডাউনেও রাস্তাঘাটে যানবাহনের দাপট বেমানান বলে মনে করছেন সচেতন মানুষ। চিকিৎসকরা বলছেন, লকডাউনে কোনো সুফল আসছে না। এমনকি লকডাউনের কোনো কার্যকারিতাও নেই। এভাবে লকডাউন চললে সারাবছরেও কোনো সুফল আসবে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরিকল্পিত লকডাউনে কোনো সুফল আসবে না, প্রয়োজন পরিকল্পিত কঠোর লকডাউন।
কঠার লকডাউনের মধ্যে দেশে করোনায় মৃত্যুর অতিতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। সারাদেশের ন্যায় রাজশাহীতেও হুহু করে বাড়ছে মৃত্যু, বাড়ছে শনাক্ত। গত ২৪ঘন্টায় (মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত) করোনা ও করোনার উপসর্গ নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন ১৮ জন।
এরমধ্যে রাজশাহীর ৬, পাবনার ৭, নাটোরের ৩ জন, কুষ্টিয়া ও মেহেরপুরের ১ জন করে মারা গিয়েছেন। এরমধ্যে করোনায় মারা গিয়েছেন ৬ জন এবং এর উপসর্গ নিয়ে মারা গিয়েছেন ১২ জন। বিশেষ করে লকডাউনের মধ্যে গত ৫৮ দিনে রামেক হাসপাতালে ৮৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনাক্তের হার দ্বিগুন। গত ২৪ ঘন্টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের দুই ল্যাবে করোনা পরীক্ষা হয়েছে ৫৫৮ জনের আর করোনা শনাক্ত হয়েছে ১২৭ জনের। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২২.৭৫%।
এছাড়াও কয়েকদিনের হিসাব অনুযায়ী সোমবার রাজশাহীতে এ মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৭ জন। এর আগের দিন মৃত্যু হয়েছিল ১৪ জনের। মঙ্গলবার এ মৃত্যু গিয়ে দাঁড়ায় ২১ জনে। আর আজ বুধবার মৃত্যু হলো ১৮জনের। দেশে করোনায় শনাক্তের হার যেমন বিগত দিনের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। তেমনি রাজশাহীতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। মৃত্যুর সাথে রাজশাহীতে করোনা শনাক্তের হারও অনেক এগিয়ে গেছে।
সামনের দিনগুলোতে রাজশাহীর অবস্থা আরো খারাপ হতে যাচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। চলতি মাসে রাজশাহীতে করোনায় মৃত্যুর হিসাব দেখলে বোঝা যায়, রাজশাহী কোন পথে যাচ্ছে। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে লকডাউনের মধ্যেও কেনো করোনায় মৃত্যু ও শনাক্ত বাড়ছে। এ প্রশ্নে উত্তর খুঁজতে গিয়ে অভিজ্ঞমহল ও চিকিৎসকরা বলছেন, কঠোর লকডাউনেও কোনো কিছুই থেমে নেই। শুরু থেকেই লকডাউন যে কড়াকড়ি হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। মাঠে জেলা প্রশাসন, নগর পুলিশ, সেনাবাহিনী রয়েছে। তারপরও মানুষ ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছেন। কেন বের হচ্ছেন তার উত্তরটা কিন্তু খুব সহজেই পাওয়া যাচ্ছে।
চলতি লকডাউনের এখনো বাকি এক সপ্তাহ। যে জন্য কঠোর লকডাউন দেয়া হয়েছে তার সুফল আসছে না। লকডাউন দেয়া হয়েছিল করোনার সংক্রমণ কমানোর জন্য। কিন্তু লকডাউনের মধ্যে সারাদেশের ন্যায় রাজশাহীতে করোনায় মৃত্যু ও শনাক্ত রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এসবের মূলে মানুষের সচেতনাতাকেই দায়ি করছেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসকরা বলছেন, প্রচার-প্রচারণার দিক থেকে রাজশাহী অনেক এগিয়ে থাকলেও মানুষের মধ্যে সচেতনা অনেকটাই কমে গেছে। গ্রাম থেকে শহর, সবখানেই মানুষ একেবারে উদাসিন। মাস্ক ব্যবহার করলেও তা থাকছে থুতলির নিচে। সামাজিক দূরত্বের কথা বলা হলেও তা উপেক্ষিত।
কঠোর লকডাউনের তৃতীয় দিন থেকে রাজশাহী নগরীতে বাড়তে শুরু করেছে মানুষ ও যানবাহনের চলাচল। দিন যত যাচ্ছে নগরীতে যানবাহন ততই বাড়ছে। খুলতে শুরু করেছে দোকানপাট। বুধবার সকাল থেকে রাস্তাঘাটে যানবাহনে পরিপূর্ণ দেখা। সকালের দিকে নগরীর জিরোপয়েন্টের চিত্র ছিল একেবারে উল্টো। স্বাভাবিক দিনের মত লোকজনদের চলাচল দেখা গেছে। এছাড়াও নগরীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে পুলিশের চেকপোষ্ট থাকলেও যানবাহনের চাপ ছিল অস্বাভাবিক। গ্রাম এলাকা থেকেও ছোট যানবাহনে লোকজনদের যেমন শহরে আসছে, তেমনি আবার শহর থেকে গ্রামে যাচ্ছে। লকডাউন বাস্তবায়নে যারা মাঠে রয়েছে তাদের সামনে দিয়েই এভাবে লোকজন ও যানবাহন চলাচল করছে কিন্তু কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। এটি সংক্রমন ছড়ানোর প্রধান কারণ হিসাবেও দেখছে সংশ্লিষ্টরা।
এব্যাপারে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. চিন্ময় কান্তি দাস বলেন, লকডাউন দিয়ে করোনায় মৃত্যু ও শনাক্ত রোধ করা যাবে না। কারণ বিগত দিনে রাজশাহীতে কঠোর লকডাউন দেয়া ছিল। কি ফল এসেছে? কোনো সুফল আমরা পাইনি। কারণ লকডাউন দেয়া হয়েছে মানুষকে ঘরে রাখার জন্য। মানুষ কি ঘরে থেকেছে, থাকেনি। তাহলে কি করে সংক্রমণ কমবে। তিনি বলেন, যে লকডাউন চলছে তা অপরিকল্পিত। এ লকডাউনের কোনো কার্যকারিতা নেই। কারণ মানুষের ঘরে খাবার নেই। খাবার না থাকা মানুষ কি করে ঘরে বসে থাকবে। আগে খাবারের নিশ্চয়তা দিতে হবে। তার পর লকডাউন দিতে হবে। তারপর লকডাউনের সুফল আসা করতে হবে। বর্তমান লকডাউনে মানুষের শুধু মাত্র দুর্ভোগ বাড়ানো হচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
রাজশাহী
সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে পাবনায় সচেতনতামূলক সমাবেশ
সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও সকল প্রকার সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে পাবনায় সচেতনতামূলক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (০৮ আগস্ট) দুপুরে পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ বৈষম বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আয়োজনে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় দেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক বক্তব্য দেন এবং সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করার আহ্বান ও জানান। যাতে কোন অপশক্তি আবারও দেশটাকে অস্থিতিশীল তৈরি করতে না পারে তারও আহ্বান জানান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, এডওয়ার্ড কলেজের উপাধ্যক্ষ আব্দুল আউয়াল, বাংলা বিভাগের শিক্ষক মাহবুব, এডওয়ার্ড কলেজের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক বরকাতুল্লাহ ফাহাদ,স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক সিরাজুল মনিরা,রাব্বি রুহান ও এম এইচ অনিক।
এএম/
অপরাধ
এনায়েতপুর থানায় হামলা, ১৩ পুলিশ সদস্য নিহত
সিরাগঞ্জের এনায়েতপুরে থানায় হামলা চালিয়ে ১৩ পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
রোববার (৪ আগস্ট) পুলিশ সদর দপ্তর এবং রাজশাহী বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি বিজয় বসাক গণমাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো বার্তায় বলা হয়, সন্ত্রাসী হামলায় সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার ১৩ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। এছাড়া কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানায় হামলায় এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন।
এদিকে, সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ কর্মসূচির প্রথম দিনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সংঘর্ষে বিভিন্ন জেলায় ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন সহস্রাধিক।
এর মধ্যে নরসিংদীতে ৬ জন, রংপুরে ৫ জন, ফেনীতে ৫ জন, ঢাকায় ৪ জন, সিরাজগঞ্জে ৪ জন, পাবনায় ৩ জন, বগুড়ায় ৩ জন, কিশোরগঞ্জে ৩ জন, ভোলায় ৩ জন, লক্ষ্মীপুরে ৩ জন, মুন্সীগঞ্জে ৩ জন, মাগুরায় ২ জন, সিলেটে ২ জন, ঢাকার আশুলিয়ায় একজন, বরিশালে একজন, জয়পুরহাটে একজন ও কুমিল্লায় একজন মারা গেছেন।
দেশজুড়ে
রাজশাহীতে থানা ও ভূমি অফিসে হামলা-অগ্নিসংযোগ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চলমান অসহযোগ কর্মসূচিতে রাজশাহী নগরীর মোহনপুর থানা, আওয়ামী লীগের অফিস, ভূমি অফিস ও একটি মার্কেটে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
তেমন কোনো অপ্রিতিকর ঘটনা না থাকলেও জেলার মোহনপুরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আজ রোববার রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মোহনপুর উপজেলা সদরে এই ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে মোহরপুর পুরো উপজেলা নিয়ন্ত্রণ নেন। এসময় বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা ব্যাপক ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ চালায়। এতে ওই এলাকায় চরম আতঙ্ক দেখা যায়। পরে প্রায় দেড় ঘণ্টা পর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
মোহনপুর থানায় হামলা করার পর পাশেই উপজেলা ভুমি অফিসে হামলা চালায়। এসময় সহকারী কমিশনারের (ভুমি) গাড়ি ভাংচুর করা হয়। এছাড়াও ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় থানার সামনের মার্কেটেও। বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছে থানা পুলিশ।
আই/এ