ফুটবল
মরুর বুকে বিশ্বকাপের রোমাঞ্চ শুরু আজ
বিশ্বকাপের বাঁশি বেজেই গেলো। বছর, মাস, দিন গড়িয়ে এখন ঘণ্টার অপেক্ষা। ফিফা বিশ্বকাপের ২২তম আসরের পর্দা উঠছে আজ। মরুর বুকে প্রথম বিশ্বকাপ এটি। আর সে কারণেই পরিবর্তণের যেন শেষ নেই। ফুটবল বিশ্বকাপের অনেক প্রথা, অনেক রেওয়াজও আজ ভেঙে গেছে।বদলে গেছে উদ্বোধনী ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনের জায়গা।
এমনিতে বিশ্বকাপ তো বটেই, গোটা ফুটবল দুনিয়াতেই এমন হয় যে ম্যাচের সংবাদ সম্মেলনটা হয় ম্যাচের ভেন্যুতেই। কিন্তু গতকাল কাতার-ইকুয়েডর ম্যাচের সংবাদ সম্মেলনটা হয়েছে দোহায় অবস্থিত মিডিয়া সেন্টারে।সেসব অবশ্য কাতারের কথা।
বিশ্বের মানুষের বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতাটাও আমূলে পরিবর্তন এসেছে। প্রতিবার বিশ্বকাপ মানেই ছিল জুন-জুলাইয়ের ‘বর্ধিত গ্রীষ্মকালে’ খেলা দেখার স্মৃতি, কিন্তু এবার বড় অবস্থান্তর ঘটে গেছে এখানেই। শীতের রাতে গায়ে চাদর মুড়িয়ে নভেম্বর-ডিসেম্বরে উপভোড় করতে হবে এবারের বিশ্বকাপ।
তার কারণটা এবারের আয়োজক দেশের আবহাওয়া। জুন- জুলাই মাসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে যে তাপমাত্রা অসহনীয় অবস্থায় পৌঁছে। নভেম্বর-ডিসেম্বর একটু সহনীয় থাকায় এবার প্রথা ভেঙে বিশ্বকাপটা সরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে বছরের এই সময়টায়, যখন দোহায় তাপমাত্রাটা থাকবে ২০ এর ঘরের আশেপাশে।
এরপরও কাতার নিজেদের আবহাওয়ার সঙ্গে যেন খেলোয়াড়রা মানিয়ে নিতে পারেন সহজেই, সে বিষয়ে বেশ সজাগ। এই প্রথম বিশ্বকাপে দেখা যাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্টেডিয়াম।
ভিন্নতা আরও অনেক কিছুতেই আছে। আবহাওয়া ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার আরও অনেক কিছুতে ইউরোপ-আমেরিকার অনেক দেশ থেকে ভিন্ন। যেমন ধরুন বিশ্বকাপের অনুষঙ্গ হিসেবে দেখা হয় যেসব কিছু, সেই দেদারসে মদ্যপান কিংবা উদ্দাম নৈশজীবন ইত্যাদি… তার সব কিছুতেই এবার বাঁধ সাধবে কাতার। রক্ষণশীল মুসলিম দেশ হওয়াতেই যে এমন সব কিছু, তা আপনি এতক্ষণে বুঝে যাওয়ার কথা!
কাতারের বিশ্বকাপের সমালোচনা শুরু থেকেই হয়ে এসেছে। দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন ইত্যাদি ইত্যাদি নিয়ে কথা কম উঠছে না। যে কারণে বিশ্বকাপের আগের সংবাদ সম্মেলনেও কথা বলতে হলো ফিফা সভাপতিকে।
তবে সব কথার শেষ কথা, মাঠের ফুটবল শুরু হচ্ছে আজ থেকে। সব ঠিকঠাক হলে সমালোচনাও থিতিয়ে আসার কথা বেশ। শুরুটা হবে যে ম্যাচ দিয়ে সে ম্যাচেও অবশ্য পরিবর্তন আসতে পারত। বিশ্বকাপের সূচিটা যখন প্রথম প্রকাশ পেয়েছিল, সেখানেও দেখা যাচ্ছিল প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হবে সেনেগাল আর নেদারল্যান্ডস। যেটা হলে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক দেশের মাঠে নামার রেওয়াজটাও যেত বদলে।
পরে অবশ্য এই সূচি পরিবর্তন করেছে ফিফা, কাতার আর ইকুয়েডর ম্যাচটাকেই নিয়ে এসেছে সবার আগে। কমপক্ষে এই নিয়মটা রক্ষা পেয়ে গেছে তাই। সেই ম্যাচ দিয়েই আজ উঠছে বিশ্বকাপ ফুটবলের পর্দা। চার বছরেরও বেশি দীর্ঘ অপেক্ষারও ঘটছে ইতি। এবার সময় চার সপ্তাহ ঠাসা সূচির ফুটবল উন্মাদনার।
উদ্বোধনী ম্যাচে বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় ইকুয়েডরের বিপক্ষে মাঠে নামবে কাতার।
এবারের বিশ্বকাপ কাতার আয়োজক হলেও, বিশ্বকাপে ফেবারিট দল অবশ্য তারা নয়। লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা, নেইমারের ব্রাজিল এবং এমবাপ্পের ফ্রান্সের দিকে লেগে আছে ফেবারিটের তকমাটা। ফ্রান্স বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় তাদের এবার মিশন বিশ্বকাপ ডিফেন্ড করা। যা গত ৬০ বছরে কোন দল করে দেখাতে পারেনি। ১৯৫৮ এবং ১৯৬২ সালে টানা দুইবার বিশ্বকাপ জিতেছিল ব্রাজিল। এরপর কোন দল এ কাজটাও করে দেখাতে পারেনি।
অপরদিকে আর্জেন্টিনার দিকেই এবার বিশেষজ্ঞরা বাজি ধরছেন বেশি। এর বেশ কারণও আছে। গত আড়াই বছর ধরে আন্তর্জাতিক ফুটবলে কোনো ম্যাচ হারেনি স্ক্যালোনির দল। এছাড়াও মেসি, মারিয়া, ডি পল, মার্টিনেজরা আছে দারুণ ফর্মে। শুধু তাই নয়, টিম কম্বিনেশনে সেরার কাতারেই রয়েছে আলবেসেলেস্তারা। ফলে এবার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে দাবিদার মানাই যায়।
তবে কথায় আছে, কোন কিছুই পারফেক্ট নয়। ফলে আর্জেন্টিনার দলের মাঝেও কিছুটা দুর্বলতা রয়েছে। স্ক্যালোনির মিডফিল্ডের সেরা পছন্দের একজন লো সেলসো। ইনজুরির কারণে এবারের বিশ্বকাপ খেলা হচ্ছে না তার। যা মিডফিল্ডে আর্জেন্টিনাকে ভোগাবে। তবে তাদের বড় সমস্যার কথাটা মেসিই কিছুদিন আগে জানিয়েছেন।
তিনি বলেছিলেন, এবারের বিশ্বকাপে তারা ফেবারিট নয়। মেসির চোখে ফেবারিট ফ্রান্স এবং ব্রাজিল। আর তাদের ফেবারিট না মানার কারণও জানিয়েছেন তিনি। মূলত গত আড়াই বছর ধরে তারা বেশি ইউরোপের দলের সঙ্গে খেলেনি। যার কারণে ইউরোপের দলের সম্পর্কে অভিজ্ঞতা কম। আর এটাই মেসিসহ সব আর্জেন্টিনা সমর্থকের কাছে বড় ভয়ের বিষয়।
এদিকে, ব্রাজিলকেও ফেবারিট মানা হচ্ছে। অক্সফোর্ড, অ্যালান টুরিং ইনস্টিটিউটের গবেষণার মতে তো এবারের বিশ্বকাপ উঠবে নেইমারের হাতেই। ২০০২ সালে কাকা, রোনালদিনহো, রোনালদোর হাত ধরে পঞ্চম বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছিল ব্রাজিল।
এরপর ২০ বছর পেরিয়ে গেছে, এর মাঝে সেমিফাইনালের বাধাই পেরুতে পারেনি সেলেসাওরা। তবে এবারের ব্রাজিল দলে নেই তেমন কোন দুর্বলতা। তরুণ এবং অভিজ্ঞর সংমিশ্রণে এবার বিশ্বকাপটা ব্রাজিলের হাতে উঠলে উঠতেও পারে।
এদিকে, এ তিন দল ছাড়াও ফেবারিটের তালিকায় আছে চারবারের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন জার্মানি, ২০১০ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন স্পেন এবং সময়ের অন্যতম সেরা দল ইংল্যান্ড এবং বেলজিয়াম। তবে বিশেষজ্ঞদের মত, এ দলগুলো সেমিফাইনালের বাধাই পেরুতে পারবে না।
ফুটবল
ফুটবলকে বিদায় জানালেন পেপে
সব ধরনের ফুটবল থেকে বিদায় নিলেন পর্তুগালের ডিফেন্ডার পেপে। বৃহস্পতিবার এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তিনি।
সর্বশেষ ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে পর্তুগালের ম্যাচটাই হয়ে রইল ৪১ বছর বয়সী এই ফুটবলারের ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ।
সে ম্যাচে টাইব্রেকারে হেরে বিদায় নিয়েছিল পর্তুগাল। ইউরোর মূলপর্বে সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামার রেকর্ডও গড়েন তিনি।
পর্তুগালের হয়ে ১৪১ ম্যাচ খেলেছেন পেপে। জিতেছেন ২০১৬ ইউরো।
ফুটবল
বাফুফে থেকে পদত্যাগ করলেন সালাম মুর্শেদী
পদত্যাগ করেছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী। তিনি ২০০৮ সাল থেকে পদটিতে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
এছাড়াও সালাম মুর্শেদী বাফুফের অর্থ কমিটি ও রেফারিজ কমিটির প্রধানও ছিলেন। এই দুটি পদ থেকেও তিনি পদত্যাগ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সালাম মুর্শেদীর পদত্যাগের কথা জানায় বাফুফে। সালাম মুর্শেদী খুলনা–৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন।
ফুটবল
চলে গেলেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সংগঠক সাইদুর রহমান প্যাটেল
স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অন্যতম সংগঠক ও উদ্যেক্তা সাইদুর রহমান প্যাটেল মারা গেছেন। বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ছিলেন। হাসপাতালে থাকাকালীন সেসব ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করতেন তিনি। অবশেষে ৭৩ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসের একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন সাইদুর রহমান। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) শোক জানিয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সাইদুর রহমানের অবদান ছিল অনস্বীকার্য। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন স্থানে তহবিল তুলতেন সাইদুর রহমানরা। তারা ভারতে ঘুরে ঘুরে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের হয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলতেন। সেখান থেকেও তহবিল সংগ্রহ করতো এই দলটি।
একজন ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রাখার লক্ষ্য নিয়েই স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠন করার উদ্যেগ নিয়েছিলেন সাইদুর রহমান প্যাটেলরা। এখানে খেলে যে অর্থ উত্তোলন হবে, তা মুক্তিযুদ্ধের জন্য গঠিত তহবিলে প্রদান করা হবে; এমনই ছিল স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সেসময়ের ভাবনা।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ইচ্ছা ছিল সাইদুর রহমানের। সবশেষ সাধারণ নির্বাচনের আগেই অবশ্য চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাতে হয় তাকে। সেখানে লম্বা সময় ধরে চিকিৎসা নেওয়ার পর আর দেশে ফিরতে পারলেন না তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতেই নিজের জীবনের শেষ সময়টুকু কাটালেন।
সাইদুর রহমানের জন্ম ১৯৫১ সালের ৭ অক্টোবর। তিনি ঢাকার কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। পরে অবশ্য গেন্ডারিয়ায় চলে যায় তার পরিবার। গেন্ডারিয়াতেই বেড়ে উঠেছেন, স্থানীয় পর্যায়ে ফুটবল খেলতে খেলতে শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলেও নিজের জায়গা করে নেন। তিনি ঢাকার ইস্টএন্ডের হয়ে ফুটবল খেলেছেন। দ্বিতীয় বিভাগে ফরাশগঞ্জের হয়ে, প্রথম বিভাগে পিডব্লুডি’র হয়ে খেলেছেন সাইদুর রহমান প্যাটেল।
এম এইচ//
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন