অন্যান্য
মধ্যরাতে ইবির চিকিৎসা কেন্দ্রে ভাংচুর
অ্যাম্বুলেন্স দিতে দেরি করার অভিযোগ তুলে মধ্যরাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) চিকিৎসা কেন্দ্রে ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের জরুরি বিভাগে এই ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রেজওয়ান সিদ্দিকী কাব্য ও তার দুই সহযোগী এই ভাংচুর চালিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ওয়াহিদুর রহমান মিল্টন। কাব্য সেসময় মাদকাসক্ত অবস্থায় এমনটি করেছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। অভিযুক্ত অন্য দুই শিক্ষার্থী হলেন- একই বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের আতিক ও সালমান আজিজ।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে চিকিৎসা কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। চীফ মেডিকেল অফিসার ডা. সিরাজুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন।
চিকিৎসা কেন্দ্র সূ্ত্রে জানা যায়, সোমবার রাত ১০ টার দিকে কাব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে চিকিৎসা গ্রহণ করতে আসেন কাব্য। এ সময় কর্ত্যবরত চিকিৎসক ডা. ওয়াহিদুর রহমান মিল্টন তাকে ইনজেকশন দেন৷ এর আধঘন্টা পর কুষ্টিয়া পাঠানোর জন্য ডাক্তারের সাথে বাকবিতণ্ডা শুরু করেন কাব্য। এসময় আতিক ও আজিজ ছিলেন।
ডা. মিল্টন তাকে জানান জরুরী ছাড়া অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয় না। এরপর চিকিৎসা কেন্দ্রের অফিসের চেয়ার টেবিল-চেয়ার ভাংচুর করেন। এদিকে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে যাওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. শফিকুল ইসলাম ও প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম সেলিম প্রশাসন ভবনের সামনে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করে। এসময় তাদের সাথেও কাব্য অসৌন্যমূলক আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন তারা। একপর্যায়ে রাত ১২ টার দিকে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। পরে কাব্যের সাথে থাকা দুই সহযোগী নেমে গেলেও কাব্য একাই অ্যাম্বুলেন্সে যান। এছাড়াও কাব্য অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারকে শাহিনুজ্জামানকে হুমকি-ধামকি দেন ও মারধর করেন।
আব্দুস সালাম সেলিম বলেন, মেডিকেলে কাব্য জোর করে ডাক্তারের রেফার নিয়েছিল। তাই অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে যাওয়ার সময় প্রশাসন ভবনের দিকে আমরা তাকে বাঁধা দিলে আমাদের সাথেও খারাপ ব্যবহার করে।
এদিকে কুষ্টিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিলেও কুষ্টিয়া যাননি কাব্য বলে নিশ্চিত করেন অ্যাম্বুলেন্সের চালক শাহিনুজ্জামান। তিনি জানান, কাব্যকে ক্যাম্পাসের বাইরে বিএম ছাত্রাবাসের পাশে ঘাসে শুয়ে থাকা অবস্থায় পাই। এ অবস্থায় তাকে মেডিকেলে নিয়ে আসার পর ডাক্তার তাকে ইঞ্জেকশন দেন। কিন্ত সেবা দেয়ার পর কেন্দ্রেই বসে থাকেন ও কুষ্টিয়া যেতে চান। কিন্তু প্রক্টরিয়াল বডির অনুমতি না দেয়ায় আমি গাড়ি দিতে রাজি না হলে আমাকে মারধর করেন। কাব্য কুষ্টিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা করলেও পরবর্তীতে লক্ষীপুর বাজারে থেকে একটি ডিসপেনসারি থেকে কিছু ওষুধ কিনে আবার বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বি.এম ছাত্রাবাসে ফিরে আসে।’
কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ওয়াহিদুর রহমান মিল্টন বলেন, গতকাল (১১ জুলাই) ঘটনার দেড় ঘন্টা আগে বুকের ব্যাথার চিকিৎসা নিতে আসে কাব্য। তাকে প্রাথমিকভাবে প্রথমে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। তবে এর আধঘন্টা পর আবার এসে এম্বুলেন্স নিয়ে কুষ্টিয়া শহরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে চান কাব্য। এসময় অ্যম্বুলেন্স কেন দ্রুত দেওয়া হচ্ছে না এই নিয়ে ভাংচুর চালান এবং অ্যাম্বুলেন্স চালকের সাথেও খারাপ ব্যবহার করেন কাব্য।
এদিকে মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র পরিদর্শন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এসময় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া, প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদাৎ হোসেন আজাদ, ইবি থানা পুলিশ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, ইবি থানার ওসি (তদন্ত) সকালে আমাদের সাথে মেডিকেলে গিয়েছিল। তারা তাদের মত করে তদন্ত করছে। আর মেডিকেল কর্তৃপক্ষকে রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। তারপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
চীফ মেডিকেল অফিসার ডা. সিরাজুল ইসলাম বলেন, সকালে প্রো-ভিসি, ট্রেজারার, প্রক্টর, পুলিশসহ অনেকেই এসেছিলেন। আমরা রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তারপর প্রশাসন যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবে।
এর আগে, ২০২২ সালের জুলাই মাসে মধ্যরাতে আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের রেজওয়ান সিদ্দিক (কাব্য) এক ট্রাক চালককে মারধর করে ছিনতাই করেন বলে জানা যায়। একইসঙ্গে তিনি মাদকের সাথেও জড়িত ছিলেন। এ ঘটনায় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে মঙ্গলবার কাব্য গণমাধ্যমকর্মীদের মারতে এলে দেশীয় অস্ত্রসহ (রাম দা) আটক হন। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হলে মামলা দিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়। এসব ঘটনায় সেসময় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কারও হন কাব্য।
অন্যান্য
ফের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে জাবির শিক্ষার্থীরা
কোটা পদ্ধতি বাতিলসহ চার দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। এতে মহাসড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
রোববার (৭ জুলাই) বেলা সোয়া ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক (ডেইরি গেইট) সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটকে এসে শেষ হয়।
এর আগেও শিক্ষার্থীরা একই দাবিতে গেলো ১, ২, ৩ ও ৪ জুলাই টানা চার দিন যথাক্রমে ১০ মিনিট, ২০ মিনিট, ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট ও ৩৫ মিনিট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
টিআর/
অন্যান্য
কোটা বাতিলের দাবিতে আজ শিক্ষার্থীদের ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি
কোটা প্রথা বাতিলের দাবিতে আজ সারা দেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করবেন কোটা পদ্ধতি বাতিলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। হাইকোর্ট কর্তৃক প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের আদেশের বিরুদ্ধে এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে সারা দেশে কয়েক দিন ধরে টানা আন্দোলন করছেন তারা।
রোববার (৭ জুলাই) বিকেল ৩টায় দেশের সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ‘ব্লকেড’ কর্মসূচি শুরু হবে বলে জানিয়েছেন কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। শনিবার (৬ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টায় শাহবাগ মোড়ে অবরোধ শেষে এ ঘোষণা দেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাচ্ছি। যদি বাধ্য করা হয়, আমরা প্রয়োজনে সারা দেশে হরতালের মতো কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো। আজকের ছাত্রসমাজকে আদালতের মুখোমুখি করা হচ্ছে, এ দায় নির্বাহী বিভাগ এড়াতে পারে না।
এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ও সায়েন্স লাইব্রেরি খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা যদি না খোলেন তাহলে আমরা নিজ দায়িত্বে খুলে নিতে বাধ্য হবো।
জেএইচ
অন্যান্য
৪র্থ দিনের মতো চলছে কোটা বিরোধী আন্দোলন, শাহবাগ অবরোধ
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধা ভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহালসহ চার দফার দাবিতে চতুর্থদিনের মতো শাহবাগ মোড়ে অবস্থান গ্রহণ করেছে শিক্ষার্থীরা। এসময় আশেপাশের যান চলাচল বন্ধ হয়ে শাহবাগ অচল হয়ে পড়ে।
শনিবার (৪ জুলাই) বেলা আড়াইটা থেকে বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা নিজস্ব হলের ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে জড়ো হতে থাকেন। পরে সেখান থেকে বিশাল মিছিল নিয়ে হলপাড়া-ভিসি চত্বর-টিএসসি-বুয়েট, ইডেন কলেজ হয়ে বেলা পৌনে ৫টায় শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয়। আজকের বিক্ষোভে সর্বোচ্চ উপস্থিতি হয়েছে। বিক্ষোভ মিছিলে রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকেও শিক্ষার্থীরা যোগদান করেন।
এর আগে গতকাল (শুক্রবার) ৩ দিন ব্যাপী ঘোষিত কর্মসূচির শুক্রবার ১ম দিনের কর্মসূচিতে অনলাইন ও অফলাইনে জনসংযোগ করে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয় ৭০টিরও অধিক বিভাগ ও ইন্সটিটিউট। ফলে আজ বিভিন্ন বিভাগ থেকেও পৃথক পৃথক ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণ করছেন শিক্ষার্থীরা।
সরজমিনে শিক্ষার্থীদের শাহবাগ মোড়ে বসে স্লোগান দিতে দেখা যায়। ফলে ফার্মগেট-শাহবাগ, শাহবাগ-পল্টন-মগবাজার রোড, শাহবাগ -সাইন্সল্যাব রোড এবং শাহবাগ-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে যায়। এসময় সাধারণ জনগণ গাড়ি ছেড়ে হেঁটে গন্তব্যের দিকে যেতে থাকেন। তবে এম্বুলেন্সের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য শিক্ষার্থীরা জায়গা করে দেয়।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ,’ ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার”, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, “কোটা প্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট একশন’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাই নাই’’- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন৷
আরও পড়ুন: যবিপ্রবিতে ৭ দিন ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা কোটা আন্দোলনকারীদের
এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, শিক্ষার্থীদের অবরোধে শাহবাগের যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা নিজেদের অবস্থান গ্রহণ করেছি। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের উপর নির্ভর করবে কতক্ষণ যান চলাচল বন্ধ থাকবে।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ হাসান বলেন, আমরা পূর্বঘোষিত কর্মসূচির আলোকে আজকে বিক্ষোভ মিছিল করেছি। আগামীকাল আমাদের ৩ দিনব্যাপী কর্মসূচি শেষ হবে। আজ শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচিরভপর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
প্রসঙ্গত, ৪ দফা দাবিতে দেশব্যাপী লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে ছাত্রসমাজ। ৪ দফা দাবিগুলো হলো-
১। ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা।
২। ১৮ এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরির সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া (সুবিধাবঞ্চিত ও প্রতিবন্ধী ছাড়া);
৩। সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোয় মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া।
৪। দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
টিআর/
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন