ছাত্র-শিক্ষক
‘সোজা কথা, আপনার ক্লিয়ারেন্স ছাড়া কাউকে নিয়োগ দিব না’
আবারো ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের ‘কণ্ঠসদৃশ্য’ নিয়োগ সংক্রান্ত দুইটি অডিও ভাইরাল হয়েছে। ‘রক সালাম’ নামে ফেইসবুক আইডি থেকে শুক্রবার রাতে ৫৩ সেকেন্ডের ও শনিবার রাতে ৪৬ সেকেন্ডের দুইটি অডিওটি ছড়িয়ে পড়ে। তবে অপরপ্রান্তে থাকা ব্যক্তির কথা শোনা যায়নি। এর আগে ২ ফেব্রুয়ারি থেকে পৃথক তিনটি ফেসবুক আইডিতে অন্তত ১০টি অডিও ভাইরাল হয়। সেগুলোতেও ভাইভার আগে চাকরির প্রশ্নফাঁস, নিয়োগ অর্থলেনদেন সংক্রান্ত কথোপকথন ও শিক্ষক-কর্মকর্তাদের নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য শোনা যায়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি প্রত্যাশীরা আন্দোলন ও ভিসির কার্যালয়ে তালা, ভিসির একান্ত সচিবকে অব্যাহতি এবং শিক্ষক সমিতি ও শাপলা ফোরাম সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা ও তদন্ত করে ব্যবস্থার দাবি করেন।
অডিও পোস্টে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ইবির মার্কেটিং ও ফাইন আর্টস বিভাগেও তার সিন্ডিকেটের মূল হোতার পরামর্শ নিয়েই শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। কে এই ক্লিয়ারেন্স দাতা? প্রতিটি টেন্ডার ও নিয়োগের ক্লিয়ারেন্স দেন সেই বড় ভাই। সকল অর্থ কালেকশন ও বন্টন করে সব জায়গায় পৌছানোর দায়িত্ব বড় ভাইয়ের।
পাঠকদের উদ্দেশ্যে অডিওর কথোপকথন তুলে ধরা হলো, ফাইন আর্টসের ওটা করে দিতে পেরেছি। সিন্ডিকেট পর্যন্ত কাউকেই কিছু করার দরকার নেই। সিন্ডিকেটে চূড়ান্ত হবে। আজকে সকালে দেখলাম যে মার্কেটিংয়ের একটা ইয়ে পাঠিয়েছিলেন। ওটা তো কালকে সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। আমি একটু আগে জানলে হয়তো…. (অস্পষ্ট) খুব খারাপ ছিল না, হয়তো পাঁচে ছিল। সোজা কথা, আমি আপনার ক্লিয়ারেন্স ছাড়া এখানে কাউকে নিয়োগ দিব না।
৪৬ সেকেন্ডের অডিওর ক্যাপশনে বলা হয়, গত অনুষ্ঠিত মেডিকেলের বোর্ডে ভিসি ডিসিশন নেয়নি। আগামী ১৩ জুন অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ডাক্তার নিয়োগ বোর্ডে পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। সালাম মেডিকেল (ডাক্তারের) নিয়োগ বোর্ড করেছেন কিন্তু সিদ্ধান্ত নেননি। কারণ সেসময় তার নিয়োগ সিন্ডিকেটের ক্লিয়ারেন্স ছিল নির্দিষ্ট একজন ডাক্তারের কিন্তু স্থানীয় নেতৃবৃন্দের ও ছাত্রলীগের শক্ত সুপারিশ ছিল অন্যজনের তাই তিনি নিয়োগ দিতে পারেননি।
পাঠকদের উদ্দেশ্যে অডিওর কথোপকথন তুলে ধরা হলো, ‘আমরা কিন্তু মেডিকেলেরটা ডিসিশন নেইনি। একটা সুযোগ তৈরি হচ্ছে ওর জন্যই নেইনি। ৭ তারিখের ভিতরেই, না এ মাসের ভিতরেই আরেকটা এড (বিজ্ঞপ্তি) আছে ওইটাতে যেন এপ্লাই করে দেয়। একটা তো… (অস্পষ্ট) আমাকে এখানে একটা একোমোডেট করতে হবে।’
এর আগে, ১২ মার্চ অডিও ফাঁসের নেপথ্যের মানুষদের চিহ্নিত করতে জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. রেজওয়ানুল ইসলামকে আহবায়ক করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ। কমিটিকে যথাশীঘ্র প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। তবে এখন পর্যন্ত ওই কমিটির কোনো মিটিং হয়নি বলে জানিয়েছেন কমিটির সদস্য ও শাপলা ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমান। তিনি বলেন, আহ্বায়ক মিটিং ডাকবেন তারপর কাজ শুরু হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এমন কোনো চিঠি পাইনি। এ বিষয়ে জানতে কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রেজওয়ানুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
শাপলা ফোরামের সভাপতি ও ফাইন আর্টস বিভাগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমান বলেন, শাপলা ফোরামের সাধারণ সভায় আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছিল শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে জানাবো। সে অনুযায়ী আমরা জানিয়েছি। তবে এখনো রেসপন্স পাইনি। উপাচার্যের অবস্থান লিখিতভাবে ব্যাখা দেওয়ার দাবি করেছিলাম সেটাও তিনি করেননি। নতুন করে যেহেতু আবার অডিও আসলো। ক্যাম্পাস খুললে আমরা সবাইকে নিয়ে আবার বসবো।
ক্লিয়ারেন্সের বিষয়ে তিনি বলেন, ফাইন আর্টসে নিয়োগের সময় আমি নিজেই সভাপতি ছিলাম। সেখানে তেমন কোনো সাইন আমি পাইনি। ওখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সপার্ট ছিলেন। লিখিত পরীক্ষা ও মৌখিকের নাম্বারিং করে গ্রেডিং করে সেভাবেই তো আসলো। এর মধ্যে কিছু হলে সেটা আমার জ্ঞানের বাইরে।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার বলেন, বারবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। এগুলো খুবই বিব্রতকর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য মোটেই শুভকর নয়। এগুলার একটা সমাধান আসা উচিত। আমরা ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের ও শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে জানিয়েছি ও তদন্ত চেয়েছি। কিন্তু এখনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ভিডিও-অডিও তো আসার তালেই আছে। অংশবিশেষ ধরে ধরে এগুলা করা হচ্ছে। আমি কারো কথায় চাকরি দেই না। মেধার বাইরে আমি কিছু করিনাই, করবো না। আর টাকা পয়সা খাওয়া এসমস্ত জিনিস আমার চিন্তার বাইরে। এ ব্যাপারে আমার আর কিছু বলার নেই।
ছাত্র-শিক্ষক
জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করায় সরকারকে ঢাবি শিক্ষক সমিতির নেতাদের অভিনন্দন
সন্ত্রাসবিরোধী আইনে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি।
শুক্রবার (২ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভুঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা এক যৌথ বিবৃতিতে এ অভিনন্দন জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের সঙ্গে জামায়াতের সক্রিয় সম্পৃক্ততা ছিল। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে তাদের সংগঠনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করায় সরকারকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি অভিনন্দন জানাচ্ছে।
শিক্ষক নেতারা বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাত্রির গণহত্যা ও ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী নিধনের নেতৃত্বদানকারী এবং ৩০ লাখ শহীদের রক্তে স্নাত, দুই থেকে ছয় লাখ নারীর সম্ভ্রম ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের বিরোধিতাকারী সংগঠন হচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও তার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির (তৎকালীন ছাত্র সংঘ)। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশেও তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ও রাজপথে শিক্ষক-শিক্ষার্থী নির্যাতন ও হত্যার বহু ঘটনা ঘটিয়েছে।
তারা বলেন, এসব কারণে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে মনে করে। তবে এটিই যথেষ্ট নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি রাষ্ট্রের সব পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বাস্তবায়নে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছে।
জেএইচ
ছাত্র-শিক্ষক
শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবি ঢাবির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষকদের
চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির প্রতি সমর্থন ও গ্রেপ্তারদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষকরা। এছাড়া শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির প্রতি সমর্থন এবং সংলাপের মাধ্যমে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাধান আসবে বলে আশা করেন তারা।
রোববার (২৮ জুলাই) বিকেল সোয়া ৩টায় বিভাগের শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বিভাগীয় চেয়ারম্যান অধ্যাপক জেরিন আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষকরা সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের প্রাণহানি, নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও হয়রানির ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। আমরা বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন যে আমাদের ছাত্র মো. আবুল হাসনাত (হাসনাত আবদুল্লাহ), কোটাবিরোধী আন্দোলনের এক সমন্বয়ক গ্রেপ্তার হয়েছেন। আমরা তার এবং অন্য শিক্ষার্থীদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।
এতে আরও বলা হয়, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সংযম প্রদর্শন এবং আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির প্রতি সমর্থন জানাচ্ছি এবং আশা করছি যে সংলাপের মাধ্যমে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাধান আসবে।
এএম/
ছাত্র-শিক্ষক
শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে ওবায়দুল কাদেরের বৈঠক আজ
সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাতিলের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেছেন দেশের ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বিষয়টি সুরাহার জন্য শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বুধবার (৩ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের মূল ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া জানান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছেন। পরে আজ বসার জন্য সময় দেন তিনি। তবে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতি চলবে।
গেলো তিন দিন ধরে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের ফলে কার্যত অচল হয়ে আছে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। গতকালও সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করে কলা ভবনের মূল ফটকে অবস্থান নেন।
অন্যদিকে ‘কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ’ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। ফলে শিক্ষার্থীরা বিভাগ, হল, ইনস্টিটিউট ও প্রশাসনিক ভবনের কোথাও কোনো ধরনের সেবা পাচ্ছে না। প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে অনেক শিক্ষার্থী সেবা নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী মঙ্গলবার শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনকে ‘অযৌক্তিক’ বলে মন্তব্য করেছেন। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘যারা প্রত্যয় স্কিম করেছেন, তারা হয়তো মন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়েছেন। তিনি তার জায়গা থেকে কথা বলেছেন। আমরা যখন তাকে বোঝাতে পারব, তখন হয়তো তিনি আমাদের সঙ্গে একমত হবেন। তার বক্তব্যটি আমরা গ্রহণ করিনি।’
টিআর/
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন