সিলেট
ফের বন্যার কবলে সুনামগঞ্জ, প্লাবিত নতুন নতুন এলাকা
দুই দফায় বন্যার রেশ কাটতে না কাটতেই তৃতীয় দফার বন্যার কবলে পড়েছে সুনামগঞ্জের মানুষ। ইতোমধ্যে বন্যঅর পানিতে ডুবেছে জেলার বিস্তীর্ণ অনেক এলাকা। পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়ক পানিতে ডুবে যাওয়ায় যান চলাচলে বিঘ্ন হচ্ছে।
টানা বৃষ্টিতে সুনামগঞ্জ জেলা সদরে পানি বৃদ্ধি পেলেও বুধবার (৩জুলাই) সকাল থেকে জেলা সদরের অনেক এলাকা থেকে পানি কমতে শুরু করেছে।
গেলো ২৭ মে সুনামগঞ্জে আগাম বন্যা দেখা হয়। দুই সপ্তাহ স্থায়ী ওই বন্যায় পানিবন্দি ছিলেন ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। প্রথম বন্যার পানি পুরোপুরি নামার আগেই ১৫ জুন ফের বন্যা দেখা দেয় এই জেলায়। বিশেষ করে ঈদুল আযহার দিন ভোর থেকে অতিভারী বর্ষণে তলিয়ে যায় সুনামগঞ্জ জেলা সদরসহ জেলার বেশিরভাগ এলাকা। এই বন্যার পানি ক্রমেই বিস্তৃত হয়ে পুরো জেলায় ছড়িয়ে পড়ে।
তবে গেলো সপ্তাহ থেকে নামতে শুরু করে দ্বিতীয় দফার বন্যার পানি। এই দফা বন্যার পানি পুরো নামার আগেই সোমবার (১ জুলাই) থেকে সুনামগঞ্জে ফের বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে পাহাড়ি ঢলে অনেক এলাকা তলিয়ে গেছে। টানা তিন দফা বন্যায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা। তলিয়ে গেছে এসব উপজেলার রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি। অনেকের ঘরবাড়িতেও পানি ঢুকে পড়েছে।
ভারী বৃষ্টি আর উজানের পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় অনেক রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। শহরের সুরমা নদীতীরবর্তী এলাকাগুলোতে বন্যার পানি ঢুকেছে। মূলত উজানে বেশি বৃষ্টি হলে সুনামগঞ্জে পাহাড়ি ঢল নেমে পরিস্থিতির অবনতি হয়।
নদী ও হাওরে পানির প্রবাহ আরও বেড়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাহিরপুর উপজেলা। তাহিরপুর উপজেলায় রাস্তাঘাট ও বাড়িঘরে বেশি পানি উঠেছে।
নামগঞ্জ পৌর শহরের সুরমা নদীতীরবর্তী সড়ক, বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। শহরের লঞ্চঘাট, জলিলপুর, মল্লিকপুর, উত্তর আরপিননগর, তেঘরিয়া, নবীনগর, ওয়েজখালী, মল্লিকপুর ও বড়পাড়া এলাকা এখন জলাবদ্ধ অবস্থায় আছে।
ছাতক উপজেলার সীমান্তবর্তী ইসলামপুর, কালারুকা, নোয়ারাই ও চরমহল্লা ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। দোয়ারাবাজার উপজেলায় বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল নামা অব্যাহত থাকায় পানি বাড়ছে সুনামগঞ্জের যাদুকাটা, পাটনাই, রক্তি, বৌলাই, কুশিয়ারা, নলজুর, চেলা, চলতি, খাসিয়ামারাসহ সব নদীতে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেয়া হয়েছে।
প্রতিটি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করেছে প্রশাসন। জেলার ২০০টি আশ্রয়কেন্দ্রে হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়ক তিন দিন ধরে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। উজানের ঢলে মঙ্গলবার (২ জুলাই) আবারও জেলা সদর, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা প্লাবিত হয়েছে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘বন্যা মোকাবেলায় আমাদের সকল প্রস্তুতি নেয়া আছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রয়েছে।
টিআর/
সিলেট
সুনামগঞ্জে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করছে শিক্ষার্থীরা
সুনামগঞ্জের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক থেকে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের কার্যক্রম শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা সড়কে যান চলাচলে শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে ট্রাফিকের দায়িত্বও পালন করেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) সকাল থেকে সরেজমিন ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। এছাড়া সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের গোবিন্দগঞ্জ এলাকায় দীর্ঘ দিনের জমে থাকা ময়লা আবর্জনা পরিস্কারে নামেন সাদা টি শার্ট পরিহিত একটি টিম। গোবিন্দগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবদুল ওয়াহিদ, হেক্সাস গোবিন্দগঞ্জের শিক্ষক রেদ্বওয়ান আহমদসহ অনেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দেখা গেছে ওই টিমে।
মহাসড়কের ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করতে আসা শিক্ষার্থীরা জানান, কোটা সংস্কারসহ এক দফা দাবিতে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষার্থী যেভাবে সড়কে নেমে এসেছিল, তেমনি শিক্ষর্থীরা মহাসড়ক থেকে ময়লা-আবর্জনা অপসারণে সড়কে নেমে এসেছেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ঝাড়ু দিয়ে মহাসড়ক পরিষ্কার করে ময়লা-আবর্জনা বস্তায় ভরে নির্দিষ্ট ডাম্পিং এরিয়ায় নিয়ে যান। আর তাদের পানি ও শুকনো খাবার দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, সড়ক থেকে ময়লা-আবর্জনা অপসারণের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মহাসড়কে যান চলাচলে শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে ট্রাফিক পুলিশের মতো কাজ করছে। সত্যিই এ দৃশ্য অনেক সুন্দর। আমাদের সবাইকে তাদের সাপোর্ট করা উচিৎ। এছাড়াও তারা গতরাতে মন্দির পাহারা দিয়েছে।
এএম/
সিলেট
হবিগঞ্জে ত্রিমুখী সংঘর্ষ, ১ জনের মৃত্যু, আওয়ামী লীগ অফিসে আগুন
হবিগঞ্জে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। তিনি শ্রমিক বলে জানা গেছে। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক।
শুক্রবার (২ আগস্ট) বিকেল তিনটার দিকে হবিগঞ্জ শহরের তিনকোনা পুকুরপাড় এলাকায় সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে।
মারুফ হোসেন (যিনি মোস্তাকের সঙ্গে কাজ করেন) বলেন, মোস্তাক এখানে জুতা কিনতে এসেছিল। এসে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যায়। গুলিতে তার মৃত্যু হয়েছে। তিনি পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (পিজিবি) ঠিকাদারের অধীনে কাজ করতেন। তার বাড়ি সিলেটের টুকের বাজার এলাকায়।
এক পর্যায়ে হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা।
হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খলিলুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’
হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মঈন উদ্দীন চৌধুরী বলেন, মোস্তাকের হাতে বড় ধরনের আঘাত ছিল। সেটা গুলি কি না, পরে জানানো যাবে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন।
এরআগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষিত ‘প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’–এর অংশ হিসেবে জুমার নামাজের পর হবিগঞ্জে শহরের বোর্ড মসজিদের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এসময় পূর্ব টাউন হল এলাকায় অবস্থান নেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। একপর্যায়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মিছিলে যোগ দিয়ে সংহতি প্রকাশ করেন জেলা ছাত্রদল ও অন্য দলের নেতা-কর্মীরা।
এরপর মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে টাউন হল এলাকায় শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাধে। একপর্যায়ে সেখানে থাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আগুন দেন আন্দোলনকারীরা। এ ছাড়া তারা স্থানীয় সংসদ সদস্য আবু জাহিরের বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন।এ সময় তার বাসার সামনে থাকা ১০টি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়া হয়।
পরে পুলিশ সেখানে পৌঁছালে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সহস্রাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। আহতদের হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোস্তাক মিয়ার মৃত্যু হয়।
পরে বায়তুল আমান জামে মসজিদের সামনে কয়েকটি মোটরসাইকেলেও আগুন দেয়া হয়। এ সময় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
জেএইচ
সিলেট
বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি আহত
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি যুবক আহত হয়েছেন। আহতরা ঘটনায় সময় সীমান্তে মহিষ চরাচ্ছিলেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) দুপুর ১টায় কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের শিকড়িয়া সীমান্তে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুইজন আহত হন বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. জাকির হোসেন।
স্থানীয়রা জানান, সীমান্তবর্তী এক হাজার ৮৪৬ নম্বর সীমানা পিলারের কাছে টহলরত বিএসএফ সদস্যদের গুলিতে আহত হন কামরুল ইসলাম ও চান্দ আলী। তাদের উদ্ধার করে প্রথমে কুলাউড়া সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয়রা। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক জানান, গুলিবিদ্ধ কামরুল ইসলামকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তার বাম হাতে চারটি গুলির ক্ষত রয়েছে।
এ বিষয়ে আলীনগর বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার হরি জীবন বলেন, সরকারি কাজে অন্যত্র থাকায় সীমান্তে কী ঘটেছে সেটি তার জানা নেই।
আই/এ