বরিশাল
কেরোসিন পুড়িয়ে গৃহবধূ হত্যা, ভগ্নিপতি গ্রেপ্তার
হাত পা বেঁধে কেরোসিন দিয়ে পুড়িয়ে গৃহবধূ হালিমা আক্তার মীমকে হত্যার সাথে সরাসরি জড়িত তার চাচাতো ভগ্নিপতিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির নাম আরিফ সিকদার(৩০)। ঘটনাটি ঘটেছে গেলো বৃহস্পতিবার (৮ জুন) পটুয়াখালীর দুমকী নতুন বাজার এলাকায়।
রোববার (১১ জুন) রাতে ঢাকা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মঙ্গলবার (১৩ জুন) সকাল ১০টায় পুলিশ সুপারের সম্মলন কক্ষে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মোঃ সাইদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। পুলিশ সুপার বলেন, ঘটনাস্থল থেকে কিছু দূরে দুমকি মহাসড়কের সিসিটিভি ফুটেজে এই ব্যক্তির গতিবিধি অস্বাভাবিক দেখে ছায়া তদন্ত করে তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন। আরিফ সিকদারের ভাষ্যমতে, এ ঘটানার সব পরিকল্পনা ছিল মীমের। সে তার শাশুড়িসহ শ্বশুর বাড়ীর অন্যদের ফাঁসানোর জন্য তাকে খবর দিয়ে আগুন লাগানোর একটি নাটক সাজাতে চেয়েছিল। কিন্তু নাটক সাজাতে গিয়ে তার শরীরে আগুন লেগে সে দূঘটনার স্বীকার হন।
গ্রেপ্তারকৃত আরিফ সিকদার দুমকি উপজেলার কার্তিকপাশা গ্রামের হামেদ সিকদারের ছেলে। সে ঢাকায় কেরানীগঞ্জে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে কর্মরত আছেন। মীমের সাথে তার প্রায়ই মোবাইলে কথা হতো। পরিকল্পনা করেই মীম ঢাকা থেকে আরিফ সিকদারকে দুমকি ঢেকে আনেন এবং ঘটনা ঘটান। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস তার নিজের ফাঁদে নিজেই ধরা খেয়েছেন।
পুলিশ সুপার আরও জানান, আসামীকে কোর্টে চালান দেয়া হয়েছে এবং তার জবানবন্দী রেকর্ড করা হয়েছে। তবে এ ঘটনার সাথে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা সে বিষয় ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জানা গেছে, সাতানী আমীরউদ্দীন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকেই প্রিন্স ও মীমের প্রেম ছিল। দুমকী জনতা কলেজে এসে সম্পর্ক আরও গভীর হয় তাদের। শুরুর দিকে দুই পরিবারের অমত থাকলেও পরবর্তীতে প্রিন্স ও মীমের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। কিছুদিন ভালোভাবে কাটলেও সন্তান হবার পর থেকেই শুরু হয় শাশুড়ির সঙ্গে দ্বন্দ্ব, পরবর্তীতে যা গড়ায় সালিস পর্যন্ত। একপর্যায়ে জুন মাসের দুই তারিখে প্রিন্স ও মীম শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে স্বামী প্রিন্সের সঙ্গে শাহজাহান দারোগার ভাড়া বাড়িতে ওঠার ছয় দিনের মাথায় মীমের সঙ্গে দগ্ধ হয় ছয় মাসের শিশু সন্তান জিসানও।
এরপর চিকিৎসার জন্য প্রথমে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে পাঠানো হয়। সেখানে ভর্তি হতে না পেরে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নেয়া অবস্থায় শুক্রবার (৯ জুন) বিকেলে মারা যান মীম।
নিহত হালিমা আক্তার মীমের বাড়ি দুমকী উপজেলার আঙ্গারিয়া ইউনিয়নের সাতানী গ্রামে। পরিবারে এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে মীমই বড়। মীমের বাবা মজিবুর হাওলাদার বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ও পারিবারিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় মীম তার খালু লাল মিয়ার বাড়িতে থেকেই লেখাপড়া করতো। মীমের স্বামীর নাম জামাল হোসেন প্রিন্স।
এদিকে হালিমা আক্তার মীমের মৃত্যুর ঘটনায় তার মামা ওমর ফারুক বাদী হয়ে দুমকী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় নিহত গৃহবধূর শাশুড়ি পিয়ারা বেগমসহ অজ্ঞাতনামা তিন-চারজনকে আসামি করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ মীমের শাশুড়ি পিয়ারা বেগমকে গ্রেপ্তার করে।
বরিশাল
ববিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের মিটিংয়ে ছাত্রলীগের হামলা
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) মধ্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীদের মিটিংয়ে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এই ঘটনায় কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়।
সোমবার (২৯ জুলাই) দুপুরে ববির গ্রাউন্ড ফ্লোরে এ ঘটনা ঘটে। এরপর শিক্ষার্থীরা গেট থেকে বের হওয়ার সময় দ্বিতীয় দফায় আবার হামলা চালায় ছাত্রলীগ। আহতদের মধ্যে আন্দোলনের সমন্বয়ক সুজয় শুভসহ ১০ আহত শিক্ষার্থীকে বরিশাল শের ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের ববি সমন্বয়ক সুজয় শুভ বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে আমাদের পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণে ২০ শিক্ষার্থী ববির গ্রাউন্ড ফ্লোরে মিটিং করছিলাম। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা একে আরাফাতের নেতৃত্বে ২০-৩০ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী লাঠি, রড ও পাইপ নিয়ে হামলা চালায়। এসময় ছাত্রলীগের মাহমুদুল হাসান তমাল, আল সামাদ শান্ত, খালেদ হাসান, শাহরিয়ার সান, সাব্বির, জাইফ, সাইফ, শরিফুল ইসলাম, রাকিবুল ইসলামকে আমরা সনাক্ত করতে পেরেছি। হামলার পর ক্যাম্পাস থেকে চলে যাওয়ার সময় দ্বিতীয় দফায় হামলা চালানো হয়। এতে কমপক্ষে ১৫ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। আমাদের মিটিংকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব ক্যাম্পাসের সামনে অবস্থান নেয়। তাদের সামনেই আমাদের বেধরক মারধর করে ছাত্রলীগ।
