আন্তর্জাতিক
ইসরায়েল প্রতিশোধ নিলে দশগুণ বেশি হামলা, ইরানের হুঁশিয়ারি
ফিলিন্তিনের গাজায় চলমান যুদ্ধকে কেন্দ্র করে গত অক্টোবর থেকেই উত্তপ্ত হয়ে আছে গোটা মধ্যপ্রাচ্য। এরই মধ্যে শনিবার(১৩ এপ্রিল) মধ্যরাতে ইসরায়েলে শত শত ড্রোন ও মিসাইল হামলা চালানোর ঘটনায় বিশ্বজুড়ে উত্তেজনার পারদ এখন চরমে পৌঁছেছে। গোটা মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে বেজে উঠেছে ‘যুদ্ধের দামামা’।
তেলআবিব কখনও ভাবেনি তার ওপর ভয়াবহ হামলা চালাবে তেহরান। এতদিন অন্যতম পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা পেয়েই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে ‘ধরাকে সরা জ্ঞান করেছে তেলআবিব’। মধ্যপ্রাচ্যে নিজেকে মনে করেছে চৌকষ খেলোয়াড় হিসেবে। তবে ইরানের মতো আক্রমণ ভাগের তুখোড় খেলোয়াড় যে রয়েছে তা জানা ছিল না। শনিবার রাতে যখন জানলো তখন তাদের অহঙ্কারের আকাশ মিশে গেছে মাটিতে।
বর্তমানে ইরান-ইসরাইলের সম্পর্ক সাপে-নেউলে হলেও অতীতে কিন্তু পরিস্থিতি এমনটা ছিল না। একসময় দু’দেশের সম্পর্ক ছিলো বন্ধুত্বপূর্ন। এমনকি ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে তুরস্কের পর ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেওয়া দ্বিতীয় মুসলিম দেশ ছিল ইরান। সেটি ১৯৫০ সালের ঘটনা। গাজায় যখন ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরায়েল, তখনও ইরান চুপ করে থেকেছে। তবে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে হামলার পর আর চুপ করে থাকেনি। ইসিরায়েরের দিকে গর্জে ওঠেছে ইরানের ড্রোন ও মিসাইল। একই সঙ্গে মিসাইল ও ড্রোন ছুড়েছে ইয়েমেন ও লেবাননে থাকা ইরানের ‘প্রক্সিগ্রুপ‘ হুতি ও হিজবুল্লাহ।
ইরানের এই ভয়াবহ হামলার প্রতিশোধ নিতে হামলার প্রস্তুতি নিয়েছে ইসরাইল সরকার। তবে যুক্তরাষ্ট্র বোলছে-তারা বিশ্বাস করে ইরানের নজিরবিহীন হামলার ঘটনায় সীমিত আকারে প্রতিক্রিয়া দেখাবে তেলআবিব। ইরান-সমর্থিত সিরিয়ার আধা-সামরিক বাহিনী বা লেবাননের সশস্ত্র বাহিনী হিজবুল্লাহর গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুর ওপর হামলা হতে পারে বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইসরায়েল।
বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রশাসন যখন প্রতিশোধ নিতে মরিয়া ঠিক তখনই তেলআবিব ও তার পশ্চিমা মিত্রদের হুশিয়ারি দিয়ে ইরান বলেছে, সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটের ওপর হামলার প্রতিশোধ নেওয়া শেষ হয়েছে। যুদ্ধ এখন শেষ। এরপরও যদি ইসরায়েল ইরানের স্বার্থে আঘাত করে তাহলে এর প্রতিশোধ হবে ভয়ঙ্কর। দশগুণ বেশি হামলার জন্য প্রস্তুত থাকে যেনো দেশটি। আর প্রতিশোধমূলক এসব হামলার জন্য ইসরায়েলকে অনুতাপ করতে হবে বলে সতর্ক করেছে ইরান।
শুধু তাই নয়, ইসরায়েলের প্রধান মিত্র ও পরামর্শদাতা যুক্তরাষ্ট্রকে আলাদাভাবে হুঁশিয়ারি দিয়ে ইরান বলেছে, ইসরায়েল ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনা ধরণের প্রতিক্রিয়ার অর্থই হবে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন স্বার্থকে তেহরানের লক্ষবস্তুকে পরিণত করা। তাই যুক্তরাষ্ট্র যেনো তাদের ব্যাপারে নাক না গলায়।
ইরানের এই হুঁশিয়ারির পরই ঘুম হারাম হয়ে গেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের। পুরোপুরি ব্যাকফুটে চলে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট স্পষ্টভাবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে জানিয়ে দিয়েছেন, তেহরানের ওপর হামলা হোক ওয়াশিংটন তা চায় না। এ ধরনের উদ্যোগে মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে। ইসরায়েল এরপরও যদি ইরানে হামলা চালায় তবে যুক্তরাষ্ট্র তার পক্ষে নেই। ইজরায়েলকে এক একাই সব মোকাবিলা করতে হবে।
এদিকে, ইরানের ওপর ইসরায়েলি হামলার পরিকল্পনায় সায় দেয়নি বিশ্বের অপর পরাশক্তিধর দেশগুলোও। ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, চীন ও রাশিয়া ইরানের সঙ্গে সংঘাত বৃদ্ধি থেকে বিরত থাকতে ইসরায়েলকে প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। পুতিন প্রশাসন বোলছে, সংঘাত আরও বাড়লে তা ‘কারও স্বার্থের’ জন্য ভালো হবে না। ইসরাইলকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে চীন।
তবে ইসরাইল সরকারের একজন মুখপাত্র বলেছেন, দেশের জনগণকে কীভাবে সুরক্ষা দেওয়া হবে, সে সিদ্ধান্ত একমাত্র ইসরায়েলই নিতে পারে এবং নিবে। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রশাসন এখন বিশ্ব নেতাদের আহবানে সাড়া দেবে, নাকি তেহরানের ওপর হামলা চালাবে-এটিই এখন টক অব দ্য ওয়ার্ল্ড।
আন্তর্জাতিক
যুক্তরাষ্ট্র অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত : মার্কিন মুখপাত্র
অন্তর্বর্তী সরকার এবং ড. ইউনূসের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের জনগণের জন্য গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে বলে জানিয়েছেন, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শপথ নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মিলার বলেন, বাংলাদেশের জন্য আজ একটি শুভ দিন। নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস সবেমাত্র বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র এ সরকারকে অভিননন্দ জানিয়েছে কি না এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ ডি’অ্যাফেয়ার্স আজ শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং তারা সাম্প্রতিক সহিংসতা বন্ধের জন্য ড. ইউনুসের আহ্বানকে স্বাগত জানাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, এসময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের যোগাযোগ হয়েছে বলেও জানান ম্যাথিউ মিলার। তবে কোন বিষয়ে যোগাযোগ হয়েছে তিনি সে বিষয়ে বিস্তারিত বলেন নি।
আই/এ
এশিয়া
জাপানে ৭.১ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প
জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকায় রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ১ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ৪৩ মিনিটের দিকে পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রধান দ্বীপ কিয়ুশুর মিয়াজাকি অঞ্চলে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে।
জাপানের আবহাওয়া সংস্থার (জেএমএ) বরাত দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম এনএইচকে ওয়ার্ল্ড এ তথ্য জানিয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পের পর দেশটিতে সুনামির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। মিয়াজাকিতে সমুদ্রের ঢেউ ইতোমধ্যে ৫০ সেন্টিমিটারে পৌঁছেছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি কিংবা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে দেশটির মন্ত্রিপরিষদের মুখ্য সচিব ইয়োশিমাসা হায়াশি গণমাধ্যমকে বলেন, ভূমিকম্পের পর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্ল্যান্টগুলোতে কোনো ধরনের অস্বাভাবিক ঘটনা দেখা যায়নি। সরকার ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে।
প্রসঙ্গত, জাপানে ভূমিকম্পের ঘটনা একেবারে সাধারণ। বিশ্বে ৬ বা তার চেয়ে বেশি মাত্রার ভূমিকম্পের প্রায় এক-পঞ্চমাংশই এদেশে ঘটে থাকে।
এর আগে, ২০১১ সালের ১১ মার্চ দেশটির উত্তর-পূর্ব উপকূলে ৯ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। যেটি ছিলো জাপানের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। ওই সময় ভূমিকম্পের পর দেশটিতে বিশাল সুনামি আঘাত হানে।
সূত্র: রয়টার্স
জিএমএম/
আন্তর্জাতিক
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জনগণের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে হবে: যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নয়নের ব্যাপারটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেনো গণতন্ত্র, আইন ও বাংলাদেশি জনগণের আকাঙ্খা পূরণ করে-এমনটাই চাইছে যুক্তরাষ্ট্র।
স্থানীয় সময় বুধবার (৭ আগস্ট) ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে যুক্তরাষ্ট্রে এমনটাই আশা করে বলে জানিয়েছেন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। এদিন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ইরাকের এক সাংবাদিক জানতে চান, ‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে তার বা অন্যদের সঙ্গে আপনাদের যোগাযোগ হয়েছি কী? বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা পরিস্থিতিকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?’
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘আমরা এখনও যোগাযোগ করেনি। আমরা বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখছি এবং আমরা এরইমধ্যে দেখেছি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি তার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আপনি নিশ্চয়ই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলতে শুনেছেন যে. অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে তা যেনো গণতান্ত্রিক নীতিমালাকে, আইনের শাসন এবং সিদ্ধান্তে বাংলাদেশি জনগণের ইচ্ছা প্রতিফলিত হয়।
এসময় যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী একটি প্রশ্ন করেন। তার প্রশ্নটি ছিল, আপনি কি জানেন যে স্বৈরশাসক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করে নতুন সরকারকে হুমকি দিচ্ছেন, সহিংসতা উসকে দিচ্ছেন? তিনি সাবেক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন যিনি বাংলাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছিলেন। দয়াকরে তার ব্যাপারে আপনার মন্তব্য জানাবেন কী?’
জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘একজন সাধারণ নাগরিকের বিবৃতি নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। আমি এরইমধ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কথা বলেছি এবং আমরা দেখতে চাই এই সরকার কী পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যায়।
এসময় মুশফিকুল ফজল আনসারী আরও জানতে চান, ‘দেশের শান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে প্রত্যাশা নিয়ে আপনার কী মন্তব্য?
জবাবে ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেটের মুখপাত্র বলেন, শনের প্রশ্নের উত্তরে আমি যেমনটি বলেছি – অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, আমরা দেখতে চাই ওই সিদ্ধান্তে যেনো গণতান্ত্রিক নীতি মেনে চলা হয় এবং জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ওই ব্রিফিংয়ে ফিলিস্তিনের গাজা, দক্ষিণ আমেরিকার ভেনিজুয়েলা, ইরাক ও ইরানের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।
এমআর//