ময়মনসিংহ
উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে, প্লাবিত ৮৫টি গ্রাম
টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার কলমাকান্দা, বারহাট্টা, মোহনগঞ্জ ও মদন উপজেলায় কমপক্ষে ৮৫টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে কলমাকান্দা উপজেলার আটটি ইউনিয়নের কমপক্ষে ৬৮টি গ্রামে গেলো রোববার সন্ধ্যার পর থেকে বন্যার পানি ঢুকেছে। গ্রামের রাস্তা, পুকুর, ঘরবাড়ি ও বিদ্যালয় প্লাবিত হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) বেলা ১১টায় কলমাকান্দার উব্দাখালী নদীর পানি বেড়ে ডাকবাংলো পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৬ দশমিক ৫৫ মিটার।
উপজেলার বড়খাপন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান মো. হাদিচ্ছুজ্জামান মুঠোফোনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘বড়খাপন ইউনিয়নটি নিচু এলাকা। ইউনিয়নে ২৮টি গ্রামের মধ্যে জয়নগর, দুর্লভপুর ও বাঘাসাত্রা ছাড়া সব গ্রামেই বন্যার পানি এসেছে। আর এক থেকে আধাফুট পানি বাড়লে অনেকেই ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিতে হবে। বড়ইউন্দ বাজার, বড়খাপন ও যাত্রাবাড়ি বাজারে পানির কারণে মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারছেন না।
কৈলাটি ইউপির চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন জানান, তার ইউনিয়নের বেনুয়া, খলা, চারালকোনা, সনুড়া, সাকুয়া ইন্দ্রপুরসহ ১৫টি গ্রামে নতুন করে বন্যার পানি ঢুকেছে। নিচু এলাকায় রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। পোগলা ইউপির চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক জানান, তাঁর ইউনিয়নের প্রায় ২৩টি গ্রামে নিচু এলাকা প্লাবিত হওয়ায় মানুষ কিছুটা পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বেশ কিছু রাস্তা-ঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। কয়েকটি পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে।
এদিকে, সকালে কলমাকান্দা সদর ইউনিয়নের বাসাউড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
খারনৈ ইউপির চেয়ারম্যান ওবায়দুল হক ভূঁইয়া বলেন, তার ইউনিয়নটি সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় পানি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। তবে সোমবার (১ জুলাই) সকাল থেকে পাহাড়ি ঢলের চাপে রাজনগর, বালুচড়া, বাউসাম, চৌতানগর, তাড়ানগর, ঘোড়াগাঁওসহ কয়েকটি এলাকায় রাস্তা ভেঙে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নেত্রকোনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সারওয়ার জাহান জানান, আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত গেলো ২৪ ঘণ্টায় নেত্রকোনার দুর্গাপুর ও জারিয়া ঝাঞ্জাইল রেলস্টেশন এলাকায় ১০৪ মিলিমিটার হয়। একই সময়ে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৩৮০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া সিলেট ও সুনামগঞ্জে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। এতে জেলার সব নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে কলমাকান্দায় উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে কংস, সোমেশ্বরী, ধনুসহ অন্য বড় নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই বলে জানান তিনি।
আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় নেত্রকোনার দুর্গাপুর ও জারিয়া ঝাঞ্জাইল রেলস্টেশন এলাকায় ১০৪ মিলিমিটার হয়। একই সময়ে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৩৮০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান বলেন, উপজেলায় ৫০টির মতো আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বারহাট্টার ইউএনও ফারজানা আক্তার জানান, তাঁর উপজেলার রায়পুর, চিরাম ও সাহতা ইউনিয়নের প্রায় ৯টি গ্রামের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তবে এটাকে বন্যা বলা যাবে না।
জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ বলেন, বন্যা মোকাবিলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি।
ময়মনসিংহ
বন্ধুদের নিয়ে নববধূকে ধর্ষণ,স্বামীসহ গ্রেপ্তার ২
টাঙ্গাইলে স্বামীর সহযোগিতায় বাসর রাতে বন্ধুদের নিয়ে নববধূকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত স্বামী আব্দুল বাছেদ (২৫) ও বন্ধু জহুরুল ইসলামকে (২৮) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অপর বন্ধুকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গেলো বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) অভিযুক্ত দু আসামিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন কালিহাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ফারুক।
মামলা সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি বিয়ে করে ওই নববধূকে নিজের বাড়িতে তোলেন আব্দুল বাছেদ। বাসর রাতে প্রবেশের পর বাছেদের সহযোগিতায় তার দুই বন্ধু কৌশলে ভুক্তভোগী নববধূকে ধর্ষণ করেন। পরে ভুক্তভোগী ভূঞাপুর উপজেলার নিকলা পাড়া গ্রামে বাবার বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি জানান।
পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় গেলো ২৭ জুলাই ভুক্তভোগীর মা বাদী হয়ে কালিহাতী থানায় গ্রেপাত দুই আসামিসহ বর্তময়ানে পলাতক রবিন মিয়াকে (২৬) আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ অভিযুক্ত স্বামী ও তার বন্ধুকে টাঙ্গাইল আদালতে পাঠিয়েছে।
প্রসঙ্গত, এ ঘটনায় নববধূর শারীরিক পরীক্ষার জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আই/এ
জনদুর্ভোগ
বন্যার পানিতে গোসলে নেমে ৪ জনের মৃত্যু
জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ বালুচর এলাকায় বন্যার পানিতে গোসল করতে নেমে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। খবর পেয়ে লোকজন গিয়ে দেখেন মরদেহ পানিতে ভেসে উঠেছে। এ সময় বেঁচে ফেরেন মারিয়া (১২) নামের এক শিশু।
রোববার (১৪ জুলাই) বিকেল ৫টায় এ ঘটনা ঘটে। মেলান্দহ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজু আহমেদ বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
নিহতরা হলেন- দক্ষিণ বালুচর এলাকার দিশা আক্তার (১৭), সাদিয়া (১০), খাদিজা (১০) ও রোকশানা (২৫)।
স্থানীয়রা জানান, রোববার বিকেলে দক্ষিণ বালুচর এলাকার পাশাপাশি বাড়ির তিন শিশু, এক কিশোরী ও এক গৃহবধূ ফসলি জমিতে বন্যার পানিতে গোসল করতে যান। গোসল করার একপর্যায়ে হঠাৎ করেই চারজন পানিতে তলিয়ে যেতে থাকেন। এ সময় দূরে থাকা এক কিশোরী তাদের তলিয়ে যাওয়া দেখে দৌড়ে বাড়িতে এসে খবর দেন।
স্থানীয়দের বরাতে (ওসি) রাজু বলেন, এলাকার লোকজন বলছেন, অল্প পানিতেই সবাই গোসল করতে গিয়েছিল। এই পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার ঘটনাতে সবাই হতবাক। এর মধ্যে আগামী শুক্রবার দিশার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য আজাদ আলী বলেন, দুপুরে এমন খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। এমন ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
এএম/
ময়মনসিংহ
বন্যায় টাঙ্গাইলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি
টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর পানি কমলেও এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলেও, কিছু এলাকায় পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। যমুনা নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় অনেক নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।এর ফলে প্রায় ছয়টি উপজেলার ১১ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানিবন্দি হওয়ার পাশাপাশি কৃষিজমি তলিয়ে যাওয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই)টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর পানি ৯ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানায় জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানান, বন্যার পানিতে জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রায় ৪০ হাজার ৬৬ হেক্টর জমির ফসল পানিতে ডুবে রয়েছে। তবে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় নতুন এলাকার ফসলি জমি বন্যাকবলিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন জানায়, জেলার ভূঞাপুর, নাগরপুর, কালিহাতী, টাঙ্গাইল সদর, গোপালপুর, বাসাইল উপজেলার ৪৭ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। এতে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ ছাড়া যমুনাসহ তিনটি নদীর পানি কমতে শুরু করলেও নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দি মানুষদের দুর্ভোগ কমেনি। বর্তমানে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও গোখাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, এ বছর বন্যায় যেসকল মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন তাদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম।
জেড/এস