বাংলাদেশ
ঝলসে মারা হয়েছিল কৃষ্ণাঙ্গ কিশোরটিকে!
আট মিনিট। ৪৮০ সেকেন্ড। ইলেকট্রিক চেয়ারে বসে ছটফট করেছিল ১৪ বছরের কিশোর। প্রতি সেকেন্ডে তার প্রত্যেক কোষে দাপিয়ে উঠেছিল মৃত্যুর বিভীষিকা। আট মিনিট পর অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে কিশোরটি। চিরঘুম নেমে আসে তার দু’চোখে।
নাম তার জর্জ জুনিস স্টিনি জুনিয়র। মাত্র ১৪ বছর বয়সে মৃত্যুদণ্ডের সাজা হয়েছিল তার। অনেকে বলেন, আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের প্রতি বৈষম্য, নিপীড়নের চরম নিদর্শন হয়ে আছে জর্জের কাহিনি।
১৯৪৪ সালে সারা পৃথিবী যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঢেউয়ে উত্তাল, সেই সময় আমেরিকার দক্ষিণ ক্যারোলিনায় জর্জ জুনিস স্টিনি জুনিয়রের মৃত্যুদণ্ড হয়। ১৬ জুন মৃত্যু হয় তার।
জর্জের বিরুদ্ধে তথাকথিত শ্বেতাঙ্গ দু’জন বালিকাকে খুন করার অভিযোগ আনা হয়েছিল। এক জনের বয়স সাত এবং অন্য জনের ১১। ১৯৪৪-এর ২৪ মার্চ তাদের রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। দু’জনের মাথার খুলি ফাটিয়ে দু’ভাগ করে দিয়েছিল খুনি।
নৃশংস এই দুই খুনের তদন্ত যখন চলছে, খেলতে খেলতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় জর্জ আর তার বড় ভাই জনি।
পুলিশের তালিকায় কোনও সন্দেহভাজন ছিলেন না। এ দিকে উপর মহল থেকে দ্রুত খুনের কিনারা করার চাপ ছিল তাদের উপর। তাদের বাবা-মাকে কিছু না জানিয়েই জর্জ আর জনিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তুলে নিয়ে যায় পুলিশ।
যে পুলিশ কর্তা খুনি সন্দেহে দুই ভাইকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন, তার নাম এইচএস নিউম্যান। জর্জের ভাইকে কিছু দিন পর ছেড়ে দেয়া হয়। ধরে রাখা হয় ১৪ বছরের কিশোরকে।
দক্ষিণ ক্যারোলিনা পুলিশ জানায়, খুনের কথা ‘স্বীকার’ করে নিয়েছে জর্জ। তাকে শাস্তি পেতে হবে। যদিও পরে তদন্ত করে উঠে আসে নতুন তথ্য।
২০১২ সালে দক্ষিণ ক্যারোলিনার এক দল আইনজীবী জর্জের মৃত্যুর তদন্তে নামেন। তারা জানতে পারেন, নিউম্যান ধৃত কিশোরকে পুলিশ হেফাজতে দিনের পর দিন না খাইয়ে রেখেছিলেন। এমনকি বাথরুমেও যেতে দেননি। এরপর তাকে বলা হয়েছিল, খুনের কথা স্বীকার করে নিলে সে খাবার পাবে। খাবারের লোভে অভুক্ত নাবালক তাই মিথ্যা দোষ স্বীকার করতে রাজি হয়েছিল।
এর পরের অধ্যায় আরও মর্মান্তিক। জর্জের বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন এক বারের জন্যও মা-বাবার সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হয়নি তাকে। উপরন্তু স্টিনি পরিবারের উপর নেমে এসেছিল অভিশাপ। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তাদের রোজগার। ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছিল তাদের।
নিয়ম অনুযায়ী, যে কোনও অপ্রাপ্তবয়স্ক অভিযুক্তের বিচার প্রক্রিয়া চলার সময় তার সঙ্গে অভিভাবক থাকা আবশ্যিক। জর্জের ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হয়নি। বিচারে সে দোষী সাব্যস্ত হয়।
যারা এই বিচারব্যবস্থার মূল ভূমিকায় ছিলেন, তারা সকলেই তথাকথিত সাদা চামড়ার মানুষ। বিচারে বর্ণবৈষম্যই তাদের চালিত করেছিল বলে অভিযোগ। সে সময় আমেরিকায় কোনও কালো চামড়ার মানুষ বিচারব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হতেই পারতেন না। এমনকি কোর্টরুমেও প্রবেশাধিকার ছিল না তাদের।
মাত্র ১০ মিনিটে জর্জ-মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। ইলেকট্রিক চেয়ারে বসিয়ে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেন বিচারক। আফ্রিকান-আমেরিকান সম্প্রদায়ের লোকজন এই নির্দেশের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। কিন্তু তাদের কথা কানেই তোলেননি কেউ।
কলম্বিয়ার সেন্ট্রাল কারেকশনাল ইন্সটিটিউশনে ১৬ জুন সন্ধ্যা ৭.২৫-এ জর্জের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তার জন্য আনা হয়েছিল বিশেষ চেয়ার।
জর্জের বাবা-মা শেষ বারের মতো ছেলের সামনে এসেছিলেন। কেঁদে ফেলেছিল কিশোর। তার কান্না ঢাকতে মাথায় চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল ভারী ব্যাগ।
আট মিনিট ধরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছিল জর্জ। চেয়ারে বাঁধা অবস্থায় ছটফট করেছিল। কেউ কেউ বলেন, তার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে এক অফিসার সময়ের আগেই ছেলেটির মাথায় গুলি করেছিলেন।
২০১৪ সালে পুনরায় এই মামালাটির তদন্ত করা হয়। বিশেষজ্ঞরা জানান, আমেরিকার বর্ণবৈষম্য এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের চূড়ান্ত নিদর্শন হয়ে রয়েছে জর্জ-হত্যা।
১৯৯৯ সালে জর্জের কাহিনির উপর ভিত্তি করে একটি সিনেমা তৈরি করা হয়। মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন মাইকেল ক্লার্ক ডানকান। নানা মহলে ছবিটি ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছিল।
সূত্র: হিস্ট্রি অফ ইয়েস্টারডে।
অনন্যা চৈতী
জাতীয়
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানালেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা
শপথ নেয়ার পরের দিন ভাষা শহীদদের স্মরণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৩ জন উপদেষ্টা নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এর আগে, সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ও অন্য উপদেষ্টারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি এক নতুন বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।
আই/এ
জাতীয়
উপদেষ্টা পরিষদকে অভিনন্দন জানালেন জাসদ
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস এবং অন্য উপদেষ্টাদেরকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন
বৃহস্পতিবার ( ৮ আগস্ট ) রাতে দলের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ অভিনন্দন জানান তারা।
বিবৃতিতে জানানো হয়, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর দেশে আর একটিও প্রাণহানি, হামলা ও সম্পদ ধ্বংসের ঘটনা যেন না ঘটে তা নিশ্চিত হবে।”
বিবৃতিতে আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিসহ সংবিধানকে সমুন্নত রেখে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির সাথে আলোচনা করে সরকারের কর্ম পরিকল্পনার রূপরেখা দ্রুত প্রকাশ করে বিদ্যমান অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা প্রশমিত করবেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রাথমিক ও প্রধান কাজ হিসেবে অনতিবিলম্বে দেশে আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জনজীবনে স্বাভাবিকতা ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
জাসদ নেতৃবৃন্দ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ, সাংবাদিক পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
জাসদ জোর দাবি জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পূর্ববর্তী সরকারের পদত্যাগের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ পেশাজীবী ও হিন্দু ও আহমদীয়াসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও হত্যা করা, মন্দিরসহ ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে ও নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে হামলা-হত্যা-নির্যাতন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ, সংসদ ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন-বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে হামলা, লুটপাট, জ্বালিয়ে ছারখার, দেশের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, সাত বীরশ্রেষ্ঠর ভাস্কর্যসহ ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ও ম্যুরাল ভেঙে ফেলা এবং কুমিল্লার বীরচন্দ্র পাঠাগার, সুনামগঞ্জের ঐতিহ্য জাদুঘর, কুড়িগ্রামের উত্তরবঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ময়মনসিংহের ঐতিহাসিক শশীলজের ভেনাস ভাস্কর্য ভেঙে ফেলাসহ অগনিত শিল্পকর্ম ভেঙে ফেলার সব অপরাধ কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার।
জেডএস/
জাতীয়
তদবির থেকে বিরত থাকুন, দেশগঠনে পরামর্শ দিন : আসিফ মাহমুদ
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে ১৭ সদস্যের অন্তবর্তীকালীন সরকার। এ উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুইজন প্রতিনিধি। এদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ। তিনি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়ার পর ঘনিষ্ঠজনদের নিজেদের সুবিধার জন্য কোনো আবদার কিংবা তদবির করতে বারণ করেছেন। বরং দেশগঠনে কোনো পরামর্শ থাকলে দেয়ার অনুরোধ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্ট করে এ অনুরোধ করেন।
পোস্টে এই তরুণ উপদেষ্টা লিখেছেন, ব্যক্তিগত লাভের আশায় আবদার, তদবির করা থেকে বিরত থাকুন। এতে করে আমার সাথে আপনার সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। দেশগঠনে পরামর্শ থাকলে জানাবেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৭ জনকে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ঢাকার বাইরে থাকায় তিন উপদেষ্টা ফারুক-ই-আযম, বিধান রঞ্জন রায় এবং সুপ্রদীপ চাকমা শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি।
সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়া অন্যান্য উপদেষ্টারা হলেন- ১. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ২. ড. আসিফ নজরুল ৩. আদিলুর রহমান খান ৪. হাসান আরিফ ৫. তৌহিদ হোসেন ৬. সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান ৭. মো. নাহিদ ইসলাম ৮. আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ৯. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন ১০. সুপ্রদীপ চাকমা ১১. ফরিদা আখতার ১২. বিধান রঞ্জন রায় ১৩. আ.ফ.ম খালিদ হাসান ১৪. নুরজাহান বেগম ১৫. শারমিন মুরশিদ ১৬. ফারুক-ই-আযম।
জেএইচ