ফিচার
লাস ভেগাসের গা ছমছমে সংগ্রহশালা!
আমেরিকার লাস ভেগাস মানেই নেশা ধরানো নৈশজীবন, জুয়া খেলার ‘স্বর্গ’, ক্যাসিনো-রেস্তরাঁ-হোটেল থেকে ঝাঁ-চকচকে শপিং মল। লাস ভেগাসের যততত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিনোদনের নানা উপকরণ। তবে আমেরিকার এ শহরে রয়েছে একটি গা ছমছমে সংগ্রহশালাও। তার টানেও নাকি অনেকে পা রাখেন লাস ভেগাসে। কী কী রয়েছে এই মিউজিয়ামে? কেনই বা এতে ঢুকলে ভয়ে কেঁপে ওঠেন অনেকে?
নেভাদার এই মরুশহরে হুল্লোড়ে সময় কাটানোর পাশাপাশি বহু পর্যটকই নাকি অন্তত এক বার ঘুরতে যান জাক বেগানস-এর মিউজিয়ামে।
হাজার হাজার বর্গফুট জুড়ে ছড়িয়ে থাকা এ মিউজিয়ামে রয়েছে এমন এক ‘ভূতুড়ে’ পুতুল, যার দিকে তাকালেই নাকি প্রচণ্ড মাথাযন্ত্রণা শুরু হয়। অনেকের আবার বুকে ব্যথা করে। রয়েছে সেই চেয়ারটি, যাতে নাকি শেষ সময়ে বসেছিলেন প্রয়াত পপ-তারকা মাইকেল জ্যাকসন।
পুরো মিউজিয়াম জুড়ে এ ধরনের নানা সামগ্রীর ‘কুখ্যাতির’ কথা ফুটে উঠেছে টেলিভিশনে পর্দায়। সেই সঙ্গে খ্যাতি এনে দিয়েছে জাককেও।
জাকের ‘ভূতুড়ে’ মিউজিয়ামটি যে জমিতে রয়েছে, এককালে তার মালিক ছিলেন সিরিল এস নামে এক নামজাদা ব্যবসায়ী।
সেটা ছিল ১৯৩৮ সালের কথা। ১১,০০০ বর্গফুটের বিশাল জায়গায় উপরে এই মিউজিয়ামটি গড়ে উঠেছে। তিরিশের দশকের শেষে এই বিল্ডিংটি গড়ে তোলেন সিরিল।
তবে বহু বছর পর তা হাতবদল হয়ে জাকের দখলে আসে।
আধিভৌতিক বিষয়ে জাকের নিজেরও উৎসাহ কম নয়। ভূতুড়ে কারবার নিয়ে নিজের তৈরি খানা দশেক তথ্যচিত্র এবং টেলিসিরিজও তৈরি করে ফেলেছেন তিনি। তার সবক’টিতেই অভিনয় করেছেন এই অভিনেতা।
‘তেনাদের’ নানা কাণ্ড নিয়ে আমেরিকার টেলিভিশনে একটি জনপ্রিয় সিরিজও তৈরি করেছিলেন জাক। ২০০৮ সালে ‘ঘোস্ট অ্যাডভেঞ্চার্স’ নামে একটি সিরিজ খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। পরে ওই একই নামে একটি সিনেমাও তৈরি হয়েছিল। যার সহপ্রযোজক ছিলেন খোদ জাক।
তার টুপিতে অবশ্য আরও একটি পালক রয়েছে। নিজেকে ‘প্যারানর্মাল ইনভেস্টিগেটর’ হিসাবে পরিচয় দিতেও ভালবাসেন জাক। ভূত ধরে বেড়ানোই যার নেশা। ইতিমধ্যে এর উপরে বেস্টসেলার বইও লিখে ফেলেছেন।
জাকের মতো তার মিউজিয়ামটিও কম আকর্ষণীয় নয়। হাজার হাজার বর্গফুট ধরে ছড়িয়ে থাকা মিউজিয়ামে মোট ৩৩টি ঘর রয়েছে। তাতে টিকিট কেটে ঢোকার পর গাইডের সাহায্যে ঘুরে বেড়াতে পারেন উৎসাহীরা। সেই মিউজিয়ামের এক একটি ঘরে নাকি রয়েছে ভূতুড়ে জিনিসপত্র।
জাকের মিউজিয়ামে পা রাখলেই দেখতে পাবেন মাইকেল জ্যাকসনের একটি চেয়ার। অনেকে যেটিকে মাইকেলের ‘প্রোপোফল চেয়ার’ বলে ডাকেন। ২০০৯ সালের ২৫ জুনের রাতে যে চেয়ারে বসে নাকি ‘প্রোপোফল’ সেবন করেছিলেন মাইকেল। ঘিয়ে রঙের ওই চেয়ারটি থাকত মাইকেলের শোয়ার ঘরে, ঠিক তার বিছানার কাছেই। লস অ্যাঞ্চেলেসের হোমবি হিলসের প্রাসাদে পপ-তারকার শেষ সময়ে তাকে পরীক্ষা করেছিলেন চিকিৎসক কনরাড মারে। মাইকেলের মৃত্যুতে কনরাডের ভূমিকাও এককালে আতশকাচের তলায় ছিল।
কনরাডের দাবি, গদিমোড়া ওই চেয়ারে বসেই বেশি মাত্রায় ‘প্রোপোফল’ নিয়েছিলেন মাইকেল। সে জন্যই কি মাইকেলের মৃত্যু হয়েছিল? এ নিয়ে রহস্য মেটেনি। তবে ওই ওষুধটি অ্যানাস্থেটিকের কাজ করে।
এমনকি, ঘুমের ব্যঘাত ঘটলেও চিকিৎসকের পরামর্শে এর সেবন করেন অনেকে। ওই চেয়ারটিও নিজের দখলে নিয়ে নিয়েছেন জাক।
জাকের মিউজিয়ামে পর্যটকদের সবচেয়ে টানে বোধ হয় ‘পেগি ডল’। অনেকের দাবি, দুনিয়ার সবচেয়ে ভূতুড়ে পুতুল এটি। একটি অর্ধচন্দ্রাকৃতি খোপে বসানো হয়েছে পুতুলটিকে। সাদাটে ফ্রকের নিরীহ চেহারার একটি বাচ্চার মুখের আদলের এই পুতুলটিকে দেখলেই নাকি বুকে ব্যথা, মাথা ধড়ফড় করা শুরু হয়।
‘পেগি ডলের’ মধ্যে নাকি দুষ্ট আত্মা বাসা বেঁধে রয়েছে। জাকের টেলি-সিরিজেযত বার পেগির মুখ ভেসে উঠেছে, তত বারই নাকি দর্শকেরা অস্বস্তিতে পড়েছেন। তাদের গা শিরশির করে উঠেছে। একবার নাকি টিভিতে পেগিকে দেখার পর হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল এক মহিলার। তা নিয়েও শিরোনামে উঠে এসেছিল এই পুতুলটি।
পেগির ‘ভূতুড়ে’ কীর্তি নিয়ে নেটমাধ্যমেও হইচই হয়েছিল। এক জন লিখেছিলেন, ‘‘টিভিতে পেগিকে দেখার পর ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। সে রাতে দুঃস্বপ্নও দেখি। সাধারণত, এ ধরনের স্বপ্ন দেখি না। তবে খুব মনে রয়েছে, কী ভয়ানক দুঃস্বপ্ন দেখেছিলাম।’’ অন্য জনের মন্তব্য, ‘‘পেগিকে দেখার পর কারও কি প্রচণ্ড মাথা ধরে ছিল? এক বার মোটে তাকিয়েছিলাম। অদ্ভুত…। ওর কালো চোখ দুটো ভয় পাইয়ে দিয়েছিল!’’
জাকের মিউজিয়ামে একটি শয়তানের চেয়ার ঘিরেও কম কথা ছড়ায়নি। তাতে বসেই নাকি শয়তান দোল খায়। ডেভিড গ্লাটজেলের দাদা কার্ল গ্লাটজেল জুনিয়রের কাছ থেকে চেয়ারটি কিনেছিলেন জাক। সেই চেয়ারটির উপর নাকি শয়তানের আত্মা ভর করে।
লোকজন বলাবলি করে, ১১ বছরের ডেভিডকে নিজেদের দখলে নিয়ে নিয়েছিল চল্লিশটি দুষ্ট আত্মা। তারপর থেকেই অদ্ভুত আচরণ করতে সে। ডেভিডের ঘরেই নাকি ওই চেয়ারটি রাখা ছিল। ২০১৯ সালে এক সংবাদমাধ্যমের দাবি ছিল, চেয়ারটি আপনাআপনিই দুলত, মাটি থেকে কিছুটা উপরে উড়ে বেড়াত। এমনকি, কখনও আবার একেবারে হাওয়ায় মিলিয়ে যেত।
সে বছর ‘শয়তানের’ চেয়ারে বসার পর নাকি এক বার অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়েছিল খোদ জাকের। তার দাবি ছিল, ‘‘শয়তানের চেয়ারে বসার পর আমার পিঠ জুড়ে এতটাই ব্যথা করতে শুরু করে যে রাতে ঘুমাতে পারিনি।
অনেক দিন পর্যন্ত সে ব্যথা ছিল। অথচ এমন কোনও ভারী জিনিসও তুলিনি সেদিন।’’
‘ভূতুড়ে’ মিউজিয়ামে একটি পুরনো ভ্যান ঘিরে লোকজনের আগ্রহও কম নয়। জ্যাক কেভরকিয়ান নামে আমেরিকার এক প্যাথোলজিস্টের টেলিভিশন শোয়ে ওই ভ্যানটিকে দেখা যেত। চিকিৎসকের সহায়তায় আত্মহত্যার পক্ষে সওয়াল করা জ্যাকের কাছ থেকে ভ্যানটি ৩২,৫০০ ডলারে কিনেছিলেন জাক। ওই ভ্যানে করেই নাকি আত্মঘাতী হওয়া ১৩০ ব্যক্তির দেহ বয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
জাকের কাছে রয়েছে বহু সিরিয়াল কিলারের সংগ্রহে থাকা জিনিসপত্রও। সে সবই তার মিউজিয়ামে দেখা যায়। ষাটের দশকের কুখ্যাত অপরাধী চার্লস ম্যানসনের রক্তমাখা ছাই থেকে সিরিয়াল কিলার টেড বান্ডির চশমা- সবেতেই হামলে পড়েন উৎসাহীরা।
সূত্র: ফ্লিপবোর্ড
ফিচার
ফিলস লাইক তাপমাত্রা মাপা হয় যেভাবে!
বছরের মাঝামাঝি সময় এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত চলে গরমের তীব্রতা। তাপমাত্রা এমন বৃদ্ধি পাওয়ায় জনজীবন আজ বিদ্ভস্ত। চলতি বছরে দেশের কয়েক জেলায় তাপমাত্রার রেকর্ড মাপা হয়েছে সর্বোচ্চ ৪২ ডিগ্রি। আর এ কারণেই জারি করা হয়েছে হিট অ্যালার্ট ।
ডিজিটাল বাংলাদেশের যুগে মানুষ এখন আবহাওয়া পূর্বাভাসের জন্য বসে না থেকে ঘন ঘন মোবাইল ঘেটে দেখে নেয় তাপমাত্রার আপডেট। ধরুন, গুগলে সার্চ দেয়ার সময় তাপমাত্রা দেখা গেলো ৩৮ ডিগ্রিতে তবে এর অনুভুতি হচ্ছে যেন ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রা।
এই যে ফিলস লাইক বা অনুভূত তাপমাত্রার কথা বলা হচ্ছে, সেটি আসলে কি? গরমের এই সময়ে কোন এক এলাকার যে নির্দিষ্ট যে তাপমাত্রার হিসাব দেয়া থাকে তার চেয়ে ফিলস লাইক তাপমাত্রা বেশিই থাকে। এই যেমন গুগল বলছে, এখন ঢাকার তাপমাত্রা ৩৮, কিন্তু ফিলস লাইক ৪২, অর্থাৎ চার ডিগ্রি বেশি!
কীভাবে এই ফিল্স লাইক মাপেন আবহাওয়াবিদরা? ব্রিটেনের আবহাওয়া অফিস বলছে, ফিল্স লাইক মাপা হয় কোনও এলাকার সম্ভাব্য তাপমাত্রার পূর্বাভাস, ওই এলাকার আর্দ্রতা ও হাওয়ার গতিবেগ মেপে।
তাপমাত্রা বলতে বোঝায় কোনও নির্দিষ্ট এলাকার বাতাসের তাপমাত্রা। কিন্তু রাস্তাঘাটে বেরুলে শুধু হাওয়া নয়, আরও কিছু বিষয় তাপমাত্রায় প্রভাব ফেলে। বাতাসের আর্দ্রতা ও গতিবেগের কারণে মূল তাপমাত্রার চেয়েও বেশি গরম বা ঠাণ্ডা অনুভূত হয়ে থাকে। পরিবেশেরও একটা বিরাট প্রভাব আছে এতে।
কীভাবে অনুভূত তাপমাত্রাকে প্রভাবিত করে বাতাসের আর্দ্রতা এবং হাওয়ার গতি?
আবহাওয়াবিদদের মতে, বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলে ঘাম বেশি হয়। কিন্তু সেই ঘাম বাষ্পের সঙ্গে মিশে যেতে সময় বেশি লাগে। শরীর ঠান্ডা হতে পারে না, তখন গরম কিছুটা বেশি লাগে। অস্বস্তির পরিমাণও বেড়ে যায়।
বাংলাদেশ-ভারতে যখন তাপদাহে পুড়ছে, তখন মরুর দেশ আরব আমিরাত আর সৌদি আরবের রুক্ষ দেশে অঝোর ধারায় ঝরছে বৃষ্টি। এতোটাই বৃষ্টি যে দেশগুলো রাস্তাঘাট ডুবে গিয়ে রীতিমতো বন্যা পরিস্থিতি। আবার ইউরোপেও এবার অস্বাভাবিকভাবে প্রত্যক্ষ করছে বন্যা, যা এক সময় তাদের চিন্তারও বাইরে ছিলো।
ফিচার
জীবনযোদ্ধার আরেক নাম ‘বাবা’!
শব্দটি ছোট, অথচ এর অর্থ অনেক বিস্তৃত। পৃথিবীর আলো দেখার পর থেকে যে মানুষটা সন্তানের একটু সুখের জন্য, পরিবারের চাওয়া-পাওয়া পূরণের জন্য নিজের সব সুখ ও স্বপ্ন বিসর্জন দেন, তিনি আর কেউ নন, ‘ বাবা’।
আজ বিশ্ব বাবা দিবস। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন আর নতযানু হওয়ার দিন। শব্দটি ছোট, অথচ এর অর্থ অনেক বিস্তৃত। ভাষা আর স্থানভেদে ছোট্ট একটি শব্দের উচ্চারণ বদলে গেলেও অর্থ, বদলায় না রক্তের টান।
বাবা শব্দের মাঝেই জড়িয়ে আছে ভালোবাসা, মায়া, নির্ভরতা। বাবা হলেন সেইজন যার শক্ত কাঁধ সন্তানকে সামনে চলতে শেখায়। যার অক্লান্ত পরিশ্রম সন্তানকে সুন্দর একটা জীবন দেয়। যার অসীম ত্যাগ একটা সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যত এনে দেয়।
‘বাবা’ ডাকলেই কেমন এক শান্তি আর আস্থার নিঃশ্বাস যেন অনুভূত হয়। বাবা শাশ্বত, চির আপন, চিরন্তন। বাবা এক মায়ার নাম, এক ছায়ার নাম, চোখের সামনে ভেসে ওঠা এক জীবনযোদ্ধার নাম।
বাবা মানেই সব আবদারের জায়গা। সন্তানের জন্য এক পৃথিবী সমান দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন বাবা নামের বটবৃক্ষ। জীবনের সব রং-চাওয়া পাওয়া হাসি মুখে বিসর্জন দিতে পারেন বাবারাই। বাবার আর্দশ সন্তানকে ভালো-মন্দের পার্থক্য বুঝতে শেখায়।
প্রতি বছরের জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্ব জুড়ে পালিত হয় বাবা দিবস। সে হিসেবে আজ রবিবার বিশ্ব বাবা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইংল্যান্ড, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, ভারতসহ প্রায় ১১১টি দেশে এ দিনেই বাবা দিবস উদযাপন করা হয়। তবে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশ সেপ্টেম্বরের প্রথশ রোববার বাবা দিবস পালন করে থাকে।
বাবা দিবসের শুরু হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে। তবে ঠিক কবে থেকে এ দিবসটির প্রচলন হলো তা নিয়ে দ্বিধা আছে। কেউ কেউ বলেন, ১৯০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় চার্চের মাধ্যমে দিনটির প্রচলন। অন্যরা বলেন, ওয়াশিংটনের ভ্যাংকুবারে প্রথম বাবা দিবস পালন করা হয়। তবে সাধারণ মত, বাবা দিবসের প্রবক্তা সোনার স্মার্ট ডোড। ১৮৮২ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি তিনি জন্ম নেন। তার পিতা উইলিয়াম জেকসন স্মার্ট (১৮৪২-১৯১৯) ছিলেন কৃষক। মার্কিন গৃহযুদ্ধের সময় তিনি বীরত্বের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ডোডের মা অ্যালেন ভিক্টোরিয়া চেক স্মার্টসহ পুরো পরিবার চলে যান ওয়াশিংটনের স্পোকেনে। সেখানেই জন্ম হয় সোনার স্মার্ট ডোডের। যখন তার বয়স ১৬, তখন তার মা ষষ্ঠ সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। পরিবারে সোনারই ছিলেন একমাত্র কন্যা। পূর্ব ওয়াশিংটনের এক গ্রামের ফার্মে এরপর থেকে তিনি নবজাতকসহ পাঁচটি সন্তান মানুষ করার দায়িত্ব তুলে নেন। সোনারা বড় হওয়ার পর অনুভব করলেন ছয়টি সন্তান একা একা মানুষ করতে কী ভীষণ পরিশ্রমই না তার বাবাকে করতে হয়েছে। উইলিয়াম তার মেয়ের চোখে ছিলেন সাহসী, নিঃস্বার্থ একজন ভালো বাবা, যিনি সন্তানদের জন্য নিজের সব সুখ-শখ, আহ্লাদ বিসর্জন দিয়েছিলেন। সোনার স্মার্ট বিয়ে করেন জন ব্রোস ডোডকে। তাদের সন্তান জ্যাক ডোড জন্মের কিছুকাল পরে সোনারের স্বামীও মারা যান। এ অবস্থায় বাবা আর মেয়েতে মিলেই পুরো জীবন পার করে দেন।
বাবার প্রতি সম্মান জানাতে ‘বাবা দিবস’ ঘোষণার বিষয়টি সোনারের চিন্তায় আসে ১৯০৯ সালে। ‘মা দিবস’-এর অনুষ্ঠানে সে বছর চার্চে যান সোনার ডোড। অনুষ্ঠানে এসেই তার মনে হয় মা দিবসের মতো বাবাদের জন্যও একটি দিবস করা প্রয়োজন। যেখানে মায়েদের মতো বাবাদেরও সম্মান জানানো হবে। প্রকাশ করা হবে ভালোবাসা। যুক্তরাষ্ট্রের স্পোকেন মন্ত্রীজোটের কাছে তিনি তার পিতার জন্মদিন ৫ জুনকে বিশ্ব বাবা দিবস হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাব পাঠান। তার প্রস্তাবের প্রশংসা করলেও মন্ত্রীজোট ৫ জুনকে বাবা দিবস ঘোষণা করতে রাজি হয়নি। তারা জুন মাসের তৃতীয় রবিবারকে বাবা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। একটি স্থানীয় পত্রিকা সেদিন ছুটি ঘোষণা করে এবং বিভিন্ন দোকানিরা বাবাদের জন্য নানা রকমের উপহার সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে রাখেন।
১৯ জুন ১৯১০। প্রথম বাবা দিবস উদযাপিত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্পোকেনস শহরে। শহরের তরুণ-তরুণীরা দুটি করে গোলাপ নিয়ে যান চার্চে। একটি লাল, অন্যটি সাদা। লাল গোলাপ জীবিত পিতাদের শুভেচ্ছার জন্য, আর সাদা গোলাপ মৃত পিতাদের আত্মার তুষ্টির জন্য। বিষয়টি পুরো মার্কিন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সবাই মিলে এই ভাবনার প্রশংসা করেন এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রে তা শুরু হয়। কিন্তু তারপরও এটাকে জাতীয়ভাবে পালনে কংগ্রেসের নানা দ্বিধা ছিল। কেননা তারা ভাবছিলেন এতে বাবা দিবস একটি বাণিজ্যে পরিণত হতে পারে। ১৯১৬ সালে প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন বিষয়টি অনুমোদন করেন। ১৯২৪ সালে প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কোলিজ এটিকে জাতীয় দিবসে রূপ দেন। ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন রাষ্ট্রীয়ভাবে জুনের তৃতীয় রবিবার বাবা দিবস উদযাপনের ঘোষণা দেন। অবশেষে ১৯৬৬ সালে ৫৬ বছর পর বাবা দিবসকে জাতীয় মর্যাদা দেয়া হয়। সোনারা ডোড মারা যান ১৯৭৮ সালে। তখন তার বয়স ছিল ৯৬ বছর।
ফিচার
বর্ষার ছন্দে এসেছে আষাঢ়ে মেঘের ভেলা!
বাংলা পঞ্জিকা না খুললেও প্রকৃতি যেন একটু একটু করে বলছে আষাঢ় এসে গেছে। সকালে আকাশ মেঘলা জানিয়ে দিয়ে আজ শনিবার (১৫ জুন) বাংলা তৃতীয় মাসের আর্বিভাব ঘটে গেছে। বৃষ্টি না থাকলে মেঘলা মেঘলা একটা অনুভূতি কিন্তু আছে।
আর তাই হয়তো কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখে গেছেন, ‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে, আসে বৃষ্টির সুবাস বাতাস বেয়ে। এই পুরাতন হৃদয় আমার আজি পুলকে দুলিয়া উঠিছে আবার বাজি নূতন মেঘের ঘনিমার পানে চেয়ে আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে। ‘
ঋতুচক্রে আষাঢ়-শ্রাবণ বর্ষাকাল। আষাঢ় মানে বিশাল আকাশে কালো মেঘের পালকিতে ভেসে বেড়ানো মুহুর্মুহু ডঙ্কা-নিনাদ, ঝমঝম বৃষ্টি। বর্ষার শীতল জলে নবজীবন লাভ করে পল্লবপুঞ্জ। প্রকৃতিকে প্রাণবন্ত, সতেজ ও শত সহস্র মনের প্রেমে ভিজিয়ে রাখার সাধ্য যে একমাত্র আষাঢ়েরই আছে, তা অস্বীকার করার সাধ্যি কার। কদম, কেয়া আর কেতকীর নয়নাভিরাম রূপের পসরা ও পেখম খোলা ময়ূরের উচ্ছল নৃত্যের আবাহন নিয়ে আসে বৃষ্টি।
আষাঢ় শব্দটি এসেছে পূর্বাষাঢ়া ও উত্তরাষাঢ়া নক্ষত্রে সূর্যের অবস্থান থেকে। আষাঢ় বাংলা সনের তৃতীয় মাস। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে জুন-জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে আষাঢ় আসে।
বছরভর বাংলার প্রকৃতি হাজির হয় ভিন্ন ভিন্ন অপরূপ সাজে। তার মধ্যে বর্ষার সজল, শ্যামল রূপ অনন্যতায় ভরপুর। ধানের ক্ষেতে রৌদ্র-হাওয়ার লুকোচুরির মতো অপার্থিব দৃশ্য আর কখন মেলে! আষাঢ় আর শ্রাবণ দুই মাসজুড়ে ব্যাপ্তি বর্ষার। মাস দুয়েক নানা মাত্রায় বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর। টিপটিপ, ঝিরিঝিরি, ইলশেগুঁড়ি, মুষলধার—বর্ষার বারিধারার কতই না নাম! কবিরা তার মধ্যে শোনেন নূপুর, মৃদঙ্গ আর মাদলের বোল। আকাশের চেহারারও সে কী বৈচিত্র্য! সারাদিন ঘোলাটে থেকে শুরু করে ছাইরঙা হয়ে মোষের মতো কালো। বর্ষার প্রকৃতিতে ডাকাতের মতোই দৌরাত্ম্য চলে মেঘেদের। কখনো কখনো বর্ষণ শেষে সেই মেঘের ফাঁকে হঠাৎ উঁকি দেয় আকাশজোড়া স্বর্গীয় রঙধনু।
একালে অবশ্য আমাদের কেবল বর্ষা নিয়ে কাব্যকথায় বুঁদ হয়ে থাকলে চলে না। বিশেষ করে নগরে বর্ষা মানে মাথায় রাখতে হয় যানজট আর জলজটের কথা। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণেই নাকি গ্রীষ্ম-বর্ষা জুড়ে বেড়ে চলেছে বজ্রপাত আর তাতে হতাহতের সংখ্যাও।
টিআর/
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন