আন্তর্জাতিক
২৪ ঘণ্টায় নিহত ১৯০ ফিলিস্তিনি
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলার তীব্রতা বেড়েছে। দেশটির নির্বিচার হামলায় নিহতের সংখ্যা ২৫ হাজার ২৯৫ জনে পৌঁছেছে। এর মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশই শিশু। সোমবার (২২ জানুয়ারি) গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই তথ্য জানিয়েছে। এদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তীব্র ঠান্ডা বিরাজ করছে। একই অবস্থা ফিলিস্তিনেও। লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে এই শীতে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানায়, সোমবার দক্ষিণ গাজা উপত্যকার শহর খান ইউনিসে ইসরায়েলের ক্রমাগত বোমা হামলায় কমপক্ষে ৪০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। গেলো ২৪ ঘণ্টায় নিহত হয়েছে ১৯০ ফিলিস্তিনি। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
শহরের পশ্চিমাঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনী যুদ্ধবিমান এবং আর্টিলারি দিয়ে বোমাবর্ষণ করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি ওই এলাকায় বাস করে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় আহত হয়েছেন ৩৪০ জন। এছাড়া ৭ অক্টোবর থেকে হামলায় গাজায় আহত হয়েছে ৬৩ হাজার। অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকে আছে। কারণ উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছতে পারছেন না।
এদিকে দক্ষিণ গাজার প্রধান শহরের দুটি হাসপাতাল ঘিরে ফেলেছে ইসরায়েলি বাহিনী। সেখানে বাস্তুচ্যুত হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। এমনকি গুরুতর অসুস্থ রোগীরাও এসব হাসপাতালে ছিল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কিদরা এক বিবৃতিতে বলেছেন যে, ইসরায়েলি সেনাদের লক্ষ্যবস্তুতে কয়েক ডজন মৃত ও আহত ব্যক্তি আটকা পড়েছেন।
খবরে বলা হয়েছে, উদ্বাস্তু হয়ে তাঁবুতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকার কারণে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার অভাবেও মারা যাচ্ছে শিশুরা। হাসপাতালগুলোতে নেই পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার ও ব্যথা উপশমের ওষুধ। শীতে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে। উপযুক্ত আবাসন এবং গরম কাপড়ের অভাবে শিশুরা নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ তীব্র ঠান্ডাজনিত রোগে ভুগছে। জ্বালানি ও পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়াতে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
হামাস ও ইসরাইল সংঘর্ষের মধ্যে অন্তত ১ লাখ ৩৫ হাজার শিশু অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ। চলমান এ যুদ্ধের মাঝেই আবার জন্ম নিয়েছে অন্তত ২০ হাজার শিশু। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনার চিকিৎসা সেবা ও পর্যাপ্ত ওষুধ না থাকায় শিশু মৃত্যুর হার দিনদিন যেন বেড়েই চলেছে। শীতের দিনে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে।
উপযুক্ত আবাসন এবং গরম কাপড়ের অভাবে শিশুরা নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ তীব্র ঠান্ডাজনিত রোগে ভুগছে। খান ইউনিস হাসপাতালের চিকিৎসক জানিয়েছেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। শিশুরা যেসব রোগে ভুগছে তার বেশিরভাগই হল পেটের অসুখ। বিশুদ্ধ পানির অভাবের জন্য এই সমস্যা বেশি হচ্ছে। ওরা পানিশূণ্যতায় ভুগছে। হাসপাতালে এখন সাধারণ সিরাপের মতো সহজ চিকিৎসাও নেই।
ইসরায়েলি হামলায় গাজা উপত্যকার বেশির ভাগই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘ ও বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, এ যুদ্ধ সেখানকার ২৪ লাখ মানুষের জন্য মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, তিন মাসের বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি হামলার কারণে গাজার মোট জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। গাদাগাদি করে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা এসব মানুষকে খাবার, পানি, জ্বালানি ও স্বাস্থ্যসেবা পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেছেন, গাজার বাসিন্দারা এখন ‘নরকে বসবাস করছেন’।
আন্তর্জাতিক
যুক্তরাষ্ট্র অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত : মার্কিন মুখপাত্র
অন্তর্বর্তী সরকার এবং ড. ইউনূসের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের জনগণের জন্য গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে বলে জানিয়েছেন, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শপথ নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মিলার বলেন, বাংলাদেশের জন্য আজ একটি শুভ দিন। নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস সবেমাত্র বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র এ সরকারকে অভিননন্দ জানিয়েছে কি না এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ ডি’অ্যাফেয়ার্স আজ শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং তারা সাম্প্রতিক সহিংসতা বন্ধের জন্য ড. ইউনুসের আহ্বানকে স্বাগত জানাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, এসময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের যোগাযোগ হয়েছে বলেও জানান ম্যাথিউ মিলার। তবে কোন বিষয়ে যোগাযোগ হয়েছে তিনি সে বিষয়ে বিস্তারিত বলেন নি।
আই/এ
এশিয়া
জাপানে ৭.১ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প
জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকায় রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ১ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ৪৩ মিনিটের দিকে পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রধান দ্বীপ কিয়ুশুর মিয়াজাকি অঞ্চলে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে।
জাপানের আবহাওয়া সংস্থার (জেএমএ) বরাত দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম এনএইচকে ওয়ার্ল্ড এ তথ্য জানিয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পের পর দেশটিতে সুনামির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। মিয়াজাকিতে সমুদ্রের ঢেউ ইতোমধ্যে ৫০ সেন্টিমিটারে পৌঁছেছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি কিংবা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে দেশটির মন্ত্রিপরিষদের মুখ্য সচিব ইয়োশিমাসা হায়াশি গণমাধ্যমকে বলেন, ভূমিকম্পের পর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্ল্যান্টগুলোতে কোনো ধরনের অস্বাভাবিক ঘটনা দেখা যায়নি। সরকার ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে।
প্রসঙ্গত, জাপানে ভূমিকম্পের ঘটনা একেবারে সাধারণ। বিশ্বে ৬ বা তার চেয়ে বেশি মাত্রার ভূমিকম্পের প্রায় এক-পঞ্চমাংশই এদেশে ঘটে থাকে।
এর আগে, ২০১১ সালের ১১ মার্চ দেশটির উত্তর-পূর্ব উপকূলে ৯ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। যেটি ছিলো জাপানের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। ওই সময় ভূমিকম্পের পর দেশটিতে বিশাল সুনামি আঘাত হানে।
সূত্র: রয়টার্স
জিএমএম/
আন্তর্জাতিক
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জনগণের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে হবে: যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নয়নের ব্যাপারটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেনো গণতন্ত্র, আইন ও বাংলাদেশি জনগণের আকাঙ্খা পূরণ করে-এমনটাই চাইছে যুক্তরাষ্ট্র।
স্থানীয় সময় বুধবার (৭ আগস্ট) ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে যুক্তরাষ্ট্রে এমনটাই আশা করে বলে জানিয়েছেন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। এদিন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ইরাকের এক সাংবাদিক জানতে চান, ‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে তার বা অন্যদের সঙ্গে আপনাদের যোগাযোগ হয়েছি কী? বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা পরিস্থিতিকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?’
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘আমরা এখনও যোগাযোগ করেনি। আমরা বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখছি এবং আমরা এরইমধ্যে দেখেছি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি তার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আপনি নিশ্চয়ই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলতে শুনেছেন যে. অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে তা যেনো গণতান্ত্রিক নীতিমালাকে, আইনের শাসন এবং সিদ্ধান্তে বাংলাদেশি জনগণের ইচ্ছা প্রতিফলিত হয়।
এসময় যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী একটি প্রশ্ন করেন। তার প্রশ্নটি ছিল, আপনি কি জানেন যে স্বৈরশাসক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করে নতুন সরকারকে হুমকি দিচ্ছেন, সহিংসতা উসকে দিচ্ছেন? তিনি সাবেক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন যিনি বাংলাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছিলেন। দয়াকরে তার ব্যাপারে আপনার মন্তব্য জানাবেন কী?’
জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘একজন সাধারণ নাগরিকের বিবৃতি নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। আমি এরইমধ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কথা বলেছি এবং আমরা দেখতে চাই এই সরকার কী পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যায়।
এসময় মুশফিকুল ফজল আনসারী আরও জানতে চান, ‘দেশের শান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে প্রত্যাশা নিয়ে আপনার কী মন্তব্য?
জবাবে ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেটের মুখপাত্র বলেন, শনের প্রশ্নের উত্তরে আমি যেমনটি বলেছি – অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, আমরা দেখতে চাই ওই সিদ্ধান্তে যেনো গণতান্ত্রিক নীতি মেনে চলা হয় এবং জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ওই ব্রিফিংয়ে ফিলিস্তিনের গাজা, দক্ষিণ আমেরিকার ভেনিজুয়েলা, ইরাক ও ইরানের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।
এমআর//