ফুটবল
শক্তিশালী স্কোয়াড নিয়ে কাতারে ব্রাজিল
কাতারের মরূদ্যানে ফুটবে ফুটবলের ফুল। দোহার সঙ্গে মিলে যাবে বিশ্বের ঘড়ির কাঁটা। মেরু থেকে মরু-সব যেন একাকার। ফুটবল উৎসবে মাতিয়ে তুলতে প্রস্তুত কাতার। এই উৎসবে বরাবরের মতো ব্রাজিলের গায়ে ফেভারিট তকমা ভালোভাবেই লেগে আছে।
কোচ তিতের স্কোয়াডটা আসলেই এবার শক্তিশালী। বিশ্বকাপের বাঁশি বাজার আগে তাই সমর্থকদের মুখে মুখে সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়নের তালিকায় ব্রাজিল। তবে ফেভারিটের তকমাটাই যে পছন্দ হচ্ছে না রদ্রিগো ও মার্কুইনহোসের।
তারা মনে করছেন, সেরার উপাধি বিপদ ডেকে আনতে পারে দলে। এ নিয়ে সতীর্থদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন সেলেকাওয়ের দুই তারকা।
ব্রাজিল খেলোয়াড়রা বাইরের জগৎ থেকে নিজেদের দূরে রাখতে চাইলেও মিডিয়া ঠিকই সেরার বার্তা পৌঁছে দেবে দলের অন্দর মহলে। বিশ্নেষণ করে দেখলে ব্রাজিল সত্যিই সেরা দল নিয়ে এসেছে বিশ্বকাপে। একঝাঁক ফরোয়ার্ড স্কোয়াডে। কোচ তিতের দুর্ভাবনা কমিয়ে দিয়েছেন আক্রমণে থাকা খেলোয়াড়রা। বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ২৬ সদস্যের স্কোয়াড নিয়ে যাচ্ছে প্রতিটি দল। আক্রমণভাগের শক্তি বিচারে ব্রাজিল আছে সেরা অবস্থানে।
ফিফা চলতি সপ্তাহে দলগুলোর খেলোয়াড়ের যে তালিকা দিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, সেলেকাও স্কোয়াডে আক্রমণভাগে আছেন ৯ জন। কাতার বিশ্বকাপে এ পজিশনে ৯ খেলোয়াড় থাকা অন্য দল বেলজিয়াম। যদিও বেলজিয়ামের তালিকায় কিছুটা গোঁজামিল রয়েছে। তাদের তালিকায় আক্রমণভাগে ক্যারাসকো ও এডেন হ্যাজার্ডকে রাখা হয়েছে। যাঁদের প্রায়ই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ও লেফট উইং পজিশনে খেলানো হয়। ব্রাজিল ও বেলজিয়ামের পরে আক্রমণভাগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আটজন করে আছেন অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স ও মেক্সিকো দলে। আর্জেন্টিনা, ক্যামেরুন, নেদারল্যান্ডস ও সেনেগালের স্কোয়াডে আক্রমণভাগে সাতজন খেলোয়াড় রয়েছেন।
মোট ২১ বিশ্বকাপের মাত্র তিনটি আসরে ব্রাজিল স্কোয়াডে ৯ জনের বেশি আক্রমণভাগের খেলোয়াড় ছিলেন। সেই ১৯৩০ সালের বিশ্বকাপে সেলেকাওদের স্কোয়াডে ১১ জন আক্রমণভাগের খেলোয়াড় ছিলেন। পাঁচবারের বিশ্বকাপজয়ী দলের আক্রমণভাগে সর্বোচ্চ খেলোয়াড় থাকার সে রেকর্ড এখনও অটুট।
১৯৩৮ ও ১৯৫০ বিশ্বকাপ স্কোয়াডে আক্রমণভাগে ছিলেন ১০ জন। এর পর সাত দশকের বেশি সময়ে ১৭টি বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট খেলা ব্রাজিল এবারই আক্রমণভাগে সর্বোচ্চ খেলোয়াড় নিয়ে ফুটবল মহাযুদ্ধে অংশ নিচ্ছে। ১৯৮২ সালের পর কোনো বিশ্বকাপেই আক্রমণভাগে পাঁচজনের বেশি খেলোয়াড় ব্রাজিল স্কোয়াডে ছিলেন না।
আক্রমণভাগে অধিক রিজার্ভ খেলোয়াড় থাকাটা কী সুবিধা দেবে? সেটা হলো প্রথমত, আক্রমণভাগের কোনো খেলোয়াড় চোটে থাকলে দলকে দুশ্চিন্তা করতে হবে না। দ্বিতীয়ত, কোচ চাইলে ম্যাচের শুরুতে ও শেষে তাঁর পছন্দমতো আক্রমণভাগে জুটি মাঠে নামাতে পারবেন। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে যেমনটা ছিলেন বেবেতো-রোমারিও অথবা মুলার জুটি।
আক্রমণভাগের জন্য একাদশের বাইরে একজন মাত্র ভালো বদলি খেলোয়াড় তৈরি করাটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। যেটা ২০১৮ বিশ্বকাপে ভালোভাবেই টের পেয়েছে ব্রাজিল। দ্য মানো এ মানো, অর্থাৎ একজনের জন্য মাত্র একজন বিকল্প তৈরি রাখা- ২০১৮ বিশ্বকাপে ব্রাজিল দলে আক্রমণে সেরা বদলি খেলোয়াড় ছিলেন ডগলাস কস্তা। কিন্তু আসরের শুরুর দিকেই তিনি চোটে পড়েন। তখন নেইমারকে আক্রমণভাগের চেয়ে মাঝমাঠেই বেশি ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। কিন্তু এবার পরীক্ষিত একঝাঁক আক্রমণভাগের খেলোয়াড় থাকায় এ পজিশনে ইচ্ছামতো সাজাতে পারবেন কোচ তিতে। রাফিনহা ও আন্তোনিওকে ডান দিক এবং ভিনি জুনিয়র ও গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লিকে বাঁ বূ্যহ সামলাতে দায়িত্ব দিতে পারেন। এক্ষেত্রে রদ্রিগো হতে পারেন তিতের ওয়াইল্ড কার্ড বা জোকার। তিনি দু’দিকেই খেলতে পারেন এবং নেইমারের মতো মাঠে নিচেও নেমে খেলতে পারেন।
এবারের ব্রাজিল দলে ২০১৮ বিশ্বকাপ খেলা অনেকেই আছেন। ভিনিসিয়ুস ও নেইমারদের মতো বড় তারকা থাকা যে কোনো দলের জন্যই বিশাল কিছু। গত বিশ্বকাপের পর কোপা আমেরিকার দুই আসরের ফাইনাল খেলেছেন তাঁরা। কাগজে-কলমে ব্রাজিলকে টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে। গ্রুপ ‘জি’তে তাদের প্রতিপক্ষ ক্যামেরুন, সার্বিয়া ও সুইজারল্যান্ড। যাদের বিপক্ষে ব্রাজিলকে ফেভারিটের তকমা দিতে কেউই দ্বিমত করছেন না। তবে এসব সেরা বা ফেভারিট তকমার বিষয়টি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে সতীর্থদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রদ্রিগো ও মার্কুইনহোস। তাঁদের মতে, এগুলো দলের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনতে পারে না।
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে রিয়াল তারকা রদ্রিগো বলেন, ‘আমরা জানি, আমাদের জাতীয় দলটি অসাধারণ, যারা টুর্নামেন্টের সেরাদের অন্যতম। কিন্তু টুর্নামেন্টে আরও ভালো দল রয়েছে। নিজেদের ফেভারিট ভেবে মাঠে এসে সেটা করে দেখাতে না পারাটা কোনো কাজের কথা নয়। আমরা জানি, প্রত্যেকেই তাঁদের ক্লাবের হয়ে সেরা সময়ে ছিলেন। আর সে কারণেই তাঁরা বিশ্বকাপ দলে। অনেক ভালো খেলোয়াড়কেও ফেলে রেখে আসতে হয়েছে।’
প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ের সেন্টারব্যাক মার্কুইনহোস রদ্রিগোর সুরে তাল মিলিয়ে বলেন, ‘আমরা যদি নিজেদের সেরা ও ফেভারিট মনে করি, তাহলে সামনে এগোতে পারব না। আমরা দেখেছি প্রতিযোগিতায় কী ঘটে থাকে, এখানে ভালো করা সত্যি খুব কঠিন। প্রতিটি দলই প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে এবং ভারসাম্যপূর্ণ দল। তারা কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না। আর এটাই বিশ্বকাপ।’
ফুটবল
ফুটবলকে বিদায় জানালেন পেপে
সব ধরনের ফুটবল থেকে বিদায় নিলেন পর্তুগালের ডিফেন্ডার পেপে। বৃহস্পতিবার এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তিনি।
সর্বশেষ ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে পর্তুগালের ম্যাচটাই হয়ে রইল ৪১ বছর বয়সী এই ফুটবলারের ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ।
সে ম্যাচে টাইব্রেকারে হেরে বিদায় নিয়েছিল পর্তুগাল। ইউরোর মূলপর্বে সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামার রেকর্ডও গড়েন তিনি।
পর্তুগালের হয়ে ১৪১ ম্যাচ খেলেছেন পেপে। জিতেছেন ২০১৬ ইউরো।
ফুটবল
বাফুফে থেকে পদত্যাগ করলেন সালাম মুর্শেদী
পদত্যাগ করেছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী। তিনি ২০০৮ সাল থেকে পদটিতে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
এছাড়াও সালাম মুর্শেদী বাফুফের অর্থ কমিটি ও রেফারিজ কমিটির প্রধানও ছিলেন। এই দুটি পদ থেকেও তিনি পদত্যাগ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সালাম মুর্শেদীর পদত্যাগের কথা জানায় বাফুফে। সালাম মুর্শেদী খুলনা–৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন।
ফুটবল
চলে গেলেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সংগঠক সাইদুর রহমান প্যাটেল
স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অন্যতম সংগঠক ও উদ্যেক্তা সাইদুর রহমান প্যাটেল মারা গেছেন। বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ছিলেন। হাসপাতালে থাকাকালীন সেসব ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করতেন তিনি। অবশেষে ৭৩ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসের একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন সাইদুর রহমান। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) শোক জানিয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সাইদুর রহমানের অবদান ছিল অনস্বীকার্য। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন স্থানে তহবিল তুলতেন সাইদুর রহমানরা। তারা ভারতে ঘুরে ঘুরে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের হয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলতেন। সেখান থেকেও তহবিল সংগ্রহ করতো এই দলটি।
একজন ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রাখার লক্ষ্য নিয়েই স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠন করার উদ্যেগ নিয়েছিলেন সাইদুর রহমান প্যাটেলরা। এখানে খেলে যে অর্থ উত্তোলন হবে, তা মুক্তিযুদ্ধের জন্য গঠিত তহবিলে প্রদান করা হবে; এমনই ছিল স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সেসময়ের ভাবনা।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ইচ্ছা ছিল সাইদুর রহমানের। সবশেষ সাধারণ নির্বাচনের আগেই অবশ্য চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাতে হয় তাকে। সেখানে লম্বা সময় ধরে চিকিৎসা নেওয়ার পর আর দেশে ফিরতে পারলেন না তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতেই নিজের জীবনের শেষ সময়টুকু কাটালেন।
সাইদুর রহমানের জন্ম ১৯৫১ সালের ৭ অক্টোবর। তিনি ঢাকার কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। পরে অবশ্য গেন্ডারিয়ায় চলে যায় তার পরিবার। গেন্ডারিয়াতেই বেড়ে উঠেছেন, স্থানীয় পর্যায়ে ফুটবল খেলতে খেলতে শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলেও নিজের জায়গা করে নেন। তিনি ঢাকার ইস্টএন্ডের হয়ে ফুটবল খেলেছেন। দ্বিতীয় বিভাগে ফরাশগঞ্জের হয়ে, প্রথম বিভাগে পিডব্লুডি’র হয়ে খেলেছেন সাইদুর রহমান প্যাটেল।
এম এইচ//
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন