ক্রিকেট
মুস্তাফিজ-হাসানের তোপে বাংলাদেশের রুদ্ধশ্বাস সিরিজ জয়
হার হতে হতে জয়ের মুখ দেখা, অবিশ্বাস্য বটে। তাও শেষে যদি হয় শেষ বলে, তাহলেতো কথাই নেই। চেমসফোর্ডে আরেকটি অসাধ্য সাধন করলো বাংলাদেশ। যে ম্যাচে হার নিশ্চিত প্রায়, সে ম্যাচে ৫ রানের জয় তুলে নিয়ে শেষ হাসি হেসেছে তামিম ইকবালের দল।
তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে নাটকীয় এই জয়ে ২-০ ব্যবধানে সিরিজও জিতে নিয়েছে টাইগাররা। প্রথম ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়েছিল।
আইরিশদের সামনে লক্ষ্য ছিল ২৭৫ রানের। ৪১ ওভার শেষে ৩ উইকেটেই ২২৩ রান তুলে ফেলে স্বাগতিকরা। ৫৪ বলে দরকার ৫২, হাতে ৭টি উইকেট। বাংলাদেশের সামনে তখন নিশ্চিত হার।
এমন সময়ে বাজি ধরেন তামিম ইকবাল। টাইগার অধিনায়ক আক্রমণে আনেন অকেশনাল স্পিনার নাজমুল হোসেন শান্তকে। শান্ত নিজের প্রথম ওভারেই উইকেট এনে দেন অধিনায়ককে। সেট ব্যাটার হ্যারি টেক্টরকে (৪৮ বলে ৪৫) আউট করেন অফস্পিনে। এরপরই ভোজবাজির মতো পাল্টে যায় ম্যাচ।
মোস্তাফিজুর রহমান আর শান্ত মিলে আইরিশদের টুঁটি চেপে ধরেন। রান আটকে রেখে চাপ তৈরি করেন। ফলে কোণঠাসা হয়ে পড়ে আইরিশরা। শান্ত একপাশে রান আটকে রাখেন, মোস্তাফিজ টানা তিন ওভারে নেন উইকেট।
ফলে ৩ উইকেটে ২২৫ রান তোলা দলটিই ৯ উইকেটে ২৬৯ রানে থেমে যায়। অর্থাৎ আইরিশরা ৬ উইকেট হারায় ৪৪ রানে।
শেষ ওভারে আয়ারল্যান্ডের দরকার ছিল ১০ রান। হাসান মাহমুদ শেষ ভেল্কিটা দেখান, ঠান্ডা মাথায় বল করে। প্রথম ৫ বলে মাত্র ৪ রান দিয়ে তরুণ এই পেসার তুলে নেন ২টি উইকেট।
শেষ বলে আয়ারল্যান্ডের দরকার ছক্কা। পিনপতন নীরবতা তখন স্টেডিয়ামে। হাসান দেন দুর্দান্ত এক ইয়র্কার। বল গিয়ে সরাসরি আঘাত করে উইল ইয়ংয়ের প্যাডে। রান হয়নি। ততক্ষণে উল্লাসে ফেটে পড়েছে গ্যালারিতে থাকা বাংলাদেশি সমর্থকরা। উল্লাস বাংলাদেশ শিবিরে।
প্রথম বলটা হাসান দিয়েছিলেন স্লোয়ার। প্যাডেল সুইপ করতে গিয়ে স্টাম্প হারান মার্ক এডায়ার (১০ বলে ২০)। আগের ওভারে মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীকে একটি চার ও ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ অনেকটাই হাতে নিয়ে এসেছিলেন এই এডায়ার।
তৃতীয় বলে হাসানের শিকার অ্যান্ডি ম্যাকব্রিন (৪)। এবার শর্ট থার্ডম্যানে দারুণ এক ক্যাচ মৃত্যুঞ্জয়ের। চতুর্থ বলে ১ আর পঞ্চম বলে ২ দেন হাসান। ষষ্ঠ বলে দুর্দান্ত ইয়র্কারে ম্যাচ জয়।
অথচ পল স্টারলিং (৬০), অ্যান্ডি বালবির্নি (৫৩), হ্যারি টেক্টর (৪৫) আর লরকান টাকার (৫০) দারুণ ব্যাটিংয়ে ম্যাচটা একদম আইরিশদের হাতেই নিয়ে এসেছিলেন।
দ্বিতীয় উইকেটে স্টারলিং আর বালবির্নির ১০৯ রানের জুটিটি রীতিমত চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল টাইগারদের। এই জুটিটি ভাঙেন এবাদত।
এর আগে এর আগে ৪৬তম ওভারে বাংলাদেশের ৫ উইকেটে ছিল ২৬১ রান। তিনশো রানের পথেই ছিল টাইগাররা। কিন্তু আর ১৩ রান তুলতেই শেষ ৫ উইকেট হারিয়ে পুঁজিটা প্রত্যাশিত হয়নি তামিম ইকবালের দলের।
ইনিংসের ৭ বল বাকি থাকতে ২৭৪ রানে গুটিয়ে যায় টাইগারদের ইনিংস। তামিম ৬৯ আর মুশফিক করেন ৪৫ রান। মেহেদি মিরাজের ব্যাট থেকে আসে ৩৭। ৩৫ করে আউট হন লিটন দাস আর নাজমুল হোসেন শান্ত।
চেমসফোর্ডে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিং করার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন আয়ারল্যান্ড অধিনায়ক অ্যান্ডি বালবির্নি। দেখেশুনে শুরু করেন দুই ওপেনার তামিম আর রনি তালুকদার।
যদিও আইরিশরা বেশ কয়েকবার পরাস্ত করেছে বাংলাদেশি দুই ওপেনারকে। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে উইকেট পাওয়ার সুযোগও তৈরি করেন জশ লিটল। খোঁচা দিয়ে তামিম দ্বিতীয় স্লিপে দেন সহজ ক্যাচ। কিন্তু বালবির্নি সেই ক্যাচ ফেলে দেন। ব্যক্তিগত ১ রানে জীবন পান টাইগার অধিনায়ক।
তবে তার সঙ্গী টিকতে পারেননি। পরের ওভারেই মার্ক এডায়ারকে উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন রনি। ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে শট খেলেন, বল ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় উইকেটরক্ষকের হাতে। ১৪ বলে ৪ করে সাজঘরে ফেরেন রনি। ১৮ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
রনি তালুকদার অভিষেকে সুবিধা করতে পারলেন না। শুরুতেই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। ফর্মে থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত সেই চাপ অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছিলেন তামিম ইকবালের সঙ্গে জুটিতে।
৪৪ বলে ৪৯ রানের মারকুটে জুটি গড়েন তারা। কিন্তু সেট হয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন শান্ত। উইল ইয়ংকের বলটি খোঁচা মেরে স্লিপে ধরা পড়েছেন এই বাঁহাতি। ৩২ বলে ৭ বাউন্ডারিতে শান্ত করেন ৩৫ রান। ৬৭ রানে পড়ে টাইগারদের দ্বিতীয় উইকেট।
এরপর তামিম ইকবাল আর লিটন দাস গড়েন জুটি। তাদের ৭৬ বলে ৬০ রানের জুটিটি অবশেষে ভাঙে লিটন আউট হলে। ম্যাকব্রিনের বলে মিডঅফে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন লিটন। ৩৯ বলে ৩ চার আর ১ ছক্কায় লিটন করেন ৩৫ রান।
তাওহিদ হৃদয় ইনিংস বড় করতে পারেননি। ১৬ বলে ১৩ করে ডকরেলের বলে বোল্ড হন এই তরুণ। ১৫৯ রানে ৪ উইকেট হারায় টাইগাররা।
গত ৯ ইনিংসে হাফসেঞ্চুরি পাননি তামিম। খুব যে খারাপ ব্যাটিং করেছেন, এমন নয়। বেশিরভাগ ম্যাচেই সেট হয়ে আউট হয়েছেন। অবশেষে তামিমের ‘কুফা’ কাটলো। পেলেন ফিফটির দেখা।
দেখেশুনে খেলে হাফসেঞ্চুরি করেন তামিম, ৬১ বলে। ওয়ানডেতে এটি তার ৫৬তম ফিফটি। বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই খেলছিলেন। কিন্তু ব্যক্তিগত ৬৯ রানে শর্ট থার্ডম্যানে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন টাইগার অধিনায়ক। তার উইকেটটিও নেন ডকরেল। ৮২ বলের ইনিংসে তামিম বাউন্ডারি হাঁকান ৬টি।
তামিম ইকবাল উইকেটে থাকা পর্যন্ত বেশ স্বস্তিতেই ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু তিনি ফিফটি করে আউট হয়ে যাওয়ায় ফের চাপে পড়ে টাইগাররা। ১৮৬ রানে হারায় ৫ উইকেট।
মুশফিকুর রহিম আর মেহেদি হাসান মিরাজ মিলে সেই চাপ কাটিয়ে উঠেন। ৭২ বলে ৭৫ রানের জুটি গড়েন তারা। ৪৬তম ওভারে ম্যাকব্রিনকে সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন মুশফিক, হাফসেঞ্চুরির কাছে এসে। ৫৪ বলে ৪৫ রানের ইনিংসে মুশফিক হাঁকান তিনটি চার আর একটি ছক্কা।
পরের ওভারেই মেহেদি মিরাজকেও হারায় টাইগাররা। ৩৯ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ৩৭ করে মার্ক এডায়ারের শিকার হন এই অলরাউন্ডার। এরপর আর বেশিদূর এগোতে পারেনি বাংলাদেশ।
আইরিশ পেসার মার্ক এডায়ার ৪০ রানে নিয়েছেন ৪টি উইকেট।
ক্রিকেট
ক্রিকেট বোর্ডে পরিবর্তন প্রসঙ্গে যা বললেন বিজয়
পাকিস্তান ‘এ’ দলের বিপক্ষে সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ ‘এ’ দল। এছাড়াও বাংলাদেশ জাতীয় দলের সফর আছে একই সময়ে। বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেছেন এনামুল হক বিজয়।
বিজয় বাংলাদেশ ‘এ’ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করবেন। বর্তমানে দেশের পরিস্থিতি কিছুটা অস্থির। সোমবার (৫ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। এরপর থেকে দেশের বিভিন্ন স্তরে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে, কিছু জায়গায় পরিবর্তনের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।
বিসিবির বিভিন্ন জায়গায় পরিবর্তনের দাবিও তোলা হয়েছে। এমনকি ক্রিকেটারদের মধ্যে ইমরুল কায়েস ও রুবেল হোসেনও এই প্রসঙ্গে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। দলে সুযোগ পাওয়া বা না পাওয়া নিয়ে এনামুল হক বলেন, ‘এটা তো হতেই থাকবে। এটা আপনিও কখনো বলতে পারবেন না যে আপনার সঙ্গে হয়নি। এটা হতেই থাকে। তারপরও এটা সামনে যত কম হয় সেই আশা আমরা করবো।’
বোর্ডের বিভিন্ন স্তরে পরিবর্তনের কথা অনেকেই উচ্চারণ করেছেন শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পরপর। এই পরিবর্তন প্রসঙ্গে এনামুল হক বলেন,
‘আমার কাছে মনে হয় এটার (ক্রিকেট বোর্ড) বড় আলোচনা জরুরী। দুজন একজনের কথায় আসলে এটা হবে না। ব্যক্তিগতভাবে বললে, আমি চাই বড় গ্রুপ যারা আমরা সবাই ক্রিকেট নিয়ে কাজ করি তারা একত্রে বসে আলোচনা করে এটা করা। যারা ক্রিকেট খেলেছি, কেউ খেলেছে বা সামনে কেউ খেলবে। বড় ধরনের আলোচনা দরকার। যার যেটা প্রয়োজন সেটা তারা বলবে। যেখানে যে আছে।’
এম এইচ//
ক্রিকেট
পাকিস্তানের টেস্ট দলে এইচপি কোচ হলেন টিম নিলসন
টিম নিলসনকে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) নতুন হাই পারফরম্যান্স (এইচপি) কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ সামনে রেখে এই নিয়োগ দিয়েছে পাকিস্তান বোর্ড।
পাকিস্তানের লাল বলের ক্রিকেটে দায়িত্বে আছেন জেসন গিলেস্পি। যার কোচিং স্টাফে যুক্ত হতে যাচ্ছেন টিম নিলসন। ইতোমধ্যে এই দুই কোচ পাকিস্তান শাহীন’স এ দলের ট্রেনিং ক্যাম্প পর্যবেক্ষণ করেছেন।
বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ সামনে রেখে আগস্টের ১১ তারিখ থেকে শুরু হতে যাচ্ছে পাকিস্তানের ট্রেনিং ক্যাম্প। রাওয়ালপিন্ডিতে দুই দল প্রথম ম্যাচটি খেলবে আগস্টের ২১ থেকে ২৫ তারিখ। আর দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচটি দুই দল খেলবে আগস্টের ৩০ থেকে সেপ্টেম্বরের ৩ তারিখ পর্যন্ত।
সাউথ অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে গিলেস্পির সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে নিলসনের। সবমিলিয়ে তার অভিজ্ঞতার ঝুলি বেশ ভারী।
সম্প্রতি পিসিবি বাংলাদেশ সিরিজের জন্য স্কোয়াড ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের বিপক্ষে খেলার জন্যেও দল ঘোষণা করেছে পাকিস্তান শাহীন’স।
এম এইচ//
ক্রিকেট
দুই মাসের ছুটি চান অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিন
বাংলাদেশ ‘এ’ দলের পাকিস্তান সফর থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। মানসিকভাবে বেশ ভেঙে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। এই প্রেক্ষিতে সকল ধরনের ক্রিকেট থেকে ২ মাসের ছুটি চেয়েছেন তিনি।
পাকিস্তান ‘এ’ দলের বিপক্ষে চারদিনের দুই ম্যাচের সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ, পাশাপাশি ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের দলে ছিলেন সাইফউদ্দিন। এই মাসের শুরুতে একজন নির্বাচক ইমেইল করেন এই অলরাউন্ডার। এরপর জানিয়ে দেন, তিনি ক্রিকেট থেকে আপাতত বিরতি নিতে চান এবং তা দুই মাসের জন্য।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের একজন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জুনে অনুষ্ঠিত আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে যুক্ত হতে না পারা এবং গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি খেলতে কানাডায় যেতে না পারা- সাইফউদ্দিনের জন্য বেশ হতাশার ছিল। এসব কারণেই তিনি আগামী ২ মাস সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চান। এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচকভাবে দেখার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
গত মে মাসে, বাংলাদেশের হয়ে সবশেষ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছিলেন সাইফউদ্দিন।
এম এইচ//
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন