ব্যাংকিং ও বীমা
খেলাপি ঋণের সিংহভাগই অনাদায়ী
ব্যাংক খাতে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে খেলাপি ঋণ। একদিকে বাড়ছে খেলাপি ঋণ, অন্যদিকে বাড়ছে খেলাপি ঋণের মধ্য থেকে আদায় না হওয়ার হার। ফলে এসব ঋণের সিংহভাগই রয়ে যাচ্ছে অনাদায়ী। এর ফলে ব্যাংকগুলোতে তৈরি হচ্ছে প্রভিশন ঘাটতি।
কারণ খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় এর বিপরীতে সংস্থান রাখার মতো যথেষ্ট মুনাফা হচ্ছে না।
তথ্য বলছে, ২০২১ সাল শেষে মোট খেলাপি ঋণের ৮৮ শতাংশই আদায় অযোগ্য (ব্যাড অ্যান্ড লস) হয়ে পড়েছে। এতে বিঘ্ন ঘটছে আয় ও নগদ অর্থের প্রবাহে। এসময়ে খেলাপি ঋণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায় জাহাজ নির্মাণ শিল্প খাত ও চামড়া খাতে।
ব্যাংকখাত বিশ্লেষকদের মতে, এ খাতের মন্দ ঋণ বড় সমস্যা। মন্দ ঋণ আদায়ের সম্ভাবনাও কম। এ ধরনের ঋণ বেশি হলে ব্যাংকগুলোর জন্য বাড়তি চাপ তৈরি হয়। ঝুঁকি সৃষ্টি হয় এবং গ্রাহকের আস্থার সংকটও দেখা দেয়। প্রতিষ্ঠানের আয়ের ওপর চাপ পড়ে। একটি প্রতিষ্ঠানকে এ ঋণ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়। তাই ঝুঁকি মেকোবিলায় খেলাপি ঋণের বিষয়ে আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ তাদের।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২১ সালের আর্থিক স্থিতিশীল প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, গেলো বছর শেষে ব্যাংকখাতে মোট খেলাপি ঋণের ৯১ হাজার ৫৭ কোটি টাকাই মন্দ ঋণে (ব্যাড লোন) পরিণত হয়েছে। যা শতাংশ হিসাবে প্রায় ৮৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। আদায় অযোগ্য বা তামাদি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯১ হাজার ৬০ কোটি টাকা বা শতকরা হিসাবে ৮৮ দশমকি ১০ শতাংশ।
তথ্য পর্যালোচনায় আরও দেখা যায়, ২০১২ সাল থেকে ব্যাংকখাতে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে মন্দ মানের ঋণ। ২০১২ সালে মন্দ মানের (ব্যাড লোন) খেলাপি ঋণ ছিল ৬৬ দশমিক ৭০ শতাংশ, ২০১৩ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৭৮ দশমিক ৭০ শতাংশ। এটি ২০১৬ সালে আরও বেড়ে ৮৪ দশমিক ৪০ শতাংশে দাঁড়ায়। আর ২০১৮ সালে দাঁড়ায় ৮৫ দশমিক ৯০ শতাংশ, ২০১৯ সাল শেষে ৮৬ দশমিক ৮০ শতাংশ, ২০২০ সাল শেষে ৮৭ শতাংশ এবং ২০২১ সাল শেষে তা দাঁড়ায় ৮৮ দশমিক ১৭ শতাংশে।
ব্যাংকিং খাতের নিয়ম মতে, মন্দ মানের খেলাপি ঋণ আদায় না হলে অবলোপন করতে হয়। অর্থাৎ খেলাপি ঋণের হিসাবে না রেখে অন্য হিসাবে রাখা হয়। এটাকে আবার গোপন খেলাপিও বলা হয়ে থাকে। ব্যাংকিং সেক্টরে অবলোপনকৃত ঋণের পরিমাণ এখন প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এসব ঋণ গ্রহীতাদের বিরুদ্ধে ব্যাংকগুলো মামলা টেনে আসছে বছরের পর বছর।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীল প্রতিবেদন বলছে, ২০২১ সাল শেষে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন খাতে প্রায় ১২ লাখ ১৮ হাজার ৫৮০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। বিতরণকৃত এসব ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ৯৩৫ হাজার কোটি টাকা। তবে রাইট অফ (ঋণ অবলোপন) ও উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত ঋণের পরিমাণ হিসাবে নিলে এটি প্রায় দুই লাখ কোটি টাকায় দাঁড়াবে।
এর মাঝে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা। এ ঋণ শতকরা হিসাবে প্রায় ১৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। যা তার আগের বছর (২০২০ সালে) ছিল ১৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। ২০১৮ সালেও খেলপি ঋণে শীর্ষে ছিল এ খাত। আর খেলাপি ঋণের হারে দ্বিতীয় অবস্থান চামড়া ও চাড়মড়াভিত্তিক শিল্পের। ২০২১ শেষে এ খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৮৯ কোটি টাকা। শতকরা হিসাবে এর পরিমাণ ১০ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আলোচিত সময়ে কৃষি খাতে খেলাপি ঋণ এক হাজার ৬৯২ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ২৪০ কোটি টাকা বা ১০ দশমিক ২১ শতাংশে।
তবে ২০২১ সালে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ ট্রেড অ্যান্ড কমার্স বা ব্যবসা-বাণিজ্য খাতে। আলোচিত সময়ে এ খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে তিন হাজার ৪৮ কোটি টাকা। গত ২০২০ সালে ব্যবসা-বাণিজ্য খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এটি ২০২১ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকায়। যা শতকরা হিসাবে প্রায় ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
পরিমাণের দিক থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ বস্ত্র খাতে। আলোচিত সময় শেষে এ খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। যা তারও এক বছর আগে ছিল ৩ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। সে হিসাবে বস্ত্রখাতে এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় দুই (১ হাজার ৮০৯ কোটি) হাজার কোটি টাকা।
২০২১ সালে পোশাক খাতে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৩০ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা। বিতরণকৃত এসব ঋণের মধ্যে খেলাপি হয়েছে ১১ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা বা ৮ দশমিক ২২ শতাংশ। এক বছর আগে এ খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা। তথ্য বলছে, এক বছরে এ খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪৯৪ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন মতে, ২০২২ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিক (জুন প্রান্তক) শেষে ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকায়। এটি মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে (২০২১’র দ্বিতীয় প্রান্তিক) খেলাপির অংক ছিল ৯৯ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। হিসাব মতে, এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকখাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। আর চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (মার্চ শেষে) ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। জুন শেষে এ খেলাপি ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। হিসাব মতে, তিন মাসের ব্যবধানে ১১ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা খেলাপি হয়েছে যা শতাংশ হিসেবে ১০ দশমিক ৪১ শতাংশ।
এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অনেক ভুল সিদ্ধান্ত এসেছে। সেসব নীতিমালা ঋণ খেলাপিদের উৎসাহিত করছে। এতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন ব্যাংকের ভালো গ্রাহকরা। আবার ব্যাংগুলোও খেলাপি ঋণ আদায়ে বিমুখ হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে তাদের জবাবদিহি করতে হচ্ছে না। দিনদিন খেলাপি ঋণ লাগামহীনভাবে বাড়ছে। এতে দেশে শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে।
সাবেক গভর্নর ও বিশ্লেষক ড. সালেহউদ্দিনের মতে, হঠাৎ হঠাৎ কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিগুলো হতে হবে দীর্ঘস্থায়ী। যাতে খেলাপি ঋণ, পুনঃতফসিল, প্রভিশন ঘাটতি কমে আসে। আর এসব সমস্যা সমাধানে ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা উচিৎ। আগেও কমিশনের মাধ্যমে খেলাপি সমস্যার সমাধান হয়েছে।
ব্যাংকিং ও বীমা
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার
বাংলাদেশে ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। গেলো এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলো গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান।
তিনি বলেন, গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নরদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাংবাদিকরা আগের মতো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রবেশ করতে পারবেন। তবে এমন কোনো প্রতিবেদন করবেন না, যার ফলে এ খাতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে সংকট দেখা দেয়। তারা অনিয়মের সঙ্গে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। যারা অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে এ বিষয় তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। দেশে সংস্কার শুরু হয়েছে। পরবর্তী সরকার যেভাবে নির্দেশনা দেবে ওইভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, এর আগে সাংবাদিকদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভেতরে প্রবেশের অস্থায়ী পাস ইস্যু বন্ধ রাখা হয়। সেসময় অর্থনীতিবিষয়ক রিপোর্টিংয়ের সঙ্গে যুক্ত সাংবাদিকরা এবং গণমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন বিষয়টির নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছিলো।
আই/এ
ব্যাংকিং ও বীমা
৩ দিন ব্যাংক বন্ধ থাকবে
আগামী তিন দিন (সোম-মঙ্গল-বুধবার) ব্যাংক বন্ধ থাকবে। রোববার (৪ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, সরকারের নির্বাহী আদেশে সারাদেশে তিন দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এসময় সব ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
এরআগে সরকার নির্বাহী আদেশে সারাদেশে তিন দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে।এসময় দেশের সকল সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
সন্ধ্যা ছয়টা থেকে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ছাত্র-জনতার সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনে দেশব্যাপী ব্যাপক সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনার পর রোববার বিকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানানো হলো।
জেএইচ
অর্থনীতি
বুধবার থেকে স্বাভাবিক নিয়মে চলবে ব্যাংকিং কার্যক্রম
আগামীকাল বুধবার (৩১ জুলাই) থেকে সকল সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকিং কার্যক্রম চলবে আগের মতো স্বাভাবিক নিয়মে। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ব্যাংকে লেনদেন হবে, আর ব্যাংকগুলোর দাপ্তরিক কার্যক্রম চলবে ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে ব্যাংকের মত দেশের শেয়ারবাজারেও বুধবার থেকে স্বাভাবিক লেনদেন হবে। অর্থাৎ সকাল ১০টায় লেনদেন শুরু হয়ে চলবে দুপুর ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত। মূল লেনদেন হবে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা ২০ মিনিট পর্যন্ত। পরের ১০ মিনিট থাকবে পোস্ট ক্লোজিং।
উল্লেখ্য, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দেয়া কমপ্লিট শাটডাউন ঘিরে সহিংসতা শুরু হয়। এর ফলে গত শনিবার (২০জুলাই) রাতে দেশে কারফিউ জারি করে। রোববার, সোমবার ও মঙ্গলবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। কারফিউ ও সাধারণ ছুটির জন্য ব্যাংক তিনদিন বন্ধ ছিল। এরপর পাঁচ কার্যদিবসে কারফিউ শিথিলের সময় সীমিত পরিসরে ব্যাংকিং কার্যক্রম চলে। ফলে ১২ দিন ও ৮ কার্যদিবস পর স্বাভাবিক ব্যাংকিং চালু হচ্ছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সবশেষ স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রম হয়।
জেডএস/
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন