দুর্ঘটনা
প্রিয়জনের লাশের একটি টুকরোই এখন সান্ত্বনা
সর্বনাশা আগুনে প্রিয়জনকে হারিয়ে নিঃস্ব স্বজনেরা। পরের কারখানায় কাজ করা জনম দুঃখী পরিবারগুলোর একটু ভালো থাকার স্বপ্নও এখন জ্বলে পুড়ে ছাড় খার হলো। বলছি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের সেজান জুস কারখানা কাজ করতে যেসব শ্রমিক তাদের কথা।
রুপগঞ্জ ট্রাজেডি’র দ্বিতীয় দিন আজ শনিবার (১০ জুলাই)। এ কারখানায় কাজ করা শ্রমিকদের লাশগুলো এমনভাবে পুড়েছে যে- তাদের চেনার উপায় নেই। চেনার উপায় নেই, কোনটি কার লাশ! যাকে যে অবস্থায় পাওয়া গেছে, সে অবস্থাতেই উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে কলেজের মর্গে নিয়ে আসা হয়েছে। এদিকে স্বজনরা নিখোঁজ শ্রমিকদের মরদেহের খোঁজে মর্গের সামনে।
জলভেজা চোখে হাতে নিয়ে প্রিয়জনের ছবি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন মেডিকেলের মর্গে। মুখ, শরীর এমন কোরে পুড়েছে যে চেনার কোন উপায়ই নেই। বিকৃত হয়ে যাওয়া এসব লাশ শনাক্তে স্বজনের ডিএনএ টেস্ট করার পথে হাঁটছে ফরেনসিক বিভাগ।
লাশের অপেক্ষায় থাকা স্বজনরা বলছেন নিহতের শরীরের একটি টুকরাই যেন তাদের সান্ত্বনা।
বাবাকে খুঁজছেন কেউ কেউবা মাকে স্বামী তার স্ত্রীকে আবার কোন স্ত্রী তার স্বামীকে। বুকের ধন সন্তানকে বাবা-মা খুঁজছেন বাবা মা। মর্গে ফটকে প্রিয়জনের লাশ নিয়ে অপেক্ষারত কোন ভাই তার বোনের জন্য আবার কোন বোন তার ভায়ের জন্য।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা মরদেহগুলো অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে আনা হয়েছে ঘটনার দিন (৯ জুলাই ই)। তখন থেকেই স্বজনরা সেখানে অবস্থান নিয়েছেন। মৃত শ্রমিকদের স্বজনদের আহাজারিতে মর্গে আশপাশের বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে।
ঢামেক কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ডিএনএ ফরেনসিক ল্যাবের দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন, ডিএনএ টেস্ট ছাড়া অনেক মরদেহ শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। স্বজনদের অপেক্ষা করতে হবে ডিএনএ টেস্টের জন্য।
গেল ৯ জুলাই হাসেম ফুডস লিমিটেডের ৭ তলা ভবনের নিচ তলার একটি ফ্লোরে হঠাৎ করে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। সময়ের সাথে সাথে আগুনের লেলিহান শিখা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে আগুন পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। কালো ধোঁয়ায় গোটা কারখানাটি অন্ধকার হয়ে যায়। শ্রমিকরা ছোটাছুটি করতে শুরু করেন। কেউ কেউ ভবনের ছাদে অবস্থান নেন। জীবন বাঁচাতে ছাদ থেকেও কেউ কেউ লাফিয়েও পড়েন।
ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার ৫২ টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, এরমধ্যে আগুন হতে বাঁচার আশায় ভবন থেকে লাফ দিয়ে নিচে পড়ে মারা যাওয়া ৩ জনের মরদেহ নারায়ণগঞ্জেই স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আর দগ্ধ ৪৯টি মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে পোড়া ৪৯ মরদেহর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে পুলিশ। এরমধ্যে ১২টি মরদেহের এখন পর্যন্ত ২৫টির দাবিদার পরিবার পাওয়া গেছে। ডিএনএ টেস্ট শেষে বোঝা যাবে আসলে কোন পরিবার পাবে। শুক্রবার (৯ জুলাই) রাতেই ৪৯টি মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন ঢাকা মেডিক্যালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা।
ময়নাতদন্ত শেষে ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, ৪৯টি মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। প্রতিটি মরদেহ পোড়া ছিল। এদের মধ্যে মেয়ের সংখ্যা বেশি। কয়েকটি মরদেহ এতটাই পোড়া ছিল ছেলে না মেয়ে বোঝা উপায় ছিলো না। তবে আমরাও মরদেহগুলো থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেছি।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (এএসপি) সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ১২টি মরদেহের দাবিদার ২৫ পরিবার। ডিএনএ রিপোর্টের উপর ভরসা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (০৮ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ওই কারখানা ভবনের নিচতলায় আগুন লাগে। মুহূর্তেই আগুন ভবনের অন্যান্য তলায় ছড়িয়ে পড়ে। কারখানার ভেতরে বিভিন্ন রাসায়নিকসহ দাহ্য পদার্থ মজুদ থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের। সূত্রপাতের একদিন পর আগুন নির্বাপণ করা সম্ভব হয়। রূপগঞ্জের এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে এ ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে বলে জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শামীম বেপারী। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতদের পরিবার পাবে ২৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ এবং আহতরা পাবে ১০ হাজার টাকা।
মুক্তা মাহমুদ
চট্টগ্রাম
কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় প্রাণ হারালেন দুই সাইকেল আরোহী
কর্ণফুলীতে পণ্যবাহী কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় দুই সাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। কাভার্ডভ্যানটি আটক করা হয়েছে।
বুধবার (৭ আগস্ট) বেলা একটার দিকে চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ইছানগর বাংলাবাজার এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার নন্দনালী গ্রামের কামাল মণ্ডলের ছেলে চঞ্চল মণ্ডল (১৮) ও রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার ছোট পাগলা গ্রামের মোহাম্মদ আবদুল জলিলের ছেলে জাহিদুল ইসলাম (১৬)। তারা কর্ণফুলী উপজেলার ইছানগর গ্রামে ভাড়া বাসায় থাকতেন।
চরপাথরঘাটার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আবু তাহের গণমাধ্যমকে বলেন, দুপুরে তারা তিনজন সাইকেল চালিয়ে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন। এ সময় কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত হয়। অপরজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয়। কাভার্ডভ্যানটি আটক করা হয়েছে।
এএম/
ঢাকা
মেঘনায় নিখোঁজ ৩ জনের মধ্যে ২ জনের লাশ উদ্ধার
শরীয়তপুরের মেঘনা নদীতে বরযাত্রীবাহী একটি ট্রলারডুবির ঘটনায় নিখোঁজ তিন জনের মধ্যে দুই জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিখোঁজের মধ্যে ছিলেন বর সানজুসহ তার ভাই শাওন ও বন্ধু হৃদয়। এর মধ্যে জেলেদের জালে বরের ভাই শাওন ও বন্ধু হৃদয় বেপারীর মরদেহ উদ্ধার হলেও এখনও নিখোঁজ রয়েছেন বর সানজু।
শনিবার (৩ আগস্ট) বেলা ১১টার সময় গোসাইরহাট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পুষ্পেন দেবনাথ বিষয়টি গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন।
উদ্ধার হওয়া শাওন পুরান ঢাকার ধোলাইখালের শাহজাহান বেপারীর ছেলে ও হৃদয় একই এলাকার বলু বেপারীর ছেলে। এ নিয়ে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত একই পরিবারের ৩জন সহ ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার হলো। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন আরও ১ জন।
গেলো শুক্রবার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে এসে ট্রলারডুবির ঘটনায় নিহত হন বরের মা, বোন, ভাই ও বন্ধু। এর আগে সকাল ১০টায় কোদালপুর লঞ্চ ঘাট থেকে মাঝেরচর যাওয়ার সময় মেঘনায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় (স্রোতের) ডুবে ট্রলারটি। এসময়ে ট্রলারটিতে ১১ জন যাত্রী ছিলো বলে জানা যায়।
উল্লেখ্য, আহত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া ৫ জন বর্তমানে গোসাইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
এএম/
দুর্ঘটনা
বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে রাজবাড়ীতে নিহত ২
রাজবাড়ীতে যাত্রীবাহী বাস ও সিমেন্ট বোঝাই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনায় আরও কয়েজন আহত হয়েছেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।
শুক্রবার (২ আগস্ট) সকাল ৮টায় রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের আহলাদিপুর টিটিসি ভবনের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। রাজবাড়ী আহলাদিপুর হাইওয়ে থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) জুয়েল রানা বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, আজ সকাল ৮ টার দিকে কুষ্টিয়া থেকে ফরিদপুরগামী লোকাল আমানত শাহ নামের একটি বাস সদর উপজেলার রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের আহলাদিপুর টিটিসি ভবনের সামনে এলে, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা কুষ্টিয়াগামী সিমেন্ট বোঝাই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সময় ঘটনাস্থলেই একজন নিহত হন। আহত হন আরও ৪-৫ জন। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।
হাইওয়ে থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) জুয়েল রানা বলেন, আহতদের রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল ও ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। চালক ও হেলপাররা পলাতক রয়েছে ।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, মৃত অবস্থায় হাসপাতালে একজনকে নিয়ে আসা হয়। আহত অবস্থায় ছয়জনকে হাসপাতালে আনলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজনের মৃত্যু ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় দুইজনকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মেডিকেল হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। তিনজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে গেছেন।
জেডএস/