জাতীয়
রোহিঙ্গা সংকট প্রশ্নে আন্তর্জাতিক নিষ্ক্রিয়তা বাংলাদেশকে মর্মাহত করেছে
রোহিঙ্গা সংকট প্রশ্নে প্রধান আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর নিষ্ক্রিয়তা বাংলাদেশকে মর্মাহত করেছে। অথচ, সীমিত সম্পদ সত্ত্বেও মানবিক দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ শরনার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিল। ‘অতি জরুরি’ ভিত্তিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন জোরদার করা দরকার। বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) অধিবেশনের ফাঁকে ‘হাই-লেভেল সাইড ইভেন্ট অন ফরসিবলি ডিসপ্লেস মিয়ানমার ন্যাশনালস (রোহিঙ্গা) ক্রাইসিস : ইম্পারেটিভ ফর এ সাস্টেইনাবল সল্যুশন’ শীর্ষক ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বারবার বলেছি, তারা (রোহিঙ্গারা) মিয়ানমারের নাগরিক। সুতরাং, তাদেরকে অবশ্যই নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিয়ে তাদের জন্মভূমি মিয়ানমারেই ফিরে যেতে হবে।
শেখ হাসিনা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, রোহিঙ্গা সংকট আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতএব, এ ব্যাপারে জরুরি প্রস্তাব গ্রহণ করা প্রয়োজন এবং ‘মি জোরদিয়ে বলতে চাই, এক্ষেত্রে আমরা বাংলাদেশে যা কিছু করছি তা সম্পূর্ণরূপে অস্থায়ী ভিত্তিতে করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের তাদের জন্মভূমিতে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যা কিছু করা সম্ভব তা অবশ্যই করতে হবে। এদিকে, তারা নিজেরাও তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে চায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পর থেকেই এ সংকটের একটি স্থায়ী সমাধানের জন্য একেবারে ধারাবাহিকভাবে ইউএনজিএ’র অধিবেশনে তিনি সুনির্দিষ্ট বিভিন্ন প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। এ ব্যাপারে ‘আমাদের সরকার মিয়ানমারের সাথে দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগ বজায় রেখেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আঞ্চলিক ক্ষেত্রে, আমরা চীন ও ভারতসহ প্রধান শক্তিগুলোকে এ সংকট সমাধানে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করেছি। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে আসিয়ানকে আরো সক্রিয় রাখার চেষ্টা চালিয়েছি।’
তিনি বলেন, বহুপাক্ষিক ক্ষেত্রে, আমরা বিশ্বেও গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দেশ ও জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর মনোযোগ আকর্ষণ করে জাতিসংঘ প্রস্তাবের মাধ্যমে বিষয়টি আলোচনার টেবিলে ধরে রেখেছি। তবে, দুঃখজনকভাবে ‘দুর্ভাগা, গৃহহীন হয়ে পড়া মিয়ানমারের নাগরিকদের দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য চালানো আমাদের প্রচেষ্টা এখন পর্যন্ত কোন আলোর মুখ দেখেনি। আজ পর্যন্ত তাদের একজনও তাদের জন্মভূমিতে ফিরে যেতে পারেনি।
শেখ হাসিনা বলেন, বিগত চার বছর ধরে বাংলাদেশ অনেক আশা নিয়ে অপেক্ষা করে রয়েছে যে বাস্তুহারা এসব মানুষ নিরাপদে এবং মর্যদাসহকারে তাদের নিজের দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারবে।
তিনি বলেন, তা সত্ত্বেও, আমাদের আহ্বান অবহেলিত রয়ে গেছে এবং আমাদের প্রত্যাশা অসম্পূর্ণ রয়েছে। এ সংকটের পঞ্চম বছর চলছে। এখনো, আমরা রোহিঙ্গা সংকটের একটি স্থায়ী সমাধানের আশা রাখছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেখা দেয়া এই মানবিক সংকট সমাধান করা ছিল একটি সম্মিলিত দায়িত্ব এবং বিভিন্ন সীমান্তে এর প্রভাব পড়ছে। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এ ব্যাপারে অতি দ্রুত কিছু করতে ব্যর্থ হলে ‘আমাদের সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা মহা বিপদে পড়বে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যাবাসনের অগ্রগতির ঘাটতির কারণে হতাশা বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের অনেকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে এবং তারা অতি সহজে জঙ্গিবাদী মতাদর্শেও শিকার হচ্ছে। এ ধরনের কর্মকা- পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘একটি সীমাবদ্ধ এলাকায় এ ধরনের বিশাল জনগোষ্ঠীর দীর্ঘকাল অবস্থান আশেপাশের পরিবেশ ও বাস্তুসংস্থানের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে বিভিন্ন পাহাড় ও বনভূমি কেটে ফেলতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, প্রতি বছর ৩০ হাজারের বেশি নতুন শিশু জন্মগ্রহণ করায় ক্যাম্পে জনসংখ্যার চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং কক্সবাজারে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চাপ কমাতে আমরা ভাসান চর নামের একটি দ্বীপে তাদের থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। দেশের দক্ষিণে অবস্থিত এ দ্বীপের ১৩ হাজার একর এলাকা জুড়ে এ ব্যবস্থা করা হয়।
জাতীয়
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানালেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা
শপথ নেয়ার পরের দিন ভাষা শহীদদের স্মরণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৩ জন উপদেষ্টা নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এর আগে, সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ও অন্য উপদেষ্টারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি এক নতুন বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।
আই/এ
জাতীয়
উপদেষ্টা পরিষদকে অভিনন্দন জানালেন জাসদ
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস এবং অন্য উপদেষ্টাদেরকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন
বৃহস্পতিবার ( ৮ আগস্ট ) রাতে দলের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ অভিনন্দন জানান তারা।
বিবৃতিতে জানানো হয়, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর দেশে আর একটিও প্রাণহানি, হামলা ও সম্পদ ধ্বংসের ঘটনা যেন না ঘটে তা নিশ্চিত হবে।”
বিবৃতিতে আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিসহ সংবিধানকে সমুন্নত রেখে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির সাথে আলোচনা করে সরকারের কর্ম পরিকল্পনার রূপরেখা দ্রুত প্রকাশ করে বিদ্যমান অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা প্রশমিত করবেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রাথমিক ও প্রধান কাজ হিসেবে অনতিবিলম্বে দেশে আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জনজীবনে স্বাভাবিকতা ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
জাসদ নেতৃবৃন্দ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ, সাংবাদিক পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
জাসদ জোর দাবি জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পূর্ববর্তী সরকারের পদত্যাগের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ পেশাজীবী ও হিন্দু ও আহমদীয়াসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও হত্যা করা, মন্দিরসহ ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে ও নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে হামলা-হত্যা-নির্যাতন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ, সংসদ ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন-বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে হামলা, লুটপাট, জ্বালিয়ে ছারখার, দেশের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, সাত বীরশ্রেষ্ঠর ভাস্কর্যসহ ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ও ম্যুরাল ভেঙে ফেলা এবং কুমিল্লার বীরচন্দ্র পাঠাগার, সুনামগঞ্জের ঐতিহ্য জাদুঘর, কুড়িগ্রামের উত্তরবঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ময়মনসিংহের ঐতিহাসিক শশীলজের ভেনাস ভাস্কর্য ভেঙে ফেলাসহ অগনিত শিল্পকর্ম ভেঙে ফেলার সব অপরাধ কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার।
জেডএস/
জাতীয়
তদবির থেকে বিরত থাকুন, দেশগঠনে পরামর্শ দিন : আসিফ মাহমুদ
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে ১৭ সদস্যের অন্তবর্তীকালীন সরকার। এ উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুইজন প্রতিনিধি। এদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ। তিনি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়ার পর ঘনিষ্ঠজনদের নিজেদের সুবিধার জন্য কোনো আবদার কিংবা তদবির করতে বারণ করেছেন। বরং দেশগঠনে কোনো পরামর্শ থাকলে দেয়ার অনুরোধ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্ট করে এ অনুরোধ করেন।
পোস্টে এই তরুণ উপদেষ্টা লিখেছেন, ব্যক্তিগত লাভের আশায় আবদার, তদবির করা থেকে বিরত থাকুন। এতে করে আমার সাথে আপনার সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। দেশগঠনে পরামর্শ থাকলে জানাবেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৭ জনকে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ঢাকার বাইরে থাকায় তিন উপদেষ্টা ফারুক-ই-আযম, বিধান রঞ্জন রায় এবং সুপ্রদীপ চাকমা শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি।
সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়া অন্যান্য উপদেষ্টারা হলেন- ১. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ২. ড. আসিফ নজরুল ৩. আদিলুর রহমান খান ৪. হাসান আরিফ ৫. তৌহিদ হোসেন ৬. সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান ৭. মো. নাহিদ ইসলাম ৮. আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ৯. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন ১০. সুপ্রদীপ চাকমা ১১. ফরিদা আখতার ১২. বিধান রঞ্জন রায় ১৩. আ.ফ.ম খালিদ হাসান ১৪. নুরজাহান বেগম ১৫. শারমিন মুরশিদ ১৬. ফারুক-ই-আযম।
জেএইচ