বাংলাদেশ
নগ্নতা যখন যুগে যুগে প্রতিবাদের ভাষা!
যেকোনও অন্যায়-অবিচার বা বিভিন্ন দাবিতে নানা ভাষায় ও ভঙ্গিমায় প্রতিবাদ জানায় মানুষ। স্থান-কাল ও অবস্থানভেদে প্রতিবাদের ভাষা ভিন্ন হয়ে থাকে।
কিন্তু প্রতিবাদের ভাষয়া যখন নগ্নতা হয়ে উঠে, তখন সমাজ শিউরিয়ে উঠে। পোশাক দিয়ে নিজেকে ঢেকে রাখাই সভ্য সমাজের সংস্কৃতি। যখন সেই পোশাক শরীর থেকে খোলে নগ্ন শরীরে প্রতিবাদ আসে তখন সভ্য সমাজ চোখ বন্ধ করে ফেলে।
যুগে যগে এ নগ্ন প্রতিবাদ হয়েছে বিভিন্ন দাবিতে। এ প্রতিবাদ এসেছে ধর্ষণের বিরুদ্ধে, প্রতিবাদের কারণ হিসেবে কখনও জায়গা করে নিয়েছে জমির অধিকার, কখনও জলবায়ু পরিবর্তন, কখনও বা যুদ্ধ বিরোধিতা।
সম্প্রতি কান চলচ্চিত্র উৎসবে লাল গালিচায় এক তরুণী নিজের কাপড় খোলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন রুশ সেনাদের ইউক্রেনে ধর্ষণের বিরুদ্ধে।
ফ্রান্সের দক্ষিণের এই শহরে ৭৫তম আন্তর্জাতিক ছবি প্রদর্শনের আসর বসেছিল। ছবির কুশীলবদের স্বাগত জানাতে পাতা হয়েছিল লাল গালচে। কানের সেই চোখ ধাঁধানো লাল গালচেতেই আচমকা পোশাক খুলে ফেললেন এক অতিথি।
নগ্ন হয়েই গালচের দুপাশে দাঁড়ানো ফোটোগ্রাফারদের সামনে চলে আসেন তিনি। পরনে ছিল শুধু নিম্নাঙ্গের অন্তর্বাস। তাতে আঁকা ছিল রক্তের দাগ। অনাবৃত ঊর্ধ্বাঙ্গে নীল হলুদ রঙের উপর লেখা ছিল— ‘আমাদের ধর্ষণ করো না’।
ইউক্রেনের নীল হলুদ পতাকার রঙে শরীর রাঙিয়েছিলেন তরুণী। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির মহিলাদের উপর রুশ সেনার যৌন অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই কানের মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চকে ব্যবহার করেন তিনি। গোটা দুনিয়ার সামনে আবরণ মুক্ত করেন নিজেকে।
তবে প্রতিবাদের জন্য পোশাক খুলে ফেলা এই প্রথম নয়। সামাজিক অধিকার পেতে সমাজবিপ্লবীরা নগ্ন হয়েছেন বহু বার। কারণ যে সব সময় যৌন নির্যাতন, তা নয়। প্রতিবাদের কারণ হিসেবে কখনও জায়গা করে নিয়েছে জমির অধিকার, কখনও জলবায়ু পরিবর্তন, কখনও বা যুদ্ধ বিরোধিতা।
নগ্ন হয়ে প্রতিবাদ জানানোর ঘটনা সবচেয়ে বেশি বোধ হয় দেখেছে ফ্রান্সই। বছর খানেক আগে বেতন পরিকাঠামোর বদলের প্রতিবাদেও সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে পথে নেমেছিলেন সরকারি কর্মচারীরা। নগ্ন হয়ে একে অন্যের কাঁধে চেপে তৈরি করেছিলেন নগ্ন মানুষের পিরামিড। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করতে এসেছিলেন ফ্রান্সের সাংস্কৃতিক মন্ত্রী। তাঁকে ওই ‘ন্যুড পিরামিড’-এর মুখোমুখি হতে হয়।
পোশাকে পশমের ব্যবহারের প্রতিবাদ- তার জন্যও নগ্ন হয়েছেন পশু অধিকার আন্দোলনকর্মীরা। ফ্রান্সে তো বটেই গোটা বিশ্বে চলেছে সেই আন্দোলন। আন্দোলনকারীরা শরীরে একটি সুতোও না রেখে পড়েছিলেন শুধু পশুর মুখোশ।
ভারতেও হয়েছে নগ্ন প্রতিবাদ। ২০০৪ সালে মণিপুরে ১২ জন মহিলা নগ্ন হয়ে রাস্তায় নামেন। ইম্ফলে কাঙ্গলা ফোর্টের সামনে প্রকাশ্যে নগ্ন হন তারা। শরীর ঢাকেন একটি কাপড়ের ব্যানারে। তাতে লেখা ছিল, ‘ভারতীয় সেনা আমাদের ধর্ষণ করো।’
মণিপুরের ওই নগ্ন প্রতিবাদ ছিল আসম রাইফেলসের বিরুদ্ধে। মনোরমা নামে এক যুবতীকে জেরা করার নামে বাড়ি থেকে তুলে ধর্ষণ করে খুন করার অভিযোগ উঠেছিল আসম রাইফেলসের কয়েক জন জওয়ানের বিরুদ্ধে।
নগ্ন হয়ে প্রতিবাদকারী মণিপুরের ওই ১২ জন মহিলাকে ‘মণিপুরের মা’ বলা হয়েছিল সেই সময়ে। প্রতিবাদের সময় তাঁরা বলেছিলেন, ‘আমরা সবাই মনোরমার মা। আমাদেরও নিয়ে যাও, ধর্ষণ করো, মেরে ফেলো।’
জমির অধিকার চেয়ে নগ্ন হয়ে প্রতিবাদ আন্দোলনে নেমেছিলেন উগান্ডার মেয়েরা। কৃষিজমি হাতছাড়া হওয়ার প্রতিবাদে উগান্ডার আমুরু জেলার মেয়েরা পোশাক খুলে পথে নামেন।
ইরাকের যুদ্ধ থামাতে চেয়ে নগ্ন হয়েছেন মানুষ। ফ্লোরিডার পাম সৈকতে নগ্ন হয়ে শান্তির প্রতীক তৈরি করেছিলেন তারা। পোশাক খুলে প্রতিবাদ সামিল হয়েছিলেন হাজার খানেক মানুষ।
২০১৬ সালের ২৯ জুন কেমব্রিজের এক শিক্ষাবিদ অর্থনীতিবিশারদদের বৈঠকে ঢুকে পড়েন সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে। তার শরীরে লেখা ছিল ‘ব্রেক্সিট ব্রিটেনকে নগ্ন করে দেবে’।
এক রূপান্তরকামী তার অধিকার রক্ষার জন্য নগ্ন হয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন আমেরিকার টেনেসিতে। ড্রাইভিং লাইসেন্সে তার লিঙ্গে পুরুষের বদলে মহিলা লেখার অনুরোধ করেছিলেন তিনি। যা মানতে চাননি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। প্রতিবাদে পোশাক খুলে ফেলেন তিনি। সে কাজের জন্য অবশ্য তাকে জেলেও যেতে হয়।
আর্জেন্টিনার বুয়েনাস আইরেসে মহিলাদের বিরুদ্ধ হিংসার প্রতিবাদে পোশাক খুলে পথে নেমেছিলেন শতাধিক মহিলা।
অতি সংরক্ষণশীল বলে পরিচিত আরবেও হয়েছে নগ্ন প্রতিবাদ। নিজেদের অধিকার বুঝে নেওয়ার দাবিতে আরবের মহিলারাও নিজেদের নগ্ন ছবি পোস্ট করেছিলেন ইন্টারনেটে।
আবার নেহাত ঊর্ধ্বাঙ্গের আবরণ থেকে মুক্ত হত চেয়েও পোশাক খুলেছেন আন্দোলনকারীরা। তাদের দাবি ছিল, পুরুষদের মতো তারাও বিনা বাধায় ঊর্ধ্বাঙ্গ উন্মুক্ত করতে চান। সমাজে পুরুষ নারী দুপক্ষেরই সমানাধিকার হওয়া উচিত।
জাতীয়
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানালেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা
শপথ নেয়ার পরের দিন ভাষা শহীদদের স্মরণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৩ জন উপদেষ্টা নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এর আগে, সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ও অন্য উপদেষ্টারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি এক নতুন বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।
আই/এ
জাতীয়
উপদেষ্টা পরিষদকে অভিনন্দন জানালেন জাসদ
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস এবং অন্য উপদেষ্টাদেরকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন
বৃহস্পতিবার ( ৮ আগস্ট ) রাতে দলের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ অভিনন্দন জানান তারা।
বিবৃতিতে জানানো হয়, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর দেশে আর একটিও প্রাণহানি, হামলা ও সম্পদ ধ্বংসের ঘটনা যেন না ঘটে তা নিশ্চিত হবে।”
বিবৃতিতে আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিসহ সংবিধানকে সমুন্নত রেখে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির সাথে আলোচনা করে সরকারের কর্ম পরিকল্পনার রূপরেখা দ্রুত প্রকাশ করে বিদ্যমান অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা প্রশমিত করবেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রাথমিক ও প্রধান কাজ হিসেবে অনতিবিলম্বে দেশে আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জনজীবনে স্বাভাবিকতা ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
জাসদ নেতৃবৃন্দ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ, সাংবাদিক পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
জাসদ জোর দাবি জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পূর্ববর্তী সরকারের পদত্যাগের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ পেশাজীবী ও হিন্দু ও আহমদীয়াসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও হত্যা করা, মন্দিরসহ ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে ও নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে হামলা-হত্যা-নির্যাতন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ, সংসদ ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন-বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে হামলা, লুটপাট, জ্বালিয়ে ছারখার, দেশের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, সাত বীরশ্রেষ্ঠর ভাস্কর্যসহ ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ও ম্যুরাল ভেঙে ফেলা এবং কুমিল্লার বীরচন্দ্র পাঠাগার, সুনামগঞ্জের ঐতিহ্য জাদুঘর, কুড়িগ্রামের উত্তরবঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ময়মনসিংহের ঐতিহাসিক শশীলজের ভেনাস ভাস্কর্য ভেঙে ফেলাসহ অগনিত শিল্পকর্ম ভেঙে ফেলার সব অপরাধ কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার।
জেডএস/
জাতীয়
তদবির থেকে বিরত থাকুন, দেশগঠনে পরামর্শ দিন : আসিফ মাহমুদ
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে ১৭ সদস্যের অন্তবর্তীকালীন সরকার। এ উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুইজন প্রতিনিধি। এদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ। তিনি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়ার পর ঘনিষ্ঠজনদের নিজেদের সুবিধার জন্য কোনো আবদার কিংবা তদবির করতে বারণ করেছেন। বরং দেশগঠনে কোনো পরামর্শ থাকলে দেয়ার অনুরোধ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্ট করে এ অনুরোধ করেন।
পোস্টে এই তরুণ উপদেষ্টা লিখেছেন, ব্যক্তিগত লাভের আশায় আবদার, তদবির করা থেকে বিরত থাকুন। এতে করে আমার সাথে আপনার সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। দেশগঠনে পরামর্শ থাকলে জানাবেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৭ জনকে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ঢাকার বাইরে থাকায় তিন উপদেষ্টা ফারুক-ই-আযম, বিধান রঞ্জন রায় এবং সুপ্রদীপ চাকমা শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি।
সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়া অন্যান্য উপদেষ্টারা হলেন- ১. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ২. ড. আসিফ নজরুল ৩. আদিলুর রহমান খান ৪. হাসান আরিফ ৫. তৌহিদ হোসেন ৬. সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান ৭. মো. নাহিদ ইসলাম ৮. আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ৯. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন ১০. সুপ্রদীপ চাকমা ১১. ফরিদা আখতার ১২. বিধান রঞ্জন রায় ১৩. আ.ফ.ম খালিদ হাসান ১৪. নুরজাহান বেগম ১৫. শারমিন মুরশিদ ১৬. ফারুক-ই-আযম।
জেএইচ