ফুটবল
ফুটবল রাজার রাজকাহিনী
ফুটবলের কথা উঠলে যে নামটি সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয়, তা হলো ‘পেলে’। ফুটবল তো বটেই ক্রীড়াজগতের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র এই ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তী। ছোট বেলায় তাঁর লড়াই ছিল দারিদ্র্যতার সঙ্গে। তবে ফুটবল প্রতিভা দিয়ে বিশ্বের বুকে আলো ছড়িয়েছেন ফুটবলের এই মহারাজা।
শেষ পর্যন্ত চলেই গেলেন ফুটবলের মহাতারকা পেলে। ব্রাজিলের সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে বৃহস্পতিবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২।
ব্রাজিলে ফুটবল খেলাটি যেন প্রতিটি শিশু-কিশোরের ধ্যান-জ্ঞান। ফুটবলপাগল সেই দেশটির হয়ে ১ হাজার ১৮৪ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেছেন পেলে। করেছেন ১ হাজার ১২৪ গোল। মূলত তার হাত ধরেই অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে ফুটবল। সঙ্গত কারণেই পেয়েছেন কিং অব ফুটবলের তকমা। এই প্রজন্মের প্রত্যেকেই তার মতো হতে চায়। এতেই তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়।
তবে এই শ্রেষ্ঠত্ব পেলের কাছে এমনি এমনিই ধরা দেয়নি। ফুটবল মহারাজা হতে পোড়াতে হয়েছে অনেক কাঠখড়। ১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর সাও পাওলো শহরের ট্রেস কোরাকয়েসে জন্ম নেন তিনি। ওই সময় সেই এলাকার অর্থনৈতিক অবস্থা ও জীবনযাত্রার মান ভয়ঙ্কর ছিল। তখনকার ব্রাজিলীয় সমাজের পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী সেখানে বসবাস করতো।
বাল্যকাল থেকেই ফুটবল সম্রাটকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়েছে। যথেষ্ট কষ্ট পোহাতে হয়েছে। তবুও ফুটবল আঁকড়ে ছিলেন। একটি ফুটবল ছিল নিত্যসঙ্গী। রক্তে মিশে ছিল ফুটবল। খেলাটির প্রতি তার ভালোবাসা থাকাটাও স্বাভাবিক। কারণ, বাবা ছিলেন তখনকার শীর্ষস্থানীয় ক্লাব ‘ফ্লুমিনেসের’ ফুটবলার। তার নাম জোয়াও রামোস দ্য নাসিমেন্তো। যিনি ‘ডনডিনহো’ নামেই বেশি পরিচিত। পেলের মায়ের নাম ডোনা সেলেন্তেস আরেন্তেস।
মজার বিষয় হচ্ছে, যে বছর পেলে জন্ম নেন, সেই বছরই ট্রেস কোরাকয়েসে পৌঁছে বিদ্যুৎ। তাই বাবা ডনডিনহো বৈদ্যুতিক বাতির (বাল্ব) আবিষ্কারক টমাস আলভা এডিসনের নামের সঙ্গে মিল রেখে ছেলের নাম রাখেন এডিসন অ্যারান্তিস দো নাসিমেন্ত।
অর্থাভাবে অনুশীলনের জন্য একটি বলও কিনতে পারতেন না পেলে। তাই পুরোন মোজাকে খবরের কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে বেঁধে ফুটবল হিসেবে ব্যবহার করতেন।
আশ্চর্যের বিষয়, পেলে কিভাবে ডাকনামে পরিণত হয়, তা নিজেই জানেন না ফুটবল সম্রাট। নিজের আত্মজীবনীতেও ‘পেলে’ নামটির কোনো অর্থ তিনি বলতে পারেননি। তবে এর ব্যাখ্যা করেছেন। ব্রাজিলিয়ান ফুটবল ক্লাব ভাস্কো দ্য গামার গোলরক্ষক ছিলেন ‘বিলে’। কিন্তু ফুটবলের রাজা এই নাম কোনোভাবেই উচ্চারণ করতে পারতেন না। তার মুখ থেকে তা ‘পেলের’ মতো শোনা যেত। তাই স্কুলের বন্ধুরা তাকে পেলে নামে খ্যাপাত। এই নামটি শেষ পর্যন্ত তার ডাকনামে পরিণত হয়।
পেলে নজর কাড়েন সান্তোস ক্লাবের ওয়ালদিমার দ্য ব্রাতোর। দলটির প্রেসিডেন্টের কাছে তাকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার সময় ব্রাতো বলেছিলেন, এই ছেলেটি বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় হবে।
অলৌকিকভাবে কথাটি সত্যি প্রমাণিত হয়েছে। ১৯৫৬ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে পেলে সান্তোসে যোগ দেন। খেলোয়াড়ি জীবনের প্রায় দুই দশক এই ক্লাবেই কাটান তিনি।
ইউরোপের অনেক ক্লাব থেকে খেলার অফার ও অর্থের হাতছানি আসলেও ভালোবাসার সান্তোস ছেড়ে যাননি। অবশ্য ১৯৭২ সালে সবরকম ফুটবল থেকে অবসরের দুই বছর পর আমেরিকান ক্লাব ‘নিউইয়র্ক কসমসের’ হয়ে নর্থ আমেরিকান সকার লিগে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৬ পর্যন্ত তিনি নিউইয়র্ক কসমসের হয়ে খেলেন।
মাত্র ১৬ বছর বয়সেই পেলের জাতীয় দলে অভিষেক হয়। প্রথম ম্যাচ খেলেন চিরশত্রু আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচে ব্রাজিল পরাজিত হয় ২-১ গোলে। অভিষেক ম্যাচেই গোল পান পেলে। মাত্র ১৭ বছর বয়সে বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পান তিনি।১৯৫৮ সুইডেন বিশ্বকাপে করেন ৫ গোল।
ব্রাজিল এই শিরোপার মাধ্যমে দক্ষিণ আমেরিকার বাইরে ল্যাটিন কোনো দেশ হিসেবে ইউরোপ থেকে বিশ্বকাপ জয় করে। ১৯৬২ সালে গ্রুপ পর্যায়ে মাত্র এক ম্যাচ খেলে পায়ে আঘাত পাওয়ায় বিশ্বকাপের পরবর্তী ম্যাচগুলোতে আর খেলতে পারেননি। ১৯৬৬ সালে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় ব্রাজিল। ওই বিশ্বকাপে মাত্র এক গোল করেন ফুটবল সম্রাট।
১৯৭০ মেক্সিকো বিশ্বকাপে ব্রাজিলের দলটি ছিল ইতিহাসের সেরা আক্রমণাত্মক দল। দলে পেলে ছাড়াও ছিলেন রিভেলিনো, জোয়ারজিনহো, কার্লোস আলবার্তো, ফ্যালকাও, গ্যারিঞ্চার মতো তারকারা। পেলে এই বিশ্বকাপে ৪ গোল করেন। ব্রাজিলের হয়ে তিনি বিশ্বকাপে মোট ১২ গোল করেন।
১৯৭৭ সালে পেলে ক্লাব ফুটবল থেকেও অবসর নেন। নিজের হাজারতম গোলটি ব্রাজিলের বস্তিবাসী শিশুদের জন্য উৎসর্গ করেন।
ব্রাজিলের পক্ষে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ গোলদাতা পেলে। ২০০৭ সালে ফিফা ৬২ বিশ্বকাপের ফাইনালের পদকটি তার হাতে তুলে দেন। ফলে পেলেই হয়ে যান তিনটি বিশ্বকাপ ফাইনাল জয় করা একমাত্র ফুটবলার। ফিফার পক্ষ থেকে তাকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় ঘোষণা করা হয়।
ফুটবল
ফুটবলকে বিদায় জানালেন পেপে
সব ধরনের ফুটবল থেকে বিদায় নিলেন পর্তুগালের ডিফেন্ডার পেপে। বৃহস্পতিবার এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তিনি।
সর্বশেষ ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে পর্তুগালের ম্যাচটাই হয়ে রইল ৪১ বছর বয়সী এই ফুটবলারের ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ।
সে ম্যাচে টাইব্রেকারে হেরে বিদায় নিয়েছিল পর্তুগাল। ইউরোর মূলপর্বে সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামার রেকর্ডও গড়েন তিনি।
পর্তুগালের হয়ে ১৪১ ম্যাচ খেলেছেন পেপে। জিতেছেন ২০১৬ ইউরো।
ফুটবল
বাফুফে থেকে পদত্যাগ করলেন সালাম মুর্শেদী
পদত্যাগ করেছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী। তিনি ২০০৮ সাল থেকে পদটিতে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
এছাড়াও সালাম মুর্শেদী বাফুফের অর্থ কমিটি ও রেফারিজ কমিটির প্রধানও ছিলেন। এই দুটি পদ থেকেও তিনি পদত্যাগ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সালাম মুর্শেদীর পদত্যাগের কথা জানায় বাফুফে। সালাম মুর্শেদী খুলনা–৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন।
ফুটবল
চলে গেলেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সংগঠক সাইদুর রহমান প্যাটেল
স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অন্যতম সংগঠক ও উদ্যেক্তা সাইদুর রহমান প্যাটেল মারা গেছেন। বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ছিলেন। হাসপাতালে থাকাকালীন সেসব ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করতেন তিনি। অবশেষে ৭৩ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসের একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন সাইদুর রহমান। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) শোক জানিয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সাইদুর রহমানের অবদান ছিল অনস্বীকার্য। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন স্থানে তহবিল তুলতেন সাইদুর রহমানরা। তারা ভারতে ঘুরে ঘুরে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের হয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলতেন। সেখান থেকেও তহবিল সংগ্রহ করতো এই দলটি।
একজন ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রাখার লক্ষ্য নিয়েই স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠন করার উদ্যেগ নিয়েছিলেন সাইদুর রহমান প্যাটেলরা। এখানে খেলে যে অর্থ উত্তোলন হবে, তা মুক্তিযুদ্ধের জন্য গঠিত তহবিলে প্রদান করা হবে; এমনই ছিল স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সেসময়ের ভাবনা।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ইচ্ছা ছিল সাইদুর রহমানের। সবশেষ সাধারণ নির্বাচনের আগেই অবশ্য চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাতে হয় তাকে। সেখানে লম্বা সময় ধরে চিকিৎসা নেওয়ার পর আর দেশে ফিরতে পারলেন না তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতেই নিজের জীবনের শেষ সময়টুকু কাটালেন।
সাইদুর রহমানের জন্ম ১৯৫১ সালের ৭ অক্টোবর। তিনি ঢাকার কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। পরে অবশ্য গেন্ডারিয়ায় চলে যায় তার পরিবার। গেন্ডারিয়াতেই বেড়ে উঠেছেন, স্থানীয় পর্যায়ে ফুটবল খেলতে খেলতে শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলেও নিজের জায়গা করে নেন। তিনি ঢাকার ইস্টএন্ডের হয়ে ফুটবল খেলেছেন। দ্বিতীয় বিভাগে ফরাশগঞ্জের হয়ে, প্রথম বিভাগে পিডব্লুডি’র হয়ে খেলেছেন সাইদুর রহমান প্যাটেল।
এম এইচ//
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন