বাংলাদেশ
সেই রাতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ভবনে যা ঘটেছিল
বহু নাটকীয়তার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ হারিয়েছেন সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খান। ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে যখন পাকিস্তানের পার্লামেন্টে নানা ঘটনা ঘটছিল, তখন প্রধানমন্ত্রী ভবনেও ঘটেছে অনেক নাটকীয় ঘটনা।
সবার নজর পার্লামেন্টের দিকে থাকলেও প্রধানমন্ত্রী ভবনে তখন অনেকগুলো ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, একের পর এক ঘটনা ঘটেছে। তার কিছু ক্যামেরার সামনে ঘটেছে, কিছু ঘটেছে রুদ্ধদ্বার কক্ষে।
যখন ইফতারের কারণে পাকিস্তানের পার্লামেন্টের অধিবেশন মুলতুবী করা হয়, তখন হঠাৎ করে প্রধানমন্ত্রী ভবন সরগরম হয়ে ওঠে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে জরুরি বৈঠক আহ্বান করেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। সেখানে তার আইন এবং রাজনৈতিক উপদেষ্টাও অংশ নেন। সেই সঙ্গে পার্লামেন্টের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার এবং কয়েকজন আমলাকেও ডেকে পাঠানো হয়।
মন্ত্রিসভার ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, পাকিস্তান সরকারকে উৎখাত করার জন্য ‘যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের যড়যন্ত্রের’ বিষয়টি কিছু কর্মকর্তার কাছে প্রকাশ করা হবে।
সেই সময় পাকিস্তান পার্লামেন্টের স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকার প্রধানমন্ত্রী ভবনে এসে পৌঁছান, তবে তাদের লাউঞ্জে অপেক্ষা করতে বলা হয়।
এ সময় হেলিকপ্টারে করে দুইজন অনাহুত অতিথি এসে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী ভবনে। ভবন ঘিরে অস্বাভাবিক নিরাপত্তা প্রস্তুতি আর সশস্ত্র ব্যক্তি সজ্জিত হয়ে আসা ওই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে পৌনে এক ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেন।
এই দুই জন অতিথির উপস্থিতি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল। তিনি অবশ্য হেলিকপ্টারের জন্য অপেক্ষা করছিলেন, কিন্তু যারা আসবেন বলে তিনি প্রত্যাশা বা ধারনা করেছিলেন, ঘটেছিল একেবারেই তার উল্টো।
ইমরান খান আশা করছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের আদেশে পার্লামেন্ট বসার পর সেখানে যে হইচই শুরু হয়েছে, এরপর তিনি সেনাবাহিনীতে সদ্য যেসব রদবদল করেছেন, সেই সামরিক কর্মকর্তারা হেলিকপ্টারে করে তার সঙ্গে দেখা করতে আসবেন।
সেটা হয়তো হতো, কিন্তু সমস্যা হলো, সেনাবাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ে যে বৈপ্লবিক রদবদল তিনি করতে চেয়েছিলেন, সেটা কার্যকর করতে হলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হয়। কর্মকর্তাদের বরখাস্ত বা নতুন কর্মকর্তা নিয়োগের সেই আইনি বিজ্ঞপ্তি জারি হয়নি। ফলে ইমরান খানের বরখাস্ত আদেশ বা নতুন নিয়োগের আদেশ কার্যকরও হয়নি।
রোববার সকালে যদিও সামরিক মুখপাত্র দাবি করেছেন যে, এরকম কোন ঘটনা ঘটেনি।
আইএসপিআর একটি বিবৃতিতে বলেছেন, বিবিসি যে প্রতিবেদন করেছে, তার সঙ্গে বাস্তব ঘটনার মিল নেই।
আইএসপিআর বলেছে, এই প্রচারিত সংবাদের সঙ্গে কোন নির্ভরযোগ্য, প্রামাণিক বা প্রাসঙ্গিক সূত্র উল্লেখ নেই। এটা সাংবাদিকতার মৌলিক মূল্যবোধেরও বিরোধী। এই বানানো খবরে কোনরকম সত্যতা নেই এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যে বিভ্রান্তিমূলক খবর ছড়ানো হচ্ছে, এটা তারই অংশ।
তবে সরকারের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, সদ্য পদ হারানো প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান শনিবার রাতে যাতে এরকম কোন রদবদল করতে না পারেন, সেজন্য রাতেই আইনি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল।
যদি ইমরান খানের রদবদলের আদেশের প্রক্রিয়া সম্পন্নও করা হতো, তারপরেও সেটা যাতে বাতিল হয়ে যায়, সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল।
শনিবার মধ্যরাতে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট খোলা হয় এবং সেখানকার প্রধান বিচারপতি আতহার মিনাল্লাহর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডেকে পাঠানো হয়।
তখন জানানো হয়েছিল যে, হাইকোর্ট একটি জরুরি পিটিশনের শুনানি করবে, যেখানে অভিযোগ করা হয়েছে যে, ইমরান খান রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন এবং সেনাপ্রধানকে পদচ্যুত করার সুপারিশ করেছেন। ফলে জনস্বার্থে আদালতের ওই আদেশ বাতিল করে দেয়া উচিত।
তবে শেষপর্যন্ত যেহেতু ইমরান খানের ওই আদেশ কার্যকর হয়নি, ফলে ওই পিটিশনেরও আর শুনানি হয়নি।
তবে এর কিছু পরে, মধ্যরাতে পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করেন স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার। এরপর পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে অনাস্থা ভোটে গদি হারান ইমরান খান। ভোটাভুটি শুরুর কিছুক্ষণ আগেই অবশ্য তিনি প্রধানমন্ত্রী ভবন ছেড়ে চলে যান।
জাতীয়
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানালেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা
শপথ নেয়ার পরের দিন ভাষা শহীদদের স্মরণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৩ জন উপদেষ্টা নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এর আগে, সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ও অন্য উপদেষ্টারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি এক নতুন বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।
আই/এ
জাতীয়
উপদেষ্টা পরিষদকে অভিনন্দন জানালেন জাসদ
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস এবং অন্য উপদেষ্টাদেরকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন
বৃহস্পতিবার ( ৮ আগস্ট ) রাতে দলের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ অভিনন্দন জানান তারা।
বিবৃতিতে জানানো হয়, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর দেশে আর একটিও প্রাণহানি, হামলা ও সম্পদ ধ্বংসের ঘটনা যেন না ঘটে তা নিশ্চিত হবে।”
বিবৃতিতে আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিসহ সংবিধানকে সমুন্নত রেখে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির সাথে আলোচনা করে সরকারের কর্ম পরিকল্পনার রূপরেখা দ্রুত প্রকাশ করে বিদ্যমান অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা প্রশমিত করবেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রাথমিক ও প্রধান কাজ হিসেবে অনতিবিলম্বে দেশে আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জনজীবনে স্বাভাবিকতা ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
জাসদ নেতৃবৃন্দ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ, সাংবাদিক পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
জাসদ জোর দাবি জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পূর্ববর্তী সরকারের পদত্যাগের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ পেশাজীবী ও হিন্দু ও আহমদীয়াসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও হত্যা করা, মন্দিরসহ ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে ও নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে হামলা-হত্যা-নির্যাতন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ, সংসদ ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন-বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে হামলা, লুটপাট, জ্বালিয়ে ছারখার, দেশের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, সাত বীরশ্রেষ্ঠর ভাস্কর্যসহ ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ও ম্যুরাল ভেঙে ফেলা এবং কুমিল্লার বীরচন্দ্র পাঠাগার, সুনামগঞ্জের ঐতিহ্য জাদুঘর, কুড়িগ্রামের উত্তরবঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ময়মনসিংহের ঐতিহাসিক শশীলজের ভেনাস ভাস্কর্য ভেঙে ফেলাসহ অগনিত শিল্পকর্ম ভেঙে ফেলার সব অপরাধ কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার।
জেডএস/
জাতীয়
তদবির থেকে বিরত থাকুন, দেশগঠনে পরামর্শ দিন : আসিফ মাহমুদ
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে ১৭ সদস্যের অন্তবর্তীকালীন সরকার। এ উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুইজন প্রতিনিধি। এদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ। তিনি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়ার পর ঘনিষ্ঠজনদের নিজেদের সুবিধার জন্য কোনো আবদার কিংবা তদবির করতে বারণ করেছেন। বরং দেশগঠনে কোনো পরামর্শ থাকলে দেয়ার অনুরোধ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্ট করে এ অনুরোধ করেন।
পোস্টে এই তরুণ উপদেষ্টা লিখেছেন, ব্যক্তিগত লাভের আশায় আবদার, তদবির করা থেকে বিরত থাকুন। এতে করে আমার সাথে আপনার সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। দেশগঠনে পরামর্শ থাকলে জানাবেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৭ জনকে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ঢাকার বাইরে থাকায় তিন উপদেষ্টা ফারুক-ই-আযম, বিধান রঞ্জন রায় এবং সুপ্রদীপ চাকমা শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি।
সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়া অন্যান্য উপদেষ্টারা হলেন- ১. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ২. ড. আসিফ নজরুল ৩. আদিলুর রহমান খান ৪. হাসান আরিফ ৫. তৌহিদ হোসেন ৬. সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান ৭. মো. নাহিদ ইসলাম ৮. আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ৯. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন ১০. সুপ্রদীপ চাকমা ১১. ফরিদা আখতার ১২. বিধান রঞ্জন রায় ১৩. আ.ফ.ম খালিদ হাসান ১৪. নুরজাহান বেগম ১৫. শারমিন মুরশিদ ১৬. ফারুক-ই-আযম।
জেএইচ