অর্থনীতি
আরও বেশি মার্কিন বিনিয়োগ পেতে ১১টি শর্ত মানতে হবে, বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আরও বেশি বিনিয়োগ পেতে হলে বাংলাদেশকে ১১টি শর্ত মেনে চলতে হবে। রোববার (২১ এপ্রিল) মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের বাংলাদেশ লেবার অ্যাকশন প্ল্যান এর অধীনে শ্রম সংক্রান্ত ওই ১১টি শর্তের কথা জানিয়েছে।
রোববার(২১ এপ্রিল) ঢাকায় সফররত যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এক বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের কাছে বাইডেন প্রশাসনের ‘বাংলাদেশ লেবার অ্যাকশন প্ল্যান’ হস্তান্তর করেন।
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন তপন কান্তি ঘোষ। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেতৃত্ব দেন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ইউএসটিআর) দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডান লিঞ্চ।
বৈঠকে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি (টিকফা) ছাড়াও শ্রম আইন সংস্কার, তথ্য আইনের সুরক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাইডেন প্রশাসনের দেওয়া প্রথম শর্ত হলো- শ্রমিকদের ইউনিয়ন সংক্রান্ত। এতে বলা হয়, ‘ইউনিয়ন সংগঠক, শ্রমিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও হয়রানির ঘটনা প্রতিরোধ ও আইনগত প্রতিবাদ কার্যক্রম প্রতিরোধ ও আইন অমান্যকারীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে বাংলাদেশকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া, বাংলাদেশকে শ্রমিক কর্মীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ প্রত্যাহার বা সমাধান করতে হবে এবং গৃহীত বিশ্বাসযোগ্য পদক্ষেপের কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করতে হবে।’
দ্বিতীয়ত; বাংলাদেশ শ্রম আইন প্রদত্ত শ্রমিকদের অধিকার পরিপন্থী যে কোনো আচরণের জন্য কারখানার মালিক, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও ব্যক্তিকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা। বাংলাদেশকে নিয়োগকর্তাদের অন্যায্য শ্রমের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের তদন্ত ও সমাধান করতে হবে এবং ইউনিয়ন বিরোধী বৈষম্য, প্রতিশোধ এবং অন্যান্য অন্যায্য শ্রমের জন্য শ্রমিক ও ট্রেড ইউনিয়নগুলোর জন্য ন্যায়বিচারের সুযোগ বাড়াতে হবে।
তৃতীয়ত; বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সঙ্গে পরামর্শ করে বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধন করতে হবে, যেন সংগঠনের স্বাধীনতা এবং যৌথ দর কষাকষি আন্তর্জাতিক শ্রম মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। তদুপরি, আন্তর্জাতিক শ্রম মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে এবং ন্যূনতম সীমার নিচে নেমে গেলে ট্রেড ইউনিয়ন বাতিল করার বিধান বাতিল করতে বাংলাদেশকে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় শ্রমিকের শতকরা হার বর্তমান ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে আনতে হবে।
এই শর্তে আরও বলা হয়, ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করতে হলে একটি ইউনিয়নকে সকল সদস্যের অংশগ্রহণে দুটি সাধারণ সভা করতে হবে এবং নিবন্ধনের জন্য একটি গঠনতন্ত্র পেশ করতে হবে, এই বাধ্যবাধকতা বাংলাদেশের প্রত্যাহার করা উচিত। মার্কিন সরকার ধর্মঘটের অধিকারের ওপর অত্যধিক বিধিনিষেধ ও অবৈধ ধর্মঘটের জন্য কঠোর শাস্তির অপসারণও চেয়েছিল।
চতুর্থত ; ইউএসটিআর সংশোধিত বাংলাদেশ শ্রম আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা সংশোধন করতে বলেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বৈঠকৈ বাংলাদেশ আমদানি করা পণ্য, বিশেষ করে আমদানি করা তুলা থেকে তৈরি পোশাকের শুল্কমুক্ত বাজার প্রবেশাধিকার দাবি করে।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইডিএএফ) কাছে বিনিয়োগ এবং যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধ পণ্য নিবন্ধনের প্রক্রিয়া সহজ করারও দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ।
প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৩ সালে দুর্বল শ্রম অধিকার ও কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তার কারণে বাংলাদেশের জন্য জিএসপি স্থগিত করার সময় তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা প্রশাসন ১৬ দফা ‘বাংলাদেশ অ্যাকশন প্ল্যান’ দিয়েছিল। বাংলাদেশ এরইমধ্যে ১৬ দফা শর্ত মেনে অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিলেও এখনো জিএসপি পুনর্বহাল করা হয়নি।
অর্থনীতি
বাংলাদেশের পাশে থাকবে আইএমএফ
ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন শেখ হাসিনা। তার দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। দেশের এ পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার (০৮ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে শপথ নেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। চলমান পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশকে সহযোগিতা করে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের পাশে থাকতে আইএমএফ ‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার (০৮ আগস্ট) আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ‘প্রাণহানি ও মানুষের আহত হওয়ার ঘটনায়’ আইএমএফ গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছে। তারা বাংলাদেশ ও দেশটির মানুষের প্রতি সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধিতে সংস্থাটি পাশে থাকবে।
এর আগে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলারের একটি ঋণ অনুমোদন দেয় আইএমএফ। ইতোমধ্যেই তিন কিস্তিতে ২৩০ কোটি ৮২ লাখ ডলার ছাড় করেছে আইএমএফ। আর ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাতটি কিস্তিতে ঋণের পুরো অর্থ ছাড় করার কথা রয়েছে সংস্থাটির।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেশের জিডিপির প্রায় এক-চতুর্থাংশের সমতুল্য। সুতরাং, তাদের সমর্থন বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এসি//
অর্থনীতি
আজ ব্যাংক থেকে এক লাখের বেশি টাকা তোলা যাবে না
শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ অনুষ্ঠান আজ (০৮ আগস্ট)। সে জন্য নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের সীমা আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক হিসাব থেকে এক লাখের বেশি নগদ টাকা উত্তোলন করা যাবে না। তবে এ সিদ্ধান্ত শুধু আজকের জন্য প্রযোজ্য হবে।
বুধবার (০৭ আগস্ট) রাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা এমডিদের এক জরুরি বার্তায় এ নির্দেশনা দিয়েছে।
নির্দেশনা অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার (০৮ আগস্ট) এক হিসাব থেকে এক লাখের বেশি নগদ টাকা উত্তোলন করা যাবে না। তবে যেকোনো পরিমাণ নগদ টাকা স্থানান্তর ও ডিজিটাল লেনদেন করা যাবে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক আজকের জন্য প্রধান কার্যালয় থেকে শাখায় টাকা দেয়া বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি গ্রাহকদের চেকের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, সরকার পরিবর্তনের পর নগদ টাকা উত্তোলনের চাপ বেড়েছে। এসব অর্থ যাতে কোনোভাবেই সন্ত্রাসী বা অবৈধ কাজে ব্যবহৃত না হয়, সে জন্য নগদ টাকা উত্তোলন কিছুটা নিরুৎসাহিত করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ধারাবাহিকতায় গত রাতে এ সিদ্ধান্ত জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘দেশে কোনো সরকার নেই এবং আজ নতুন সরকার গঠিত হচ্ছে। এই সময়ে কেউ যাতে নগদ টাকা নিয়ে কোনো অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে না পারে, সে জন্যই এই সিদ্ধান্ত।’
এসি//
অর্থনীতি
এনবিআর চেয়ারম্যানকে বরখাস্তের দাবিতে বিক্ষোভ
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমকে বরখাস্তের দাবিসহ ৯ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।আর বিক্ষোভের মধ্যেই চেয়ারম্যানের পদত্যাগের গুঞ্জন চলছে।
বুধবার (৭ আগস্ট) সকাল থেকেই এনবিআর এর প্রধান কার্যালয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিক্ষোভ করতে দেখা যায়।
এনবিআরের কর্মচারীরা জানান, তারা দীর্ঘ দিন থেকে তাদের নানা দাবি ও অসুবিধা এনবিআর চেয়ারম্যানকে জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু এসব দাবি তিনি পূরণ করেন নাই। বাইরের ক্যাডারের কর্মকর্তারা এনবিআর কর্মচারীদের কষ্ট বুঝতে চান না। তাদের ইচ্ছে মত করে চালাতে চান, সেটা কতটা যৌক্তিক তা ভেবে দেখার এটাই উপযুক্ত সময়।
এসময়ে আন্দোলনরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ৯ দফা দাবি জানান।
তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-
১। প্রশাসন ক্যাডার থেকে কোনো কর্মকর্তা প্রেষণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে পদায়ন করা যাবে না।
২। স্বৈরাচারী শাসকের ঘনিষ্ঠ সহচর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমকে অবিলম্বে পদ থেকে বরখাস্ত করে আয়কর/কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট ক্যাডার থেকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দিতে হবে।
৩। অবিলম্বে স্বৈরাচারী চেয়ারম্যানের দোসর এবং প্রিয়পাত্র প্রথম সচিব (কর প্রশাসন) মো. শাহিদুজ্জামানকে তার পদ থেকে বরখাস্ত করে কর ক্যাডারের কর্মকর্তা পদায়ন করতে হবে।
৪। দুই বছর পর পর বদলি বাণিজ্য বন্ধ করে আয়কর আইন-২০২৩ এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এবং আয়কর আদায়ের স্বার্থে অতীতের মতো রাজস্ব বান্ধব এবং প্রযোজ্যতা সাপেক্ষে বদলি করতে হবে।
৫। অবৈধ নিয়োগ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এবং আউট সোর্সিং পদ্ধতিতে নিয়োগ দেওয়া যাবে না।
৬। সব কর্মচারীদের পদায়ন কর্মচারীদের জন্য প্রণীত জ্যেষ্ঠতা বিধিমালা ও আইন অনুযায়ী করতে হবে।
৭। আয়কর অনুবিভাগের ১০তম-২০তম গ্রেডের সব শূন্য পদে পদোন্নতি দিতে হবে এবং সব পদ পদোন্নতিযোগ্য হতে হবে, কোনো পদ ব্লক রাখা যাবে না।
৮। কর্মচারীদের নিজ নিজ অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে পরামর্শ করে কর্মচারীদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে, অন্যথায় কোনো সিদ্ধান্ত মানা হবে না।
৯। সর্বশেষে আয়কর অনুবিভাগের সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ের সিদ্ধান্ত শুধু আয়কর বিভাগের কর্মকর্তা/কর্মচারীরা নেবে।
আই/এ