জাতীয়
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ঘিরেই ঘটে বিরল কিছু ঘটনা
১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের জনগণ যখন বিজয় দিবসের আনন্দে আত্মহারা, তারপরও কেনো যেনো তাদের বিজয়োল্লাস ১৬ কলা পূর্ণ হচ্ছিলো না। কারণ একটাই তা হলো বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এখনও যে পাকিস্তানের কারাগারে।
অবশেষে এলো ঐতিহাসিক সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্যদিয়ে জাতি বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ গ্রহণ করে।তবে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ঘিরেই ঘটে যায় বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা।এর মধ্যে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী অ্যাডওয়ার্ড হিথকে অনুরোধ করা ও ভারতীয় সৈন্যবাহিনী ফিরিয়ে নিতে ইন্দিরা গান্ধির প্রতিশ্রুতি পাওয়া অন্যতম।
বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৭ জানুয়ারি ভোর রাতে। ইংরেজি ক্যালেন্ডারে তখন ৮ জানুয়ারি।এদিন সকাল সাড়ে ৬টায় তাঁরা পৌঁছান লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে।দুপুরের দিকে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
৮ জানুয়ারি লন্ডনে বঙ্গবন্ধুর পৌঁছানোর কথা জানতেন না তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী অ্যাডওয়ার্ড হিথ। খবের পেয়েই তিনি পূর্বনির্ধারিত সব কর্মসূচি বাতিল করে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে ছুটে যান।বঙ্গবন্ধুকে নজিরবিহীন সম্মান দেখান। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ের বাইরে এসে গাড়ির দরজা খুলে ততক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন,যতক্ষণ না বঙ্গবন্ধু গাড়ি থেকে বেরিয়ে না আসেন।রাতে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে স্বীকৃতির বিষয়টি উত্থাপন করেন।
৯ জানুয়ারি সকালে লন্ডনে বসেই টেলিফোনে ইন্দিরা গান্ধী-বঙ্গবন্ধুর মধ্যে আলোচনা হয়।এসময় ইন্দিরা গান্ধী অনুরোধ করেন, ঢাকার পথে যেন তিনি দিল্লিতে যাত্রাবিরতি করেন।ব্রিটেনের বিমান বাহিনীর একটি উড়োজাহাজে করে দিল্লি হয়ে দেশের পথে যাত্রা করেন।১০ জানুয়ারি দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে, বর্তমানে ইন্দিরা গান্ধি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি বঙ্গবন্ধুকে আলিঙ্গন করেন। পাশে দাঁড়িয়ে পুরো মন্ত্রিসভাসহ ইন্দিরা গান্ধি স্বাগত জানান।
পরে ভাষণ দেওয়ার সময় ঘটে অবিস্মরণীয় এক ঘটনা। স্বাধীন বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা ‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টেলম্যান প্রেজেন্ট…’ বলতে না বলতেই উপস্থিত হাজারো ভারতীয় দর্শক একসঙ্গে বাংলায় ভাষণ দেওয়ার অনুরোধ করতে থাকেন। তাদের দাবির মুখে বঙ্গবন্ধু খানিকটা বিব্রত হয়ে পাশে দাঁড়ানো ইন্দিরা গান্ধীর দিকে তাকালে তিনিও স্মিত হেসে বলেন, ‘দে নিড বেঙ্গলি’।
দিল্লিতে যাত্রাবিরতির সময় ইন্দিরা গান্ধির কাছে বঙ্গবন্ধু জানতে চান,ভারতীয় সেনাবাহিনী কবে বাংলাদেশ ত্যাগ করবে? বঙ্গবন্ধুর এমন প্রশ্নের বিস্মিত হয়ে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কথা দিয়েছিলেন খুব অল্প সময়ের মধ্যে সব সৈন্য ফিরিয়ে আনা হবে। তার কথা মতোই ১৯৭২ সালের ১২ মার্চে ভারতীয় সৈন্যদের ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
বেলা ১টা ৪১ মিনিটে তেজগাঁও বিমানবন্দরে অবতরণ করেন বঙ্গবন্ধু। অবতরণের আগে কমেট উড়োজাহাজটি বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রায় ৪৫ মিনিট বিমানবন্দরের ওপর চক্রাকারে ঘুরতে থাকে। উপর থেকে সোনার বাংলাকে অবলোকন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন তিনি।
বিমানবন্দরে অস্থায়ী সরকারের সদস্যসহ মুক্তিকামী সব বাঙালি অশ্রুসজল নয়নে বরণ করেন ইতিহাসের বরপুত্র, পোয়েট অব পলিটিক্স বঙ্গবন্ধুকে। সেখান থেকে সোজা চলে যান বর্তমানের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।
এদিন, ১০ লাখের বেশি জনগণের সামনে প্রায় ৩৫ মিনিট দিক নির্দেশনামূলক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ শেষে বাড়ি ফেরেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
জাতীয়
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানালেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা
শপথ নেয়ার পরের দিন ভাষা শহীদদের স্মরণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৩ জন উপদেষ্টা নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এর আগে, সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ও অন্য উপদেষ্টারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি এক নতুন বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।
আই/এ
জাতীয়
উপদেষ্টা পরিষদকে অভিনন্দন জানালেন জাসদ
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস এবং অন্য উপদেষ্টাদেরকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন
বৃহস্পতিবার ( ৮ আগস্ট ) রাতে দলের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ অভিনন্দন জানান তারা।
বিবৃতিতে জানানো হয়, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর দেশে আর একটিও প্রাণহানি, হামলা ও সম্পদ ধ্বংসের ঘটনা যেন না ঘটে তা নিশ্চিত হবে।”
বিবৃতিতে আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিসহ সংবিধানকে সমুন্নত রেখে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির সাথে আলোচনা করে সরকারের কর্ম পরিকল্পনার রূপরেখা দ্রুত প্রকাশ করে বিদ্যমান অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা প্রশমিত করবেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রাথমিক ও প্রধান কাজ হিসেবে অনতিবিলম্বে দেশে আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জনজীবনে স্বাভাবিকতা ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
জাসদ নেতৃবৃন্দ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ, সাংবাদিক পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
জাসদ জোর দাবি জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পূর্ববর্তী সরকারের পদত্যাগের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ পেশাজীবী ও হিন্দু ও আহমদীয়াসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও হত্যা করা, মন্দিরসহ ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে ও নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে হামলা-হত্যা-নির্যাতন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ, সংসদ ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন-বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে হামলা, লুটপাট, জ্বালিয়ে ছারখার, দেশের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, সাত বীরশ্রেষ্ঠর ভাস্কর্যসহ ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ও ম্যুরাল ভেঙে ফেলা এবং কুমিল্লার বীরচন্দ্র পাঠাগার, সুনামগঞ্জের ঐতিহ্য জাদুঘর, কুড়িগ্রামের উত্তরবঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ময়মনসিংহের ঐতিহাসিক শশীলজের ভেনাস ভাস্কর্য ভেঙে ফেলাসহ অগনিত শিল্পকর্ম ভেঙে ফেলার সব অপরাধ কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার।
জেডএস/
জাতীয়
তদবির থেকে বিরত থাকুন, দেশগঠনে পরামর্শ দিন : আসিফ মাহমুদ
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে ১৭ সদস্যের অন্তবর্তীকালীন সরকার। এ উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুইজন প্রতিনিধি। এদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ। তিনি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়ার পর ঘনিষ্ঠজনদের নিজেদের সুবিধার জন্য কোনো আবদার কিংবা তদবির করতে বারণ করেছেন। বরং দেশগঠনে কোনো পরামর্শ থাকলে দেয়ার অনুরোধ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্ট করে এ অনুরোধ করেন।
পোস্টে এই তরুণ উপদেষ্টা লিখেছেন, ব্যক্তিগত লাভের আশায় আবদার, তদবির করা থেকে বিরত থাকুন। এতে করে আমার সাথে আপনার সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। দেশগঠনে পরামর্শ থাকলে জানাবেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৭ জনকে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ঢাকার বাইরে থাকায় তিন উপদেষ্টা ফারুক-ই-আযম, বিধান রঞ্জন রায় এবং সুপ্রদীপ চাকমা শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি।
সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়া অন্যান্য উপদেষ্টারা হলেন- ১. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ২. ড. আসিফ নজরুল ৩. আদিলুর রহমান খান ৪. হাসান আরিফ ৫. তৌহিদ হোসেন ৬. সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান ৭. মো. নাহিদ ইসলাম ৮. আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ৯. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন ১০. সুপ্রদীপ চাকমা ১১. ফরিদা আখতার ১২. বিধান রঞ্জন রায় ১৩. আ.ফ.ম খালিদ হাসান ১৪. নুরজাহান বেগম ১৫. শারমিন মুরশিদ ১৬. ফারুক-ই-আযম।
জেএইচ