আফ্রিকা
কঙ্গোতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী-বিরোধী বিক্ষোভ নিহত বেড়ে ৪৩
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের বিরুদ্ধে চলমান একটি বিক্ষোভ সেনাবাহিনী দমন করার চেষ্টার সময় কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলীয় শহর গোমায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩ জনে। এই হতাহতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করছে জাতিসংঘের কর্মকর্তারা।
শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স’র প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, কঙ্গোর একজন পুলিশ কর্মকর্তার ওপর হামলার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর কঙ্গোয় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশন এবং অন্যান্য বিদেশি সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। যদিও ওই ভিডিও যাচাই করে দেখতে পারেনি রয়টার্স।
এরপর কঙ্গোর সেনাবাহিনী জোর করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করলে সহিংসতা শুরু হয়। বুধবার এই ঘটনা ঘটে। সরকারি একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই ঘটনায় অন্তত ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে আর অন্তত ৫৬ জন আহত হয়েছে। সহিংসতার ঘটনায় ১৫৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সেনাবাহিনী।
জেনিভায় একটি সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি বলেছেন, ‘পুলিশের একজন কর্মকর্তাসহ ৪৩ জন নিহত হওয়ার ঘটনা আর ৫৬ জন আহত হওয়ার খবরে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি।’
তিনি আভাস দেন, হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে তারা খবর পাচ্ছেন।
রয়টার্স জানিয়েছে, সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ট্রাকের ভেতরে মৃতদেহ স্তূপ করে রাখছে সেনা সদস্যরা। পরে কনভয় বা সেনাবাহিনীর গাড়ি বহরের সঙ্গে সেই ট্রাক নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যদিও এই ভিডিও সত্যতা যাচাই করে দেখা সম্ভব হয়নি।
আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের গোমা শাখার প্রধান অ্যানে-সিলভি লিন্ডার বলেছেন, বিক্ষোভের ঘটনার পর থেকে তার ক্লিনিকে ছুরিকাঘাত এবং গুলির ক্ষত নিয়ে অসংখ্য মানুষ চিকিৎসা নিতে এসেছে।
মনুসকো নামে পরিচিত কঙ্গোয় নিয়োজিত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী একটি বিবৃতিতে তাদের শোক প্রকাশ করেছে। সহিংসতার ঘটনায় তারা সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলেও জানিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘কঙ্গোর কর্তৃপক্ষের প্রতি আমরা আহবান জানাচ্ছি যেন তারা এই ঘটনার দ্রুত তদন্ত এবং নিরপেক্ষ তদন্ত করে। যাদের আটক করা হয়েছে, তাদের সাথে মানবিক ব্যবহার এবং তাদের অধিকারের প্রতি সম্মান জানানোর জন্যও অনুরোধ করছি।’
গেলো বছরের জুলাই মাসের ওই বিক্ষোভে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল যাদের মধ্যে তিনজন শান্তিরক্ষীও নিহত হয়েছিলেন। সেই সময় গোমা এবং বুতেমবো শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল।
গেলো জুলাই মাসেই মালির সরকারের দাবিতে সেদেশ থেকে শান্তিরক্ষা মিশন বন্ধ করে দেয় জাতিসংঘ।
কঙ্গোয় শান্তিরক্ষা মিশন নিয়ে কিছু তথ্য
কঙ্গোয় জাতিসংঘের এই মিশনের নাম ইউনাইটেড ন্যাশন্স অর্গানাইজেশন স্ট্যাবিলাইজেশন মিশন ইন দ্যা ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব দি কঙ্গো বা মনুসকো।
গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশটিতে প্রথম এই শান্তিরক্ষা মিশনের যাত্রা শুরু হয় ২০১০ সালের পহেলা জুলাই থেকে। তাদের মূল দায়িত্ব বেসামরিক নাগরিকের সুরক্ষা দেয়া, মানবাধিকার কর্মীদের যেকোনো সহিংসতা থেকে রক্ষা করা এবং শান্তি রক্ষায় কঙ্গোর সরকারকে সহায়তা করা।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযাী, গেলো ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এই শান্তিরক্ষা মিশনে মোট ১৭ হাজার ৭৫৩ জন সদস্য রয়েছে। তাদের মধ্যে সৈন্য রয়েছে ১২ হাজার ৩৭৯ জন আর পুলিশ রয়েছে ১ হাজার ৫৯৭ জন। তাদের বাকিদের মধ্যে আছে মিশনের নানা বিষয়ের বিশেষজ্ঞ, সামরিক পর্যবেক্ষক, বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং বেসামরিক সদস্যরা।
সৈন্যবাহিনীতে তৃতীয় সর্বোচ্চ সৈনিক রয়েছে বাংলাদেশের, এক হাজার ৬৪০ হন। তবে সৈন্য সংখ্যার দিক থেকে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ভারতও পাকিস্তান, যথাক্রমে ১, ৮৩৪ জন আর ১, ৭৬৭ জন।
পুলিশের সংখ্যার দিক থেকেও সেনেগাল আর মিশরের পরেই রয়েছে বাংলাদেশের পুলিশের অবস্থান। কঙ্গোয় গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বাংলাদেশের ২১১ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিলেন।
আফ্রিকা
বরখাস্ত হলেন তিউনিসিয়ার প্রধানমন্ত্রী
তিউনিসিয়ার প্রধানমন্ত্রী আহমেদ হাচানিকে বরখাস্ত করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট কাইস সাইদ। বুধবার (৭ আগস্ট)বরখাস্ত হন হাচানি।
প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে চীনা বার্তা সংস্থা শিনহুয়া। তবে বরখাস্তের কোনো কারণ বা ব্যাখ্যা বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়নি।
গেলো বছরের আগস্টে হাচানিকে তিউনিসিয়ার প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করা হয়। এর এক বছরের মাথায় তিনি পদ হারালেন।
এদিকে প্রেসিডেন্ট সাইদ সামাজিক বিষয়কমন্ত্রী কামেল মাদ্দৌরিকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন এবং তাকে জনগণের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে আহ্বান জানিয়েছেন।
আঞ্চলিক সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, আগামী নির্বাচন ঘিরে তিউনিসিয়া জটিল সময় পার করছে। জনগণের মধ্যে সরকার নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে। যা ইতিমধ্যে বিভিন্ন খাতে জনরোষে রূপ নিতে শুরু করেছে।
প্রসঙ্গত, উত্তর আফ্রিকার উপকূলে ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত দেশ তিউনিসিয়া। দেশটি উত্তর আফ্রিকা, আটলান্টিক মহাসাগরের নীল নদের বদ্বীপ এবং ভূমধ্য উপকূলের মধ্যে অবস্থিত।
জিএমএম/
আফ্রিকা
মালিতে গ্রামবাসীদের ওপর হামলা, নিহত ৪০
পশ্চিম আফ্রিকার মধ্যাঞ্চল মালিতে গ্রামবাসীদের ওপর হামলা চালিয়েছে সশস্ত্র সন্ত্রাসি বাহিনী। এতে প্রায় ৪০ গ্রামবাসী নিহত হয়েছেন।
বুধবার (৩ জুলাই) বার্তাসংস্থা রয়টার্সের দেয়া প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
দেশটির স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিদ্রোহে জর্জরিত মধ্য মালির একটি গ্রামে অজ্ঞাত সশস্ত্র ব্যক্তিদের হামলায় প্রায় ৪০ জন নিহত হয়েছেন। সোমবার মোপ্তি অঞ্চলের ডিজিগুইবোম্বো গ্রামে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
ব্যাঙ্কাসের মেয়র মৌলেয়ে গুইন্দো বলেছেন, সশস্ত্র লোকেরা গ্রামটি ঘিরে ফেলে লোকজনকে গুলি করতে শুরু করে।
তিনি মৃতের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি। তবে দুই স্থানীয় কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, হামলায় প্রায় ৪০ জন নিহত হয়েছেন।
‘এটি গণহত্যা ছিল’ উল্লেখ করে একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘হামলার আগে সন্ত্রাসীরা গ্রামটি ঘিরে ফেলে। সেখানে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছিল… হামলার ঘটনায় সেখানে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, কিছু লোক পালিয়ে যেতেও সক্ষম হয়। কিন্তু অনেককে হত্যা করা হয়েছে।’
নিহতদের বেশিরভাগই পুরুষ বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
মালির কর্মকর্তারা হামলাকারীদের শনাক্ত করতে পারেননি। এছাড়া কোনো গোষ্ঠী এখনও হামলার দায় স্বীকার করেনি।
টিআর/
আফ্রিকা
নাইরোবিতে ট্যাক্সবিরোধী আন্দোলন, নিহত কয়েকজন
কেনিয়ায় ট্যাক্সবিরোধী আন্দোলন সহিংস আকার ধারণ করেছে। এই বিক্ষোভ থেকে দেশটির সংসদ ভবনে আগুন দেয়া হয়েছে। এ সময় বিক্ষোভকারীদের দমাতে পুলিশ গুলি ছুড়লে বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দুপক্ষের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। এক পর্যায়ে পুলিশি বাধা টপকে দেশের সংসদ ভবনে আগুন দেন বিক্ষোভকারীরা। কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান দিয়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ব্যর্থ হলে পুলিশ গুলি চালায়।
বুধবার (২৬ জুন) বার্তাসংস্থা রয়টার্সের দেয়া প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
সংসদ ভবনের বাইরে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন এমন পাঁচজন বিক্ষোভকারীর মরদেহ গুণে দেখেছেন রয়টার্সের একজন সাংবাদিক। তবে প্যারামেডিক ভিভিয়ান আচিস্তা বলেছেন, কমপক্ষে ১০ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
আরেকজন প্যারামেডিক রিচার্ড এনগুমো বলেছেন, গুলিতে ৫০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। তিনি সংসদের বাইরে দুজন আহত বিক্ষোভকারীকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে তুলে নিয়ে যাচ্ছিলেন।
ডেভিস তাফারি নামে একজন বিক্ষোভকারী রয়টার্সকে বলেন, আমরা সংসদ বন্ধ করে দিতে চাই। প্রত্যেক এমপির পদত্যাগ করা উচিত। আমাদের একটি নতুন সরকার দরকার।
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, কাঁদনে গ্যাস ও গুলি চালিয়ে পুলিশ শেষ পর্যন্ত সংসদ ভবন থেকে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ করতে পেরেছে। এছাড়া ভূগর্ভস্থ টানেল দিয়ে এমপিদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
শুধু নাইরোবি নয়, এদিন ট্যাক্স বাড়ানোর প্রতিবাদে দেশের অন্যান্য শহর ও নগরেও বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ হয়েছে। এসব বিক্ষোভ থেকে কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটোর পদত্যাগের দাবি করা হচ্ছে। যদিও আন্দোলন শুরু হয়েছিল ট্যাক্স বৃদ্ধির বিরোধিতা করে।
আফ্রিকার এই দেশের মানুষজন করোনো মহামারির দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব, ইউক্রেনের যুদ্ধ, টানা দুই বছরের খরা এবং মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে সৃষ্ট বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক ধাক্কা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। তাদের এমন অর্থনৈতিক চাপের মধ্যেই রাজস্ব আয় বাড়াতে আরও প্রায় ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারের করের বোঝা জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে সরকার।
ইতিমধ্যে নতুন এই অর্থ বিলের অনুমোদন দিয়েছে সংসদ। এখন তৃতীয় বারের মতো এটি আবারও সংসদে উঠবে। এই ধাপে পাস হলে তা স্বাক্ষরের জন্য প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠানো হবে। কোনো আপত্তি থাকলে তিনি তা সংসদে ফেরত পাঠাতে পারেন। আর আপত্তি না থাকলে তিনি সই করলেই তা আইনে পরিণত হয়ে যাবে।