চট্টগ্রাম
চাকমা সম্প্রদায়ের প্রথম নারী ব্যারিস্টার
রাঙামাটির ভ্যালি চাকমা। বাংলাদেশের চাকমা সম্প্রদায়ের প্রথম নারী ব্যারিস্টার। উচ্চ আদালতে চাকমা সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় নারী আইনজীবী। বাবার অনুপ্রেরণায় আইন পড়তে উদ্ধুদ্ধ হন তিনি। ব্যারিস্টার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অধীনে আইনে ভর্তি হন। সেখান থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করে পর্যায়ক্রমে জজকোর্ট ও হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। তারপর ব্যারিস্টারি পড়তে পাড়ি জমান লন্ডনে।
২০২২ সালের ২৫ নভেম্বর লন্ডনের লিংকন্সইন থেকে অফিসিয়ালি ব্যারিস্টারি ডিগ্রি লাভ করেন। দেশে ফিরে এসে উচ্চ আদালতে আইনপেশা শুরু করেছেন তিনি। ভ্যালি বিয়ে করেছেন ঢাকার অধিবাসী সিভিল ইঞ্জিনিয়ার অরহণ দেওয়ানকে। নিজ সম্প্রদায়ের অসহায় মানুষকে আইনগত সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি মানুষের জন্য কাজ করতে চান, আইন পেশায় অবদান রাখতে চান উদীয়মান এই নারী ব্যারিস্টার। তার জীবনের নানা অজানা বিষয় তুলে ধরেছেন অকপটে।
তিনি বলেন, তার জন্ম ১৯৯১ সালে রাঙামাটি পাবর্ত্য জেলায়। বাবার নাম কল্যাণ মিত্র চাকমা। বাবা কাস্টমসের সহকারী কমিশনার হিসেবে বেনাপোল অফিসে রয়েছেন। তিন ভাই-বোনের মধ্যে ভ্যালি দ্বিতীয়। তার বড় বোন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করে এখন গৃহিণী। বোনের স্বামী ইনকাম ট্যাক্সের ডেপুটি কমিশনার। ছোট ভাই নর্থ সাউথে ফার্মেসিতে গ্রাজুয়েশন শেষ করে স্বনামধন্য একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। ২০২১ সালের নভেম্বরের ৫ তারিখে বিয়ে করেন। স্বামীর নাম অরহণ দেওয়ান, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। ঢাকার অধিবাসী। পারিবারিকভাবেই তাদের বিয়ে হয়েছে।
ভ্যালি চাকমা বলেন, বাবার চাকরির বদলিজনিত কারণে এক বছর বয়স থেকে আমি খুলনায় ছিলাম। খুলনা সরকারী করনেশন বালিকা বিদ্যালয়ে ক্লাস সিক্স পর্যন্ত পড়াশুনা করি। এরপর চট্টগ্রাম চলে আসি। চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ বালিকা বিদ্যালয় থেকে ২০০৬ সালে এসএসসি পাস করি। চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ থেকে ২০০৮ সালে আমি এইচএসসি পাস করি। পরে ঢাকায় চলে আসি। ব্যারিস্টার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অধীনে ভূইয়া একাডেমিতে ভর্তি হই। ২০১৩ সালে আইনে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করি। ২০১৫ সালে এলএলএম কমপ্লিট করি ধানমন্ডির ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে। ২০১৬ সালে আামি ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হই। ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হই। তারপর ব্যারিস্টারি পড়তে ইংল্যান্ড যাই। ২০২২ সালের ২৫ নভেম্বর লন্ডনের লিংকন্সইন ইন থেকে অফিসিয়ালি ব্যারিস্টারি ডিগ্রি দেশে নিয়ে আসি।
তিনি বলেন, আমার বাবা জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্টুডেন্ট ছিলেন। রাজনীতি পছন্দ করতেন। আমার দাদা, চাচা সবাই রাজনীতি করেন। বাবা চাইতেন আমি যেন ব্যারিস্টারি পড়ে রাজনীতি করি। বাবা ছোটবেলা থেকে আমাকে স্বপ্ন দেখাতেন আমি যেন ব্যারিস্টার হই। মূলত বাবার অনুপ্রেরণায় তার স্বপ্ন পূরণে আইনে ভর্তি হই।
বাংলাদেশে তো অনেক নৃ-গোষ্ঠী আছে। তার মধ্যে চাকমা হচ্ছেন বৃহত্তর নৃ-গোষ্ঠী। আমার জানামতে চাকমা সম্প্রদায় থেকে বেশকিছু আইনজীবী হয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টে একজন চাকমা ডিআইজি আছেন, তার নাম অ্যাডভোকেট প্রতিকার চাকমা। আমি যতটুকু জানি চাকমা সম্প্রদায় থেকে আমি সুপ্রিম কোর্টের দ্বিতীয় নারী আইনজীবী। আমার আগে সুপ্রিম কোর্টে খাগড়াছড়ির একজন নারী আইনজীবী ছিলেন। তবে আমি বাংলাদেশের চাকমা সম্প্রদায় থেকে প্রথম নারী ব্যারিস্টার। বাংলাদেশের চাকমা সম্প্রদায়ের প্রথম ব্যারিস্টার চাকমা সার্কেলের চিফ রাজা দেবাশিষ রায়। উনার পরেই আমি চাকমা সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যারিস্টার হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছি।
ভ্যালি বলেন, আসলে অনুভূতি বলে প্রকাশ করা যাবে না। এই স্বপ্ন আমাকে দেখিয়েছিলেন আমার বাবা। বাবা বলতেন আমি যেন চাকমা সম্প্রদায়ের প্রথম নারী ব্যারিস্টার হই। বাবার সেই স্বপ্ন আমি পূরণ করতে পেরেছি। এইটা অত্যন্ত আনন্দের,গৌরবের যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। সত্যি কথা বলতে গেলে ডিরেক্টলি না বাট ইনডিরেক্টলি অনেক সময়ে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি। যেমন আমি যদি পরীক্ষায় বেশি নম্বর পেয়ে যেতাম বা ভালো রেজাল্ট করতাম তারা এমন কমেন্ট করতো যে আমি রাঙামাটির চাকমা মেয়ে, আমি কীভাবে এত ভালো রেজাল্ট করতে পারি। এরকম কিছু খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি। সুপ্রিম কোর্টে এসেও এমন একটা বাজে পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি। আমাকে একজন ইনডিরেক্টলি থ্রেট দিয়েছে, আমি তো চাকমা মেয়ে আমি কতদূর যেতে পারবো। উনি আমাকে দেখে নেবে। যিনি এ মন্তব্য করেছেন তিনি আমার সিনিয়র। সিনিয়রদের কাছ থেকে এটা অবশ্যই কাম্য নয়। আমরা যেমন বড়দের অনেক সম্মান করবো, ঠিক তেমনি বড়দের কাছ থেকে স্নেহ-সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
তিনি বলেন, আমি মনে করি সফলতার জন্য যেটা সবচেয়ে বেশি দরকার সেটা হলো মনোবল। আপনার ডেডিকেশন অবশ্যই থাকতে হবে এবং আপনার উইল পাওয়ার থাকতে হবে। যদি মনে করেন আপনি এটা করতে পারেন তাহলে অবশ্যই পারবেন।
চাকমা সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি সম্পর্কে ভ্যালি বলেন, মূলত আমরা চাকমা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। আমাদের মেইন ধর্মীয় অনুষ্ঠান হচ্ছে বৌদ্ধ পূর্ণিমা। সাংস্কৃতিক দিক থেকে আমাদের পাবর্ত্য এলাকার মানুষের আলাদা সংস্কৃতি রয়েছে। আমরা সবচেয়ে যেটা বেশি পালন করি সেটা হচ্ছে বিজু উৎসব। যেটা প্রতি বছর ১৩ এপ্রিল পালন করি। যেটাকে বৈশাবী উৎসব বলা হয়। এইদিন আমরা অনেক মজা করি। ১৩ এপ্রিলের পর দিন ১৪ এপ্রিল তো নববর্ষ। নববর্ষ আমরা অনেক ধুমধাম করে উদযাপন করি। এছাড়াও অনেক উৎসব পালন করি।
চাকমা সম্প্রদায়ের রাজা সম্পর্কে ভ্যালি বলেন,আমাদের রাজা ব্যারিস্টার দেবাশিষ রায়। তিনি হলেন চাকমা সার্কেলের প্রধান। পার্বত্য অঞ্চলের নৃ-গোষ্ঠীদের মধ্যে তিনটি সার্কেল রয়েছে। এর মধ্যে একটা হচ্ছে চাকমা সার্কেল। নিয়ম হচ্ছে, যদি কেউ ঝামেলায় বা আইনগত কোনো বিপদে পড়েন তাহলে প্রথমে তিনি রাজার কাছে যাবেন। তিনি সালিশের মাধ্যমে ওটা মীমাংসা করার চেষ্টা করবেন। যদি আপনি উনার বিচারে সংক্ষুব্ধ হন তাহলে কোর্টে আসতে পারবেন। এটাই হচ্ছে মূলত নিয়ম।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় ভ্যালি বলেন, আমি মনে করি সুপ্রিম কোর্টের একজন অ্যাডভোকেট হওয়া অনেক গৌরবের বিষয়। আমার প্রাউডের বিষয় যে আমি আমার জাতিকে রিপ্রেজেন্ট করতে পারছি। আমি এমন এক জায়গায় আছি যেটার মাধ্যমে আমার সম্প্রদায় এবং অন্যান্য সম্প্রদায়কে আইনি সহায়তা দিতে পারবো। সেই কাজটা আমি করতে চাই। আরেকটা কথা বলতে চাই, দাদা এবং চাচা তারা সমাজসেবক। আমরা বংশগতভাবেই মানুষকে সহায়তা করে আসছি। আইনপেশায় প্রতিষ্ঠিত হলে আমার রাজনীতি করার ইচ্ছে রয়েছে।
চট্টগ্রাম
কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় প্রাণ হারালেন দুই সাইকেল আরোহী
কর্ণফুলীতে পণ্যবাহী কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় দুই সাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। কাভার্ডভ্যানটি আটক করা হয়েছে।
বুধবার (৭ আগস্ট) বেলা একটার দিকে চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ইছানগর বাংলাবাজার এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার নন্দনালী গ্রামের কামাল মণ্ডলের ছেলে চঞ্চল মণ্ডল (১৮) ও রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার ছোট পাগলা গ্রামের মোহাম্মদ আবদুল জলিলের ছেলে জাহিদুল ইসলাম (১৬)। তারা কর্ণফুলী উপজেলার ইছানগর গ্রামে ভাড়া বাসায় থাকতেন।
চরপাথরঘাটার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আবু তাহের গণমাধ্যমকে বলেন, দুপুরে তারা তিনজন সাইকেল চালিয়ে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন। এ সময় কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত হয়। অপরজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয়। কাভার্ডভ্যানটি আটক করা হয়েছে।
এএম/
চট্টগ্রাম
রাতেও ট্রাফিক সামলাচ্ছেন ছাত্রীরা
সরকার পতনের পরে চট্রগ্রামে নগরীর থানাগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। এ অবস্থায় নগরীর রাস্তায় নেই কোন ট্রাফিক পুলিশ। দিনভর রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করেন সরকার পতনের আন্দোলন করা শিক্ষার্থীরা। তবে দিন পেরিয়ে রাত হলেও, রাস্তায় ছাত্রদের পাশপাশি ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায় ছাত্রীদেরও।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার অলী খা মসজিদ মোড় এলাকায় এমন চিত্র দেখতে পায় গণমাধ্যম।
নগরীর অলী খা মসজিদ মোড়ে শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইজা তাবাসসুম বলেন, দেশে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। এখন দেশকে এগিয়ে নিতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। নিজের দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে এখানে আসা। সকালে শুনেছি সড়কে ট্রাফিক পুলিশ নেই। তাই তারা কাজ করতে এসেছেন।
আসিফুর রহমান নামে আরেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী জানান, শিফট সিস্টেম করে ছাত্ররা কাজ করছে। এখন তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। নিজেদের ইচ্ছায় তারা এখানে এসেছেন।
আই/এ
চট্টগ্রাম
‘বালুখেকো’ চেয়ারম্যান সেলিম ও তার ছেলে গণপিটুনিতে নিহত
চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের আলোচিত ‘বালুখেকো’ খ্যাত চেয়ারম্যান সেলিম খান ও তার ছেলে নায়ক শান্ত খান গনপিটুনিতে নিহত হয়েছেন।
সোমবার (৫ আগস্ট) শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পর নিজ এলাকা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় বালিয়া ইউনিয়নের ফরক্কাবাদ বাজারে এসে জনগণের তোপের মুখে পড়েন তারা। এরপর সেখানে নিজের পিস্তল থেকে গুলি করে উদ্ধার হয়ে আসতে পারলেও পার্শ্ববর্তী বাগাড়া বাজারে এসে জনতার মুখোমুখি হয়। তারপর সেখানে জনগণের পিটুনিতে নিহত হোন সেলিম খান ও তার ছেলে শান্ত খান।
চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শেখ মুহসীন আলম গণমাধ্যমে বলেন, তাদের মৃত্যুর বিষয় জেনেছি। তবে কেউ খবর দেয়নি। আর জানমালের নিরাপত্তার কারণে সেখানে কাউকে পাঠানো হয়নি।
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সেলিম খান চাঁদপুর নৌ-সীমানায় পদ্মা-মেঘনা নদীতে শত শত ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান। এসব ঘটনায় সে কারাভোগ করেন এবং দুদকে তার বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে। সেলিম খান একজন আলোচিত প্রযোজকও। তিনি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান শাপলা মিডিয়ার কর্ণধার।
এছাড়া সেলিম খানকে পদ্মা-মেঘনার চর থেকে বিভিন্ন সময় বালু তোলাসহ নানা কারণে চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান পদ থেকে আজীবন বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগ। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
এএম/
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন