আইন-বিচার
মেট্রোরেলে ঢিল: অপরাধীদের গুণতে হবে ৫০ লাখ টাকা
ঢিল ছুড়ে মেট্রোরেলের জানালার কাচ ক্ষতিগ্রস্ত করার ঘটনায় মেট্রোরেল আইনে প্রথমবারের মতো মামলা দায়ের হয়েছে। মেট্রোরেল আইন-২০১৫ এর ৩৫ ও ৪৩ ধারাসহ দণ্ডবিধি ৪২৭ ধারায় রাজধানীর কাফরুল থানায় এ মামলা করেছেন মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। মামলায় একাধিক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। ঢিল ছোড়ার ঘটনায় মেট্রোরেলের প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে মামলার এজাহারে।
গেলো রোববারের (৩০ এপ্রিল) এ ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করতে এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক টিম কাজ করছে। মেট্রোরেল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাষ্ট্রের এমন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন মেট্রোরেলের নিরাপত্তায় কোনো ধরনের ছাড় দেয়া হবে না। দণ্ডবিধি অনুযায়ী জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে চায় রাষ্ট্রপক্ষ।
মেট্রোরেল আইনের যেসব ধারায় মামলা হয়েছে এরমধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তি হচ্ছে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ লাখ টাকার জরিমানা। আর সর্বনিম্ন শাস্তি হচ্ছে দুই বছরের কারাদণ্ড। মেট্রোরেলে ঢিল নিক্ষেপকারীদের যেন সর্বোচ্চ শাস্তি হয় সেদিকে নজর রাখছেন রাষ্ট্রপক্ষ। তারা চান, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, যেন ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের গর্হিত অপরাধে না জড়ায়।
মেট্রোরেল ও উহার যাত্রীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার দণ্ড
মেট্রোরেল আইন ২০১৫ এর ৩৫ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি যদি মেট্রোরেল ও উহার যাত্রীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় বা বিঘ্নিত হইবার সম্ভাবনা থাকে এইরূপ কোনো কর্মকাণ্ড সম্পাদন করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির উক্ত কার্য হইবে একটি অপরাধ, এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ) লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।’ অপরাধ সংঘটনে সহায়তা, প্ররোচনা ও ষড়যন্ত্রের দণ্ড আইনটির ৪৩ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি যদি এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করেন বা উক্ত অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা দেন বা ষড়যন্ত্র করেন এবং উক্ত ষড়যন্ত্র বা প্ররোচনার ফলে সংশ্লিষ্ট অপরাধটি সংঘটিত হয়, তাহা হইলে উক্ত সহায়তাকারী, ষড়যন্ত্রকারী বা প্ররোচনাদানকারী উক্ত অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।’
পঞ্চাশ টাকা পরিমাণ ক্ষতি করিয়া অনিষ্ট সাধন
১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি আইনের ৪২৭ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি যদি ক্ষতিসাধন করে এবং তদ্বারা পঞ্চাশ টাকা বা তদূর্ধ্ব পরিমাণ অর্থের অনিষ্ট করে, তবে উক্ত ব্যক্তি দুই বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডের, অথবা অর্থদণ্ড, অথবা উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত হইবেন।’
গেলো রোববার (৩০ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁও থেকে উত্তরা-উত্তর স্টেশনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া মেট্রোরেলের একটি কোচ সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়ার মধ্যবর্তী স্থালে পৌঁছালে দুষ্কৃতকারীদের ঢিল কোচটির জানালায় আঘাত হানে। জানা গেছে, ঘটনাস্থলের পাশে বহুতল ভবন ছিল। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ধারণা, কোনো দুর্বৃত্ত পূর্বপাশের কোনো ভবন বা ছাদ থেকে ঢিল ছুড়তে পারে।
পুলিশ বলছে, মেট্রোরেলে ঢিল ছোড়ার ঘটনায় জড়িতদের ধরতে পুলিশ, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি), র্যাপিড আ্যকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও অপরাধ তদন্ত বিভাগসহ (সিআইডি) আরও কয়েকটি ইউনিট কাজ করছে। শিগগির তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
রোববারের এ ঘটনার একদিন পর সোমবার (১ মে) দিনগত রাতে রাজধানীর কাফরুল থানায় মেট্রোরেলের জানালায় ঢিল ছোড়ার ঘটনায় মেট্রোরেলের লাইন অপারেশন শাখার সহকারী ব্যবস্থাপক সামিউল কাদের বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। এতে একাধিক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। ঢিল মারার ঘটনায় মেট্রোরেলের প্রায় ১০ লাখ টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
মামলা দায়েরের পর সোমবার রাতে রাজধানীর কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেছেন, মেট্রোরেলের জানালায় ঢিল মারার ঘটনায় রাতে একটি মামলা হয়েছে। মেট্রোরেল আইন-২০১৫ অনুসারে এ মামলা হয়েছে। এতে একাধিক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করা গেছে কি না, এমন প্রশ্নে ওসি বলেন, এখন পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। তবে জড়িতদের খুঁজে বের করতে আমাদের একাধিক টিম কাজ করছে।
স্থানীয়দের উদ্ধৃতি দিয়ে পুলিশ বলছে, কোচটি কাজীপাড়া প্ল্যাটফর্মে ঢোকার আগে স্টেশনের পূর্ব পাশের একটি ভবন থেকে ঢিল ছোড়ার ঘটনা ঘটতে পারে। যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেও তারা তেমনই জানতে পেরেছেন। তবে ঠিক কোন ভবন থেকে ঢিলটি ছোড়া হয়েছে তা এখনো স্পষ্ট নয়। আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। ওই এলাকায় বেশ কয়েকটি নির্মাণাধীন ভবন রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন সিদ্দিক গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, একটি চক্র তৈরি হয়েছে, যারা মেট্রোরেলে ঢিল ছোড়ে। এ ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। আমরাও দুষ্কৃতকারীদের খুঁজছি, তারা সবাই বাড়িছাড়া। তাদের এমন শাস্তি দেওয়া হবে যেন ভবিষ্যতে মেট্রোরেলে কেউ ঢিল ছোড়া বা এ ধরনের কিছু করার দুঃসাহস করতে না পারে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু গণমাধ্যমকে বলেন, যারা মেট্রোরেলে ঢিল নিক্ষেপ করেছে তারা দেশের শক্র। তারা দেশকে অস্থিশীল করার চেষ্টা করছে। তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত, যেন আর কেউ রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করতে না পারে। মেট্রোরেলে ঢিল নিক্ষেপকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দিকে নজর রাখবে রাষ্ট্রপক্ষ।
আইন-বিচার
নতুন অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান।
বৃহস্পতিবার (০৮ আগস্ট) রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাকে এ নিয়োগ দেন।
রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয় আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামানকে পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগ প্রদান করলেন।’
উল্লেখ্য, আ.লীগ সরকারের পতনের পর পদত্যাগ করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। বুধবার (০৭ আগস্ট) রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। তার স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন মো. আসাদুজ্জামান।
২০২০ সালের ৮ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এ এম আমিন উদ্দিনকে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। এর আগে তিনি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
এসি//
আইন-বিচার
পদত্যাগ করেছেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর
পদত্যাগ করেছেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর। বৃহস্পতিবার (০৮ আগস্ট) অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন।
পদত্যাগ করার বিষয়টি এস এম মুনীর নিজেই গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও আরেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মো. মোরসেদ পদত্যাগ করেন।
২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক এবং জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম মুনীরকে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার চূড়ান্ত আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। গেলো ৫ আগস্ট দুপুর আড়াইটায় বঙ্গভবন থেকে একটি সামরিক হেলিকপ্টার তাকে নিয়ে ভারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এ সময় তার সঙ্গে তার ছোট বোন শেখ রেহানা ছিলেন। ভারতে যাওয়ার আগে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র দেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বড় বড় পদে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। আবার অনেকেই স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করছেন।
এসি//
আইন-বিচার
সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণের সেই ভাস্কর্যটি উপড়ে ফেলা হয়েছে
সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে হাইকোর্ট এনেক্স ভবনের সামনে থাকা গ্রিক দেবী থেমিসের ভাস্কর্যটি ভাঙচুরের পর উপড়ে ফেলা হয়েছে।তবে কে বা কারা ভাস্কর্যটি ভেঙেছে তা জানা যায়নি।
বুধবার (৭ আগস্ট) দুপুরে ভাস্কর্যটি মাটিতে পরে থাকতে দেখা যায়। এর আগে,গেলো মঙ্গলবার সকালে ইস্পাতের তৈরি ভাস্কর্যটির হাত ও দাঁড়িপাল্লা ধরে থাকা হাত ভাঙা অবস্থায় দেখা গিয়েছিলো।
সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, গ্রিক দেবী থেমিসের আদলে ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে গড়ে তোলা ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। তবে কে বা কারা এটি করেছেন, তা তাদের জানা নেই।
এর আগে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টে প্রবেশের মূল ফটকের বরাবর থাকা লিলি ফোয়ারায় প্রথমে ভাস্কর্যটি বসানো হয়। হেফাজতসহ কয়েকটি ইসলামি সংগঠনের দাবির মুখে ২০১৭ সালের মে মাসে ভাস্কর্যটি সরিয়ে এনেক্স ভবনের সামনে স্থাপন করা হয়।
আই/এ
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন