ফুটবল
সাদিও মানে, মানুষ নন একজন মহামানব
পাহাড় সমান উচ্চতায় পৌছেও কজনই বা পারে মাটির কাছে থাকতে। যুগটাই এখন এমন, সামান্য কিছু ধনসম্পদ আর অর্থকড়ি পেয়ে গেলেই তো মানুষ হয়ে উঠে, বিলাসী-অহংকারই। ধর্ম যার যার, প্রতিটি ধর্মেই তো মানুষকে বলা হয়েছে নিরহংকারী হতে। কিন্ত সাদিও মানে যে ইসলাম ধর্মে অনুসারী সেই ধর্মে তো বলা হয়েছে এক বিন্দু পরিমাণ অহংকার যার মধ্যে থাকবে সে প্রবেশ করতে পারবে না জান্নাতে। আর তাই তো বিশ্বের অন্যতন ধনী ফুটবলার হয়েও কয়েক বছর আগে মানেকে দেখা গেছে মসজিদের টয়েলেট পরিষ্কার করতে।
গল্পটা শুরু হয়েছিল আফ্রিকার দেশ সেনেগাল থেকে। রাজধানী ডাকার থেকে প্রায় চারশ কি.মি. দূরে প্রত্যন্ত অঞ্চল বাম্বালিতে থাকতেন মানে। ২০০২ বিশ্বকাপে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে হারিয়ে সে আসরে কোয়াটার ফাইনাল খেলেছিল সেনেগাল। সেই খেলা দেখে ছোট্ট মানের মনে ফুটবলার হবার তীব্র বাসনা তৈরি হয়।
কিন্তু মানে যে বাম্বেলি শহরে থাকতেন, সেখানে বাড়ন্ত বয়সের শিশুদের ঠাই হতো কৃষিকাজ অথাবা পশু চড়ানোয়। মানের বাবা ছিলেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম। সমান্য পেট ব্যাথার চিকিৎসার জন্যও ছিল না কোন হাসপাতাল। মসজিদের ইমাম বাবা মানের ৭ বছর বয়সে সামান্য পেট ব্যাথাতেই মারা যান। বাবার মৃত্যুর পর অবস্থা হয়ে উঠে আরও বেগতিক। তিন বেলা ঠিক মতো খাবার জুটতো মানের, তাই ফুটবলার হবার স্বপ্নে সায় দেয় নি তার মা।
মাকে রাজি করাতে না পেরে ১৫ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান মানে। রাজধানী ডাকারে জেনারেশন ফুট নামে একটি ফুটবল একাডেমিতে ভর্তি সুযোগ হয়। তারপর সেখানে থেকে ফরাসি স্কাউটদের নজরে আসলে ১৯ বছর নাগাদ তার সুযোগ হয় পেশাদার প্রথম ফুটবল ক্লাব মেতজে। সেখানে সুযোগ পেয়ে মাকে যখন ফোন করেছিলেন, মা আমি এখন ফ্রান্সে। মজার বিষয় তার মা তখন বিশ্বাস করেনি, সামান্য কুড়ে ঘরে যে ছেলেকে বড় করেছেন সে কিভাবে ফ্রান্সে যেতে পারে। বছর খানেক পর যখন ছেলেকে টিভিতে দেখেছিলেন তার মা তখন বুঝে গেছিলেন তার ছেলে এখন কতো বড় হয়েছে।
ফ্রান্স থেকে জার্মান ক্লাব সালজবারগ। এরপর ইংলিশ প্রমিয়ার লিগে, সাউদ্যাম্পটনের পর “ইউ উইল নেভার ওয়ালক এলন” অ্যানফিল্ডে। লিভারপুলে আসার পর পেয়েছেন তো দুহাত ভরে। অলরেসদের হয়ে ছয় বছরে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ, লিগ শিরোপা সব কিছুই জিতেছেন। এরপর ৪০০ কোটি টাকায় পাড়ি জমিয়েছেন বায়ার্ন মিউনিখে। জার্মান ক্লাবটিতে যাবার আগে মানে বলেছিলেন সেনেগালের মানুষদের কথা শুনে সেখানে তার যাওয়া না যাওয়া সিদ্ধান্ত নিবেন। তার কথা শুনেই বুঝা যায় তিনি তার দেশের মানুষের জন্য কতোটুকু ভাবেন।
নিজের উপার্জনের অধিকাংশ অর্থই তিনি খরচ করেন তার দেশের মানুষের পিছনে। ইমাম বাবা মারা গিয়েছেন সামান্য পেটের ব্যাথার চিকিৎসা না পেয়ে। এমন পরিস্থিতি যেন আর কারো না হয় তাই নিজ অর্থে তৈরি করেছেন হাসপাতাল। বাচ্চাদের জন্য করে দিয়েছেন স্কুল, বানিয়ে দিয়েছেন খেলার স্টেডিয়াম।
তার মানব সেবার কাজ সম্পর্কে সাংবাদিকরা যখন জানতে চেয়েছিলেন, তখন সাদিও অনুরোধ করেছিলেন তার এসব কাজ যেন প্রকাশ না করা হয়। গোপনের তিনি করতে চান মানব সেবা।
একটা মানুষের সাপ্তাহিক আয় যেখানে কোটি কোটি টাকা। সেখানে বিলাসীতার বিন্দু মাত্র ছাপ নেই মানের। ব্যবহার করতেন ভাঙ্গা একটি আইফোন। কেন তিন ভোগ বিলাসের পণ্য ক্রয় করেন না। এমন প্রশ্নে মানে একবার বলেছিলেন, চাইলেই কিনতে পারি। ১০ টি ফেরারি, ২০ টি ডায়মন্ডের ঘড়ি বা দুইটি প্লেন। কিন্তু এই জিনিসগুলা আমার বা বিশ্বের জন্য কি কাজে দেবে। আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম এবং এক সময় মাঠে কাজ করতাম। আমার অভিনব গাড়ি, বিলাসবহুল বাড়ি, কিংবা বিমানের দরকার নেই। জীবন আমাকে যা দিয়েছে, লোকারেরা এর কিছুটা হলেও পাবে, এটাকেই আমি প্রাধান্য দেই।
সাদিও মানেরা আছে বলেই হয়তো পৃথিবীটা কিছুক্ষণের জন্য থমকে যায়। ভুবন বিজয়ী গল্পের চরম কোন মুগ্ধতায়।
ফুটবল
ফুটবলকে বিদায় জানালেন পেপে
সব ধরনের ফুটবল থেকে বিদায় নিলেন পর্তুগালের ডিফেন্ডার পেপে। বৃহস্পতিবার এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তিনি।
সর্বশেষ ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে পর্তুগালের ম্যাচটাই হয়ে রইল ৪১ বছর বয়সী এই ফুটবলারের ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ।
সে ম্যাচে টাইব্রেকারে হেরে বিদায় নিয়েছিল পর্তুগাল। ইউরোর মূলপর্বে সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামার রেকর্ডও গড়েন তিনি।
পর্তুগালের হয়ে ১৪১ ম্যাচ খেলেছেন পেপে। জিতেছেন ২০১৬ ইউরো।
ফুটবল
বাফুফে থেকে পদত্যাগ করলেন সালাম মুর্শেদী
পদত্যাগ করেছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী। তিনি ২০০৮ সাল থেকে পদটিতে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
এছাড়াও সালাম মুর্শেদী বাফুফের অর্থ কমিটি ও রেফারিজ কমিটির প্রধানও ছিলেন। এই দুটি পদ থেকেও তিনি পদত্যাগ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সালাম মুর্শেদীর পদত্যাগের কথা জানায় বাফুফে। সালাম মুর্শেদী খুলনা–৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন।
ফুটবল
চলে গেলেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সংগঠক সাইদুর রহমান প্যাটেল
স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অন্যতম সংগঠক ও উদ্যেক্তা সাইদুর রহমান প্যাটেল মারা গেছেন। বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ছিলেন। হাসপাতালে থাকাকালীন সেসব ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করতেন তিনি। অবশেষে ৭৩ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসের একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন সাইদুর রহমান। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) শোক জানিয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সাইদুর রহমানের অবদান ছিল অনস্বীকার্য। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন স্থানে তহবিল তুলতেন সাইদুর রহমানরা। তারা ভারতে ঘুরে ঘুরে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের হয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলতেন। সেখান থেকেও তহবিল সংগ্রহ করতো এই দলটি।
একজন ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রাখার লক্ষ্য নিয়েই স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠন করার উদ্যেগ নিয়েছিলেন সাইদুর রহমান প্যাটেলরা। এখানে খেলে যে অর্থ উত্তোলন হবে, তা মুক্তিযুদ্ধের জন্য গঠিত তহবিলে প্রদান করা হবে; এমনই ছিল স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সেসময়ের ভাবনা।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ইচ্ছা ছিল সাইদুর রহমানের। সবশেষ সাধারণ নির্বাচনের আগেই অবশ্য চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাতে হয় তাকে। সেখানে লম্বা সময় ধরে চিকিৎসা নেওয়ার পর আর দেশে ফিরতে পারলেন না তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতেই নিজের জীবনের শেষ সময়টুকু কাটালেন।
সাইদুর রহমানের জন্ম ১৯৫১ সালের ৭ অক্টোবর। তিনি ঢাকার কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। পরে অবশ্য গেন্ডারিয়ায় চলে যায় তার পরিবার। গেন্ডারিয়াতেই বেড়ে উঠেছেন, স্থানীয় পর্যায়ে ফুটবল খেলতে খেলতে শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলেও নিজের জায়গা করে নেন। তিনি ঢাকার ইস্টএন্ডের হয়ে ফুটবল খেলেছেন। দ্বিতীয় বিভাগে ফরাশগঞ্জের হয়ে, প্রথম বিভাগে পিডব্লুডি’র হয়ে খেলেছেন সাইদুর রহমান প্যাটেল।
এম এইচ//
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন