জাতীয়
ডেঙ্গুর বেশি ঝুঁকিতে ঢাকার ১৯ এলাকা
ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ উপস্থিতি পাওয়া গেছে রাজধানীর ১৯টি এলাকায়। ওই সব এলাকায় এই মশার ঘনত্ব ৫০ শতাংশের বেশি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ১০টি এবং উত্তরের ৯টি এলাকা রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক চলমান জরিপে এই চিত্র উঠে এসেছে। এই এলাকাগুলো এখন ডেঙ্গুর জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ১০ দিন ধরে চলমান এই জরিপ শেষ হচ্ছে আজ শনিবার।
মশার ঘনত্ব পরিমাপক সূচক হলো ব্রুটো ইনডেক্স (বিআই)। এর মাধ্যমে মশার লার্ভার উপস্থিতি হিসাব করা হয়। এই সূচক ২০-এর বেশি হলে শর্ত সাপেক্ষে পরিস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে গণ্য করা হয়। অর্থাৎ ১০০ প্রজনন উৎসর মধ্যে ২০টি বা তার বেশিতে যদি এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়, তাহলে সেটা হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি। ১০ থেকে ২০-এর মধ্যে থাকলে সেটাকে মোটামুটি উপস্থিতি হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।
করোনা মহামারির মধ্যে ডেঙ্গু পরিস্থিতিও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০০ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এর বেশির ভাগই ঢাকায়। ডেঙ্গুতে প্রতিদিন মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। এমন অবস্থায় ঢাকার সিটি করপোরেশন এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চলমান জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ব্রুটো ইনডেক্সে (বিআই) ৫০ শতাংশেরও বেশি মশার ঘনত্ব পাওয়া ঢাকা দক্ষিণের এলাকাগুলো হলো ওয়ারী, মতিঝিল, মুগদা, বাসাবো, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, খিলগাঁও, শান্তিনগর, সিদ্ধেশ্বরী ও পল্টন। উত্তর সিটির এলাকাগুলো হলো রামপুরা, গুলশান, উত্তরা, মিরপুর, বনশ্রী, কল্যাণপুর, শ্যামলী, ভাটারা ও মোহাম্মদপুর।
এর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২৯ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত মৌসুমপূর্ব এডিস জরিপ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা। জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় ৩ মে। ওই জরিপে দেখা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের লালমাটিয়া ও ইকবাল রোড এলাকা এডিস মশার সবচেয়ে বড় উৎসস্থল। সেখানে ব্রুটো ইনডেক্সে এডিসের ঘনত্ব ২৩.৩ শতাংশ। অন্যদিকে এডিস মশার দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসস্থল হচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের সায়েদাবাদ ও উত্তর যাত্রাবাড়ী এলাকা। ব্রুটো ইনডেক্সে এই এলাকায় মশার ঘনত্ব পাওয়া গেছে ২০ শতাংশ।
ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর নিচে এবং ১০-এর ওপরে থাকা এলাকার তালিকায় রয়েছে মনিপুর, পীরেরবাগ, শেওড়াপাড়া, নূরজাহান রোড, আসাদ এভিনিউ, শাহজাহান রোড, মগবাজার, মধুবাগ, নয়াটোলা, মীরবাগ, মালিবাগ, গুলবাগ, শান্তিবাগ, মিন্টো রোড, বেইলি রোড, কাকরাইল, সিদ্দিকবাজার, ওসমান গনি রোড, ঠাটারীবাজার, গোপী মদন-মোহন বসাক লেন, আর কে মিশন রোড, অভয় দাশ লেন, অক্ষয় দাশ লেন, মিলব্যারাক ও আলমগঞ্জ রোড। এই জরিপের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার ২০টি টিম ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণের ৬৯টি ওয়ার্ডের ৭০টি স্থানে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে।
এই জরিপ থেকে আরো দেখা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে কনটেইনারে জমানো পানিতে ২০.২২ শতাংশ, প্লাস্টিক ড্রামে ১৯.১০ শতাংশ, প্লাস্টিক বালতিতে ১১.২৪ শতাংশ, পানির ট্যাংকে ৭.৮৭ শতাংশ, পানির মিটারের গর্তে ৬.৭৪ শতাংশ, প্লাস্টিক বোতলে ৪.৪৯ শতাংশ, লিফটের গর্তে ৩.৩৭ শতাংশ এবং ফুলের টবে ২.২৫ শতাংশ এডিস মশার ঘনত্ব পাওয়া গেছে।
ঢাকার দুই সিটি এডিস নিয়ন্ত্রণে পরিচালনা করছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে বিভিন্ন বাসাবাড়ি এবং নির্মাণাধীন ভবনে মশার লার্ভা পেলে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, নাগরিকরা সচেতন না হলে এডিস নির্মূল সম্ভব নয়। আজকাল বেশির ভাগ লার্ভাই পাওয়া যাচ্ছে মানুষের বাসাবাড়িতে এবং ছাদ বাগানে।
কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, আগের চেয়ে মানুষ কিছুটা সচেতন হয়েছে। তবে পুরোপুরি এডিস নিমূর্লে নিয়মিত ওষুধ ছিটানোর দায় আছে সিটি করপোরেশনেরও।
গত বৃহস্পতিবার ডিএনসিসির কর্মীরা মশার ওষুধ ছিটিয়েছেন রাজধানীর গুলশান-১-এর নিকেতন এলাকায়। গতকাল শুক্রবার ওই এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন মশা কিছুটা কম। ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকায় এখন সচেতন নিকেতনবাসী।
নিকেতনের সি ব্লকের ১৭ নম্বর বাসার তত্ত্বাবধায়ক কালের কণ্ঠকে জানান, এই এলাকায় এখন মশা একটু কম। বৃষ্টি হলে তাঁরা নিজেদের বাসার জমা পানি নিষ্কাশন করে ফেলেন। এ ছাড়া ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দেন। সিটি করপোরেশনের কর্মীরাও সপ্তাহে এক-দুই বার মশার ওষুধ ছিটিয়ে যান।
নিকেতনের ২ নম্বর ফটকে কথা হয় হামিদুর রহমান নামের এক বাসিন্দার সঙ্গে। তিনি বলেন, এখন মানুষ আগের চেয়ে সচেতন।
