জাতীয়
ওদের দুনিয়াতে না রাখাই ভাল: অপহৃত হিমেলের মা
যারা আমার ছেলেকে অপহরণ, নির্যাতন করেছে তাদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হয়। আমার ছেলের লাইফটা শেষ করে দিয়েছে ওরা। আমি এখনো নিশ্চিন্তে থাকতে পারছি না। ছেলে ফিরে পাবার পর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের কাছে এভাবেই নিজের বক্তব্য দেন ভুক্তভোগী হিমেলের মা তহুরা বিনতে হক।
অপহরণের এক মাস পর ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির (আইইউবিএটি) চতুর্থ বর্ষের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী হাসিবুর রহমান ওরফে হিমেলকে উদ্ধার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
হিমেলের মা বলেন, আমি বোঝাতে পারবো না, একজন মায়ের পক্ষে সহ্য করা সম্ভব কিনা। আল্লাহ যেন আর কারো ভাগ্যে সন্তান অপহরণের এরকম ঘটনা না দেয়। ওরা আমার ছেলের লাইফটা শেষ করে দিয়েছে। আমি এখনো নিশ্চিন্ত না আমার ছেলেটা কি করবে? ছেলেটা এখনো অসুস্থ। ওদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হয়। বলতে তো পারছি না, শুধু মনে হয় ওদের দুনিয়াতে না রাখাই ভাল। ২৪ ঘণ্টা গালাগালি, হুমকি দিয়েছে। এখনো ভয় লাগে।
প্রশাসনের কাছে যেন না যাই সেজন্য হুমকি দিতো। বলতো ছেলেকে মেরে ফেলবে। একটা চাকমা ছেলে ছিল সঙ্গে। বার বার ওকে জবাই করার হুমকি দিচ্ছিল। ছেলের সঙ্গে ড্রাইভারও ছিল। শুরু থেকেই ওকে আমার সন্দেহ হয়েছিল। ড্রাইভার সামিদুল ফোনে ভদ্রভাবে কথা বলতো। সে বলতো ম্যাডাম টাকাটা নিয়ে আসেন। আমি এসে নিয়ে যাবো। কিন্তু আমি কিছু বলতে পারতাম না।
তহুরা বলেন, গেলো ২৬ ডিসেম্বর ব্যবসার প্রয়োজনে নিজস্ব প্রাইভেটকারে শেরপুরের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলেন হিমেল। বাসা থেকে বের হবার সময় সঙ্গে ছিলেন ড্রাইভার সামিদুলও।
অনেক খোঁজা-খুঁজির পরও সন্ধান না পেয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় সাধারণ ডায়েরি করি। দুদিন পর ফোন আসে এক কোটি টাকা মুক্তিপণ দিলে ছেলেকে মুক্তি দেয়া হবে। ময়মনসিংহে টাকা নিয়ে এসে ছেলেকে নিয়ে যেতে হবে। কান্না চিৎকার মারামারি, গালাগালির শব্দ শোনানো হয়। নির্যাতনের ভিডিও পাঠানো হয়। আমি অনেক চেষ্টা করছি টাকা নিয়ে বের হবার জন্য। একমাত্র সন্তান কি করবো ভেবে কূল পাচ্ছিলাম না। তবে ডিবি পুলিশ ও র্যাব অনেক সহযোগিতা করেছে। শেষ পর্যন্ত আমি নিজে টাকাসহ ঝুঁকি নিয়ে বের হই।
মা তহুরা হক বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনেক খোঁজাখুঁজি করেও হিমেলের সন্ধান পাচ্ছিল না। এখন বুঝতে পারছি হয়তো পাহাড়ে রাখা হয়েছিল।
ড্রাইভার যে হিমেল অপহরণের ঘটনায় জড়িত সেটা কি এখন বুঝতে পারছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে কখনো আমি সামিদুলকে সন্দেহ করতাম না। যেদিন বাসা থেকে বের হয়েছিল সেদিন ব্যবসার কথা বলে সামিদুলই ওর গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যায়। তবে অপহরণের সর্বশেষ ১০/১২ দিন সামিদুলের মতিগতি ভালো ছিল না। শুধু ছেলেকে নিয়ে বাইরে যেতে চাইতো। আমি বাইরে যেতাম, টাকা দিতাম, টাকা খরচা করতাম তা দেখতো। কিন্তু ছেলে ওকে সন্দেহ কখনো করেনি।
আমি র্যাবকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। র্যাব আমাকে অনেক সহযোগীতা করেছে। সন্তান যেভাবে মাকে নিয়ে যায় আমরাও আপনাকে সেভাবে নিয়ে যাবো, ছেলেকে উদ্ধার করবো, এভাবেই বলেছে র্যাব। শেষ পর্যন্ত আমি টাকা নিয়েই ঝুঁকি নিয়ে বের হই। একটা মায়ের পক্ষে এসব সহ্য করতে পারে কিনা জানি না। আল্লাহ যেন কারো ভাগ্যে এরকম কিছু না রাখে।
উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমান হিমেলকে অপহরণের পর পাশবিক কায়দায় নির্যাতন ও মুক্তিপণ দাবির ঘটনায় এক মাস পর গত রাতে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে উদ্ধার করে র্যাব-১ এর একটি দল। একই ঘটনায় অপহরণ চক্রের মূলহোতা মালেকসহ ৫ জনকে আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ ও ওয়াকিটকিসহ সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও রাজধানীর উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
গ্রেপ্তাররা হলেন, অপহরণকারী চক্রের মূলহোতা ও পরিকল্পনাকারী মো. আব্দুল মালেক (৩৫), তার অন্যতম সহযোগী ও পরিকল্পনাকারী ড্রাইভার সামিদুল ইসলাম (৩০), রনি নাবাল (৪১), রাসেল মিয়া (৩৪), ও বিল্লাল হোসেন (২৪)। অভিযানে উদ্ধার করা হয় ১টি বিদেশি পিস্তল, ২ রাউন্ড গুলি ও ২টি ওয়াকিটকি সেট।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা অপহরণের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করেছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
জাতীয়
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানালেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা
শপথ নেয়ার পরের দিন ভাষা শহীদদের স্মরণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৩ জন উপদেষ্টা নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এর আগে, সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ও অন্য উপদেষ্টারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি এক নতুন বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।
আই/এ
জাতীয়
উপদেষ্টা পরিষদকে অভিনন্দন জানালেন জাসদ
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস এবং অন্য উপদেষ্টাদেরকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন
বৃহস্পতিবার ( ৮ আগস্ট ) রাতে দলের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ অভিনন্দন জানান তারা।
বিবৃতিতে জানানো হয়, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর দেশে আর একটিও প্রাণহানি, হামলা ও সম্পদ ধ্বংসের ঘটনা যেন না ঘটে তা নিশ্চিত হবে।”
বিবৃতিতে আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিসহ সংবিধানকে সমুন্নত রেখে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির সাথে আলোচনা করে সরকারের কর্ম পরিকল্পনার রূপরেখা দ্রুত প্রকাশ করে বিদ্যমান অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা প্রশমিত করবেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রাথমিক ও প্রধান কাজ হিসেবে অনতিবিলম্বে দেশে আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জনজীবনে স্বাভাবিকতা ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
জাসদ নেতৃবৃন্দ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ, সাংবাদিক পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
জাসদ জোর দাবি জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পূর্ববর্তী সরকারের পদত্যাগের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ পেশাজীবী ও হিন্দু ও আহমদীয়াসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও হত্যা করা, মন্দিরসহ ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে ও নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে হামলা-হত্যা-নির্যাতন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ, সংসদ ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন-বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে হামলা, লুটপাট, জ্বালিয়ে ছারখার, দেশের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, সাত বীরশ্রেষ্ঠর ভাস্কর্যসহ ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ও ম্যুরাল ভেঙে ফেলা এবং কুমিল্লার বীরচন্দ্র পাঠাগার, সুনামগঞ্জের ঐতিহ্য জাদুঘর, কুড়িগ্রামের উত্তরবঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ময়মনসিংহের ঐতিহাসিক শশীলজের ভেনাস ভাস্কর্য ভেঙে ফেলাসহ অগনিত শিল্পকর্ম ভেঙে ফেলার সব অপরাধ কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার।
জেডএস/
জাতীয়
তদবির থেকে বিরত থাকুন, দেশগঠনে পরামর্শ দিন : আসিফ মাহমুদ
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে ১৭ সদস্যের অন্তবর্তীকালীন সরকার। এ উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুইজন প্রতিনিধি। এদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ। তিনি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়ার পর ঘনিষ্ঠজনদের নিজেদের সুবিধার জন্য কোনো আবদার কিংবা তদবির করতে বারণ করেছেন। বরং দেশগঠনে কোনো পরামর্শ থাকলে দেয়ার অনুরোধ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্ট করে এ অনুরোধ করেন।
পোস্টে এই তরুণ উপদেষ্টা লিখেছেন, ব্যক্তিগত লাভের আশায় আবদার, তদবির করা থেকে বিরত থাকুন। এতে করে আমার সাথে আপনার সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। দেশগঠনে পরামর্শ থাকলে জানাবেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৭ জনকে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ঢাকার বাইরে থাকায় তিন উপদেষ্টা ফারুক-ই-আযম, বিধান রঞ্জন রায় এবং সুপ্রদীপ চাকমা শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি।
সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়া অন্যান্য উপদেষ্টারা হলেন- ১. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ২. ড. আসিফ নজরুল ৩. আদিলুর রহমান খান ৪. হাসান আরিফ ৫. তৌহিদ হোসেন ৬. সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান ৭. মো. নাহিদ ইসলাম ৮. আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ৯. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন ১০. সুপ্রদীপ চাকমা ১১. ফরিদা আখতার ১২. বিধান রঞ্জন রায় ১৩. আ.ফ.ম খালিদ হাসান ১৪. নুরজাহান বেগম ১৫. শারমিন মুরশিদ ১৬. ফারুক-ই-আযম।
জেএইচ