বরিশাল নগর পুলিশের বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রহমান মুকুল বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মিটিং শেষ দিকে ছিলো। তখন কোটা সংস্কার নিয়ে সরকারের প্রজ্ঞাপনকে সমর্থন জানানো কিছু শিক্ষার্থী গেট দিয়ে প্রবেশ করে। তখন কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থী ও অন্য এক গ্রুপের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। তারা ছাত্রলীগ কিনা তা বলতে পারবো না, তবে তারাও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা অভিযুক্ত একে আরাফাতের মোবাইল নম্বরে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে রোববার কোটা সংস্কার আন্দোলনের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে গ্রাফিতি অংকন করতে গেলে হামলার উদ্দেশে জড়ো হয়েছিলো ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এমন অভিযোগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের।
কেএস/
দেশজুড়ে
বিপৎসীমার ওপরে বরিশালের ১০ নদীর পানি, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
বরিশাল বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ১০টি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বরিশাল নগরীসহ অন্যান্য জেলা ও উপজেলার নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে দিনে দুইবার প্লাবিত হচ্ছে। তবে এ পরিস্থিতিকে বন্যা বলা যাবে না। এটি মৌসুমি পানি প্রবাহ বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) রাতে বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জলানুসন্ধান বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পাউবো জানায়, বরিশাল জেলার কীর্তনখোলা নদীর পানি বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার, ঝালকাঠিতে বিষখালী নদীতে ৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলা পয়েন্টে বিষখালী নদীর পানি ২৪ সেন্টিমিটার, ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলা পয়েন্টে মেঘনা নদী ৮৯ সেন্টিমিটার, তজুমদ্দিন উপজেলা পয়েন্টে মেঘনা ১ দশমিক ৭ সেন্টিমিটার, পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলা পয়েন্টে পায়রা নদীর পানি ৮ সেন্টিমিটার, বরগুনা সদর উপজেলা পয়েন্টে বিষখালী নদীর পানি ২১ সেন্টিমিটার, পাথরঘাটা উপজেলা পয়েন্টে বিষখালী নদীর পানি ৭ সেন্টিমিটার, পিরোজপুর জেলার বলেশ্বর নদীর পানি ১৫ সেন্টিমিটার ও উমেদপুর পয়েন্টে কচা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার আন্ধারমানিক নদী তীরবর্তী বাসিন্দা আরশাদ আলী বলেন, মঙ্গলবার থেকেই নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। যারা বেড়িবাঁধের বাইরে থাকেন তাদের ঘরে পানি ঢুকে গেছে। এজন্য বাধের কূলে এক ঘরে তিনি আশ্রয় নিয়েছেন। পানি কমলে ঘরে ফিরবেন।
এদিকে নদীর পানির উচ্চতা বাড়ায় কেবল উপকূলীয় এলাকা নয়। জেলা শহরের ভিতরেও জোয়ারের পানি প্রবেশ করে মানুষের দূর্ভোগ বাড়িয়েছে।
আই/এ
বরিশাল
বরিশাল থেকে লঞ্চ ও বাস চলাচল শুরু
বরিশালে কারফিউ শিথিলের সময় বাড়ানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জেলা এবং মেট্রেপলিটন এলাকায় সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করা হয়েছে। এ দিন বরিশাল নদী বন্দর থেকে সব রুটে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে; সড়ক পথেও চলছে যাত্রীবাহী বাস।
বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী সীমিত পরিসরে বুধবার (২৪ জুলাই) বরিশালের অভ্যন্তরীণ রুটে ছোট লঞ্চ চলাচল করেছে। তবে সন্ধ্যা ৬ টার কারফিউ কঠোর থাকায় ঢাকা-বরিশাল রুটে লঞ্চ চলাচল করেনি।
নগরবাসী জানান, নগরে গণপরিবহন চলছে এবং ব্যাংক-বিমা-অফিস-আদালতের কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়েছে। কারফিউ শিথিল হওয়াতে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়াতে প্রয়োজনীয় কাজে আসা ব্যক্তিরা অনেকটা স্বস্তি পাচ্ছেন তারা। পরিস্থিতি এমনই থাকুক, আর কোনো অস্থির বা অস্থিতিশীল পরিবেশ চান না নগরবাসী।
উল্লেখ্য, কারফিউ শুরুর পর গেলো ২০ জুলাই থেকে বরিশাল নদী বন্দর থেকে সব রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ছিল।
জেডএস//
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন