বাংলাদেশ
পুলিশ থেকেও নিরাপত্তা কোথায়!
হত্যাকাণ্ডের ওই ঘটনাটি ঘটে ১৩ রা মার্চ, শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার হালুয়াকাটি এলাকায়। পুলিশের সামনেই এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। গেলো রোববার ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
পুলিশ সদস্য উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও কিভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে তা নিয়ে সবাই হতবাক। প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে।
বাংলাদেশে এর আগেও বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ উঠেছে কোন সহিংসতা চলাকালে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের নীরব ভূমিকা পালনের।
বিষয়টি নিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, সেখানে থাকা পুলিশ সদস্যদের গাফিলতির বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
কে এই ভিডিও ধারণ করেছে, তা নিশ্চিত নয়। ভিডিওটি নিরপেক্ষভাবে যাচাই এখনো চলছে। তবে ভিডিওটি বানোয়াট নয় বলে তা পুলিশ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
শেরপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসান নাহিদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, এই ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার আগেই ওই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে একটি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেখানে তার দায়-দায়িত্বের বিষয়টি খতিয়ে দেখে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, বরখাস্ত হওয়া পুলিশ সদস্যরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে বলেছেন, হঠাৎ করে আক্রমণ হওয়ায় প্রথমে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন। পরে তারা ঠেকানোর চেষ্টা করেছিলেন। সেই সময় তারাও একটু ভয় পেয়েছিলেন। তাদের আচরণকে পেশাদারিত্বের ঘাটতি রয়েছে।
নাহিদ চৌধুরী জানান, এ ধরণের ঘটনায় সর্বোচ্চ চাকরি হিসাবে চাকরিচ্যুতির বিধান রয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামীদের বিরুদ্ধেও অভিযান চলছে।
পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যাকে হত্যা করা হয়েছে এবং যারা হামলা চালিয়েছে, তাদের মধ্যে আগে থেকেই জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ ছিল। সেই বিরোধের জেরে দায়ের করা একটি সাধারণ ডায়েরির তদন্ত করতে সেদিন পুলিশ ওই স্থানে গিয়েছিল। সে সময় হামলার ঘটনাটি ঘটে। গ্রেপ্তারের পর দুইজন অভিযুক্ত ব্যক্তি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়- পুলিশের সামনেই অতর্কিতে রাম দা, গরু জবাই করার ছুরি ও লাঠিসোটা নিয়ে শেখবর আলীর উপর উপর্যুপরি আঘাত করে জিকো, তার ভাই জজ মিয়া ও সাইফুলসহ অন্যরা। ঘটনার আকস্মিকতায় পুলিশ হতবিহবল হয়ে পড়ে এবং নির্বাক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য দেখে। মুহূর্তের মধ্যেই পুরো হত্যাকাণ্ড এবং পুলিশের প্রতি তেড়ে আসার ঘটনা ভিডিওতে লক্ষ্য করা যায়।
তবে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হলেও মামলায় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেনি ভুক্তভোগীর পরিবার।
এই ঘটনাই প্রথম নয়, এর আগেও সহিংস ঘটনা বা মারামারির ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে নীরব থাকার বা সহিংসতা ঠেকাতে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
ফেব্রুয়ারি মাসেই বরিশাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, পুলিশের উপস্থিতিতে তাদেরও পর হামলা চালানো হয়।
শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন চলার সময়ও অভিযোগ উঠেছিল, পুলিশের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের ওপর হামলা করেছে।
এমনকি সর্বশেষ স্থানীয় সরকার নির্বাচন চলার সময় পুলিশের সামনেই বাংলাদেশের একাধিক স্থানে প্রতিপক্ষের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছিল।
কিন্তু যেখানে নিরাপত্তার নিশ্চিত করা বা সহিংসতা ঠেকানোই পুলিশের অন্যতম দায়িত্ব, সেখানে তাদের এরকম নীরব ভূমিকার পেছনে কি কারণ কাজ করে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক খন্দকার ফারজানা রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, পুলিশের মূল কাজ হলো নিরপেক্ষভাবে আইনের শাসন আর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু সমস্যা হলো ব্যক্তিগতভাবে, রাজনৈতিকভাবে বা অর্থনৈতিকভাবে পুলিশকে ব্যবহার করা হয়। পুলিশকে বাংলাদেশে ব্যবহারের দীর্ঘ ইতিহাস আছে। আবার আইনেও পুলিশকে এমন কিছু ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, যার অপব্যবহারের সুযোগ থাকে।
অধ্যাপক খন্দকার ফারজানা রহমান জানান, বিশেষ করে যারা রাজনৈতিক, সামাজিক বা অর্থনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী, তারা পুলিশকে ব্যবহার করে নানারকম অপরাধ করে থাকে। এই অপরাধের কোন না কোন লভ্যাংশ পুলিশের একটা অংশ ভোগ করছে।
এ কারণে পুলিশের সঙ্গে যাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, তাদের কোন অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশ চুপ করে থাকে। এই অসৎ সম্পর্কের কারণে অনেক সময় দেখা যায়, তার সামনে সহিংসতা ঘটলেও পুলিশ নিশ্চুপ থাকে, সক্রিয়ভাবে কাজ করে না।বাংলাদেশের পুলিশ প্রবিধানে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নানা নির্দেশনা রয়েছে।
খন্দকার ফারজানা আরও বলেন, এটা এখনো পরিষ্কার নয় যে, এখানে কি পুলিশের সদস্যরা ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে গেছেন নাকি আঁতাতের কোন ব্যাপার আছে। এ বিষয়ে আরও তদন্ত করে পরিষ্কার হতে পারে।
তাসনিয়া রহমান
জাতীয়
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানালেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা
শপথ নেয়ার পরের দিন ভাষা শহীদদের স্মরণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৩ জন উপদেষ্টা নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এর আগে, সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ও অন্য উপদেষ্টারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি এক নতুন বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।
আই/এ
জাতীয়
উপদেষ্টা পরিষদকে অভিনন্দন জানালেন জাসদ
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস এবং অন্য উপদেষ্টাদেরকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন
বৃহস্পতিবার ( ৮ আগস্ট ) রাতে দলের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ অভিনন্দন জানান তারা।
বিবৃতিতে জানানো হয়, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর দেশে আর একটিও প্রাণহানি, হামলা ও সম্পদ ধ্বংসের ঘটনা যেন না ঘটে তা নিশ্চিত হবে।”
বিবৃতিতে আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিসহ সংবিধানকে সমুন্নত রেখে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির সাথে আলোচনা করে সরকারের কর্ম পরিকল্পনার রূপরেখা দ্রুত প্রকাশ করে বিদ্যমান অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা প্রশমিত করবেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রাথমিক ও প্রধান কাজ হিসেবে অনতিবিলম্বে দেশে আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জনজীবনে স্বাভাবিকতা ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
জাসদ নেতৃবৃন্দ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ, সাংবাদিক পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
জাসদ জোর দাবি জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পূর্ববর্তী সরকারের পদত্যাগের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ পেশাজীবী ও হিন্দু ও আহমদীয়াসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও হত্যা করা, মন্দিরসহ ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে ও নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে হামলা-হত্যা-নির্যাতন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ, সংসদ ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন-বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে হামলা, লুটপাট, জ্বালিয়ে ছারখার, দেশের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, সাত বীরশ্রেষ্ঠর ভাস্কর্যসহ ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ও ম্যুরাল ভেঙে ফেলা এবং কুমিল্লার বীরচন্দ্র পাঠাগার, সুনামগঞ্জের ঐতিহ্য জাদুঘর, কুড়িগ্রামের উত্তরবঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ময়মনসিংহের ঐতিহাসিক শশীলজের ভেনাস ভাস্কর্য ভেঙে ফেলাসহ অগনিত শিল্পকর্ম ভেঙে ফেলার সব অপরাধ কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার।
জেডএস/
জাতীয়
তদবির থেকে বিরত থাকুন, দেশগঠনে পরামর্শ দিন : আসিফ মাহমুদ
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে ১৭ সদস্যের অন্তবর্তীকালীন সরকার। এ উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুইজন প্রতিনিধি। এদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ। তিনি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়ার পর ঘনিষ্ঠজনদের নিজেদের সুবিধার জন্য কোনো আবদার কিংবা তদবির করতে বারণ করেছেন। বরং দেশগঠনে কোনো পরামর্শ থাকলে দেয়ার অনুরোধ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্ট করে এ অনুরোধ করেন।
পোস্টে এই তরুণ উপদেষ্টা লিখেছেন, ব্যক্তিগত লাভের আশায় আবদার, তদবির করা থেকে বিরত থাকুন। এতে করে আমার সাথে আপনার সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। দেশগঠনে পরামর্শ থাকলে জানাবেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৭ জনকে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ঢাকার বাইরে থাকায় তিন উপদেষ্টা ফারুক-ই-আযম, বিধান রঞ্জন রায় এবং সুপ্রদীপ চাকমা শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি।
সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়া অন্যান্য উপদেষ্টারা হলেন- ১. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ২. ড. আসিফ নজরুল ৩. আদিলুর রহমান খান ৪. হাসান আরিফ ৫. তৌহিদ হোসেন ৬. সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান ৭. মো. নাহিদ ইসলাম ৮. আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ৯. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন ১০. সুপ্রদীপ চাকমা ১১. ফরিদা আখতার ১২. বিধান রঞ্জন রায় ১৩. আ.ফ.ম খালিদ হাসান ১৪. নুরজাহান বেগম ১৫. শারমিন মুরশিদ ১৬. ফারুক-ই-আযম।
জেএইচ