বাংলাদেশ
৬১০ কোটি আত্মসাৎ করে লাপাত্তা জিয়াউদ্দিন
'নৈতিকতা ও সততা ব্যবসার মূলমন্ত্র'- এমন স্লোগান যার ব্যবসার মূলমন্ত্র। শিল্প গ্রুপ খুলে যিনি সেজেছেন শিল্পপতি। দামি ল্যান্ডক্রুজার গাড়ি, হাতে রোলেক্স ব্র্যান্ডের ঘড়ি। দুবাইয়ে তার সেকেন্ড হোম।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে প্রতারণার ফাঁদ খুলে ৬১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ফোশান গ্রুপের কোম্পানিটির চেয়ারম্যান জিয়াউদ্দিন জামান। এখন তিনি নিখোঁজ।
টাইলস ব্যবসার বিশেষজ্ঞ হিসেবে একাধিক টেলিভিশনে টকশোতে অংশ নিয়েছেন এই প্রতারক।
জিয়ার প্রতারণার কবলে পড়ে অনেকেই এখন ফতুর। ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানোর কথা বলেও একেকজনের কাছ থেকে ১০-১২ লাখ টাকা হাতিয়েছেন এই প্রতারক। এরই মধ্যে জিয়ার নামে মামলা হয়েছে ১০টির বেশি। একাধিক ভুক্তভোগীর সুনির্দিষ্ট মামলা ও অভিযোগের পর জিয়ার বিরুদ্ধে তদন্তে নামে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। নয়জন ভুক্তভোগী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আর্থিক জালিয়াতির এ তথ্য উঠে আসে।
জানা যায়, জালিয়াতি করে ভুয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়েছেন জিয়া। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংক থেকে ৩০০ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংক থেকে ১৯৬ কোটি ও ইসলামী ব্যাংক থেকে ১৭ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে। জিয়াকে ঋণ পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করতেন সংশ্নিষ্ট ব্যাংকেরই উচ্চ পদের কর্মকর্তারা।
মধুপুরে জালিয়াতি করে নেয়া যে জমিতে টাইলস কারখানা করার কথা, সেটির বাজারদর সর্বোচ্চ ১৫ কোটি টাকা। একজন প্রভাবশালীকে ৫০ শতাংশ শেয়ার দেয়ার কথা বলে ওই জমির বিপরীতে ১৯৬ কোটি টাকা ঋণ নেয়া হয়। হাতিয়ে নেয়া টাকার একটি বড় অংশ বিদেশে পাচার করেন জিয়া।
একটি চায়নিজ ভুয়া কোম্পানির বাংলাদেশি প্রতিনিধি সেজে দেশে একটি সেতু তৈরির সম্ভাব্যতা যাচাই সভায় অংশ নেন এই প্রতারক। এক ভুক্তভোগী জানান, ফোশান নামে চীনের একটি বড় শহর রয়েছে। ওই শহর টাইলস ও সিরামিকস কারখানার জন্য প্রসিদ্ধ। টাইলসের পেছনে ফোশান লেখা দেখিয়ে প্রচার করতেন চীনের কারখানায় এসব তৈরি করা হয়।
জিয়ার কোম্পানির ওয়েবসাইটেও রয়েছে- তার প্রতিষ্ঠানের গ্লোবাল হেডকোয়ার্টার জিংজিং এলাকায়। রুম নম্বর-৯১৩, লেভেল-৯। কোম্পানির পরিচালক একজন চায়নিজ নারীর ছবি আছে। তার নাম 'লি জিয়াওইং' বলে দাবি করা হয়। ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে সুবিশাল ভবনের ছবি ওয়েবসাইটে দিয়ে দাবি করা হয়, সেখানে আছে তার বাণিজ্যিক অফিস।
কোম্পানিটির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ২০টির বেশি। এই ২০ শিল্প প্রতিষ্ঠানের মোট কর্মচারী ছয় থেকে সাতজন। তার ঠকবাজির ধরন কোনো ক্ষেত্রে দেশের আরেক বড় প্রতারক রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদ করিমকেও হার মানায়। প্রতারক সাহেদের মতো সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিতেন জিয়া।
জিয়া যেসব ব্যবসায়িক সংগঠনের সদস্য হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন, এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রি, ওমান চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রি, বাংলাদেশ সিরামিকস ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এবং বাংলাদেশ অর্গানিক প্রডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাসোসিয়েশন।
এ ব্যাপারে কথা বলতে অভিযুক্ত জিয়াউদ্দিন জামানের ব্যবহৃত সাতটি নম্বরে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। এসএমএস পাঠানো হলেও তিনি ফিরতি কোনো বার্তা দেননি।
গেলো ১ এপ্রিল জিয়ার ৭৪ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় মামলা হয় গুলশান থানায়।
গুলশান থানার ওসি আবুল হাসান গণমাধ্যমকে জানান, জিয়াকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এটি যেহেতু অর্থ জালিয়াতির বিষয়, তাই মামলাটি সিআইডিতে স্থানান্তরের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে জিয়ার গ্রামের বাড়ি। রাজধানীর বনানীর ৪ নম্বর রোডে একটি ফ্ল্যাটে তার আস্তানা।
তাসনিয়া রহমান
জাতীয়
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানালেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা
শপথ নেয়ার পরের দিন ভাষা শহীদদের স্মরণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৩ জন উপদেষ্টা নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এর আগে, সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ও অন্য উপদেষ্টারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি এক নতুন বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।
আই/এ
জাতীয়
উপদেষ্টা পরিষদকে অভিনন্দন জানালেন জাসদ
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস এবং অন্য উপদেষ্টাদেরকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন
বৃহস্পতিবার ( ৮ আগস্ট ) রাতে দলের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ অভিনন্দন জানান তারা।
বিবৃতিতে জানানো হয়, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর দেশে আর একটিও প্রাণহানি, হামলা ও সম্পদ ধ্বংসের ঘটনা যেন না ঘটে তা নিশ্চিত হবে।”
বিবৃতিতে আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিসহ সংবিধানকে সমুন্নত রেখে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির সাথে আলোচনা করে সরকারের কর্ম পরিকল্পনার রূপরেখা দ্রুত প্রকাশ করে বিদ্যমান অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা প্রশমিত করবেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রাথমিক ও প্রধান কাজ হিসেবে অনতিবিলম্বে দেশে আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জনজীবনে স্বাভাবিকতা ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
জাসদ নেতৃবৃন্দ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ, সাংবাদিক পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
জাসদ জোর দাবি জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পূর্ববর্তী সরকারের পদত্যাগের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ পেশাজীবী ও হিন্দু ও আহমদীয়াসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও হত্যা করা, মন্দিরসহ ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে ও নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে হামলা-হত্যা-নির্যাতন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ, সংসদ ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন-বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে হামলা, লুটপাট, জ্বালিয়ে ছারখার, দেশের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, সাত বীরশ্রেষ্ঠর ভাস্কর্যসহ ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ও ম্যুরাল ভেঙে ফেলা এবং কুমিল্লার বীরচন্দ্র পাঠাগার, সুনামগঞ্জের ঐতিহ্য জাদুঘর, কুড়িগ্রামের উত্তরবঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ময়মনসিংহের ঐতিহাসিক শশীলজের ভেনাস ভাস্কর্য ভেঙে ফেলাসহ অগনিত শিল্পকর্ম ভেঙে ফেলার সব অপরাধ কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার।
জেডএস/
জাতীয়
তদবির থেকে বিরত থাকুন, দেশগঠনে পরামর্শ দিন : আসিফ মাহমুদ
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে ১৭ সদস্যের অন্তবর্তীকালীন সরকার। এ উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুইজন প্রতিনিধি। এদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ। তিনি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়ার পর ঘনিষ্ঠজনদের নিজেদের সুবিধার জন্য কোনো আবদার কিংবা তদবির করতে বারণ করেছেন। বরং দেশগঠনে কোনো পরামর্শ থাকলে দেয়ার অনুরোধ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্ট করে এ অনুরোধ করেন।
পোস্টে এই তরুণ উপদেষ্টা লিখেছেন, ব্যক্তিগত লাভের আশায় আবদার, তদবির করা থেকে বিরত থাকুন। এতে করে আমার সাথে আপনার সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। দেশগঠনে পরামর্শ থাকলে জানাবেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৭ জনকে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ঢাকার বাইরে থাকায় তিন উপদেষ্টা ফারুক-ই-আযম, বিধান রঞ্জন রায় এবং সুপ্রদীপ চাকমা শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি।
সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়া অন্যান্য উপদেষ্টারা হলেন- ১. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ২. ড. আসিফ নজরুল ৩. আদিলুর রহমান খান ৪. হাসান আরিফ ৫. তৌহিদ হোসেন ৬. সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান ৭. মো. নাহিদ ইসলাম ৮. আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ৯. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন ১০. সুপ্রদীপ চাকমা ১১. ফরিদা আখতার ১২. বিধান রঞ্জন রায় ১৩. আ.ফ.ম খালিদ হাসান ১৪. নুরজাহান বেগম ১৫. শারমিন মুরশিদ ১৬. ফারুক-ই-আযম।
জেএইচ