রাজনীতি
দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে হরতাল
সরকার পতনের একদফা দাবি এবং তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলোর ডাকা ৪৮ ঘণ্টা হরতালের দ্বিতীয় দিন আজ।
সোমবার (২০ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবে সকাল থেকেই রাজধানীর সড়কগুলোতে স্বাভাবিকের তুলনায় গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত যানবাহনের সংখ্যা একেবারে কম। গণপরিবহন কম থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় অফিসগামী মানুষদের।
এর আগে রোববার (১৯ নভেম্বর) হরতালের প্রথম দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। জামালপুরে আন্তঃনগর ট্রেনে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার সন্ধ্যা থেকে রোববার বিকাল পর্যন্ত ১৫টি যানবাহনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ও মহাখালী বাস টার্মিনালে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
হরতালের সমর্থনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ‘ঝটিকা’ মিছিল করেছে বিএনপি। রাজধানীর পুরানা পল্টনের বিজয়নগর সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেছে সমমনা দল ও জোটগুলো। এছাড়া জামায়াতও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে। রবিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর পুরানা পল্টন, বিজয় নগর, তোপখানা রোড, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে, সায়েন্স ল্যাবরেটরির সামনে, তেঁজগাও রেল স্টেশন সড়ক, তেঁজগাও শিল্পাঞ্চল সড়ক, বাড্ডা, ফকিরাপুল, গ্রীন রোড প্রভৃতি সড়কে এসব কর্মসূচি হয় পালন করে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো।
এদিকে সকালে সুনামগঞ্জ শহরের পুরাতন বাস-স্টেশন এলাকায় হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করলে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও গুলির ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশসহ অন্তত ১০ জন আহত হন।
এদিকে হরতালের প্রথম দিনে সকাল থেকে গাবতলী, মহাখালী ও সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার বাস তেমন ছাড়েনি। যাত্রীর অপেক্ষায় টার্মিনালের কাউন্টারগুলো। দু-একটি বাস দীর্ঘক্ষণ পরে ছাড়ে। রাজধানীতে হরতালের প্রভাব তেমন না পড়লেও গণপরিবহন চলাচল ছিল কম। হরতালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে ২৩৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের জেলায় মোতায়েন করা হয়েছে ২৮ প্লাটুন।
এদিকে ৪৮ ঘণ্টা হরতাল শেষে একদিন বিরতি দিয়ে বুধবার থেকে আবার ৪৮ ঘণ্টা অবরোধ দেয়ার চিন্তা করছে বিএনপি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনটির হরতাল কর্মসূচির শেষদিন আজ বিকালে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। মঙ্গলবার বিরতি দিয়ে বুধবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত আবার অবরোধ কর্মসূচি দেয়ার চিন্তা করছে বিএনপির হাইকমান্ড। সরকার পদত্যাগের একদফার দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত চলমান কঠোর কর্মসূচি থেকে পিছু হটবে না বিএনপি।
উল্লেখ্য, গেলো ২৮ অক্টোবর ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ পুলিশ পণ্ড করে দেয়ার পর সরকারের পদত্যাগের এক দফার দাবিতে বিএনপিসহ সমমনা জোটগুলো ২৯ অক্টোবর সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করেছে। এরপর পাঁচ দফায় ১১ দিন পর্যায়ক্রমে সারাদেশে অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। যা শেষ হয় গেলো শুক্রবার ভোরে। এরপর একতরফা তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে রোববার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টা সারাদেশে সর্বাত্মক অবরোধ ডাকে বিএনপি।
আওয়ামী লীগ
শেখ হাসিনাকে নিয়ে যে নতুন বার্তা দিলেন জয়
এবার শেখ হাসিনার দেশের ফেরা নিয়ে নতুন বার্তা দিলেন জয়। অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিলেই দেশে ফিরবেন শেখ হাসিনা। তবে ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি অংশগ্রহণ করবেন কিনা সে সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো বার্তা দেননি সজিব ওয়াজেদ জয়।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসব কথা বলেন তিনি।
জয় বলেন, রাজনীতি নিয়ে তার কখনওই উচ্চ আকাঙ্ক্ষা ছিল না। কিন্তু চলমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে নেতৃত্বের সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় দলের প্রয়োজনে তাকে সক্রিয় হতে হবে এবং সামনের সারিতে থেকেই কাজ করবেন।
এর আগে ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনের মুখে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে তার ছেলে জয় বিবিসিকে জানিয়েছিলেন “ মা আর দেশে ফিরবে না এবং রাজনীতি করবেন না”।
প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর দেশের চলমান সংকট সমাধানে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়েছেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আই/এ
বিএনপি
অন্তর্বর্তী সরকারকে অভিনন্দন জানালেন তারেক রহমান
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের জন্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার সহযোগী উপদেষ্টাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপাসন তারেক রহমান। বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দিবাগত রাত ১২টা ১২ মিনিটে নিজের ফেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ অভিনন্দন জানান।
অভিনন্দন বার্তায় তারেক রহমান লিখেছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের জন্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার সহযোগী উপদেষ্টাদের অভিনন্দন। যদি পেছনে ফিরে তাকাই গেলো ১৬ বছর ধরে শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনামলে বাংলাদেশের মানুষ ব্যাপক অধিকার লঙ্ঘন ও অবিচারের সম্মুখীন হওয়ার পর এই মুহুর্তটি এসেছে। আমাদের সাহসী ছাত্র-শিক্ষক, কর্মী, রিকশাচালক থেকে শুরু করে গৃহিণী, সাধারণ নাগরিক এবং রাজনৈতিক কর্মী- সমস্ত গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষ ব্যাপকভাবে কোটা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছে
তিনি বলেন, এই বিক্ষোভ শুধু কোটা সংস্কার নিয়ে নয়, নজিরবিহীন দুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমন-পীড়ন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান। আওয়ামী লীগের শাসনামলে অন্যায়ের মাত্রা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল।
নতুন সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশার কথা তুলে ধরে বিএনপির এই নেতা বলেন, সেই শাসনের পতনের সাথে সাথে বাংলাদেশের জনগণ অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য স্বাধীনভাবে ভোটাধিকারের প্রত্যাশা করে যেন তারা তাদের গণতান্ত্রিক আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাতে পারে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশে বিএনপির অবস্থা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, বিএনপি একটি পাবলিক ম্যান্ডেটসহ একটি নির্বাচিত সরকার গঠন এবং জনগণের সেবা করে একটি জবাবদিহিমূলক সংসদ, জনগণের অধিকার ও স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার এবং এর ফলে আইনের শাসন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠাকে সমর্থন করে।
উল্লেখ্য, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৭ জনকে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে। বঙ্গভবনের দরবার হলে বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে শপথ নিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে প্রথমে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। এরপর বাকি ১৬ উপদেষ্টার মধ্যে ১৩ জন শপথ পাঠ করেন। ঢাকার বাইরে থাকায় তিন উপদেষ্টা ফারুক-ই-আযম, বিধান রঞ্জন রায় এবং সুপ্রদীপ চাকমা শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি।
সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়া অন্যান্য উপদেষ্টারা হলেন- ১. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ২. ড. আসিফ নজরুল ৩. আদিলুর রহমান খান ৪. হাসান আরিফ ৫. তৌহিদ হোসেন ৬. সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান ৭. মো. নাহিদ ইসলাম ৮. আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ৯. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন ১০. সুপ্রদীপ চাকমা ১১. ফরিদা আখতার ১২. বিধান রঞ্জন রায় ১৩. আ.ফ.ম খালিদ হাসান ১৪. নুরজাহান বেগম ১৫. শারমিন মুরশিদ ১৬. ফারুকী আযম।
জেএইচ
অন্যান্য
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে জামায়াত
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির আমীর ডা. শফিকুর রহমান বৃহস্পতিবার রাতে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘শান্তিতে নোবেল বিজয়ী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মাদ ইউনূসকে প্রধান করে ৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। এই সরকারের নিকট ছাত্র-জনতার অনেক প্রত্যাশা। আমরা আশা করি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ছাত্রসমাজ ও দেশবাসীর প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হবেন।’
জামায়াত আমীর বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন। ছাত্র-জনতার বহু ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বৈরশাসক মুক্ত হয়েছে।’
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনূসসহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সব উপদেষ্টাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমরা প্রশাসন, বিচার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশনসহ রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করার এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
বঙ্গভবনে বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মাদ ইউনূস এবং অন্যান্য উপদেষ্টাগণ শপথ নিয়েছেন। শপথ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাবৃন্দ, ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকবৃন্দ, বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিস্ট, বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী, প্রকৌশলী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কবি-সাহিত্যিক, লেখক, গবেষকসহ দেশের বিশিষ্ট নাগরিকগণ উপস্থিত ছিলেন।
শপথ অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান, নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান (সাবেক এমপি) ও ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোঃ তাহের (সাবেক এমপি), সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, জনাব হামিদুর রহমান আযাদ (সাবেক এমপি), মাওলানা আবদুল হালিম ও এডভোকেট মোয়ায্যম হোসাইন হেলাল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি জনাব মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জনাব নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর জনাব সেলিম উদ্দিন প্রমুখ।
জেএইচ