নিকেতন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সেখানে কোনো বাড়ির সামনেই এডিসের লার্ভা পাওয়ার স্টিকার বা ক্রস চিহ্ন দেওয়া নেই। কয়েকটি বাড়ির সামনে বড় বড় টবে গাছ লাগানো থাকলেও চোখে পড়েনি জমা পানি।
তবে রাজধানীর মিরপুর-১, ২, ৬ ও ১২ এলাকার বেশ কয়েকটি সড়ক ঘুরে এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই সব এলাকায় মশার উপদ্রব কমেনি, বরং বেড়েছে।
এএ
জাতীয়
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানালেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা
শপথ নেয়ার পরের দিন ভাষা শহীদদের স্মরণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৩ জন উপদেষ্টা নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এর আগে, সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ও অন্য উপদেষ্টারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি এক নতুন বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।
আই/এ
জাতীয়
উপদেষ্টা পরিষদকে অভিনন্দন জানালেন জাসদ
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস এবং অন্য উপদেষ্টাদেরকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন
বৃহস্পতিবার ( ৮ আগস্ট ) রাতে দলের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ অভিনন্দন জানান তারা।
বিবৃতিতে জানানো হয়, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর দেশে আর একটিও প্রাণহানি, হামলা ও সম্পদ ধ্বংসের ঘটনা যেন না ঘটে তা নিশ্চিত হবে।”
বিবৃতিতে আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিসহ সংবিধানকে সমুন্নত রেখে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির সাথে আলোচনা করে সরকারের কর্ম পরিকল্পনার রূপরেখা দ্রুত প্রকাশ করে বিদ্যমান অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা প্রশমিত করবেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রাথমিক ও প্রধান কাজ হিসেবে অনতিবিলম্বে দেশে আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জনজীবনে স্বাভাবিকতা ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
জাসদ নেতৃবৃন্দ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ, সাংবাদিক পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
জাসদ জোর দাবি জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পূর্ববর্তী সরকারের পদত্যাগের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ পেশাজীবী ও হিন্দু ও আহমদীয়াসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও হত্যা করা, মন্দিরসহ ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে ও নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে হামলা-হত্যা-নির্যাতন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ, সংসদ ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন-বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে হামলা, লুটপাট, জ্বালিয়ে ছারখার, দেশের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, সাত বীরশ্রেষ্ঠর ভাস্কর্যসহ ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ও ম্যুরাল ভেঙে ফেলা এবং কুমিল্লার বীরচন্দ্র পাঠাগার, সুনামগঞ্জের ঐতিহ্য জাদুঘর, কুড়িগ্রামের উত্তরবঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ময়মনসিংহের ঐতিহাসিক শশীলজের ভেনাস ভাস্কর্য ভেঙে ফেলাসহ অগনিত শিল্পকর্ম ভেঙে ফেলার সব অপরাধ কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার।
জেডএস/
জাতীয়
তদবির থেকে বিরত থাকুন, দেশগঠনে পরামর্শ দিন : আসিফ মাহমুদ
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে ১৭ সদস্যের অন্তবর্তীকালীন সরকার। এ উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুইজন প্রতিনিধি। এদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ। তিনি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়ার পর ঘনিষ্ঠজনদের নিজেদের সুবিধার জন্য কোনো আবদার কিংবা তদবির করতে বারণ করেছেন। বরং দেশগঠনে কোনো পরামর্শ থাকলে দেয়ার অনুরোধ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্ট করে এ অনুরোধ করেন।
পোস্টে এই তরুণ উপদেষ্টা লিখেছেন, ব্যক্তিগত লাভের আশায় আবদার, তদবির করা থেকে বিরত থাকুন। এতে করে আমার সাথে আপনার সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। দেশগঠনে পরামর্শ থাকলে জানাবেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৭ জনকে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ঢাকার বাইরে থাকায় তিন উপদেষ্টা ফারুক-ই-আযম, বিধান রঞ্জন রায় এবং সুপ্রদীপ চাকমা শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি।
সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়া অন্যান্য উপদেষ্টারা হলেন- ১. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ২. ড. আসিফ নজরুল ৩. আদিলুর রহমান খান ৪. হাসান আরিফ ৫. তৌহিদ হোসেন ৬. সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান ৭. মো. নাহিদ ইসলাম ৮. আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ৯. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন ১০. সুপ্রদীপ চাকমা ১১. ফরিদা আখতার ১২. বিধান রঞ্জন রায় ১৩. আ.ফ.ম খালিদ হাসান ১৪. নুরজাহান বেগম ১৫. শারমিন মুরশিদ ১৬. ফারুক-ই-আযম।
জেএইচ