আন্তর্জাতিক
গাজা ইস্যুতে স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রীর তোপের মুখে ন্যাটো নেতারা
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ইস্যুতে পশ্চিমা দেশগুলোর ‘ভণ্ডামি’ ছাড়ার আহবান জানালেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ। গাজায় ইসরাইলের চলমান হত্যাযজ্ঞের নিন্দা জানিয়ে এই ইস্যুতে নিশ্চুপ থাকায় পশ্চিমা দেশগুলোর কঠোর সমালোচনাও করেন স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী।
স্থানীয় সময় বুধবার(১০ জুলাই) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে ৭৫তম ন্যাটো সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এই সমালোচনা করেন। ইউক্রেন ইস্যুতে সোচ্চার, আর ফিলিস্তিন ইস্যুতে চুপ থাকায় ন্যাটো নেতাদের ‘ভণ্ড’ বলেও কটাক্ষ করেন তিনি।
ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে চলছে তুমুল যুদ্ধ। রাশিয়ার বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে ইউক্রেনকে সমর্থন ও সব ধরণের সহযোগিতা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। ইউক্রেন যুদ্ধকে তারা অনেকটা নিজেদের যুদ্ধ বলে মনে করছে। তাই সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করলেও ট্যাঙ্ক, যুদ্ধবিমান, কামানসহ সব ধরণের সামরিক অস্ত্র ইউক্রেনকে সরবরাহ করছে পশ্চিমা দেশগুলো।
বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামরিক সংগঠন হচ্ছে নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো) । ওয়াশিংটনে এবারে সংস্থাটির ৭৫তম সম্মেলনে প্রধান ইস্যু ছিলো ইউক্রেনকে আরও সহায়তা করার। সম্মেলনে মস্কোর বিরুদ্ধে কিয়েভকে নানান সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে পশ্চিমারা। কিন্তু ফিলিস্তিন ইস্যুতে বরাবরের মতোই চুপ ছিলো তারা। ব্যতিক্রম ছিল ন্যাটোর একমাত্র দেশ স্পেন।
ন্যাটো সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে পেদ্রো সানচেজ বলেন, ‘আমরা যদি জনগণকে বলি, আন্তর্জাতিক আইন রক্ষার জন্য আমরা ইউক্রেনকে সমর্থন করছি, তাহলে ফিলিস্তিনের গাজার ক্ষেত্রেও আমাদের করণীয় একই হতে হবে। আমাদের একটি ‘সামঞ্জস্যপূর্ণ রাজনৈতিক অবস্থানে’ থাকা উচিত, যেখানে কোনো ‘দ্বিচারিতা’ থাকবে না। ফিলিস্তিনিদের ‘এই ভয়ানক মানবিক সংকট বন্ধ করতে’ বিশ্বকে চাপ দেওয়া দরকার। ’
গাজায় নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চালানোয় ইসরাইলি সরকারের কঠোর সমালোচনা করে সেখানে সহিংসতা বন্ধের আহবানও জানান স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘গাজার মানবিক বিপর্যয় আন্তর্জাতিক আইন, আন্তর্জাতিক মানবিক আইন, বহুপাক্ষিক ব্যবস্থা এবং নিয়ম-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের জারি করা অস্থায়ী ব্যবস্থাগুলি ওইসব পক্ষকে অবশ্যই মেনে চলতে হবে।এটি রাফাহ-এর উপর সামরিক অভিযান বন্ধ করার আহ্বান জানায় এবং মানবিক সহায়তার ব্যবস্থা করার জন্য বলে।
স্প্যানিস প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ইসরাইলসহ মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফেরাতে ন্যাটোর ভূমিকা রয়েছে। ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্পেনের স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন পেদ্রো সানচেজ।
তিনি বলেন, ‘আমাদের নেওয়া এই পদক্ষেপটি ইসরাইলের বিরুদ্ধে নয় এবং এটি কোনো প্রতীকী অঙ্গভঙ্গি ছিল না। একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমেই কেবলমাত্র ইসরাইল ও এই অঞ্চলের জন্য সর্বোত্তম নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত হতে পারে। ’
এসময় ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের জন্য একটি আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলনের আহ্বান জানান স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের অবিলম্বে এবং জরুরিভিত্তিতে যুদ্ধবিরতির জন্য শর্ত তৈরি করতে হবে। লেবাননে সংঘাত বৃদ্ধির ‘সত্যিকারের ঝুঁকি’ রয়েছে। ‘
পেদ্রো সানচেজ আরও বলেন, ‘আমাদের অবিলম্বে এবং জরুরিভিত্তিতে যুদ্ধবিরতির জন্য শর্ত তৈরি করতে হবে। লেবাননে সংঘাত বৃদ্ধির ‘সত্যিকারের ঝুঁকি’ রয়েছে। স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি ‘গণতন্ত্র, স্বাধীনতা এবং ইউক্রেনের মতো একটি দেশের অস্তিত্বের অধিকারকেও সমর্থন করেন’।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার ১১ জুলাই পূর্ণ হয়েছে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন ও গণহত্যার ২৭৯ দিন। দখলদার ইসরায়েলের বর্বরতা ও নৃশংসতার শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন অন্তত ৩৮ হাজার ২৯৫ জন ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছেন আরও ৮৮ হাজার ২৪১ জন। ধ্বংসস্তুপের নীচে নিখোঁজ আছেন আরও ১০ হাজারেরও বেশি। আর ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে অপহৃত হয়েছেন আরও সাড়ে ৯ হাজার।
এমআর//
আন্তর্জাতিক
যুক্তরাষ্ট্র অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত : মার্কিন মুখপাত্র
অন্তর্বর্তী সরকার এবং ড. ইউনূসের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের জনগণের জন্য গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে বলে জানিয়েছেন, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শপথ নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মিলার বলেন, বাংলাদেশের জন্য আজ একটি শুভ দিন। নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস সবেমাত্র বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র এ সরকারকে অভিননন্দ জানিয়েছে কি না এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ ডি’অ্যাফেয়ার্স আজ শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং তারা সাম্প্রতিক সহিংসতা বন্ধের জন্য ড. ইউনুসের আহ্বানকে স্বাগত জানাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, এসময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের যোগাযোগ হয়েছে বলেও জানান ম্যাথিউ মিলার। তবে কোন বিষয়ে যোগাযোগ হয়েছে তিনি সে বিষয়ে বিস্তারিত বলেন নি।
আই/এ
এশিয়া
জাপানে ৭.১ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প
জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকায় রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ১ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ৪৩ মিনিটের দিকে পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রধান দ্বীপ কিয়ুশুর মিয়াজাকি অঞ্চলে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে।
জাপানের আবহাওয়া সংস্থার (জেএমএ) বরাত দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম এনএইচকে ওয়ার্ল্ড এ তথ্য জানিয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পের পর দেশটিতে সুনামির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। মিয়াজাকিতে সমুদ্রের ঢেউ ইতোমধ্যে ৫০ সেন্টিমিটারে পৌঁছেছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি কিংবা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে দেশটির মন্ত্রিপরিষদের মুখ্য সচিব ইয়োশিমাসা হায়াশি গণমাধ্যমকে বলেন, ভূমিকম্পের পর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্ল্যান্টগুলোতে কোনো ধরনের অস্বাভাবিক ঘটনা দেখা যায়নি। সরকার ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে।
প্রসঙ্গত, জাপানে ভূমিকম্পের ঘটনা একেবারে সাধারণ। বিশ্বে ৬ বা তার চেয়ে বেশি মাত্রার ভূমিকম্পের প্রায় এক-পঞ্চমাংশই এদেশে ঘটে থাকে।
এর আগে, ২০১১ সালের ১১ মার্চ দেশটির উত্তর-পূর্ব উপকূলে ৯ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। যেটি ছিলো জাপানের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। ওই সময় ভূমিকম্পের পর দেশটিতে বিশাল সুনামি আঘাত হানে।
সূত্র: রয়টার্স
জিএমএম/
আন্তর্জাতিক
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জনগণের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে হবে: যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নয়নের ব্যাপারটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেনো গণতন্ত্র, আইন ও বাংলাদেশি জনগণের আকাঙ্খা পূরণ করে-এমনটাই চাইছে যুক্তরাষ্ট্র।
স্থানীয় সময় বুধবার (৭ আগস্ট) ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে যুক্তরাষ্ট্রে এমনটাই আশা করে বলে জানিয়েছেন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। এদিন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ইরাকের এক সাংবাদিক জানতে চান, ‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে তার বা অন্যদের সঙ্গে আপনাদের যোগাযোগ হয়েছি কী? বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা পরিস্থিতিকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?’
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘আমরা এখনও যোগাযোগ করেনি। আমরা বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখছি এবং আমরা এরইমধ্যে দেখেছি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি তার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আপনি নিশ্চয়ই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলতে শুনেছেন যে. অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে তা যেনো গণতান্ত্রিক নীতিমালাকে, আইনের শাসন এবং সিদ্ধান্তে বাংলাদেশি জনগণের ইচ্ছা প্রতিফলিত হয়।
এসময় যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী একটি প্রশ্ন করেন। তার প্রশ্নটি ছিল, আপনি কি জানেন যে স্বৈরশাসক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করে নতুন সরকারকে হুমকি দিচ্ছেন, সহিংসতা উসকে দিচ্ছেন? তিনি সাবেক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন যিনি বাংলাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছিলেন। দয়াকরে তার ব্যাপারে আপনার মন্তব্য জানাবেন কী?’
জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘একজন সাধারণ নাগরিকের বিবৃতি নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। আমি এরইমধ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কথা বলেছি এবং আমরা দেখতে চাই এই সরকার কী পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যায়।
এসময় মুশফিকুল ফজল আনসারী আরও জানতে চান, ‘দেশের শান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে প্রত্যাশা নিয়ে আপনার কী মন্তব্য?
জবাবে ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেটের মুখপাত্র বলেন, শনের প্রশ্নের উত্তরে আমি যেমনটি বলেছি – অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, আমরা দেখতে চাই ওই সিদ্ধান্তে যেনো গণতান্ত্রিক নীতি মেনে চলা হয় এবং জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ওই ব্রিফিংয়ে ফিলিস্তিনের গাজা, দক্ষিণ আমেরিকার ভেনিজুয়েলা, ইরাক ও ইরানের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।
এমআর//